মানুষকে মন্দ নামে ডাকার বিধান

মানুষকে মন্দ নামে ডাকা এবং পশুর সাথে সম্বোধন করে ডাকা

নাম বিকৃত করে কিংবা অপমানমূলক বা অশ্লীলভাবে ডাকার প্রবনতাটা আমাদের সমাজে অধিক লক্ষণীয়। যেখানে আল্লাহর গুনবাচক নামগুলোর আগে আমরা আব্দ শব্দ যোগে ডাকতে আমাদের হুশ হয় না সেখানে একজনকে তার মুল নাম তথা সুন্দর নামে ডাকার কথা অনেক দুরের একটা কাজ।

একটু লক্ষণীয়, রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত) বা নিয়ামত উল্লাহ (আল্লাহর নিয়ামত) এ নামগুলোও আমরা রাখতেছি। যেমন কেউ এসে বলল এখানে রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত) বা নিয়ামত উল্লাহ (আল্লাহর নিয়ামত) কি আছে? জবাবে সে যদি না বলে, না থাকার কারনে তাহলে কি হল? এখানে আল্লাহর রহমত বা আল্লাহর নিয়ামত নেই!!!!

অসতর্কতাবসত, আব্দুর রাহমান, আব্দুর রাহিম, আব্দুল খালিক, আব্দুর রাযযাক ইত্যাদি আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো আমরা আব্দ যোগ না করে রাহমান, রাহিম, খালিক, রাযযাক ইত্যাদি নামে সরাসরি ডাকি। যেটা স্পষ্ট অন্যায়।

মানুষের মুল নাম বাদ দিয়ে বিভিন্ন মন্দ নাম বা উপাধিতে ডাকা আমাদের সমাজের একটি কমন চিত্র। এটা নিঃসন্দেহে একটা গর্নিত কাজ।

মানুষকে মন্দ নামে ডাকাঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٤٩:١١]

মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সুরা হুজুরাত, আয়াত নং-১১)

এ আয়াত থেকে আমরা যেসব বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি :

১) একজন আরেক জনকে নিয়ে উপহাস করা যাবে না,
২) একে অপরের প্রতি অনর্থক দোষারোপ না করা,
৩)  একে অপরকে মন্দ নামে না ডাকা,
৪) একে অপরের প্রতি কতক বা খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা,
৫) মানুষের গোপনীয় বিষয় সন্ধান না করা,
৬) কেউ কারো পশ্চাতে নিন্দা না করা,

অর্থাৎ ব্যঙ্গ ও তুচ্ছজ্ঞান করে এমন নাম রেখ না বা এমন খেতাব বের কর না যা সে পছন্দ করে না।অথবা তার ভাল ও সুন্দর নামকে বিকৃত করে ডেকো না।এইভাবে নাম বিকৃত করে অথবা মন্দ নাম বা খেতাব রেখে সেই নামে ডাকা অথবা ইসলাম গ্রহন বা তওবা করার পর তাকে অতীত ধর্ম বা পাপের সাথে সম্পৃক্ত করে সম্বোধন করা;যেমনঃ এ কাফের ! এ ইয়াহুদি ! এ লম্পট ! এ মাতাল ! ইত্যাদি বলে সম্ভধন করা অতীব মন্দ ও গর্নিত কাজ। (ফাতহুল কাদির)

অবশ্য কোন কোন গুনগত নাম কারো কারো নিকট এ নিষেদের অন্তুরভুক্ত নয়,যা লোক মাঝে প্রসিদ্ধ হয়ে যায় এবং সে এ নামে নিজ অন্তরে কোন দুঃখ বা রাগও অনুভবও করে না।যেমনঃ খোঁড়া নামে প্রসিদ্ধ কোন খোঁড়াকে খোঁড়া বলে ডাকা,কালিয়া বা কাল নামে প্রসিদ্ধ কোন কাল রঙের লোককে কালিয়া বা কালু বলে ডাকা।(কুরতুবি)

অন্যকে ছোট মনে করা, কারো উপহাস করা ইসলামে নিষিদ্ধ। সমাজবদ্ধ জীবনে অন্যের মনোকষ্টের কারণ হয়, এমন কোনো কাজ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা, কেউ যেন কাউকে উপহাস না করে। কেননা যাদের উপহাসের পাত্র বানানো হয়, তারা উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারীও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। কেননা উপহাস-আক্রান্ত নারী উপহাসকারিণী নারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না।’ কাউকে উপহাস করার অর্থ হলো, এমন বিদ্রƒপাত্মক আচরণ করা, যার কারণে সে অপমানিত বোধ করে। উপহাস করা জঘন্যতম গুনাহ। মহান আল্লাহ সবাইকে এক পিতা ও এক মাতার সন্তান বানিয়েছেন। সুতরাং কেউ কারো থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। তবে হ্যাঁ, ‘তাকওয়া’ এমন একটি বিষয়, যার কারণে একজন অন্যজন থেকে অধিক মর্যাদাবান হতে পারে। এ জন্য কাউকে উপহাস করে অপমান করা কিংবা হেয়প্রতিপন্ন করা মহান আল্লাহর কাছে খুবই নিকৃষ্টতম কাজ।

কৌতুকবশত কারো উপহাস করলে তার মনে কষ্টের আশঙ্কা থাকলে তাও নিষিদ্ধ। নির্মল এবং মনে কষ্ট না লাগে, এমন কৌতুকই শুধু ইসলামে জায়েজ।

জিহ্বার হিফাজত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ

যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম৷ আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী৷

হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন৷ ইমাম মুসলিম এর প্রথম অংশ বর্ণনা করেছেন৷

এই হাদীসে মানুষকে কষ্ট না দেয়ার বৈশিষ্ট্যকে সরাসরি ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে: এই বৈশিষ্ট্য যার নেই, তার যেন ইসলামই নেই! যদিও এখানে ইসলাম সম্পূর্ণ না থাকা উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য ইসলামের পূর্ণতা না থাকা তথা ঘাটতি থাকা৷ অর্থাৎ ইসলামের অন্যান্য বিধান পালনের পাশাপাশি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ হবে, তার ইসলাম পরিপূর্ণ হবে, নতুবা তার ইসলামে অপূর্ণতা থেকে যাবে৷

কোন মানুষকে পশুর সাথে সম্বোধন করে ডাকাঃ

 

কোন মানুষকে গাধা,গরু,ভেড়া,ছাগল,কুকুর,শুয়ার,পাঁঠা ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা দুইভাবে হারামঃ

প্রথমতঃ তা মিথ্যা কারন সে তো মানুষই।

দ্বিতীয়তঃ এতে অপরকে ক্লেশ পৌঁছে থাকে।[আযকার নববিঃ ৩১৯ পৃঃ]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88