রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

মূল :আবদুল বারী আস-সুবায়তী

অনুবাদ : আখতারুজ্জামান মুহাম্মাদ সুলায়মান

সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার যিনি রমজানকে শ্রেষ্ঠ মাস বানিয়েছেন এবং সে সময় ভাল কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দিয়েছেন। মেঘমালার ন্যায় দিনগুলি অতিবাহিত হচ্ছে। বছর খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে। আর আমরা জীবন চলার পথে অলস সময় কাটাচ্ছি। আমাদের মধ্যে কম সংখ্যক লোক এমন আছেন যারা বাস্তবতা ও পরিণতি নিয়ে চিন্তা করছে অথবা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿ وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُوراً [الفرقان:62].

আর তিনি দিবা রাত্রিকে পরস্পরের অনুগামী করেছেন। যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য। (সূরা আল ফুরকান, ৬২ আয়াত)।

মানুষের জীবনের কম বয়সে এবং অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তার জন্য ভাল কাজের মৌসুম রেখেছেন। তার জন্য স্থান এবং কালের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে কাল ও স্থানের মাধ্যমে সে তার ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সে সব বিশেষ মৌসুমের মধ্য থেকে অন্যতম একটি মৌসুম হল পবিত্র রমজান মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿يَاأَيُّهَاالَّذِينَآمَنُواْكُتِبَعَلَيْكُمُالصِّيَامُكَمَاكُتِبَعَلَىالَّذِينَمِنقَبْلِكُمْلَعَلَّكُمْتَتَّقُونَ﴾ [البقرة:183].

হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সূরা বাকারা, ১৮৩ আয়াত)।

রমজান মাসে মুমিন বান্দার উপরে শয়তানি প্রবৃত্তির আক্রমণ কম হয়, রাত দিনে মন নরম থাকে। একজন দেখা যায় তার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইছে, আর একজন আনুগত্যের তাওফীক প্রার্থনা করছে। তৃতীয়জনকে দেখা যায় আল্লাহর শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে, চতুর্থজন ভাল কাজের ফলাফল সুন্দরভাবে পাওয়ার আশা করছে, পঞ্চম জনকে দেখা যায় তার প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনা করছে। তিনিই মহান যিনি তাদেরকে তাওফীক দেন। অনেক লোক এমন আছে যারা এ সমস্ত কাজ থেকে দুরে অবস্থান করছে।

রমজান মাসের ফজিলত:

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন, আর এ রমজানেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল, মূর্তি এবং পৌত্তলিকতার পতাকা অবনমিত হয়েছিল। এ মাসে মুসলমানদের অনেক যুদ্ধ জিহাদ এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।

রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্যের বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে মিলে না।

পূর্বেকার মুসলমানেরা রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান আসলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত। তার সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নীরব থাকতেন।

তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই। সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায়, এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

সিয়াম আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল:

ইমাম আহমাদ রহ. তার কিতাবে জাবের রা. থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

{ إنما الصيام جنة، يستجنّ بها العبد من النار }.

সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়।

ইবনে মাসউদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{يامعشرالشبابمناستطاعالباءةفليتزوج،فإنهأغضللبصروأحصنللفرج،ومنلميستطعفعليهبالصوم،فإنهلهوجاء } [أخرجهالبخاريومسلم].

হে যুবকেরা! যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার জন্য সুরক্ষা। (বুখারী মুসলিম)।

সিয়াম জান্নাতের পথ: ইমাম নাসাঈ রহ. আবু উমামা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশ দেন যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে প্রতিদান দেবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি অসাল্লাম বলেন:

{ عليكبالصيامفإنهلامثلله }.

তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর কোন তুলনা নেই।

জান্নাতে একটি দরজা আছে সেখান দিয়ে শুধু সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সাহল ইবনে সাআদ রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ إنفيالجنةباباًيقالله: الريّان،يدخلمنهالصائمونيومالقيامة،لايدخلمنهأحدغيرهم،يقال: أينالصائمون،فيقومون،لايدخلمنهأحدغيرهم،فإذادخلواأغلق،فلميدخلمنهأحد } [أخرجهالبخاريومسلم].

জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারী মুসলিম)।

সিয়াম পালনকারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে: ইমাম আহমদ রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:

{ الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام: أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفّعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفّعني فيه، قال: فيشفعان }.

সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা বলবেন: তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল।

সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয়:

কেননা ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দেয়। আবু হুরায়রা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].

যে রমজানে ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারী মুসলিম)

সিয়াম ইহকাল এবং পরকালের সৌভাগ্যের কারণ: আবু হুরাইরা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{وللصائمفرحتان: فرحةحينيفطر،وفرحةحينيلقىربه،ولخلوففمالصائمأطيبعنداللهمنريحالمسك } [رواهالبخاريومسلم].

সিয়াম পালনকারীর দুটি খুশি, প্রথম খুশি যখন সে ইফতার করে, আর এক খুশি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশক আম্বরের চেয়ে অধিক প্রিয়। (বুখারী মুসলিম)

রমজানে সুযোগ কাজে লাগানো:

এ বছর রমজান মাস কি আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসার মৌসুম হবে, এবং নিজের হিসাব নিকাশের সুযোগ করে দেবে, আর আল্লাহর সামনে নিজের গোনাহের ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দেবে?

সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য সত্যিকারভাবে ইসলামী জীবন যাপন করার সুযোগ এনে দেবে কি এ মহান মাস?

এ মাস কে দাওয়াত দানকারীগণ তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দৃষ্টি-ভঙ্গি পাল্টিয়ে নুতন করে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ কথা চিন্তা করে যে, তারা সর্বোত্তম দাওয়াতের দায়িত্ব পালনকারী। এবং তারা অতি উত্তম উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিজের সত্তার চিন্তা এবং তার জন্য ঘোরাফেরা করা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহর নিকট যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী মনে করে কাজ করবে।

এ মাসটি প্রত্যেক মুসলমান তার মুসলমান ভাইকে সাহায্য করার মাস হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। হোক না সে অত্যাচারী অথবা অত্যাচারিত। অত্যাচারীর অত্যাচার প্রতিরোধ করে তাকে সাহায্য করবে। অত্যাচারিতকে সাহয্য করবে তার সহযোগিতার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মুসলমান সমাজে সর্বত্র ভাল পরিবেশ তৈরী হবে।

এ মাসটি ধনী এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপনকারীদের জন্যও বিরাট সুযোগ। তাদের কাজ-কর্ম এবং অনুভূতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা যেন দরিদ্রদের প্রয়োজন ও ব্যথা অনুভব করতে পারে। নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। আল্লাহ যে পথে ব্যয় করতে সম্পদ দিয়েছেন সে পথে তারা সম্পদ ব্যয় করতে পারে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যারা ক্ষুধার্ত আছে তাদের বাঁচাতে তারা যেন এগিয়ে আসতে পারে। তারা যদি তাদের ক্ষুধার্তদেরকে না খাওয়ায়, বস্ত্রহীনদেরকে বস্ত্র না দেয় আর দুর্বলদেরকে সাহায্য না করে মনে করতে হবে তাদের ঈমান বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।

রমজান আমাদের নিজেদের জন্য এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বনের সুযোগ এনে দেয় যার মাধ্যমে ইসলামী ভাবধারায় অভ্যস্ত হতে পারি। সকলের হাত, পা, চোখ, কান, জিহবা, মুসলমান হয়ে যাবে। যখনই এ সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ নড়া-চড়া করবে তার সৃস্টিকর্তার ইচ্ছা অনুযায়ী করবে । হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

{ وما يزال عبدي يتقرّب إليّ بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها } [رواه البخاري].

আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, আমি তাকে ভালবাসি। যখন আমি তাকে ভালবাসি সে আমার কান হয়ে যায় যা দিয়ে সে শোনে। আমার চক্ষু হয়ে যায় যা দিয়ে সে দেখে। হাত হয়ে যায় যা দিয়ে সে ধরে। পা হয়ে যায় যা দিয় সে চলে। (বুখারী)।

এ সমস্ত কিছু রমজানের পাঠশালায় অর্জন করা সম্ভব। যে রমজান আমাদেরকে দৃঢ়তা অবলম্বন ও সত্য গ্রহণের শিক্ষা দেয়। যার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির সমস্ত দেয়াল ভেঙ্গে যায়। খারাপের ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়।

সে দৃঢ়তা এবং সুক্ষ্ম নিয়ম কি? যার মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীর মুমিনদেরকে দেখা যায় যে, তারা নির্দিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত হচ্ছে আবার নির্দিষ্ট সময় পানাহার করছে। অত:পর নিজের নফসকে কুপ্রবৃত্তির মধ্যে পতিত হওয়া অথবা পথভ্রষ্টতার বাতাসে ভেসে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারছে।সে তো কুপ্রবৃত্তি এবং কামনার উদ্রেককারীকে না বলে দেবে। আর এই না বলা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী হয় তাহলে খুব ভাল হয়। সে অশ্লীল কাজ করবে না। ঝগড়া করবে না। উচুস্বরে কথা বলবে না। কোন মূর্খ যদি তার অনুভূতিকে আহত করে ও তার ভিতরের খারাপ জিনিসকে জাগিয়ে তোলে তবুও সে বলবে, আমি সিয়াম পালনকারী।

আর মানুষতো নিজের অভ্যাসের গোলাম। যতই সে চেষ্টা করে ফিরে আসতে পারে না নফসের গোলামী থেকে। কেননা অভ্যাসের বিরাট প্রভাব রয়েছে অন্তর ও নফসের উপর। আমাদের অনেকের পানাহার, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে অনেক রকম অভ্যাস রয়েছে তার থেকে সে বিরত হতে পারে না। সিয়াম এই সমস্ত অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিরাট উপকারী। মুসলমান ইচ্ছা করলে এর মাধ্যমে অনেক অভ্যাস থেকে নাজাত পেতে পারে কোন কষ্ট এবং ক্ষতি ছাড়াই। অত:পর যে সমস্ত অভ্যাস তার ক্ষতি করে সেগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। যেমন, রাত্রি জেগে অনুষ্ঠান উপভোগ করা, গোনাহ হয় এমন অনুষ্ঠানে যাওয়া, কারো সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদির অভ্যাস করা। অর্থাৎ এ জাতীয় যত ধরণের নেশা জাতীয় অভ্যাস আছে তা পরিত্যাগ করা। মূলত এ সমস্ত কিছু হয় দুর্বল মানসিকতার কারণে, অথবা এগুলোর নিকট আত্মসমর্পনের কারণে। সুস্থ, ভদ্র ও বিবেকবানরা কখনও এমন কাজ করতে পারে না। যদি সিয়াম পালন করতে চাও তবে হিংসা, গোনাহ এবং অন্যায় থেকে বিরত থেকে সিয়াম পালন কর। সিয়াম অবস্থায় জিহবাকে অহেতুক কথা থেকে, দৃষ্টিকে হারাম থেকে বিরত রাখ। অনেক সিয়াম পালনকারী আছেন তার সিয়াম উপবাস এবং পিপাসিত থাকা ছাড়া আর কোন উপকারে আসে না। সে ঐ ব্যাক্তি যে আহার বাদ দিল, কিন্তু গীবতের মাধ্যমে নিজের ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত হতে পারল না। পান করা থেকে বিরত থাকল কিন্তু মিথ্যা, ধোকা, মানুষের উপর অত্যাচার থেকে বিরত হল না।

সিয়াম পালনকারীর জন্য নসিহত :

মনকে প্রশস্ত কর, জিহবাকে খাটো কর, অন্যায় এবং ঝগড়া থেকে দুরে থাক। যদি বিচ্যুতির পথ দেখ তবে নিজেকে সামলে নাও। তোমার ভাইদের থেকে যদি কষ্ট পাও তাহলে ধৈর্য ধারণ কর। কেহ যদি তোমার সাথে ঝগড়া শুরু করে তবে তুমি তার মত করো না। বরং তুমি বলবে, আমি সিয়াম অবস্থায় আছি।

এ মাসের বরকত:

এ মাসের অন্যতম বরকত হল ভাল কাজের প্রতিদান অনেক বেড়ে যায়। যেমন, রাত্রে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রাত্রে দাড়িয়ে নামাজ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন:

{ من قام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].

যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানের রাত্রে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারী) মুসলিম)

এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের কথা বলতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম বলেন:

{ كان النبي – صلى الله عليه وسلم – أجود الناس بالخير، وكان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه جبريل } [رواه البخاري ومسلم]،

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজানে যখন তিনি জিবরীলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন আরো বেশি দানশীল হয়ে যেতেন। (বুখারী মুসলিম)

দান সদকা করা ভাল। বিশেষ করে রমজান মাসে বেশি করে করা। রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা, পূর্বসূরীরা রমজান মাসে নামাজে এবং নামাজ ব্যতীত অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

এতেকাফ: আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদে থেকে ইবাদত বন্দেগী করার নাম এতেকাফ।

{ كان النبي – صلى الله عليه وسلم – يعتكف العشر الأواخر من رمضان حتى توفاه الله } [رواه البخاري ومسلم].

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন।( বুখারী মুসলিম)

রমজান মাসে উমরা করার অনেক ফজিলত রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস রা. থেকে এ বিষয়ে তাদের কিতাবে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

সিয়াম পালনকারীর জন্য সাহরী খাওয়া উত্তম:

ইমাম আহমাদ রহ. আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:

{ السحور أكله بركة، فلا تدعوه ولو يجرع أحدكم جرعة من ماء، فإن الله عز وجل وملائكته يصلون على المتسحربن }.

সাহরী বরকতের খাবার। তা খাওয়া থেকে বিরত হবে না। কেহ যদি এক ঢোকপানিও পান করে তবুও সে সাহরী খেল। কেননা আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ সাহরীতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করতে থাকেন।

ইফতার তাড়াতাড়ি করা এবং তখন দোয়া করা উত্তম:

ইমাম তিরমিজি রহ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:

{ثلاثة لا ترد دعوتهم: الإمام العادل، والصائم حتى يفطر، ودعوة المظلوم.. }.

তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরৎ দেন না: ন্যায়পরায়ণ শাষক, সিয়াম পালনকারী যখন ইফতার করে ও অত্যাচারিতের দোয়া।

হে আল্লাহ! সিয়াম পালনকারীদের সিয়াম কবুল করুন, দানকারীদের দান কবুল করুন, রাত্রে ইবাদতকারীদের ইবাদত কবুল করুন, প্রার্থনা কারীদের প্রার্থনা কবুল করুন, আমাদের পূর্বের এবং পরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন, এ মাস যেন আমাদের সকলের জন্য ক্ষমার মাস হয়। আমীন!

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member