সলাতে মুবাশ্‌শির (পর্ব ২২)

রচনায় : আব্দুল হামীদ ফাইযী

ইস্তিফতাহ্‌র দুআ

নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) নামাযে তাঁর দৃষ্টি অবনত করে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখতেন। (বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৪ নং) নামাযের প্রারম্ভে তিনি বিভিন্ন রুপে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করতেন এবং প্রার্থনা করতেন। পরন্তু নামায ভুলকারী সাহাবীকেও তিনি বলেছিলেন, “কোন ব্যক্তিরই নামায ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তকবীর দিয়েছে, আল্লাহ আয্‌যা অজাল্লার প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করেছে এবং যথাসম্ভব কুরআন পাঠ করেছে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)

এই অবস্থায় তিনি বিভিন্ন সময় ও নামাযে বিভিন্ন দুআ পড়েছেন।

যার কিছু নিম্নরুপ:-

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) যখন নামাযে (তাহ্‌রীমার) তকবীর দিতেন, তখন ক্বিরাআত শুরু করার পূর্বে কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তকবীর ও ক্বিরাআতের মাঝে চুপ থেকে কি পড়েন আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, “আমি বলি,
اَللّــهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَـمَا بَاعَــدْتَّ بَيْنَ الْمَشــْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ।

 উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা বা-ইদ বাইনী অ বাইনা খাত্বা-য়্যা-য়্যা কামা বা-আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি অল মাগরিব, আল্লা-হুম্মা নাক্বিনী মিনাল খাত্বা-য়্যা, কামা য়্যুনাক্বাষ ষাওবুল আবয়্যাযুমিনাদ দানাস, আল্লাহু-ম্মাগসিল খাত্বা-য়্যা-য়্যা বিল মা-য়ি অষষালজি অলবারাদ।

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি আমার মাঝে ও আমার গুনাহসমূহের মাঝে এতটা ব্যবধান রাখ যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ব্যবধান রেখেছ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে গুনাহসমূহ থেকে পরিষ্কার করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহসমূহকে পানি, বরফ ও করকি দ্বারা ধৌত করে দাও।” (বুখারী ৭৪৪, মুসলিম, সহীহ ৫৯৮, আবূদাঊদ, সুনান ৭৮১, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, আআহমাদ, মুসনাদ ২/৯৮, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮০৫, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩১, ৪৯৪, ইআশা: ২৯১৯৯ নং)

লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত দুআটি তিনি ফরয নামাযে বলতেন। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৯১পৃ:)

২। আবূ সাঈদ ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) নামাযের শুরুতে এই দুআ পাঠ করতেন,

سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَلاَ إِلهَ غَيْرُكَ।

উচ্চারণ:- সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকাওয়াতাআ’-লা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলা-হা গায়রুক।

অর্থ:- তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৭৬, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮০৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩, বায়হাকী ২/৩৪,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৫, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, ইআশা:)

মহানবী (সাঃ) বলেন, “নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা হল বান্দার ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা—’ বলা।” (তাওহীদ, ইবনে মাজাহ্‌, নাসাঈ, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৯৩৯ নং)

৩। মহানবী ফরযে ও নফলে তাকবীরে তাহ্‌রীমার পর বলতেন,

وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيْفاً وَّمَا أَناَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَ مَحْيَاىَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَ أَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلهَ إَلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ أَنْتَ رَبِّيْ وَ أَنَا عَبْدُكَ ، ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ جَمِيْعاً إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِيْ لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِيْ لأَحْسَنِهَا  إِلاَّ أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِيْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ وَالْمَهْدِيْ  مَنْ هَدَيْتَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، لاَ مَنْجَا وَلاَ مَلْجَأَ مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَ أَتُوْبُ إِلَيْكَ।

 উচ্চারণ:- অজজাহ্‌তু অজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামা-ওয়া-তি অলআরযা হানীফাঁউ অমা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালা-তী অনুসুকী অমাহ্‌য়্যা-য়্যা অমামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল আ’-লামীন। লা শারীকা লাহু অবিযা-লিকা উমিরতু অআনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আন্তাল মালিকু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত। সুবহা-নাকা অবিহামদিকা আন্তা রাব্বী অ আনা আব্দুক। যালামতু নাফসী অ’তারাফতু বিযামবী, ফাগফিরলী যামবী জামীআন ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্ত। অহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আখলা-ক্বি লা য়্যাহ্‌দী লিআহ্‌সিনহা ইল্লা আন্ত। অস্বরিফ আন্নী সাইয়্যিআহা লা য়্যাস্বরিফু আন্নী সাইয়্যিআহা ইল্লা আন্ত। লাব্বাইকা অ সা’দাইক, অলখায়রু কুল্লুহু ফী য়্যাদাইক। অশশার্রু লাইসা ইলাইক, অল-মাহ্‌দীয়্যু মানহাদাইত, আনা বিকা অ ইলাইক। লা মানজা অলা মালজাআ মিনকা ইল্লা ইলাইক, তাবা-রাকতা অতাআ’-লাইত, আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক।

অর্থ:- আমি একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব -জাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যই। তাঁর কোন অংশী নেই। আমি এ সম্বন্ধেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ্‌ তুমি ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমার প্রভু ও আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করেছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউঅপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি আমাকে পথ দেখাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউ সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি পথ দেখাতে পারে না। মন্দ চরিত্রকে আমার নিকট হতে দূরে রাখ, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউমন্দ চরিত্রকে আমার নিকট থেকে দূর করতে পারে না। আমি তোমার আনুগত্যে হাজির এবং তোমার আজ্ঞা মানতে প্রস্তুত। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে এবং মন্দের সম্পর্ক তোমার প্রতি নয়। আমি তোমার অনুগ্রহে আছি এবং তোমারই প্রতি আমার প্রত্যাবর্তন। তুমি বরকতময় ও মহিমময়, তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। (মুসলিম, সহীহ ৭৭১, আআহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ আহমাদ, মুসনাদ, শাফেয়ী, ত্বাবারানী, মু’জাম)

৪- اَللهُ أَكْبَرُ كَبِيْراً، اَلْحَمْدُ للهِ كَثِيْراً، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَّأَصِيْلاً।

উচ্চারণ:- আল্লা-হু আকবারু কাবীরা, অলহামদু লিল্লা-হি কাসীরা, অ সুবহা-নাল্লা-হি বুকরাতাঁউঅ আস্বীলা।

অর্থ:- আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহর অনেক অনেক প্রশংসা, আমি সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি।

এই দুআটি দিয়ে নফল নামায শুরু করতে হয়। জনৈক সাহাবী এই দুআ দিয়ে নামায শুরু করলে মহানবী (সাঃ) বললেন, “এই দুআর জন্য আমি বিস্মিত হয়েছি। কারণ ওর জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হল।”

ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট ঐ কথা শোনার পর থেকে আমি কোন দিন ঐ দুআ পড়তে ছাড়ি নি। (মুসলিম, সহীহ ৬০১, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান)

আবূ নুআইম ‘আখবারু আসবাহান’ গ্রন্থে (১/২১০) জুবাইর বিন মুত্বইম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (সাঃ) কে উক্ত দুআ নফল নামাযে পড়তে শুনেছেন।

৫। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক ব্যক্তি হাঁপাতে হাঁপাতে কাতারে শামিল হয়ে বলল,

اَلْحَمْدُ للهِ حَمْداً كَثِيْراً طَيِّباً مُّبَارَكاً فِيْهِ।

উচ্চারণ:- আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বাইয়িবাম মুবা-রাকান ফীহ্‌।

অর্থ:- আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা; যে প্রশংসা অজস্র, পবিত্র ও প্রাচুর্যময়।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) নামায শেষ করার পর বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে ঐ দুআ পাঠ করেছে?” লোকেরা সকলে চুপ থাকল। পুনরায় তিনি বললেন, “কে বলেছে ঐ দুআ? যে বলেছে, সে মন্দ বলে নি।” উক্ত ব্যক্তি বলল, ‘আমিই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে ফেলেছি।’ তিনি বললেন, “আমি ১২ জন ফিরিশ্‌তাকে দেখলাম, তাঁরা ঐ দুআ (আল্লাহর দরবারে) উপস্থিত করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে!” (মুসলিম, সহীহ ৬০০, আহমাদ, মুসনাদ)

৬। তিনি তাহাজ্জুদের নামাযের শুরুতে পড়তেন,

  اَللّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَ مَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ  وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَ قَوْلُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّوْنَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اَللّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، أَنْتَ رَبُّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ  وَأَنْتَ  الْمُؤَخِّرُ أَنْتَ إِلهِيْ، لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ।

উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা লাকালহামদু আন্তা নূরুস সামা-ওয়া-তি অলআরযি অমান ফীহিন্ন। অলাকালহামদু আন্তা কাইয়্যিমুস সামা-ওয়া-তি অলআরযি অমান ফীহিন্ন। অলাকালহামদু আন্তা মালিকুস সামা-ওয়া-তি অলআরযি অমান ফীহিন্ন। অলাকালহামদু আন্তালহাক্ব, অওয়া’দুকালহাক্ব, অক্বাওলুকালহাক্ব, অলিক্বা-উকা হাক্ব, অলজান্নাতুহাক্ব, অন্না-রুহাক্ব, অসসা-আতুহাক্ব, অন্নাবিয়্যুনাহাক্ব, অমুহাম্মাদুনহাক্ব। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অবিকা আ-মানতু অইলাইকা আনাবতু, অবিকা খা-সামতু অইলাইকাহা-কামতু আন্তা রাব্বুনা অইলাইকাল মাসীর। ফাগ্‌ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখখারতু অমা আসরারতু অমা আ’লানতু অমা আন্তা আ’লামু বিহী মিন্নী। আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অআন্তাল মুআখখিরু আন্তা ইলা-হী, লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা অলাহাওলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিক।

অর্থ- হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা। তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সকল কিছুর জ্যোতি। তোমারই সমস্ত প্রশংসা, তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সকল কিছুর নিয়ন্তা, তোমারই সমস্ত প্রশংসা। তুমি আকাশম ন্ড লী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সকল কিছুর অধিপতি। তোমারই সমস্ত প্রশংসা, তুমিই সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতিই সত্য, তোমার কথাই সত্য, তোমার সাক্ষাৎ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ (সাঃ) সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপরেই ভরসা করেছি, তোমার উপরেই ঈমান (বিশ্বাস) রেখেছি, তোমার দিকে অভিমুখী হয়েছি, তোমারই সাহায্যে বিতর্ক করেছি, তোমারই নিকট বিচার নিয়ে গেছি। তুমি আমাদের প্রতিপালক, তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল। অতএব তুমি আমার পূর্বের, পরের, গুপ্ত, প্রকাশ্য এবং যা তুমি অধিক জান সে সব পাপকে মাফ করে দাও। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। তুমি আমার উপাস্য, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং তোমার তওফীক ছাড়া পাপ থেকে ফিরার ও সৎকাজ (নড়া-সরা) করার সাধ্য নেই। (বুখারী, মুসলিম,  আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ১২১১ নং)

নিম্নোক্ত দুআগুলিও তিনি তাহাজ্জুদের নামাযের শুরুতে পাঠ করতেন:-

৭। ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা—’ (২নং দুআ) পড়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’ ৩ বার, এবং ‘আল্লাহু আকবারু কাবীরা’ ৩ বার। (আবূদাঊদ, সুনান, ৭৭৫ নং, ত্বাহাকেম, মুস্তাদরাক, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৯৪পৃ:)

اَللّهُمَّ رَبَّ جِبْرَآئِيْلَ وَ مِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَآفِيْلَ، فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ، اِهْدِنِيْ لِمَا اخْتُلِفَ
فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِيْ مَنْ تَشَاءُ إِلى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ।

 উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা রাব্বা জিবরা-ঈলা অমীকা-ঈলা অ ইসরা-ফীল। ফা-তিরাস সামা-ওয়া-তি অলআরয্ব, আ-লিমাল গায়বি অশশাহা-দাহ্‌। আন্তা তাহ্‌কুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কা-নূ ফীহি য়্যাখতালিফূন। ইহ্‌দিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনালহাক্বি বিইযনিক, ইন্নাকা তাহ্‌দী মান তাশা-উইলা স্বিরাতীম-মুস্তাক্বীম।

অর্থ- হে আল্লাহ! হে জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু! হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা! হে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা! তুমি তোমার বান্দাদের মাঝে মীমাংসা কর যে বিষয়ে ওরা মতভেদ করে। যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে তোমার অনুগ্রহে সত্যের পথ দেখাও। নিশ্চয় তুমি যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখিয়ে থাক। (মুসলিম,  আআহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৭৬৭, মিশকাত ১২১২ নং)

৯। ‘আল্লাহু আকবার’ ১০বার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ্‌’ ১০বার, ‘সুবহা-নাল্লাহ্‌’ ১০বার, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’১০বার, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্‌’ ১০বার, ‘আল্লা-হুম্মাগফির লী অহ্‌দিনী অরযুক্বনী অআ-ফিনী’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, হেদায়াত কর, রুজি ও নিরাপত্তা দাও) ১০ বার, এবং ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনায্বযাইক্বি ইয়াউমাল হিসাব’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি হিসাবের দিনে সংকীর্ণতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) ১০ বার। (আহমাদ, মুসনাদ, ইআশা:, আবূদাঊদ, সুনান ৭৬৬ নং, ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব ২/৬২)

১০।  ‘আল্লাহু আকবার’ ৩ বার। অতঃপর,

ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ।

 উচ্চারণ- যুল মালাকূতি অলজাবারুতি অলকিবরিয়া-য়ি, অলআযামাহ্‌।

 অর্থ- (আল্লাহ) সার্বভৌমত্ব, প্রবলতা, গর্ব ও মাহাত্মের অধিকারী। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৭৪ নং)

ক্বিরাআত শুরু করার পূর্বে ইস্তিআযাহ

উপরোক্ত একটি দুআ পড়ার পর নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) ক্বিরাআত শুরু করার জন্য শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, বলতেন,

أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ।

উচ্চারণ:- আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, মিনহামযিহী অনাফখিহী অনাফষিহ্‌।

আবার কখনো বলতেন,

أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ।

উচ্চারণ- আঊযু বিল্লা-হিস সামীইল আলীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, মিনহামযিহী অনাফখিহী অনাফষিহ্‌।

অর্থ- আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে তার প্ররোচনা ও ফুৎকার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৭৫, দারাক্বুত্বনী, সুনান, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইআশা:, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৪২নং)

‘বিসমিল্লাহ্‌’ পাঠ

এরপর নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْم‘ বিসমিল্লা-হির রাহ্‌মা-নির রাহীম’ (অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।) পাঠ করতেন। এটিকে তিনি নি:শব্দেই পড়তেন। এ ছাড়া সশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ পড়ার ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ও সহীহ হাদীস নেই। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ১৯৬পৃ:)

আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ), আবূ বকর ও উমার (রাঃ) এর সাথে নামায পড়েছি। তাঁরা সকলেই ‘আলহামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন’ বলে ক্বিরাআত শুরু করতেন। (বুখারী ৭৪৩, আবূদাঊদ, সুনান ৭৮২, তিরমিযী, সুনান ২৪৬, নাসাঈ, সুনান ৮৬৭ নং প্রমুখ) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, তাঁরা ক্বিরাআতের শুরুতে বা শেষেও ‘বিসমিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম’ উল্লেখ করতেন না। আর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, তাঁদের কাউকেই ‘বিসমিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম’ বলতে শুনি নি। (মুসলিম, সহীহ ৩৯৯, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ৮৭০, ৮৭১নং, ইবনে হিব্বান, সহীহ)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member