
সত্যের ছায়াতলে অষ্ট্রেলীয় ডাক্তার
রচনায়: খোন্দকার রোকনুজ্জামান
ডাঃ রেবেকা ওয়েড। অস্ট্রেলিয়ার এক খৃস্টান ধর্মগুরুর মেয়ে। পাত্ৰী পিতার সঙ্গে উপশহরের বাড়ীতে থাকতেন। আশৈশব সেখানেই লালিত হয়েছেন খৃষ্টীয় পরিবেশে। পশ্চিমা জীবনাচারের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসাবে নানা রকম পার্টি, নাইট ক্লাবে ছিল তার অবাধ বিচরণ। হল্লা করে সুরাপান করেছেন। মেলবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী যখন ছিলেন, তখন সবরকম পশ্চিমা সামাজিক কর্মকাণ্ডেই অংশ নিতেন তিনি। এভাবেই গতানুগতিক জীবনের পথে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলছিলেন ডাঃ রেবেকা। তবে এই সময়েই তার অন্তর্জগতে সূচিত হচ্ছিল এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন। গতানুগতিক চিন্তা ছাপিয়ে তার অন্তরলোকে বেজে উঠেছে তখন নতুন এক সুর। সে সুরের সম্মোহনী শক্তি তাকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে চলেছে এক আলোকিত গন্তব্যের পানে। ক্রমশ আঁধারের যবনিকা উঠে যাচ্ছিল; সত্য ও কল্যাণের স্নিগ্ধ আলোয় হেসে উঠছিল তার অন্তরলোক ।
“ইসলাম গ্রহণের পূর্বে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলেছিল প্রায় পাঁচ বছর- এটা হঠাৎ আলোয় উদ্ভাসনের কোন ঘটনা ছিল না”, জানিয়েছেন ভূতপূর্ব ডাঃ রেবেকা, বর্তমানে যিনি ডাঃ রাজিয়া আলী।
সত্যের তৃষ্ণা জেগেছিল তার মনে। পূর্ব পুরুষের ধর্মবিশ্বাস সে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারছিল না। ডাঃ রাজিয়ার ভাষায় : “এটা এসেছিল আমার নিজের সত্যানুসন্ধান এবং খৃষ্টান ধর্মের মর্ম উপলব্ধি থেকে।”
পাদ্রী কন্যা হিসাবে ডাঃ রেবেকা প্রথমত খৃষ্টান ধর্মের মধ্যে থেকেই তার অতৃপ্ত আত্মার তৃপ্তি অন্বেষণে তৎপর হন। সকল খৃষ্টান দল-উপদলের মধ্যেই তিনি খুঁজে ফিরতে থাকেন তার আত্মার তৃপ্তি। কিন্তু বার বার তাকে নিরাশ হতে হয়। বিশেষ করে দুটি সমস্যা তাকে খুব বেশী ভাবিত করে তোলে। তার নিজের ভাষায় ঃ “স্টান ধর্ম নিয়ে আমার দুটি প্রধান সমস্যা ছিল- ত্রিতুবাদ, আর যেমনটি আমি লক্ষ্য করেছিলাম, দৈনন্দিন জীবন কীভাবে যাপন করা হবে তার সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনার অভাব।”
“স্রষ্টা সম্পর্কে আমার উপলব্ধি ছিল এই যে, তিনি সর্বজ্ঞাতা এবং পরম সত্তা। আমি উপলব্ধি করতাম যে, মানুষের উপর খোদায়িত্ব আরোপ হল স্রষ্টা থেকে বিচ্যুতি।”
তার চিন্তা-চেতনার এই স্বচ্ছতা এবং সষ্টার স্বরূপ সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধি তাকে সত্যের সন্ধান দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তিনি মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের সংস্পর্শে আসেন, তখন ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এরফলে ইসলাম সম্পর্কে খৃস্টান জগতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত খারাপ ধারণার আসারতা বুঝতে পারেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, ইতিপূর্বে ইসলাম সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল। ইসলামী জীবনাচারের অনেক কিছুকেই তিনি বোঝা স্বরূপ মনে করতেন- যেগুলো থেকে পরবর্তীতে তিনি দিক নির্দেশনা পেয়েছেন।
“আমি ভাবতাম যে, দিনের মধ্যে পাঁচবার প্রার্থনা করা একটি……ব্যাপার। কিন্তু ব্যস্তজীবন এটাকে আমি সার্বক্ষণিক. হিসাবে পেয়েছি- এটা হল ৫ মিনিটের জন্য দৈনন্দিন কার্যাবলীর তুলনায় জীবনের বৃহত্তর ও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দিককে স্মরণ। আমি এটারই অন্বেষণ করি,” জানিয়েছেন তিনি।
“ওড়না পরা, হাতের কজি থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করাটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। লোকে এটাকে প্রতিবন্ধকতা ভাবতে পারে। এটাতে অভ্যস্ত হতে দুই বছর লেগেছে, কিন্তু ইসলাম প্রায় সব ব্যাপারেই উপদেশ ও দিক নির্দেশনা দেয় আর এটা আমার নিকট গুরুত্বপূর্ণ যে, আমারকৃত প্রত্যেকটি কাজ- আমার খাবার ধরন, কথা বলা, মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সবই আমাকে আল্লাহর নিকটতর করে দিচ্ছে।”
ডাঃ আলী বলেন যে, নারীদের খৎনা এবং গাড়ী চালনায় নিষেধাজ্ঞা হল আঞ্চলিক প্রথা এবং ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন। ইসলামে নারীর যে অবস্থান সে সম্পর্কে তিনি পরিষ্কার ধারণা রাখেন। তিনি বলেন :
“ইসলাম নারীকে অনেক কদর করে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে তাদের পুরুষের সমান জ্ঞান করে। এখনো আমি নিজেকে মুক্ত নারীই ভাবি।”
হেদায়াত পরম করুণাময় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ। এটা দিয়ে তিনি তাদেরই ধন্য করেন যারা এ জন্য আগ্রহী হয়। যাদের হৃদয়ে থাকে সত্যকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, বিশ্ব প্রভুর চরণে আত্মনিবেদনে যারা সদা উন্মুখ- তারা কখনো বঞ্চিত হন না। সত্য একদিন ঠিকই তাদের নাগালে এসে যায়। কারণ আল্লাহ তা’য়ালা ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তার দিকে যাবার পথ তাকেই দেখিয়ে থাকেন যে তার দিকে মনোনিবেশ করে। –
[MAHJUBAH এর সৌজন্যে
মাসিক পৃথিবী থেকে সংকলিত