নও মুসলিম আন্দ্রেই স্ট্যালিন

একজন নওমুসলিম যার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে কিনে নিয়েছেন মহান প্রভুর নির্দেশিত পথ…

  “এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই”

এই একটি আয়াত বদলে দিয়েছিলো যার জীবন, তার নাম আন্দ্রেই স্ট্যালিন। তিনি ছিলেন অস্ট্রিয়ার জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা অস্ট্রিয়ান এয়ারের একজন অত্যান্ত প্রতিভাবান পাইলট। দেখা যেত প্রচুর তুষারপাত হচ্ছে যেখানে কেউ বিমান চালাতে সাহস পাচ্ছে না সেখানে আন্দ্রেই স্বাভাবিক ভাবেই বিমান নিয়ে উঠানামা করছেন।

তার বয়স যখন ৩০ বছর তখন তার ফ্লাইট দেয়া হলো চার্টার্ড রুটে, সেটি ছিলো ভিয়েনা থেকে জেদ্দা রুটের একটা বিশেষ ফ্লাইট। তাতে কিছু যাত্রী ছিলেন যারা জেদ্দায় একটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন। বিমান মাঝ আকাশে আসলে তিনি কো পাইলটের হাতে অপারেটিং ছেড়ে বিমানের পিছনের দিকে যাচ্ছিলেন যাত্রীদের মাঝ দিয়ে, এমন সময় একটা কথা তার কানে প্রবেশ করল “এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই”।

তিনি এই কথাটি শুনে সেই যাত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন “এটা আবার এমন কি বই যাতে কোনো ভুলভ্রান্তি নেই?”

তার প্রশ্নের জবাবে যাত্রীটি বলল এটা আমাদের মুসলিমদের ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআন যা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, এবং আল্লাহ প্রদত্ত বলেই এতে কোনো ভুল নেই, এবং এতে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান লেখা আছে। যাত্রীর কথা শুনে তিনি তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে তার কাজে চলে গেলেন।

এর ১ মাস পরে তাঁকে আবার ইস্তাম্বুল আসতে হয় একটা কাজে, তখন তিনি তুরস্কের নীল মসজিদ দেখতে আসেন। এবং তখন মাগরিবের নামায চলছিল। তিনি এটা দেখে অবাক হয়ে যান যে, একজন কালো মানুষের পাশে আরেকজন সাদা চামরার মানুষ দাঁড়িয়ে নামায পড়ছে। এবং কয়েক হাজার মানুষ একত্রে প্রার্থনা করলেও সেখানে ছিলো না কোনো কোলাহল কোন শব্দ, সবাই একজন নেতার অনুষারন করছে।

তখন তিনি আবার সেই শব্দটি শুনতে পান “এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই।” তিনি মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে মনোমুগ্ধের ন্যায় নামায দেখতে লাগলেন। যখন নামাজ শেষ হলো তিনি সেখান থেকে চলে আসলেন কিন্তু তার মনে ছিলো অস্থিরতা, তিনি কেবল ভাবছিলেন আমি যদি ঐ মানুষদের সাথে দাড়াতে পারতাম। তাহলে হয়তো আমার মনে শান্তি পেতাম।

রাতে হোটেলে এসে তিনি গোসল করলেন এবং সন্ধ্যায় দেখা মসজিদে নামাজের অনুকরণ করতে লাগলেন, তার মনে হলো এর চেয়ে ভালো কোন ব্যায়াম হতে পারে না। তখনি সেই যাত্রীটির কথা তার মনে পরল যে বলছিলো, “এতে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান লেখা আছে।” তখন তার মনে হলো ইসলাম সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া উচিত। তিনি পরদিন সকালে আবার সেই নীল মসজিদে গেলেন। এবং সেখানের এক লোককে জিজ্ঞাসা করে একজন ইমামের সাথে দেখা করলেন এবং তাঁকে ইসলাম সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করলেন। ইমাম সাহেব তাঁকে সাবলীল ভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।

ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলতে গিয়ে তার মনে হলো তিনি কোনো সাধারন মানুষের কথা শুনছেন না কোনো এক সবজান্তার কথা শুনছেন। তিনি ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কিভাবে এত সুন্দর করে বলতে পারেন?” ইমাম সাহেব জবাব দিলেন, “আমি নিজের থেকে একটা কথাও বলিনি সব কথাই আমি এই কুরআন থেকে বলেছি।”

তখন তিনি অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “আমাকে কি আপনি এই মহান বইটার খোঁজ দিতে পারেন? আমি একটা বই কিনে নেব।” ইমাম সাহেব হাসিমুখে তার সেলফ থেকে একটা জার্মান ভাষায় অনুদিত কুরআন তাঁকে উপহার দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এটা পড়ার সময় কি কোনো বিশেষ নিয়ম মানতে হয়? ইমাম সাহেব তাঁকে বললেন আপনি যদি পবিত্র হয়ে অর্থাৎ গোসল করে এই বইটি পড়েন তবে ভালো হয়। ইমাম সাহেবের কথা শুনে তিনি কুরআন শরিফ নিয়ে দেশে ফিরে এলেন এবং ১৫ দিনের ছুটি নিলেন।

বাসায় গিয়ে গোসল করে কুরআন নিয়ে টেবিলে বসলেন এবং পড়া শুরু করলেন, তিনি আরবী পড়তে জানতেন না কিন্তু শুনলে অর্থ বুঝতে পারতেন। তাই আরবী বাদ দিয়ে জার্মান ভাষায় অনুবাদ পড়তে শুরু করলেন, এবং তার মনে হলো এটা কোনো মানুষের রচনা হতেই পারে না। তিনি মাত্র ১০ দিনে কুরআন শেষ করে ফেললেন। আবার পড়তে শুরু করলেন যখন তিনি সুরা বাকারার ১৬৩নং আয়াত পড়লেন তখন তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, “আমি এই মহাগ্রন্থের রচয়িতা মহা শক্তিমান আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করছি এবং এই আয়াতের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করছি।”

তার মনে হলো তিনি যেন এক মহান শান্তির পরশ অনুভব করছেন, তার কাছে তুরস্কের সেই ইমাম সাহেবের টেলিফোন নাম্বার ছিলো তিনি তাঁকে ফোন করলেন এবং বললেন, আমি মুসলিম হতে চাই আমি জান্নাত পেতে চাই আমাকে কি করতে হবে বলুন বলুন তিনি অস্থির হয়ে বলে উঠলেন।ইমাম সাহেব বললেন আপনি কালেমা তাইয়েবা এবং কালেমা শাহাদাত পড়ুন এবং এর সাথে একাত্বতা পোষন করুন, তাহলেই আপনি মুসলিম হতে পারবেন। তিনি তুরস্ক থেকে আসার সময় ইমাম সাহেব তাঁকে আরো কিছু বই দিয়েছিলেন সেখানে তিনি কালেমা সমুহ পেলেন এবং সেই রাতে গোসল করে কালেমা পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে বললেন “হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো আমি তোমার প্রদত্ত ধর্মকে আমার জন্য গ্রহণ করেছি”।

এরপর শুধুই ইতিহাস… সেই আন্দ্রেই স্ট্যালিন আবার চলে গেলেন তুরস্কে এবং সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করলেন। ২০০৯ সালে তিনি ৩য় বারের মত মক্কা আসেন ওমরা হজ্জের নিয়ত নিয়ে এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মক্কাতেই দাফন করা হয়।

আন্দ্রেই স্ট্যালিন ইসলাম গ্রহণ করার পরে তার নাম গ্রহণ করেন আবু বকর। তিনি বিয়ে করেননি। তার ইসলাম গ্রহণ ১৯৯৬ সালে এবং তার ইন্তেকাল ২০০৯ সালের ৩রা আগস্ট।

বিঃদ্রঃ সকল তথ্য সৌদি আরবের নওমুসলিমদের এক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া, আমি এই ঘটনা পড়ি ২০১২ সালে একটা নওমুসলিমদের ম্যাগাজিনে। কিন্তু ঠিক কোন ম্যাগাজিন থেকে পড়েছিলাম সেটা ভুলে গেছি। আরো কিছু তথ্য ছিলো তার ইসলাম গ্রহনের পরে তবে সেগুলো একেবারে সঠিক ভাবে মনে নেই বলে তা লিখলাম না। সময়ের অভাবে অনেক সংক্ষেপ করে লিখলাম, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।

— যুবায়ের আহমদ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88