ইসলামের ইতিহাসের মহিয়সী নারীরা
৭ম শতাব্দী থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় ১৩০০ বছরের খিলাফত তথা ইসলামী শাসনামলে হাজার হাজার মুসলিম নারী আইনবিদ, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, ভাষাবিদ, জ্ঞানসাধক ও সর্বোপরি আদর্শ মা ও স্ত্রী হিসাবে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলো ইসলামের ইতিহাসে।
হযরত আয়িশা (রা.) : জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় হযরত আয়িশা (রা.) এর পান্ডিত্য সর্বজনস্বীকৃত। দু্ই হাজারেরও বেশী হাদিস তিনি নির্ভূল ভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এবং উসমান (রা.) এর খিলাফত কালে আইন ও বিচার উপদেষ্টা ছিলেন।
উম্মে সালমা (রা): তিনি বয়স্কা মহিলা ছিলেন। রাসূল (সা)-এর সাথে বিবাহের পর তাঁর গৃহ ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠে। ক্বিরাত-কন্ঠশিল্পে মদীনাবাসীদের ইমাম শোবাইয়া বিন নাছাহ তার ছাত্র ছিলেন। শোবাইয়অ উম্মে সালমার ক্রীতদাসম ছিলেন । তাঁর শিক্ষা প্রশিক্ষণের সকল দায়িত্ব উম্মে সালমাই গ্রহণ করেন।
হাফসাহ (রা): পবিত্র কুরআনের গচ্ছিত অংশগুলো তাঁর কাছেই হিফাজত ছিলো। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মায়মুনা (রা): তার তত্ত্বাবধানে চারজন ক্রীতদাস ছিলো তারা সবাই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলো। চারজনই মদীনার বিখ্যাত ফকীহদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
উম্মে দারদা (রা): তিনি ছিলেনপ্রসিদ্ধ সাহাবী আবু দারদা (রা)-এর স্ত্রী। তিনি শিক্ষিতা আবেদা ও জ্ঞানী ফকীহ ছিলেন। বুখারীতে এ বিষয়ে তালীক্ব রয়েছে। তিনি তাঁর স্বামীর মাদরাসায় শিশু ও তরুণদের লেখার নিয়ম শিক্ষা দিতেন। কারণ তিনি ভালো লিখতে পারতেন।
ফাতিমা বিনতে ক্বায়েস : তিনি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানে একজন সিদ্ধিপ্রাপ্ত নারী চিলেন। উমার (রা)-এর শাহাদাতের পর নতুন খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে মজলিসে শূরার বৈঠক তাঁর গৃহেই বসে।
উম্মে আমারা (রা.) : উম্মে আমারা (রা.) রাসূল (সাঃ) এর একজন বিখ্যাত মহিলা সাহাবী ছিলেন। তিনি ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে কাফিরদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে ওহুদ এবং আমামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
শিফা বিনতে আব্দিলাহ (রা.) : উমার (রা)-এর খিলাফত কালে শিফা বিনতে আব্দিলাহ (রাঃ) তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের কারনে বাজার পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রেও জ্ঞান অর্জন করেন।
উমরা বিনতে আব্দুর রাহমান : ৮০০ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট আইনবিদ। তিনি মদীনার কৃষি বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুফতী আমাহ আল ওয়াহিদ বিনতে আল মাহমিলি : নয়শত শতাব্দীতে বাগদাদের শাফিঈ আাইন বিষয়ক স্কুলের একজন নামকরা শিক্ষক এবং প্রখ্যাত বিচারক।
ইজলিয়া বিনতে আল ইজলি : ৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে সাইফউদ্দৌলার সভার একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। তিনি এখন থেকে প্রায় হাজার বছর আগে মহাকাশ বিষয়ক গবেষনাগার তৈরী করেছিলেন।
কারিমাহ বিনতে আহমেদ আল-মারওয়াজিয়াহ : ১০০০ শতকে হাদীসশাস্ত্রে তাঁর গভীর জ্ঞান ও পারদর্শিতার কারনে বহু শিক্ষার্থী তার কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য আসতো। তৎকালীন বাগদাদের খতিব তার কাছ থেকেই জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
শায়খা আসমা : শায়খা আসমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সুপরিকল্পিত ভাবে তা বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি তার সময়ে ক্ষমতাশীন খলিফাকে নাইজেরিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেছিলেন।
যয়নব বিনতে আবদ আল রাহমান : ১৩০০ শতকের একজন প্রসিদ্ধ পন্ডিত। নামকরা ভাষাবিদ আল-জামসারীর মেধাবী শিষ্য হিসাবে তিনি সম্মান সূচক একাডেমিক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
আয়িশা আল বানিয়্যা : তিনি ছিলেন দামেস্কের একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং ইসলামিক চিন্তাবিদ। ইসলামী আইন বিষয়ক তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে।
মুফতি উম্মে আল বানিন : ১৪২৭ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর একজন প্রসিদ্ধ আইনবিদ।
জুবাইদা : তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্বার অধিকারী খলিফা হারুন-উর-রশিদ এর স্ত্রী জুবাইদা সবসময়ই তার স্বামীকে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিতেন।
মারিয়াম : মরক্কোতে মারিয়াম নামের এক মহিয়সী নারী তৈরী করেছিলেন আল আন্দালুস মসজিদ, যা পরবর্তীতে জ্ঞানার্জনের একটি প্রসিদ্ধ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
মামলুক শাসনামলে নারী : ১১’শ শতাব্দীতে মামলুক শাসনামলে তৎকালীন মুসলিম নারীরা দামেস্কোতে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১২টি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সম্পূর্ন ভাবে মুসলিম নারীদের দ্বারাই পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত ছিলো।
( পরবর্তীতে মুসলিম মহিয়সী রমনীদের বিস্তারিত জীবনী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ)।