‎নামায‬, এক পাতার একটি নোট

কালিমার সাক্ষীর পর নামায ইসলামের সর্বাধিক তাগিদপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ইসলামের সবচেয়ে বড় ও সব্বোর্ত্তম প্রতীক। নামাযকে অবহেলা ও তুচ্ছ মনে করে না কিন্তু যে ইসলামকে তুচ্ছ মনে করে। ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তি যে নামাযকে হাল্কা মনে করে সেই হচ্ছে নামায তুচ্ছকারী, ইসলামকে হেয়কারী ও অবমাননাকারী।
ইসলামের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব, তাদের নামাযের অংশীদারিত্ব অনুপাতে নির্ণয় হবে, ইসলাম সম্পর্কে তাদের আগ্রহ তাদের নামাযের আগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে। তাই হে বান্দা! একটু নিজের সম্পর্কে চিন্তা করো। জেনে রাখো, ইসলামে তোমার অংশীদারিত্ব এবং তোমার নিকট ইসলামের মর্যাদা, তোমার নামাযের অংশীদারিত্ব ও তার মর্যাদা অনুপাতে হবে।
ইসলামে নামাযের সুমহান মর্যাদা রয়েছে, যার গুরুত্ব ও মর্যাদা নিম্নে বর্ণিত দলীদাদির মাধ্যমে অনুধাবন করা যেতে পারেঃ
১-নামায ইসলামের স্তম্ভ, যা ব্যতীত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। মুআয (রাযিঃ) এর হাদীসে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “সব বিষয়ের মুন্ডু হচ্ছে ইসলাম, তার খুঁটি হচ্ছে নামায এবং তার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে জিহাদ”। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন] আর যদি স্তম্ভ ভেঙ্গে যায়, তাহলে তার উপর নির্মিত বস্তুও ভেঙ্গে যায়।
২-বান্দার আমলের প্রথম হিসাব নামায দ্বারা শুরু হবে, আমলের সঠিকতা ও বেঠিকতা নামাযের সঠিক ও বেঠিক হওয়ার উপর নির্ভর করবে। আনাস বিন মালেক নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেনঃ“কিয়ামত দিবসে বান্দার প্রথম হিসাব হবে নামাযের হিসাব। যদি তা সঠিক হয় তো সব আমল সঠিক হবে আর যদি তা বাতিল হয় তো সব আমল বাতিল হয়ে যাবে”। [হাদীসটিকে ত্বাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]
৩-নামায হচ্ছে দ্বীনের ঐ বিধান যা, সব শেষে বিলুপ্ত হবে। আর যখন দ্বীনের শেষাংশ বিদায় নিবে, তখন কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আবু উমামা হতে মরফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, “অবশ্যই ইসলামের হাতল এক এক করে ভেঙ্গে যাবে। যেমন যেমন একটি হাতল ভাংবে তেমন তেমন লোকেরা তার পরেরটি ধারন করবে। প্রথম হাতল যেটি নষ্ট হবে সেটি হবে বিধানের হাতল আর শেষেরটি হবে নামায”। [হাদীসটি আহমদ বর্ণনা করেন এবং আলবানী সহীহ বলেন]
৪-নামায হচ্ছে, উম্মতের উদ্দেশ্যে নবীজীর শেষ উপদেশ। উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) এর শেষ উপদেশের মধ্যে ছিল, “ নামায নামায এবং তোমাদের দাস-দাসীদের” (হেফাযত করবে)। [হাদীসটি আহমদ বর্ণনা করেন এবং আলবানী সহীহ বলেন]
৫-নামায কায়েমকারীদের আল্লাহ প্রসংশা করেন এবং তাদের প্রশংসা করেন যারা তাদের পরিবারকে নামাযের আদেশ দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (এ কিতাবে উল্লেখিত ইসমাঈলের কথা স্মরন কর, সে ছিল ওয়াদা রক্ষায় সত্যবাদী, আর ছিল একজন রসূল ও নবী। সে তার পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিত আর সে ছিল তার প্রতিপালকের নিকট সন্তুষ্টির পাত্র)। [সূরা মারইয়াম, ৫৪-৫৫]
৬-আল্লাহ তাআলা নামায নষ্টকারী এবং তা থেকে অলসতাকারীদের তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেনঃ (অতঃপর তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামায হারালো, আর লালসার বসবর্তী হল। তারা অচিরেই ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।) [মারইয়াম-৫৯] আল্লাহ মুনাফেকদের সম্পর্কে বলেনঃ (তারা যখন নামাযের জন্য দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যভরে দাঁড়ায়, লোক দেখানোর জন্য, তারা আল্লাহকে সামান্যই স্মরণ করে)। [আন্ নিসা-১৪২]
৭-নামাযের মর্যাদা এতেও অনুমান করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা যমীনে জিবরিলের মাধ্যমে ফরয করেন নি; বরং মেরাজের রাতে সপ্তাকাশে কোন মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি ফরয করেন।
৮-প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়, যা নামাযের সাথে মহান আল্লাহর ভালবাসার পরিচয়। অতঃপর বান্দাদের সহজার্থে দিবা-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত করা হয়। তাই আল্লাহর পরিমাপে এটা ৫০ ওয়াক্তের সমান কিন্তু পালনের ক্ষেত্রে তা পাঁচ ওয়াক্ত যা, নামাযের বড় মর্যাদার প্রমাণ।
৯-আল্লাহ তাআলা সফলকামদের কাজের বর্ণনা নামাযের মাধ্যমে শুরু করেছেন এবং তাদের কাজের শেষ নামাযের বর্ণনার মাধ্যমেই শেষ করেছেন, যা এই বিধানের গুরুত্ব বুঝায়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করে। যারা অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে। যারা যাকাত দানে সক্রিয়। যারা নিজের যৌনাঙ্গের সংরক্ষণ করে। নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত।……. আর যারা নিজের নামাযের ব্যাপারে যত্নবান। তারাই হল উত্তরাধিকারী। তারা ফিরদাউস জান্নাতের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে)। [মুমিনূন,১-১১]
১০-নামায ভুলে যাওয়া কিংবা নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়া ব্যক্তিকেও নামায কাযা করার আদেশ করা হয়েছে, যা এই বিধানের অধিক গুরুত্ব বুঝায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ “যে নামায হতে ঘুমিয়ে যায় কিংবা নামায ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ আসার সাথে সাথে তা পড়ে নেয়, এ ছাড়া এর কোন অন্য কাফ্ফারা নেই”। [বুখারী-মুসলিম]
প্রস্তুতকারকঃ দাওয়াহ অফিস, রাওদা, রিয়াদ। [মূল, আরবী]
অনুবাদেঃ আব্দুর রাকীব মাদানী, দাওয়া সেন্টার, খাফজী।

(সূত্র)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button