শির্ক-এর কুফল ও পরিণাম
শির্ক-এর কুফল ও পরিণামঃ
শির্ক-এর ফলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ঃ
আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
‘‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে তিনি উহাদিগকে উহাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে। বল, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হইয়াছে! উহাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক”।- সূরা রূম ৩০:৪১-৪২।
যারা আল্লাহ্র সহিত কোন কিছুকে শরীক করে তাদেরকে বলা হয় মুশরিক অর্থাৎ শির্ককারী। আল্লাহ্র দেয়া বিধান না মেনে অন্যের দেয়া বিধান মানার কারনে তারা শির্কে লিপ্ত হয়। মানুষের এই ভ্রান্ত কর্মনীতির ফলেই পৃথিবীতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এ দুনিয়ায় মানুষ যে কষ্ট পায়, যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি, সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ , দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু বিপদ-আপদ, যা লাখো লাখো, কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে।
আল্লাহ্তাআ’লা এমন সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ওপর এমন সব বিপদ-আপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও উর্ধ্বে একটি মহা পরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার অনুভুতি দান করে। এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি, দল ও জাতিকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তাঁর হাতে যিনি কর্তৃত্ত্ব সহকারে এসব কিছু করে চলেছেন। তাঁর পক্ষ থেকে যখনই কোন বিপদ তোমাদের ওপর আসে, তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না। এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহ্র সর্তক সংকেত। আল্লাহ্তাআ’লা চান মানুষ এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করুক, নিজের বিশ্বাস ও কর্ম শুধরে নিয়ে নবীগন (আ) যে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন সে দিকে ফিরে আসুক।
“উহারা কি দেখে না যে, উহাদিগকে প্রতি বৎসর একবার বা দুইবার বিপর্যস্ত করা হয়? ইহার পরও উহারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহন করে না”। ___ সূরা তাওবা ৯:১২৬।
“গুরু শাস্তির পূর্বে উহাদিগকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাইব, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে”। ___ সূরা সাজ্দা ৩২:২১।
শির্ককারীর উপর শয়তানের আধিপত্য থাকেঃ
‘‘যখন কুরআন পাঠ করিবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হইতে আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহন করিবে। নিশ্চয়ই উহার কোন আধিপত্য নাই তাহাদের উপর যাহারা ঈমান আনে ও তাহাদের প্রতিপালকেরই উপর নির্ভর করে। উহার আধিপত্য তো কেবল তাহাদেরই উপর যাহারা উহাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যাহারা আল্লাহ্র শরীক করে”। ___ নাহ্ল ১৬:৯৮-১০০।
অর্থাৎ শির্ককারীর উপর শয়তানের আধিপত্য থাকে। যার উপর যার আধিপত্য থাকে সে তো অন্যদেরকে তার দিকেই পরিচালিত করবে এটাই স্বাভাবিক।
শির্ককারীর আমল নিষ্ফল হয়ে যায়ঃ
‘‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হইয়াছে, তুমি আল্লাহ্র শরীক স্থির করিলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হইবে এবং অবশ্য তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হইবে”। ___ যুমার ৩৯:৬৫
‘‘তারা যদি শির্ক করিত তবে অবশ্যই তাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেতো”। ___ আন’আম ৬:৮৮
শির্ককারীরা ক্ষমার অযোগ্যঃ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁহার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেহ আল্লাহ্র শরীক করে সে এক মহাপাপ করে”। ___ নিসা ৪:৪৮
শির্ককারীরা পথভ্রষ্টঃ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁহার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না; ইহা ব্যতীত সবকিছু যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং কেহ আল্লাহ্র শরীক করিলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়’’। নিসা ৪:১১৬
শির্ককারীদের জন্য জান্নাত হারাম এবং শির্ককারীরা যালিমঃ
‘‘কেহ আল্লাহ্র শরীক করিলে আল্লাহ্ তাহার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করিবেন এবং তাহার আবাস জাহান্নাম, যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’’। ___ মায়িদা ৫:৭২
শির্ককারী সৃষ্টির নিকৃষ্টঃ
‘‘নিশ্চয়ই যারা কিতাবীদের মধ্য থেকে কুফরী করে এবং মুশরিকরা অনন্তকাল জাহান্নামের অগ্নিতে থাকবে। এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম’’।– বায়্যিনাহ্ ৯৮:৬।
শির্ককারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফা’আত থেকে বঞ্চিত হবে।
আওফ ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার প্রভুর নিকট থেকে একজন আগমনকারী এসেছেন এবং আল্লাহ্ তা’লা আমাকে দু’টো জিনিষের একটা কবূল করার এখতিয়ার দিয়েছেন আমার উম্মতের অর্ধেকের জান্নাত দান করা কিংবা আমাকে শাফা’আতের সুযোগ দেয়া, আমি শাফা’আতের সুযোগ গ্রহন করেছি এবং যে লোক আল্লাহ্র সাথে কোনরূপ শির্ক না করে মৃত্যু বরণ করেছে তার জন্য আমার সুপারিশ হবে। (তিরমিযী, ইবনে মাজা)
আল্লাহ্ সুব্হানাহু তাআ’লা আমাদেরকে শির্ককে বুঝার এবং তা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।