গীবত ও গীবতকারীর পরিণতি

ইসলামী শরী’আত মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। আর সেই সাথে সাথে ইসলামী শরী’আত ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব নষ্টকারী সকল কর্ম হতে বিরত থাকতে সকলকে জোর তাকীদ দিয়েছে। সমাজে যেসব বিষয়ে ফাটল ধরাতে আর ঐক্যের সিসাঢালা প্রাসাদকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পারে এমন বিষয়গুলির অন্যতম হল ‘গীবত বা পরনিন্দা’। আর এই গীবতের মাধ্যমেই শয়তান মানব সমাজে ফাটল ধরিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ [١٠٤:١]
“পিছনে ও সামনে পরনিন্দাকারীদের জন্য দুর্ভোগ”(সূরা হুমাযাহঃ১)।
পবিত্র কুরআন ও হাদীছে এই ঘৃণিত আচরণ সম্পর্কে মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে গীবতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।


‘গীবত’ এর সংজ্ঞাঃ ‘গীবত’ অর্থ বিনা প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির দোষ অপরের নিকট বর্ণনা করা। ইবনুল আছীর বলেন, ‘গীবত’ হলোঃ মানুষের এমন কিছু বিষয় তাঁর অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে, যদিও ঐ দোষ তাঁর মধ্যে মওজুদ থাকে। এসব সংজ্ঞা মূলত হাদীছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গীবতের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “গীবত হলো তোমার ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা , যা সে পছন্দ করে না”। (ছহীহ মুসলিম হা/ ১৮০৩)
গীবত করার পরিণামঃ
গীবত করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর গীবতের পাপ সূদের পাপের চেয়েও বড় পাপ; সেহেতু হাদীছে গীবতকে বড় সূদ বলা হয়েছে। (ছহীহ আত-তারগীব)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে আয়েশা (রাঃ) ছাফিয়াহ (রাঃ) এর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনার জন্য ছাফিয়ার এরকম এরকম হওয়াই যথেষ্ট। এর দ্বারা আয়েশা (রাঃ) ছাফিয়ার (রাঃ) বেঁটে সাইজ বুঝাতে চেয়েছিলেন। আয়েশা (রাঃ) এর এমন কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, হে আয়েশা! তুমি এমন কথা বলেছ, যদি ঐ কথা সাগরের পানির সাথে মিশানো হত- তাহলে ঐ কথা সাগরের পানির রঙকে বদলে দিত। (ছহীহুল জামে হা/ ৫১৪০)


গীবত জাহান্নামের শাস্তি ভোগের অন্যতম কারণ হবেঃ
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মি’রাজের রাত্রিতে আমি এমন কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম, যাদের নখগুলি ছিল সব পিতল দিয়ে তৈরি করা। তাঁরা তাদের ঐ নখ দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিঁড়তেছিল। আমি জিবরীল (আঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এরা কারা? জিবরীল (আঃ) উত্তরে বলেছিলেন, “ এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত আর মানুষের ইযযত-আবরু ও মান সম্মান নষ্ট করত” (আবু দাউদ হাদীছ ছহীহ)
গীবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমানঃ
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢]
“ তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, কেননা তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তাঁর মৃত ভাইয়ের গোশত (দাত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে) খাবে? (প্রকৃত পক্ষে) তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাক”(সূরা আল হুজুরাতঃ১২)

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে বের হলে একজন আরেকজনের খেদমত করত। আবূ বাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) এর সাথে একজন খাদেম ছিল। (একবার সফর অবস্থায়) ঘুম থেকে তাঁরা উভয়ে জেগে উঠে দেখলেন যে, তাদের খাদেম তাদের জন্য খানা তৈরি করে নি। তখন তাঁরা একে অপরকে বলতে লাগলেন, দেখ এই লোকটি বাড়ীতে ঘুমের ন্যায় ঘুমাচ্ছে। (অর্থাৎ এমনভাবে ঘুমে বিভোর যে, মনে হচ্ছে সে বাড়ীতেই রয়েছে, সফরে নয়)। অতঃপর তাঁরা তাঁকে জাগিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে যাও এবং বলো আবূবাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) আপনাকে সালাম দিয়েছেন আর তরকারী চেয়ে পাঠিয়েছেন (নাস্তা খাওয়ার জন্য)। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে গেলে তিনি তাঁকে বললেন, তাঁরা তো তরকারী খেয়েছে। তখন তাঁরা হতভম্ব হয়ে গেলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমরা আপনার নিকটে লোক পাঠালাম তরকারী তলব করে, অথচ আপনি বলেছেন, আমরা তরকারী খেয়েছি? তখন নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের (অর্থাৎ খাদেমের) গোশত খেয়েছ। কসম ঐ সত্তার, যার হাতে আমার জীবন, নিশ্চয়ই আমি ঐ খাদেমটির গোশত তোমাদের সামনের দাঁতের ফাঁকে দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বরং ঐ খাদেমই তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুক।
(যিয়া মাক্বদেসী, আল-আহাদীছুল মুখতারাহ)। আলবানী রহঃ হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।(আমাসিক আলায়কা লিসানাকা)

উল্লিখিত বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
একদিন আমরা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায় আমাদের মধ্য হতে ” একজন লোক উঠে চলে গেলেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর অপর একজন লোক তাঁর ব্যাপারে সমালোচনা করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সমালোচনাকারীকে বললেন, তোমার দাঁত খিলাল কর। তখন লোকটি বলল, কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত খাইনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, “নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত খেয়েছ” অর্থাৎ গীবত করেছ। (ত্বাবারানী, ইবনু আবী শায়বা, হাদীছ ছহীহ দ্রঃ গায়াতুল মারাম হাদীছ নং ৪২৮)

গীবত করা কবরে শাস্তি ভোগের অন্যতম কারনঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন কোন বড় পাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না (যা পালন করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিল) । এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চোগলখুরী করার কারণে আর অন্য জনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে , পেশাবের ব্যাপারে অসতর্ক থাকার কারণে। (বুখারী , মুসলিম, ছহীহ আত-তারগীব হা/ ১৫৭)। অপর হাদীছে চোগলখুরী এর পরিবর্তে গীবত করার কথা উল্লেখ রয়েছে (ছহীহ আত-তারগীব হা/ ১৬০)
গীবতকারী ও গীবত শ্রবণকারী পাপের দিক থেকে সকলেই সমানঃ
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ যদি কোন মুনকার তথা অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন তাঁর প্রতিবাদ করে হাত দিয়ে, যদি সে হাত দিয়ে প্রতিবাদ করতে সক্ষম না হয়- তাহলে সে যেন যবান অর্থাৎ মুখ দিয়ে তাঁর প্রতিবাদ করে। আর যদি মুখ দিয়ে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না হয় – তাহলে সে যেন অন্তত অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এই অন্তর দিয়ে ঘৃণা করা – এটা হলো সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক” (সহীহুল জামে হা/ ৬২৫০)।
গীবত করা যেহেতু একটি বড় অন্যায় কাজ , সেহেতু তাঁরও প্রতিবাদ করা একান্ত উচিত। আর যদি কেউ শক্তি থাকতেও প্রতিবাদ না করে, তবে সেও গীবতকারী হিসাবে গণ্য হবে।
আবূ বাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) এই দু‘জনের একজন মাত্র এ উক্তিই করেছিলেন যে, দেখ এই লোকটি বাড়ীর ঘুমের মত ঘুমাচ্ছে অর্থাৎ সে এতো ঘুমে অচেতন যে, মনে হচ্ছে সে যেন সফরে নেই বরং নিজ বাড়ীতে রয়েছে। অথচ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কেই গীবতকারী হিসাবে গণ্য করেছেন। আর এজন্যই উমার ইবনু আব্দুল আযীয রহঃ গীবতকারীর সম্পর্কে তদন্ত করতেন। একদা কোন এক ব্যক্তি তাঁর সামনে অপর এক ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করলে তিনি তাঁকে বললেন, যদি তুমি চাও তাহলে আমারা তোমার এ বিষয়টাকে যাচাই-বাছাই করব। যদি তুমি মিথ্যুক হও, তাহলে তুমি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
“যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখ” (আল হুজুরাতঃ৬)। আর যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবুও তুমি এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
“যে ব্যক্তি মানুষের পিছনে দুর্নাম করে বেড়ায় আর একজনের কথা অন্যজনের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়” (আল ক্বালামঃ১১)। আর যদি চাও আমরা তোমাকে ক্ষমা করে দেব। তখন সে লোকটি বলল, ক্ষমা করুন হে আমীরুল মু‘মেনীন! আর কখনো পুনরায় এ কাজ করব না। (আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম, ২৯২)।

মুসলিম ব্যক্তির মান-সম্মান রক্ষা করার ফযীলতঃ
একজন মুসলিম ব্যক্তির মর্যাদা সবকিছুর শীর্ষে। একদা ইবনু উমার রাঃ ক্বা‘বা শরীফকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
“হে ক্বা‘বা! তুমি কতই না মহান, আর তোমার সম্মানও কতই না মহান, কিন্তু তোমার চেয়েও একজন মু‘মিন বান্দা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন।”
(তিরমিযী,গায়াতুল মারাম হা/ ৪৩৫, হাদীস হাসান)
এ প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
“ যে ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের ইযযত আবরূ, মান-সম্মান রক্ষা করবে, এটা তাঁর জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী আড় স্বরূপ হয়ে যাবে”(সহীহুল জামে হা/ ৬১৩৯)
এ প্রসঙ্গে অন্য হাদীসে এসেছে,
আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাঃ বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে ভাইয়ের ইযযতের পক্ষে থেকে অন্যের কৃত গীবত বা সমালোচনা প্রতিহত করবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র দায়িত্ব হয়ে যাবে তাঁকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা” (সহীহুল জামে হা/ ৬২৪০)


গীবত সম্পর্কে সালাফে ছালেহীনদের কিছু উক্তিঃ

১। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা:) বলেন, ” তোমরা আল্লাহর যিকির করবে কারণ তা আরোগ্য স্বরূপ। আর তোমরা মানুষের দোষ-গুণ বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ সেটা হলো ব্যাধি স্বরূপ।”
২। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ” যখন তুমি তোমার কোন সাথীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার ইচ্ছা করবে, তখন তুমি তোমার দোষ-ত্রুটির কথা স্মরণ করবে।”
৩। আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একদা একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার সময় তাঁর কিছু সাথীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, কোন ব্যক্তির পক্ষে অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের গোশত খাওয়া অপেক্ষা এই খচ্চরটির গোশত খেয়ে পেট ভর্তি করাই অনেক ভাল।
৪। হাসান বছরী (রাহিঃ) হতে বর্ণিত, তাঁকে কোন এক ব্যক্তি বলেছিল যে, আপনি আমার গীবত করেছেন। এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমার মর্যাদা আমার নিকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে, আমি তোমাকে আমার নেকীসমূহের হাকীম বানিয়ে দিব। (অর্থাৎ তোমাকে স্বাধীনতা দিয়ে দিব আমার নেকী নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে, আমার নিকট তুমি এমন মর্যাদায় উপনীত হওনি)।
৫। কথিত আছে যে, কোন এক আলেমকে বলা হলো, অমুক ব্যক্তি আপনার গীবত করেছে। তখন তাঁর নিকটে তিনি তাজা খেজুর ভর্তি একটি প্লেট পাঠিয়ে দিলেন আর বললেন, আমার নিকটে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনি আমাকে আপনার নেকীগুলি হাদীয়া দিয়েছেন। সুতরাং আমিও তাঁর কিছু বদলা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমাকে ক্ষমা করবেন। কারণ আমি আপনার ঐ নেকীগুলির বদলা পূর্ণাঙ্গরূপে দিতে অক্ষম।
৬। ইবনু মুবারক (রাহিঃ) বলতেন, ‘ যদি আমি কারো গীবত করতাম তবে অবশ্যই আমি আমার পিতা-মাতার গীবত করতাম। কারণ তারাই আমার নেকী পাওয়ার বেশী হক্বদার’  (আমসিক আলায়কা লিসানিকা, ৫৮-৫৯)।
পরনিন্দাসহ যে কোন খারাপ কথা হতে যবানকে আয়ত্বে রাখার ফযীলতঃ


এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“ যে ব্যক্তি তাঁর লজ্জাস্থান ও যবানকে আয়ত্বে রাখার যামিন হবে,আমি তাঁর জন্য জান্নাতের যামিন হব” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো একটি হাদীস বর্ণনা করা হলোঃ
“ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “যে মাখমূমুল ক্বালব আর সত্যভাষী জিহবার অধিকারী”। তখন সাহাবীরা বললেন, আমরা তো জানি সত্যভাষী কাকে বলে। হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবার আপনি আমাদেরকে বলে দিন যে, ‘মাখমূমুল ক্বালব’ কাকে বলে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে হলো পূত-পবিত্র পরহেযগার ব্যক্তি, যার মধ্যে কোন পাপ নেই, খেয়ানত নেই, হিংসা-বিদ্বেষ নেই ” ( ইবনু মাজাহ হা/ ৪২১৬, সহীহ)
(চলবে)………………………..
 
সূত্রঃ বইঃ কতিপয় হারাম কাজ যেগুলিকে মানুষেরা হালকা মনে করে অথচ তা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের ওয়াজিব,
লেখকঃ মুহাম্মাদ ছালিহ আল মুনাজ্জিদ , পৃষ্ঠা ২০৭-২০৮ ।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button