আমানত ও বিশ্বস্ততা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বিষয়ঃ আমানত ও বিশ্বস্ততা

খুতবা প্রদানে : শাইখ আলী ইবনে আব্দুর রহমান আল হুদাইফি

অনুলিখন: মো: আব্দুল্লাহ

তারিখঃ ১৫-৭-১৪২৪ হিজরী।

সমস্ত প্রশংসা সর্বজ্ঞানী, মহা সহিংসু, মহাঅধিপতি, অতিশয় পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাধিকারী, সার্বিক সংরক্ষক মহা প্ররাক্রমশালী অতীব মহিমান্বিত প্রবল ক্ষমতাধর আল্লাহ্‌ তায়ালার জন্য। তারা যা কিছুকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে তিনি তা হতে পবিত্র। মানুষদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর অনুগত্যের জন্য। তিনি তাদের উপর তাঁর আনুগত্যকে ফরজ করে দিয়েছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক তিনি ছাড়া কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল, তাঁর প্রতিপালক তাকে মনোনয়ন করে তাঁর উপর সুস্পষ্ট নূর অবতীর্ণ করেছেন এবং তাকে সঠিক সরল পথের হেদায়েত দিয়েছেন।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন,

إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ ۖ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا

لِّيُعَذِّبَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِينَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوبَ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

আমরা আসমান সমূহ ,যমীন ও পর্বতমালার উপর এ আমানত পেশ করেছিলাম, তারা এটা বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং তা হতে শংকিত হয়েছে। আর মানুষ তা বহন করে নিল। নিশ্চয়ই সে অতিশয় জালিম ও অতীব অজ্ঞ। আর এটা এজন্য যে, যাতে আল্লাহ্‌ মুনাফিক নর ও নারীর তাওবা গ্রহন করতে পারেন। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। [সূরা আল আহযাব—৭২,৭৩]

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামিন আসমান,যমীন ও পর্বতমালা প্রতি এমন বিশাল ও ভারী বোঝা, দায়িত্ত্ব ও মারাত্মক কাজ পেশ করেছেন যা থেকে তারা শংকিত ও ভীত বিহব্বল হয়ে যায়, ফলে তারা এ আমানত বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। আল্লাহর আযাবের ভয় এ দায়িত্ত্ব গ্রহন থেকে তাদেরকে বারণ করে থাকে। অতঃপর এ আমানত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পেশ করা হয় তিনি তা গ্রহন করেন ও বহন করেন, সুতরাং যে ব্যক্তি এ আমানতের ক্ষেত্রে অবহেলা ও দায়িত্ত্বহীনতাঁর পরিচয় দেবে সে প্রকৃত পক্ষে মহা যালিম ও নিরেট অজ্ঞ লোক, আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুলত যালিম ও জাহিল ছিলেন না।

এ আমানতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদিয়ালাহু আনহু বলেন, আমানত দ্বারা এখানে ফারায়েদ বা অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ বুঝান হয়েছে। এগুলো পালন না করে বিনষ্ট করলে আল্লাহ্‌ তায়ালা শান্তি দিবেন। এটা জানার পর আল্লাহ্‌র অবাধ্য না হয়েই ভীত ও শংকিত হয়ে পড়ল। তাই তারা আল্লাহর দ্বীনের মহত্ব রক্ষা করার জন্য এটা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল।“

হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “বিভিন্ন তারাকারাজি ও আলোকবর্তিকা দ্বারা সুসজ্জিত সাত আসমান ও মহা আরশের বহনকারীদেরকে বলা হল তোমরা কি আমানত ও এতে যা রয়েছে তা বহন করতে রাজি আছ? তারা জিজ্ঞাো করল, তারা বলল, না, আমরা বহন করতে পারব না, অতঃপর এ বিশাল ও শক্তিশালী সাত যমিনের নিকট এ আমানত পেশ করা হল। যমিনকে বলা হল, তুমি কি এ আমানত ও এতে যা রয়েছে বহন করবে? যমিন জিজ্ঞাসা করল এতে আবার কি রয়েছে? তাদের বলা হল এতে রয়েছে যদি ভাল কর তাহলে প্রতিফলস্বরুপ সওয়াব পাবে আর যদি খারাপ করে থাক তাঁর শাস্তি পেতে হবে। যমিন উত্তর দিল না। আমি বহন করতে পারব না। অতঃপর পর্বতমালার উপর পেশ করা হল। পর্বতমালাও তা অস্বীকার করলো। হে আল্লাহর বান্দাগন, আয়াতে আমানত বলতে শরীয়তের সকল দায়িত্বকে বুঝানো হয়েছে। যা আল্লাহ্‌ এবং বান্দার হোক সমুহকে শামিল করে। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে আদায় করতে পারল তাঁর জন্য রয়েছে প্রতিদান ও সওয়াব। পক্ষান্তরে যে এ আমানত বিনষ্ট করল সে শাস্তির উপযুক্ত হল।

ইমাম আহমাদ, বায়হাকী, ইবনে আবি হাতেম আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, “নামায আমানত, ওজু আমানত, ওজন আমানত, পরিমাপ আমানত, এভাবে তিনি অনেক জিনিস উল্লেখ করেন এর মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে গচ্ছিত বস্তু।

আবু দারদা রাদিয়াল্লহু আনহু বলেন, “অপবিত্রতা থেকে গোসল করা আমানত। যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ আমানতের ভূষণে ভূষিত হল সে তার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হল। আর যে আমানতের গুণ হারিয়ে ফেলল সে তার দ্বীন হারিয়ে ফেলল বা পরিত্যাগ করল।

ইবনে তারাবানী ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এরশাদ করেছেন, “যার আমানত নেই তার ঈমান নেই”।

ইমাম আহমাদ, বাযযার ও তাবারানী আনাস রাদিয়াল্লহু আনহু এর হাদিসে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যার আমানত নেই তার তার ঈমান নেই, যার অঙ্গিকার নেই তার দ্বীন নেই।’’ এই কারনেই আমানত নবী ও রাসুল ও আল্লাহর নিকটবর্তী বান্দাদের গুণাবলীর অন্তর্গত। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরআন নুহ, হূদ ও সালেহ আলহিহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন, “এরা সবাই সম্প্রদায়ের লোকদেরকে এভাবে বলেনি আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত রাসুল বা দূত। সুতরাং আলাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর।’’

সুতরাং যখনই যখনই আমানত ত্রুটিপূর্ণ হবে ঈমানও ত্রুটিপূর্ণ হবে। হুযাইফা রাদিয়াল্লহু আনহু এর হাদিসে ঈমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, “মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে আমানতকে নাযিল করা হয় অতঃপর কুরআন অবতীর্ণ হয় ফলে তারা কুরআন হতে শিক্ষা গ্রহন করে এবং সুন্নাহ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে।

অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আমানত উঠিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, “একজন লোক হালকাভাবে কিছুক্ষন ঘুমাবে তখন তার অন্তর হতে আমানতকে উঠিয়ে নেয়ার ফলে আমানতের ছাপ বা অবশিষ্ট অংশ তার অন্তরে হালকা দাগ বা চিহ্নের মত হয়ে বসে থাকবে। অতঃপর সে যখন আবার ঘুমাবে তার অন্তর হতে পুনরায় আমানতকে উথিয়ে নেয়া হবে ফলে আমানতের ছাপ তার অন্তরে হাতের ঠোসা মত হয়ে যাবে। যেমনিভাবে কোন জলন্ত অংগারকে পায়ের উপরে ছেড়ে দিলে তুমি দেখবে তা পরে যেতে কিন্তু তাতে ঐ স্থান ফুলে যায় এবং তাতে আঘাতের চি তুমি লক্ষ্য কর অথচ এতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট পাথর নিয়ে তা স্বীয় পায়ের উপর ছেড়ে দিলেন ফলে মানুষেরা পরস্পর লেনদেন ও বেচাকেনা শুরু করবে। তাদের মধ্যে একজনও এমন হবে না যে তার নিকট আমানত আদায় করে থাকবে। বরং এভাবে বলা হবে যে অমুক অমুক গোত্রের মধ্যে একজন আমানতদার লোক রয়েছে। আর তাদের মধ্যথেকে একজন লোককে বল হবে আশ্চর্যজনক বুদ্ধিমান, চালাক ও চতুর অথচ তার অন্তরের মধ্যে এক সরিষা পরিমান ঈমান অবশিষ্ট থাকবে না।’’ –ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন-৬৪৯৭।

মোদ্দা কথা হচ্ছে কোন লোক যখন আমানতকে নস্ট করার ইচ্ছা করবে দ্বীনের ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করার মাধ্যমে, আল্লাহর বান্দাহদের হক সমূহ খেয়ানত করার মাধ্যমে কথন ঐ ব্যক্তির অন্তর থেকে আল্লাহ তায়ালা আমানত উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দিবেন। অনর্থক কোন কারন ছাড়া কারো অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়া হতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র।

যেমন আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, “যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তদের অন্তরকে বক্র করে দেন আল্লাহ্‌ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হেদায়েত দেন না।”

আলোচ্য হাদিসের শেষাংশ থেকে প্রতিমান হয় যে আমানতই ঈমান। আর দ্বীন ও দ্বীনের অপরিহার্য কাজসমুহ হচ্ছে প্রকৃত আমানত। সুতরাং তাওহীদ হচ্ছে আমানত, সলাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ, আত্বীয়তার সম্পর্ক, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, সম্পদ এ সব কিছু আমানত। চক্ষু আমানত সুতরাং এর মধ্যমে আল্লাহর নিষিদ্ধকাজের দিকে তাকানোর চেষ্টা করো না। হাত আমানত, লজ্জা স্থান আমানত, পেট আমানত সুতরাং হল ব্যতিত হারাম খেও না। সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী পরিজন আমানত এদের অধিকার বিনষ্ট করো না। নারীদের উপর স্বামীর অধিকার আমানত। বান্দার সকল প্রকার অধিকার আমানত। সুতরাং এর ঘাটতি করো না।

এজন্যই আল্লাহ্‌ তায়ালা আমানত আদায় ও তার হক যথাযথভবে পালনের জন্য বিশাল প্রতিফলের ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

“আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গিকার রক্ষা করে তাদের নামায সমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষন করে তারাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। যারা ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে তথায় তারা চিরস্থায়ী হবে।” [সূরা আল মুমিনুন-৮-১১]

আবু হুবাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল সাল্লালালহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “তোমরা ছয়টি জিনিসের জামিন হও আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হব। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ ছয়টি জিনিস কি আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, “সালাত ,যাকাত, আমানত, লজ্জাস্থান, পেট ও জিহ্বা।’’

ঈমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন, হাফেয মুনযিরী বলেছেন সনদটিতে তেমন অসুবিধা নেই। হাদিসে আরোও এসেছে সর্বপ্রথম তোমরা তোমাদের দ্বীন হতে যা হারাবে তা হচ্ছে আমানত। আর সর্বশেষ তোমরা তোমাদের দ্বীন হতে যা হারাবে তা হচ্ছে সলাত।’’

সুতরাং আমানতের ক্ষেত্রে অবহেলা ও ঢিলেমি এবং দ্বীনের ওয়াজিব বিনষ্ট করা মুলত মানুষের অবস্থার মাঝে বিপর্যয় ও ত্রুটি বিচ্যুতি সৃষ্টি করে এবং মানব জীবনকে তিক্ত ও বিষাক্ত করে তুলে, সামজিক সকল বন্ধন ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়, জাতীয় স্বার্থ ও কল্যনকে আশংকাগ্রস্ত ও ব্যর্থতায় রূপান্তরিত করে। গোটা পৃথিবীকে ধ্বংসলীলার দিকে ঠেলে দেয়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি এরশাদ করেছেন, যখন আমানত নষ্ট করা হবে তখন তোমরা কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা কর।’’-বুখারি।

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগন! আমানতের সংরক্ষন কর। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ  أُولَٰئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُّكْرَمُونَ

“যারা নিজেদের নামায সংরক্ষঙ্কারী তারাই উদ্যানসমূহে সম্মনিত হবে। [সূরা মা’আরিজ—৩৩-৩৪]

আল্লাহ্‌ তায়ালা এরশাদ করেছেন,

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের অধিকারীদের কাছে দান করে দিতে। আর যখন তোমরা মানুষদের মাহে বিচার মাঝে বিচার ফয়সালা কর তখন তোমরা ন্যায় বিচার কর। অবশ্যই আল্লাহ্‌ তোমাদের কতই না উত্তম উপদেশ দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা নিসা—৫৮]

এ বরকতময় আয়াতটি সকলপ্রকার আমানতকে একত্রিত করে বর্ণনা করেছে। বিশাল বিশাল আমানত সমূহের অন্যতম হচ্ছে চাকুরি ও পদ মর্যাদার আমানত। সুতরাং যে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভবে আদায় করল । পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি চাকুরি ও পদমর্যাদার হক ও দায়িত্বপালন না সে মূলত তার  সংশ্লিষ্ট আল্লাহর বান্দাদের স্বার্থ ও হক আদায় করল না। আর যে এর মাধ্যমে ঘুষ গ্রহন করল, অথবা মুসলমানের সম্পদ অবৈধভাবে পকেট পুরাল সে নিজেকেও ধোঁকা দিল, এবং নিজের জন্য এমন পাথেয় অর্জন করল যা তাকে ধ্বংস করে দিবে।

সহিহ মুসলিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবে এসেছে, তিনি বলেন, “যখন কিয়ামতের দিন সকল মানুষদের একত্রিত করা হবে তখন প্রত্যেক গাদ্দার বা প্রতারকের সাথে নিশানা ব পতাকা উড্ডীন করা হবে। আর বলা হবে এটা হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুকের প্রতারণার নিশান।’’

জখন্যতম আমানতের অন্যতম হচ্ছে গচ্ছিত সম্পদ ও অধিকার সমূহ যার ব্যপারে মানুষ তোমাকে আমানতদার মনে করে তোমার কাছে তা রেখেছে। ইমাম আহমাদ, বায়হাকি ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লহু আনহু হতে তিনি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, “ আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ব্যক্তির আমানত ব্যতিত সকল গুনাহের জন্য কাফফারা হবে।

তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ে আশা হবে তারপরা বলা হবে তুমি তোমার আমানদ আদায় করে দাও। সে বলবে, হে আমার রব! কিভাবে আদায় করব দুনিয়া তো শেষ হয়ে গেছে? তারপর তাকে বলা হবে হাবিয়া দোযখের দিকে নিয়ে যাও তখন তাকে হাবিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ইতিমধ্যে যেভাবে তার কাছে আমানত দেয়া হয়েছিল ঠিক সেরুপ করে আমানতকে আকৃতি দেয় হবে তখন সে তা দেখে চিনতে প্রবে ফলে সে আমানতের পিছনে তা লাভ করার জন্য ধাওয়া করবে এবং নিজের দু’কাধের উপর আমানতকে বহন করতে থাকবে আর সে এ ধারনা পোষন করবে যে, সে বের হয়ে যাবে এটাকে নিজ দু’কাধ হতে সরাতে পারবে অথচ সে এভাবে অনন্তকাল আমানতের পিছু ধাওয়া করতে থাকবে।’’

আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যে তোমার কাছে আমানত রেখেছে তার আমানত আদায় করে দাও, পক্ষান্তরে যে তোমার সাথে খেয়ানত করেছে তার সাথে খেয়ানত করো না।’’

আল্লাহ আমাদের আমানত রক্ষা করার ও খেয়ানত থেকে বাঁচার তাওফীক দিন। আমীন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88