বার্মাতে একশত ভাগ মহিলা সুন্নাতী পর্দা করে

মরে গেলেও পুরুষ ডাক্তারের সামনে সতর উন্মুক্ত করবো না।

উক্তিটি একজন রোহিঙ্গা বোনের। দেখুন ডাক্তারের সামনে সতর উন্মুক্ত করা জমহুর উলামাদের মতে অনুমোদিত। কিন্তু এই অনুমোদিত কাজটি করতে কতটা কষ্ট, কতটা ব্যাথা একজন পর্দানশীল নারীর হ্রদয়ে অনুভূত হয় সেটা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীই জানে। তার এই ব্যাথা, এই কষ্ট অন্য কেউ কখনও অনুভূব করতে পারবে না। আমাদের বাঙ্গালী নারীরা জীবন বাচানোর তাগিদে সাময়িক পর্দার খেলাফ (অনুমোদিত) করতে হয়ত রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু রোহিঙ্গা নারীরা মরে যাবে, তবুও পুরুষ ডাক্তারের সামনে সতর উন্মুক্ত করবে না। এখানেই আমাদের এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য।

রোহিঙ্গারা আসলেই আমাদের থেকে আলাদা। অনেক দিক থেকেই তারা আমাদের থেকে আলাদা। এই যেমন তারা কোন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অবলম্বন করে না। খেতে পাই না, তাও বাচ্চা নেওয়া বন্ধ করে না। কিন্তু এই সব যুক্তি দিয়ে আপনি তাদেরকে কখনও পরিবার পরিকল্পনায় রাজি করাতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের অবস্থা দেখুন। মাশাল্লাহ! যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা কত এগিয়ে যাচ্ছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে হুযুররা পিছিয়ে থাকলেও এই সেক্টরে হুযুররাও পিছিয়ে নেই। আলিম হোক আর জালিম হোক, দুটি সন্তানই এখন যথেষ্ট।

যা বলছিলাম। রোহিঙ্গারা পর্দার ব্যাপারে কট্টরপন্থী। পর্দা করাটা তাদের শুধু ধর্মীয় ব্যাপার না, এটা তাদের সংস্কৃতিরও অংশ। অনেকটা আফগানিস্তানের মত। তারা আমাদের দেশের মত হিজাবী নন। তারা নিক্বাবী।

আমি একাধিক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়ে জেনেছি, বার্মাতে একশত ভাগ মহিলা সুন্নতী পর্দা করে। হ্যা, একশত ভাগ! একজন নারীকেও আরাকানের রাস্তায় বেপর্দা দেখা যাবে না। এই কথাটা প্রথমে সবারই হজম করতে কষ্ট হবে, আমারও হয়েছিল। কিন্তু এটাই সত্য, আরাকানে একশতভাগ রোহিঙ্গা নারী পর্দার সহিত চলাফেরা করে। বাংলাদেশে এমন কি কোন গ্রাম বা শহর পাওয়া যাবে যেখানে কোন বেপর্দা নারী দেখা যাবে না?

কিন্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসলে পর্দা সেভাবে আর চালু রাখতে পারে না। বার্মাতে প্রতিটা ঘর চারিদিক দিয়ে উচু বেড়া দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা যে কি করুণ সেটা যারা ক্যাম্পে গিয়েছেন তারা সবাই দেখেছেন। ক্যাম্পে কমন টয়লেট, কমন গোসলখানা, কমন টিউবওয়েল। একটা ঘরের সাথে আরেকটা ঘর লাগানো। ঘরে কোন জানালা নেই। তাই একটু হাওয়া খেতেও বাহিরে বের হয়ে আসতে হয়। একজন মানুষ জানালা বিহীন ঘরে কতক্ষণ বসে থাকতে পারে?

এই অবস্থায় কি পর্দা মেনে চলা যায়? হ্যা, যায়। এত কঠিন অবস্থাতেও পর্দা মেনে চলা যায়। আমি রোহিঙ্গাদের না দেখলে বুঝতেই পারতাম না যে এত কঠিন অবস্থাতেও পর্দা মেইন্টেইন করে চলা যায়।

পুরাতন রোহিঙ্গা যারা আছে তারা প্রায় সবাই পর্দা করে। আমি দেখেছি তারা টিউবওয়েল বা টয়লেটে যেতেও বোরকা পরে যায়। কিন্তু নবাগত রোহিঙ্গারা এখনও পর্দা করতে পারছে না। যারা ক্যাম্পে যাচ্ছেন তারা বেপর্দা মহিলা দেখে মনে করছেন রোহিঙ্গারা বুঝি এরকমই বেপর্দা চলাফেরা করে। মিডিয়াতে প্রচুর ছবি আসছে রোহিঙ্গা বোনদের। খুব কমই বোরকা পরা। সবাই বার্মার ঐতিহ্যবাহী পোশাক থামী পরা। কিন্তু এটা রোহিঙ্গাদের আসল চিত্র নয়।

আমি একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জেনেছি, অনেকে মিলিটারি দেখে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই জঙ্গলে চলে গিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, হয়ত মিলিটারি চলে যাবে তখন তারা আবার বাড়ি ফিরে যাবে। কিন্তু পরে ঘর বাড়িতে আগুন দেওয়াতে তারা ওই অবস্থাতেই বাংলাদেশে চলে এসেছে। অনেকে আবার বোরকা পরে বাড়ি থেকে বের হলেও পাহাড়ি পথে বোরকা নিয়ে হাটতে চরম কষ্ট হচ্ছিল দেখে বোরকা পাহাড়ে খুলে ফেলে রেখে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

ক্যাম্পে যারা ত্রাণ দিতে যায় তাদের বাধ্য হয়েই অনেক সময় ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যারা ত্রাণ দিতে যায় অর্ধেকের বেশী নিজেরা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম না। যারা নিজেরা পর্দা করে না তারা অন্যের পর্দার গুরুত্ব বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে অনেকে মনে করে, এরা ভাত খায়তে পাই না, এদের আবার পর্দার কি দরকার? এই অবস্থায় রোহিঙ্গা নারীরা বিপদে পরে যায়। না পারে পর্দা করতে, না পারে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে। কারণ দরজা বন্ধ করে রাখলে পর্দা হবে কিন্তু পেটে ভাত তো পরবে না। এই অবস্থায় তাদেরকে কঠিন পরীক্ষায় পরতে হয়। আসলে আল্লাহ্‌ তাদেরকে অনেক বড় পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন।

আমাদের টিম কুতুপালং এ নবাগত মুহাজির এবং মুহাজিরাতদের কিছু ত্রাণ দিতে গিয়েছিল। সেখানে এক বোনের অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট লাগছিল। এই কথাটা এখানে বলতেও খুব কষ্ট লাগছে, কিন্তু হয়ত তাদের কষ্ট ভবিষ্যতে কিছুটা লাঘব হবে এই আশায় বলতে বাধ্য হচ্ছি। একজন মহিলা তার দুই হাত আড়া আড়ি করে তার বুকের উপর দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলছিল। তার যদি একটা বোরকা থাকত, তাহলে তাকে পর্দার জন্য এত কষ্ট করতে হত না।

তখনই সীদ্ধান্ত নিলাম প্রত্যেক রোহিঙ্গা নারীর পর্দার জন্য বোরকার ব্যবস্থা করব। আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ দিয়ে আমরা পাচশত বোরকার ওর্ডার দিয়েছি। কিন্তু এক লক্ষের মধ্য থেকে পাচ শত মানে সাগরের মাঝে ছোট্ট একটা দ্বীপ। এক ভাই এর কাছে বোরকার জন্য টাকা চাইলাম, উনি পরামর্শ দিলেন নিজেরা দিয়ে পোষানো যাবে না। তাই এটা একটা আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। যেন সবাই বোরকার বিষয়টা খেয়াল রাখে। সেই উদ্দেশ্যে আমি এই দীর্ঘ পোস্টটা লিখলাম। আপনারা যারা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন তারা চাল, ডাল, হাড়ি, পাতিলের সাথে বোরকাকেও ত্রাণের একটা আইটেম হিসাবে সংযুক্ত করুন।

আমাদের টিমের পক্ষ থেকে একটা মাসজিদ করার সীদ্ধান্ত হল। আমরা কুতুপালং মধুছরায় একটা জায়গা ঠিক করে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরেই যেয়ে দেখা গেল সেখানে দুইটা মসজিদ হয়ে গেছে! পরে আমাদের মাসজিদের জায়গা পেতেই অনেক কষ্ট হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌! সবাই মাসজিদ বানাতে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে। মাসজিদের জন্য অনেকেই দু হাত উজার করে দান করছেন। কারণটা কি জানেন? কারণ হচ্ছে কাল হাশরের ময়দানে যেন কোন রোহিঙ্গা ভাই বলতে না পারে, হে আল্লাহ্‌! আমাদের মাসজিদ ছিল না, তাই জামাতে সালাত আদায় করতে পারি নাই। এই অভিযোগ যেন আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালার কাছে কেউ দিতে না পারে সেই জন্য আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমাদের আনসার ভাইয়েরা সবাই একটা করে মাসজিদ বানিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু জামাতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব আর মহিলাদের পর্দা করাটা ফরজ। নাহ, আমি ইসলামের এক বিধানের সাথে আরেক বিধানের তুলনা করতে চাই না। প্রত্যেকটা বিধান তার স্ব স্ব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের ফরজ পর্দার ব্যাপারে কি অবহেলা হয়ে যাচ্ছে না?

ইউনিসেফ দেখলাম নবাগত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ঢোল তবলার ব্যবস্থা করেছে। ওরা নাকি ট্রমাটাইজড, তাই ওদের একটু বিনোদন দরকার! তাই কিছু ঢোল, তবলা আর খেলনার আয়োজন করেছে ইউনিসেফ। UNHCR বা IOM হয়ত রোহিঙ্গাদের তাবু বা চালের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারা কখনোই মাসজিদ বা বোরকার ব্যবস্থা করবে না। তাই মাসজিদ বা বোরকার ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, মাসজিদের ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু বোরকার ব্যবস্থা সেভাবে হচ্ছে না। অন্তত পক্ষে আমার পর্যবেক্ষণ তাই বলছে। বোরকার অভাবে অনেক পর্দানশীল বোন ত্রাণ নিতে বাহিরেও যেতে পারছে না। তাই সবার জন্য বোরকার ব্যবস্থা করা এখন খুবই জুরুরী।

রোহিঙ্গা বোনেরা যদি বেপর্দা চলাফেরা করে তবে তার জন্য তাদের কোন গুনাহ হবে না। তাদের জন্য এখন পর্দার বিধান শিথিল হওয়ার কথা। কারণ তাদের না আছে ঘর বাড়ি, না আছে কোন বোরকা। এই অবস্থায় আল্লাহ্‌ হয়ত তাদেরকে মাফ করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা কি আমাদেরও মাফ করবেন? আমার তো মনে হয় না, আমরা আল্লাহর কাছে মাফ পাবো। আমরা পনের কোটি মুসলিম এক লক্ষ রোহিঙ্গা নারীর জন্য পর্দার পোশাকের ব্যবস্থা করতে পারবো না এটা কি কোন গ্রহণ যোগ্য ওযর? তাই আসুন সবাই ত্রাণের আইটেম লিস্টে বোরকাকেও সংযুক্ত করি।

যদি এখনই আমরা উদ্যেগ না নেই তবে অচিরেই রোহিঙ্গারা পর্দা নামক যে একটা কিছু আছে সেটাই হয়ত ভুলে যাবে। মনে রাখবেন মানুষ পরিবেশ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত। আজকে রোহিঙ্গা নারী যারা পর্দা করছে না তাদের এভাবে বেপর্দা চলতে হৃদয় ভেঙে চূড়মাড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সত্য বলতে কি আজ থেকে তিন মাস বা ছয় মাস পরে এই রোহিঙ্গা পর্দানশীন বোনদেরই যদি আপনি পর্দার কথা বলেন তখন দেখবেন তারাই বলবে, এটা আবার কি জিনিস? আমরা বোরকা টোরকা ছাড়াই বেশ ভালো আছি। তারা বোরকা ছাড়াই তখন অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন আর চাইলেও বোরকা পরাতে পারবেন না। রোহিঙ্গারা যে জেনেটিক্যালি পর্দানশীন ব্যাপারটা এরকম নয়। এটা তাদের দীর্ঘ দিনের সংস্কৃতি। অবশ্যই ইসলাম থেকেই এসেছে এই সংস্কৃতি। বোরকা এখন তাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে। এমন অনেক মহিলা আছে, যারা নামায না পড়লেও বোরকা পরে। কিন্তু অচিরেই দেখবেন তারা এই বিধান ভুলে যাবে, তারা বোরকা ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে। তখন তাদেরকে মেরেও বোরকা পরানো যাবে না। তাই এখনই আমাদের জরুরী ভিত্তিতে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক রোহিঙ্গা মুহাজিরাতের জন্য বোরকার ব্যবস্থা করতে হবে।

রোহিঙ্গারা আমাদের থেকে আলাদা এই কথা আমি বারবার বলছি। তাদের বোরকাও আমাদের থেকে আলাদা। হ্যা, তারা আমাদের স্টাইলের বোরকাও পরে কিন্তু সেটা বিশেষ কোন অনুষ্ঠান বা বেড়াতে যাওয়ার সময়। তারা টিউবওয়েল বা টয়লেটে যাওয়ার সময় স্কার্ট আর ক্ষিমার টাইপের এক বিশেষ ধরণের বোরকা পরে। বাংলাদেশে নামাযের হিজাব বলে এক ধরণের হিজাব পাওয়া যায়, এই হিজাবটাই তারা পরে কিন্তু সাথে মুখ ঢাকার জন্য একটা কাপড় আর দুই লেয়ারের একটা ন্বিকাব। নিচে স্কার্টের মত বোরকার কাপড়ের অংশ আর উপরে ন্বিকাবসহ নামাযের হিজাব। যে কেউ চাইলে আমি স্যাম্পল পাঠায়ে দিবো ইনশাল্লাহ। যদি কেউ বোরকা দিতে চান তবে একটু কষ্ট করে এই ধরণের বোরকা বানায়ে দিন। বাংলাদেশের বাজারে ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত যে বোরকা পাওয়া যায় দয়া করে কেউ সেই বোরকা দিবেন না। বাংলাদেশী বোরকা দিলে আপনার দানের টাকার ৭০ ভাগ বিফলে যাবে। আপনি হয়ত সওয়াব পেয়ে যাবেন, কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে না। কারণ এই বোরকা সবসময় পরে থাকা কষ্টকর। আর তাছাড়াও এই বোরকার সাথে অতিরিক্ত আরও দুই পিস পরতে হয়। তারা যেটা পর সেটা মাথার উপর দিয়ে ফেলে দিলেই হয়। তাই দয়া করে দিলে ভালো জিনিস দিন যেটা তাদের কাজে আসবে। দায় সারা গোছের কোন দান সাদকা করা থেকে বিরত থাকুন।

সবাই মাসজিদ নির্মাণে এত উদগ্রীব কেন জানেন? মাসজিদ এমন একটা দান যা সাদকায়ে জারিয়ে হয়ে থাকবে। বোরকাও তেমনি এমন একটি দান যার সওয়াব আপনি তত দিন পাবেন যতদিন কোন বোন আপনার দেওয়া বোরকা পরে পর্দা করবে। তাই আসুন আমরা যেভাবে মাসজিদ নির্মাণে প্রতিযোগীতা করছি, সেভাবে বোরকা বিতরণেও প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়।

Original Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member