প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করা

প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি জোর তাকীদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,

وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ কর। আর সদাচরণ কর নিকটাত্মীয়, অনাথ, নিঃস্ব, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্বস্থিত সঙ্গী, পথিক ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভালবাসেন না যারা গর্বে স্ফীত অহংকারী’ (নিসা ৩৬)। 

প্রতিবেশীর হক্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তাকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ. قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِى لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ

‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, কে সে জন ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার হতে নিরাপদে থাকতে পারে না’।[1]

নবী করীম (ছাঃ) এক প্রতিবেশী কর্তৃক অন্য প্রতিবেশীর প্রশংসা ও নিন্দা করাকে ভাল ও মন্দ আচরণের মাপকাঠি গণ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমি ভাল আচরণ করলাম না মন্দ আচরণ করলাম তা কী করে বুঝব? তিনি বললেন,

إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ : قَدْ أَسَأْتَ فَقَدْ أَسَأْتَ

‘যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তারা তোমার সম্পর্কে বলাবলি করছে, ‘তুমি ভাল আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই ভাল আচরণ করছ। আর যখন তাদেরকে বলাবলি করতে শুনবে যে, ‘তুমি মন্দ আচরণ কর’ তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয়ই মন্দ আচরণ করছ’।[2]

প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন- প্রতিবেশীর সাথে যৌথভাবে নির্মিত বাড়ীর প্রাচীরের উপর কাঠ কিংবা বাঁশ পুঁততে বাধা দেওয়া, প্রতিবেশীর অনুমতি না নিয়ে তার বাড়ী হতে নিজ বাড়ীকে উঁচু বা বহুতল করে তার বাড়ীতে আলো-বাতাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, প্রতিবেশীর বাড়ী বরাবর জানালা তৈরী করে তার বাড়ীর লোকদের সতর দেখতে চেষ্টা করা, বিরক্তিকর শব্দ দ্বারা তাকে কষ্ট দেওয়া, বিশেষ করে ঘুম ও আরামের সময়ে চেঁচামেচি ও খটখট আওয়াজ করা, প্রতিবেশীর সন্তানদের মারধোর করা কিংবা তার বাড়ীর দরজায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি।

তাছাড়া প্রতিবেশীর হক্বের উপর চড়াও হলে পাপের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

لأَنْ يَزْنِىَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِىَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ. لَأَنْ يَّسْرِقَ الرَّجُلُ مِنْ عَشْرَةِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَسْرِقَ مِنْ جَارِهِ

‘কোন ব্যক্তির পক্ষে অন্য দশজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া স্বীয় প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনায় অনেক সহজ। অনুরূপভাবে অন্য দশ বাড়ীতে চুরি করা কোন ব্যক্তির স্বীয় প্রতিবেশীর বাড়ীতে চুরি করা অপেক্ষা অনেক সহজ’।[3]

অনেক অসাধু ব্যক্তি আছে, যারা প্রতিবেশীর অনুপস্থিতির সুযোগে রাতে তাদের গৃহে প্রবেশ করে এবং অপকর্মে লিপ্ত হয়। এসব লোকের জন্য এক বিভীষিকাময় দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।



[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯৬২।

[2]. ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪৯৮৮।

[3]. আহমাদ হা/২৩৯০৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৫।

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88