শূকরের গোশত যে কারণে হারাম
রচনায় : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার
সম্পাদনা : আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক
মুসলমানরা শূকরের গোশত কেন খায় না, এর সরাসরি জবাব হল, আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা হারাম করেছেন তাই মুসলিম সম্প্রদায় তা হারাম বলে জানে এবং তা ভক্ষণ-ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
(বল, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর উপর কোনো হারাম পাই না, যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূরকরের গোশত হয়- কারণ নিশ্চয় তা অপবিত্র কিংবা এমন অবৈধ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য যবেহ করা হয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে, তাহলে নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ) [ সূরা আল আনআম: ১৪৫]
শূকরের গোশত হারাম হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহয় বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয় নি। তবে এতটুকু বলা হয়েছে যে, এটা পঙ্কিল – রিজস।
শরীয়ত ও সুস্থ প্রকৃতি যে বস্ত্তটিকে নিকৃষ্ট ও পঙ্কিল বলে জ্ঞান করে তাকেই রিজ্স বলা হয়। আল কুরআন শূকরকে পঙ্কিল বলে আখ্যায়িত করেছে, হারাম হওয়ার জন্য এতটুকু কারণই যথেষ্ট।
শূকরের গোশত হারাম হওয়ার পেছনে অবশ্য আরেকটি সাধারণ কারণ রয়েছে যা শূকরসহ ও অন্যান্য হারাম বস্ত্তকে সমানভাবে শামিল করে। আর তা হলো আল্লাহ তাআলার বাণী 🙁 এবং তাদের জন্য অপিত্র বস্ত্তগুলো হারাম করেন) [ সূরা: আল আরাফ]
অতএব, আল্লাহ তাআলা যেসব বস্ত্ত হারাম করেছেন সেগুলো অপবিত্র, খাবায়েছ।
শূকরের গোশত কেন অপবিত্র এ বিষয়ে আগেকার মুসলমানদের জ্ঞান সীমিত ছিল বলা যায়। পরবর্তীতে শূকরের গোশত নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। তাতে উঠে আসে যে শূকরের গোশত মারত্মক ধরনের ভাইরাস ও জীবানু বহন করে। আবিস্কৃত হলো যে শূকরের গোশত ভক্ষণকারীর দেহে মারাত্মক ধরনের কৃমির সৃষ্টি হয় যা উক্ত ব্যক্তির নাড়ি-ভূরি ও কলিজায় বাসা বাঁধে, চিকিৎসা দ্বারা যা দূর করা সম্ভব হয় না। মেডিক্যাল বিজ্ঞানের পরিভাষায় এ কৃমিটিকে Treichine বলা হয়।
ফ্রান্সের লারোস বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, Treichine নামক ক্ষতিকর কৃমি আক্রান্ত-ব্যক্তির কলিজাসহ সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রোগীর দেহে বংশ বিস্তার করে এবং বছরের পর বছর দেহে অবস্থান করতে থাকে।
শূকরের গোশত অপবিত্র, পঙ্কিল, ক্ষতিকারক এ বিষয়টি সোয়ইন ফ্লু ছড়িয়ে যাওয়ার পর খুবই স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। সোয়াইন ফ্লু মূলত শূকরের তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। শ্বাস-প্রশ্বাস, সরাসরি মিলন- এসবের মাধ্যমে ভাইরাসটি এক শূকর থেকে অন্য শূকরে সংক্রমিত হয়। শূকরের সংস্পর্শে এলে মানুষের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখন পর্যন্ত এ ফ্লুর কার্যকরী কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি । মেক্সিকোতে আক্রান্ত হয়ে ইতঃমধ্যেই এ ভাইরাসে মারা গেছে ১৫৩ জন, এ ছাড়া কানাডায় ৬, স্কটল্যান্ডে ২, যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি রাজ্যে ৫০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৪০ জনই নিউইউয়র্ক সিটি স্কুলের।
অতএব শূকরের গোশত যে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এ ব্যাপারে এখন আর কোনো সন্দেহ রইল না।
শূকরবক্ষক অনেকেই দাবি করেন যে বর্তমান যুগে উন্নত পদ্ধতির ব্যবহার করে বিশেষ যতেণ শুকর লালন-পালন করলে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে না, বর্তমান পরিস্থিতি তাদের এ দাবিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।