স্বলাতে মুবাশ্শির (পর্ব ৫)
রচনায় : আব্দুল হামীদ ফাইযী মাদানী
ওযু করার নিয়ম
১- নামাযী প্রথমে মনে মনে ওযুর নিয়ত করবে। কারণ নিয়ত ছাড়া কোন কর্মই শুদ্ধ হয় না। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১নং)
২- ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে ওযু শুরু করবে। কারণ শুরুতে তা না বললে ওযু হয় না। (আবূদাঊদ, সুনান ৯২নং)
৩- তিনবার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।হাতে ঘড়ি, চুড়ি, আংটি প্রভৃতি থাকলে তা হিলিয়ে তার তলে পানি পৌঁছাবে। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং) এরপর পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে পানি নিতে পারে। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ৩৯৪নং) প্রকাশ যে, নখে নখ পালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত ওযু হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় ওযু-গোসল হয়ে যাবে।
৪- তারপর ডানহাতে পানি নিয়ে ৩ বার কুল্লি করবে।
৫-অতঃপর পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বামহাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। এরুপ ৩ বার করবে। তবে রোযা অবস্থায় থাকলে সাবধানে নাকে পানি টানবে, যাতে গলার নিচে পানি না চলে যায়। (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ৮৯, মিশকাত ৪০৫, ৪১০নং)
অবশ্য এক লোট পানিতেই একই সাথে অর্ধেক দিয়ে কুল্লি করে বাকি অর্ধেক দিয়ে নাক ঝাড়লেও চলে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৯৪নং)
৬- অতঃপর মুখমন্ডল (এক কান থেকে অপর কানের মধ্যবর্তী এবং কপালের চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত অঙ্গ) ৩ বার পানি লাগিয়ে দুইহাত দ্বারা ধৌত করবে। (বুখারী ১৪০নং) এক লোট পানি দাড়ির মাঝে দিয়ে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে আঙ্গুল চালিয়ে তা খেলাল করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৪০৮নং) মহিলাদের কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।
৭- অতঃপর প্রথমে ডানহাত আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত এবং তদনুরুপ বামহাত ৩ বার (প্রত্যেক বারে পুরোহাতে পানি ফিরিয়ে রগড়ে) ধৌত করবে।
৮- অতঃপর একবার মাথা মাসাহ্ করবে; নতুন পানি দ্বারা দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুল গুলিকে মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের যেখানে চুল শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাথা মাসাহ্ করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৯৪নং) মাথায় পাগড়ি থাকলে তার উপরেও মাসাহ্ করবে। (মুসলিম, মিশকাত ৩৯৯নং)
৯- অতঃপর আর নতুন পানি না নিয়ে ঐ হাতেই দুই কান মাসাহ্ করবে; শাহাদতের (তর্জনী) দুই আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর দিক এবং দুই বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের পিঠ ও বাহির দিক মাসাহ্ করবে। (আবূদাঊদ, সুনান ৯৯, ১২৫নং)
প্রকাশ যে, গর্দান মাসাহ্ করা বিধেয় নয়। বরং এটা বিদআত।
১০- অতঃপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা গাঁট পর্যন্ত ৩ বার করে রগড়ে ধোবে। কড়ে আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করে রগড়ে ধৌত করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং)
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “পূর্ণাঙ্গরুপে ওযু কর, আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল কর আর রোযা না থাকলে নাকে খুব ভালরুপে পানি চড়াও। (তারপর তা ঝেড়ে ফেলে উত্তমরুপে নাক সাফ কর।) (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪০৫-৪০৬ নং)
১১- এরপর হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর থেকে শরমগাহে ছিটিয়ে দেবে। বিশেষ করে পেশাব করার পর ওযু করলে এই আমল অধিকরুপে ব্যবহার্য। যেহেতু পেশাব করে তাহারতের পর দু-এক কাতরা পেশাব বের হওয়ার অসঅসা থাকে। সুতরাং পানি ছিটিয়ে দিলে ঐ অসঅসা দূর হয়ে যায়। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫২-১৫৪, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৩৭৪-৩৭৬নং) এই আমল খোদ জিবরাঈল (আঃ) মহানবী (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৮৪১নং)
ওযুর শেষে দুআ
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যে কেউই পরিপূর্ণরুপে ওযু করার পর (নিম্নের যিক্র) পড়ে তার জন্যই জান্নাতের আটটি দ্বার উন্মুক্ত করা হয়; যে দ্বার দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারে।
أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ।
“আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ্দাহু লা শারীকা লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু অরাসূলুহ্।”
অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশী নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রসূল। (মুসলিম ২৩৪নং, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ্)
তিরমিযীর বর্ণনায় এই দুআর শেষে নিম্নের অংশটিও যুক্ত আছে:-
اَللّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ।
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়াবীনা, অজ্আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের দলভুক্ত কর। (মিশকাত ২৮৯নং)
ওযুর শেষে নিম্নের দুআ পাঠ করলে তা শুভ্র নিবন্ধে লিখে সীল করা হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা নষ্ট করা হয় না।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ।
“সুবহানাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত , আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক।”
অর্থাৎ, তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমিই একমাত্র সত্য উপাস্য। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) করছি। (ত্বাহাবী, সহিহ তারগিব ২১৮নং, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/১৩৫, ৩/৯৪)
এ ছাড়া প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট দুআ অথবা শেষে ‘ইন্না আনযালনা’ পাঠ বিদআত।
ওযুর আনুষঙ্গিক মাসায়েল
ওযুর অঙ্গগুলোকে কমপক্ষে ১ বার করে ধোয়া জরুরী। ২ বার করে ধুলেও চলে। তবে ৩ বার করে ধোয়াই উত্তম। এরই উপরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) তথা সাহাবায়ে কেরামের আমল বেশী। কিন্তু তিনবারের অধিক ধোয়া অতিরঞ্জন, বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করা। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪১৭-৪১৮ নং)
ওযুর কোন অঙ্গ ২ বার এবং কোন অঙ্গ ৩ বার ধোয়া দূষণীয় নয়। (সহীহ, আবূদাঊদ, সুনান ১০৯, সহীহ, তিরমিযী, সুনান ৪৩নং)
জোড়া অঙ্গগুলির ডান অঙ্গকে আগে ধোয়া রসূল (সাঃ) এর নির্দেশ। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূ দাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪০১নং) তিনি ওযু, গোসল, মাথা আঁচড়ানো, জুতো পরা প্রভৃতি সকল কাজের সময় ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪০০নং)
ওযুর অঙ্গগুলো -বিশেষ করে হাত ও পা- রগড়ে ধোয়া উত্তম। রসূল (সাঃ) এর এরুপই আমল ছিল। (নাসাঈ, সুনান ৭২, মিশকাত ৪০৭নং)
অঙ্গসমূহ এমনভাবে ধুতে হবে যাতে কোন সামান্য জায়গাও শুকনো থেকে না যায়। ওযুর অঙ্গে কোন প্রকার পানিরোধক বস্তু (যেমন পেন্ট, চুন, কুমকুম, অলঙ্কার, ঘড়ি, টিপ ইত্যাদি) থাকলে তা অবশ্যই দূর করে নিতে হবে। যেহেতু আল্লাহর নবী (সাঃ) একদা কতক লোকের শুষ্ক গোড়ালি দেখে বলেছিলেন, “গোড়ালিগুলোর জন্য দোযখে ধ্বংস ও সর্বনাশ রয়েছে! তোমরা ভালরুপে (সকল অঙ্গকে সম্পূর্ণরুপে) ধুয়ে ওযু কর।” (মুসলিম, মিশকাত ৩৯৮নং)
এক ব্যক্তি ওযু করার পর মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে দেখলেন, তার দুই পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুষ্ক রয়েছে। তিনি তাকে বললেন, “তুমি ফিরে গিয়ে ভালরুপে ওযু করে এস।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৫৮নং)
এক ব্যক্তিকে তিনি দেখলেন নামায পড়ছে, আর তার এক পায়ের পিঠে এক দিরহাম বরাবর স্থান শুষ্ক রয়েছে, যাতে সে পানিই পৌঁছায়নি। তিনি তাকে পুনরায় ওযু করে নতুনভাবে নামায পড়তে আদেশ দিলেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১৬১ নং)
ওযু করার সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে একটানা অঙ্গগুলোকে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ধুতে হবে। মাঝে বিরতি দেওয়া বৈধ নয়। সুতরাং কেউ মাথা বা কান মাসাহ্ না করে ভুলে পা ধুয়ে ফেললে এবং সত্বর মনে পড়লে, সে মাসাহ্ করে পুনরায় পা ধোবে। বহু পরে মনে পড়লে পুনরায় নতুন করে ওযু করবে।
কেউ যদি ওযু শুরু করার পর কাপড়ে নাপাকী দেখে এবং তা সাফ করতে করতে পূর্বেকার ধৌত অঙ্গ শুকিয়ে যায়, তাহলে তাকে পুনঃ ওযু করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি ওযু সম্পর্কিত কোন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্নতা কেটে যায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। যেমন ওযু করতে করতে হাতে বা ওযুর কোন অঙ্গে পেন্ট বা নখ-পালিশ বা চুন ছাড়াতে অথবা পানি শেষ হয়ে গেলে পুনরায় কুঁয়ো বা কল থেকে পানি তুলতে কিংবা ট্যাঙ্কের পাইপ খুলতে প্রভৃতি কারণে ওযুতে সামান্য বিরতি এসে পূর্বেকার ধোয়া অঙ্গ শুকিয়ে যায়, তাহলে পুনরায় নতুনভাবে শুরু করে ওযু করতে হবে না। যে অঙ্গ ধোয়া হয়েছিল তার পর থেকেই বাকী অঙ্গসমূহ ধুয়ে ওযু শেষ করা যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ১/১৫৭)
ওযু করার সময় বাঁধানো দাঁত খোলা বা খেলাল করে দাঁতের ফাঁক থেকে লেগে থাকা খাদ্যাংশ বের করা জরুরী নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/২৮৩, ফম: ১/২১০)
একই পাত্র হতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক সাথে অথবা স্ত্রী আগে ও স্বামী পরে অথবা তার বিপরীতভাবে ওযু-গোসল করায় কোন ক্ষতি বা বাধা নেই। আল্লাহর রসূল (সাঃ) তথা সাহাবাগণ এরুপ আমল করেছেন। (বুখারী, ফতহুল বারী ১/৩৫৭-৩৫৮, মুসলিম, মিশকাত ৪৪০নং)
ঠান্ডার কারণে গরম পানিতে ওযু-গোসল করায় কোন বাধা নেই। হযরত উমার (রাঃ) এরুপ করতেন। (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৩৫৭-৩৫৮)
ওযু-গোসলের জন্য পরিমিত পানি ব্যবহার করা কর্তব্য। অধিক পানি খরচ করা অতিরঞ্জনের পর্যায়ভুক্ত; আর তা বৈধ নয়। (আহমাদ, মুসনাদ আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ৪১৮নং) মহানবী (সাঃ) ১ মুদ্দ্ (কম-বেশী ৬২৫ গ্রাম) পানিতে ওযু এবং ১ সা’ থেকে ৫ মুদ্দ্ (কম-বেশী ২৫০০ থেকে ৩১২৫ গ্রাম) পানিতে গোসল করতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৯নং) সুতরাং যাঁরা ট্যাঙ্কের পানিতে ওযু-গোসল করেন, তাঁদেরকে সতর্ক হওয়া উচিত।
ওযুর ফরয অঙ্গ সম্পূর্ণ কাটা থাকলে তার বাকী অঙ্গ ধুতে বা মাসাহ্ করতে হয় না। যেমন একটি হাত গোটা বা কনুই পর্যন্ত অথবা একটি পা গোটা বা গাঁট পর্যন্ত কাটা থাকলে বাকী একটি হাত বা পা-ই ওযুর জন্য ধুতে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৯০)
ওযুর শেষে পাত্রের অবশিষ্ট পানি থেকে এক আঁজলা দাঁড়িয়ে পান করার কথা হাদীসে রয়েছে। (বুখারী ৫৬১৬, তিরমিযী, সুনান ৪৪-৪৫, নাসাঈ, সুনান ৯৩নং)
ওযুর শেষে ওযুর পানি অঙ্গ থেকে কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা দূষণীয় নয়। মহানবী (সাঃ) ওযুর পর নিজের জুব্বায় নিজের চেহারা মুছেছেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান ৩৭৯নং) ওযূর পর পানি মুছার জন্য তাঁর একটি বস্ত্র খন্ড ছিল। (তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৪৮৩০নং)
ওযুর পর দুই রাকআত নামাযের বড় ফযীলত রয়েছে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে কোন ব্যক্তি যখনই সুন্দরভাবে ওযু করে সবিনয়ে একাগ্রতার সাথে (কায়মনোবাক্যে) দুই রাকআত নামায পড়ে তক্ষণই তার জন্য জান্নাত অবধার্য হয়ে যায়।” (মুসলিম ২৩৪নং, আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে, কোন ভুল না করে ( একাগ্রচিত্তে) দুই রাকআত নামায পড়ে সেই ব্যক্তির পূর্বেকার সমূদয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (আবু দাঊদ, সহীহ তারগীব ২২১নং)
ওযুর পরে নামায পড়ার ফলেই নবী (সাঃ) বেহেশ্তে তাঁর আগে আগে হযরত বিলালের জুতোর শব্দ শুনেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, সহিহ তারগিব ২১৯নং)
প্রিয় নবী (সাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু করতেন। তবে সাহাবাগণ না ভাঙ্গা পর্যন্ত একই ওযুতে কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী ২১৪ নং, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪২৫নং)
অবশ্য মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাঃ) এক ওযুতেই পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়েছিলেন। (মুসলিম, সহীহ ২৭৭, আবূদাঊদ, সুনান ১৭২, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৫১০নং)
সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা এবং ওযু ভাঙ্গলে সাথে সাথে ওযু করে নেওয়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা (প্রত্যেক বিষয়ে) কর্তব্যনিষ্ঠ রহ্; আর তাতে কখনই সক্ষম হবে না। জেনে রেখো, তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল নামায। আর মুমিন ব্যতীত কেউই ওযুর হিফাযত করবে না।” (ইবনে মাজাহ্,হাকেম, সহীহ তারগীব ১৯০নং)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদাহ্ তাঁর পিতার নিকট হতে বর্ণনা করে বলেন, একদা প্রভাতকালে আল্লাহর রসূল (সাঃ) হযরত বিলালকে ডেকে বললেন, “হে বিলাল! কি এমন কাজ করে তুমি জান্নাতে আমার আগে চলে গেলে? আমি গত রাত্রে (স্বপ্নে) জান্নাতে প্রবেশ করলে তোমার (জুতার) শব্দ আমার সামনে থেকে শুনতে পেলাম!” বিলাল বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যখনই আযান দিয়েছি তখনই দুই রাকআত নামায পড়েছি। আর যখনই আমি অপবিত্র হয়েছি তখনই আমি সাথে সাথে ওযু করে নিয়েছি।’ এ শুনে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বললেন, “এই কাজের জন্যই। (জান্নাতে আমার আগে আগে তোমার শব্দ শুনলাম।)” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ তারগীব ১৯৪নং)