স্বলাতে মুবাশ্‌শির (পর্ব ২)

রচনায়: আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী

নামাযের নিয়ত

আমল ও ইবাদত শুদ্ধ-অশুদ্ধ এবং তাতে সওয়াব পাওয়া-নাপাওয়ার কথা নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত শুদ্ধ হলে আমল শুদ্ধ; নচেৎ না। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “যাবতীয় আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়, যার সে নিয়ত করে থাকে। যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব কোন বিষয় লাভের উদ্দেশ্যে হয়, সে ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়। যার হিজরত কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হয়, তার প্রাপ্যও তাই। যে যে নিয়তে হিজরত করবে সে তাই পেয়ে থাকবে।”[1]

নাম নেওয়া লোক দেখানো, কোন পার্থিব স্বার্থলাভ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে কোন আমল করা এক ফিতনা; যা কানা দাজ্জালের ফিতনা অপেক্ষা বড় ও অধিকতর ভয়ঙ্কর। একদা সাহাবীগণ কানা দাজ্জালের কথা আলোচনা করছিলেন। ইত্যবসরে আল্লাহর রসূল (সা.) বের হয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন (ফিতনার) কথা বলে দেব না, যা আমার নিকট কানা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অধিকতর ভয়ানক?” সকলে বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তা হল গুপ্ত শির্ক; লোকে নামায পড়তে দাঁড়ালে তার প্রতি অন্য লোকের দৃষ্টি খেয়াল করে তার নামাযকে আরো সুন্দর বা বেশী করে পড়তে শুরু করে।”[2]

বলাবাহুল্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া অন্য কোন স্বার্থলাভের উদ্দেশ্যে কোনও আমল করলে গুপ্ত শির্ক করা হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “সুতরাং দুর্ভোগ সেই সকল নামাযীদের, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায পড়ে এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় ছোটখাটো সাহায্য দানে বিরত থাকে।”[3]

জ্ঞাতব্য যে, প্রত্যেক ইবাদাত কবুল হওয়ার মূল বুনিয়াদ হল তাওহীদ। অতএব মুশরিকের কোন ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন প্রত্যেক ইবাদত মঞ্জুর হওয়ার জন্য মৌলিক শর্ত হল দু’টি; নিয়তের ইখলাস বা বিশুদ্ধচিত্ততা এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তরীকা, যা সহীহ হাদীসে বর্ণিত।

নামাযের শর্তাবলী

১। নামাযীকে প্রকৃত মুসলিম হতে হবে। ২। জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। (পাগল বা জ্ঞানশূন্য হবে না।) ৩। বিবেকসম্পন্ন হতে হবে। (সাত বছরের নিচু বয়সী শিশু হবে না।) ৪। (ওযু-গোসল করে) পবিত্র হতে হবে। ৫। নামাযের সঠিক সময় হতে হবে। ৬। শরীরের লজ্জাস্থান আবৃত হতে হবে। ৭। শরীর, পোশাক ও নামাযের স্থান থেকে নাপাকী দূর করতে হবে।৮। কিবলার দিকে মুখ করতে হবে। ৯। মনে মনে নিয়ত করতে হবে।

নামাযের আরকানসমূহ

১। (ফরয নামাযে) সামর্থ্য হলে কিয়াম (দাঁড়ানোর সময় দাঁড়িয়ে নামায পড়া)। ২। তাকবীরে তাহরীমা। ৩। (প্রত্যেক রাকআতে) সূরা ফাতিহা। ৪। রুকু। ৫। রুকু থেকে উঠে খাড়া হওয়া। ৬। (সাত অঙ্গে) সিজদাহ। ৭। সিজদাহ থেকে উঠে বসা। ৮। দুই সিজদার মাঝে বৈঠক। ৯। শেষ তাশাহহুদ। ১০। তাশাহহুদের শেষ বৈঠক। ১১। উক্ত তাশাহ্হুদে নবী (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ। ১২। দুই সালাম। ১৩। সমস্ত রুকনে ধীরতা ও স্থিরতা। ১৪। আরকানের মাঝে তারতীব ও পর্যায়ক্রম।

নামাযের ওয়াজিবসমূহ

১। তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া সমস্ত তাকবীর। ২। রুকুর তাসবীহ। ৩। (ইমাম ও একাকী নামাযীর জন্য) ‘সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ’ বলা। ৪। (সকলের জন্য) ‘রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলা। ৫। সিজদার তাসবীহ। ৬। দুই সিজদার মাঝে দুআ। ৭। প্রথম তাশাহহুদ।৮। তাশাহহুদের প্রথম বৈঠক।

নামায কখন ফরয হয়?

হিজরতের পূর্বে নবুওয়াতের ১২ অথবা ১৩তম বছরে শবে-মি’রাজে সপ্ত আসমানের উপরে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রসূলের সাক্ষাতে (বিনা মাধ্যমে) নামায ফরয হয়। প্রত্যহ ৫০ ওয়াক্তের নামায ফরয হলে হযরত মূসা (আ.) ও হযরত জিবরীল (আ.) এর পরামর্শ মতে মহানবী (সা.) আল্লাহ তাআলার নিকট কয়েকবার যাতায়াত করে নামায হাল্কা করার দরখাস্ত পেশ করলে ৫০ থেকে ৫ অক্তে কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু আল্লাহর কথা অনড় বলেই ঐ ৫ ওয়াক্তের বিনিময়ে ৫০ ওয়াক্তেরই সওয়াব নামাযীরা লাভ করে থাকেন।[4]

নামায ফরয হওয়ার গোড়াতে (৪ রাকআত বিশিষ্ট নামাযগুলো) দু’ দু’ রাকআত করেই ফরয ছিল। পরে যখন নবী (সা.) মদীনায় হিজরত করলেন, তখন (যোহর, আসর ও এশার নামাযে) ২ রাকআত করে বেড়ে ৪ রাকআত হল। আর সফরের নামায হল ঐ প্রথম ফরমানের মুতাবেক।[5]

তথ্যসূত্র :

[1] বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১।

[2] ইবনে মাজাহ, বাইহাক্বী, সতা: ২৭নং।

[3] সূরা আল-মাউন, আয়াত নং ৪-৭।

[4] সহীহুল বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৪৬নং

[5] সহীহুল বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১৩৪৮।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member