
বুখারী শরিফের হাদিসে কি চাঁদের আলোর ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে?
বুখারী শরিফের হাদিসে কি চাঁদের আলোর ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে?
কতিপয় অবিশ্বাসী দাবী করে থাকেন যে বুখারী শরীফে নাকি আছে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে অর্থ্যাত চাঁদ যে সূর্যের কাছে আলো ধার করে এইটা হাদিসে নাই। এদিকে কোরানে বলা হচ্ছে যে চাদের আলোটা রিফ্লেকটেড। এখন যদি ধরেও নেই যে কোরানে আসলেই আছে চাদের আলো ধার করা তবুও সহি গ্রন্থ বলে স্বীকৃত বুখারি শরীফে তাহলে কি বৈজ্ঞানিক ভুল আছে? আসেন এই বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
কোরআনে সূর্যকে বলা হয়েছে শামস,সিরাজ বা দিয়া। চাঁদ কে বলা হয়েছে কমার,মুনীর ইত্যাদি। মুসলিম স্কলারগণ আগেই প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, সূর্যকে মূলত উৎস হিসেবে এবং চাঁদ কে আলো ধারকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে কোরআনে। এবার দেখা যাক হাদিসের বিষয়টা।
এই হাদিসটা আছে বুখারী শরিফে বুক অফ বিগিনিং অব ক্রিয়েসন এ । দেখতে পারেন হাদিস নম্বর ৪২২ বই নম্বর ৫৪ ভলুম ৪। এছাড়া দেখতে পারেন হাদিস নম্বর ২৯৭৩ ইসলামিক ফাউন্ডেসন,খন্ড ৫।
হাদিসের মূল আরবী পাঠ এইঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ الْمُخْتَارِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ الدَّانَاجُ، قَالَ
حَدَّثَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه
” الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ مُكَوَّرَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ” . عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
বাংলা উচ্চারণঃ আন আবি হুরাইরাতা রদ্বিআল্লাহু আনহু আনিন্নাবিয়ি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বলা শামছু ওয়াল ক্বমারু মুকাওওয়া-র-নি ইয়াওমাল কিয়ামাহ। (ইসনাদ এভয়েড করা হল)
বঙ্গানুবাদঃ আবূ হুরাইরা (রা) সূত্রে নবী (সা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন “কিয়ামাতের দিন চন্দ্র ও সূর্য উভয়কে লেপটিয়ে দেয়া হবে”। (ইফাবা বঙ্গানুবাদ)
আমার প্রথম প্রশ্ন অবিশ্বাসী বড়ভাই এখানে কোথায় পেলেন যে চাঁদের আলো কে তার নিজের আলো বলা হচ্ছে? শুধু বিদেশী আহাম্মক মিশনারীদের থেকে টুকে দিলেই হবে নাকি? কোন সাইট থেকে টুকেছেন তাও আছে আমার কাছে । তাহলে যদি এইরকম কোন ইঙ্গিত নাই থাকে তবে মিশনারী উজবুকের দল কেনইবা হাদিসটা সাইটে দিয়েছে?
এর কারণ হল “মুকাওওয়া-রন” শব্দটার অর্থ। হাদিসে বলা হচ্ছে কেয়ামতের সময় সূর্য ও চন্দ্র উভয়টা মুকাওওয়া-রন হয়ে যাবে। মানে এরা গুটিয়ে যাবে বা ভাঁজ হয়ে যাবে বা একত্র হয়ে যাবে। কোথাও বলা নাই চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। তবে কোন কোন অনুবাদক মুকাওওয়া-রনের ইংরেজি অনুবাদ করতে যেয়ে ব্রাকেটে “উহাদের আলো থেকে বঞ্চিত করা হবে” লিখেছেন যেটা অনুবাদকদের নিজস্ব বৃদ্ধি। হাদিসের মূল আরবী পাঠে এমন কোন কথা বলা নাই।
কোরআনে সূরা তাকভীরের (৮১) এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে;
“ইজাস শামসু কুউইরাত” (যখন সূর্য কে গুটিয়ে নেয়া হবে)
এখানে একই রুটের শব্দ কুউইরাত ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে গুটিয়ে নেয়া বা ভাজ করে ফেলা অর্থে। আলো নিভে যাওয়াটা হল গুটিয়ে নেয়া বা ভাজ করে ফেলার ফলাফল যেটা কোনক্রমেই মূল শব্দের অর্থ না। [১] যেহেতু শব্দটার অর্থ শুধুই ভাজ করা বা গুটিয়ে নেয়া। [২] মূলত চন্দ্র বা সূর্যের গুটিয়ে যাবার বা ভাজ হয়ে যাবার তাৎপর্য হল এদেরকে এদের স্বীয় অবস্থান থেকে বিচ্যুত করা হবে। [৩]
মূলত স্কলারগণ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমন ব্যাখ্যা করে থাকবেন তাই অনুবাদে তা অনেকেই উল্লেখ করেছেন। [৪] কিন্তু হাদিসে এমন কোন দাবী করা হয়নাই। আবার স্কলারদের ব্যাখ্যাটাও আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে একেবারে ভুল ধরতে পারিনা কেননা তারাও বলেননি যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। কথায় কথায় আমরাও প্রতিনিয়ত চাঁদের আলো বলে থাকি বাট এতে কি আমরা এইটা মিন করি যে চাঁদের আলোটা নিজস্ব? বরং চাঁদকে তার জায়গা থেকে সরালে বা সূর্য ও চাঁদ উভয়কে গুটিয়ে নিলে দুইটার কোনটারই আলো থাকবেনা। সূর্য উৎস হিসেবে থাকবেনা আর তাই চাঁদ ও প্রতিফলিত আলো থেকে বঞ্চিত হবে।
সুতরাং প্রমানিত হয় যে, মিশনারীদের থেকে অবুঝের মত চোথা মেরে হাদিসের বৈজ্ঞানিক ভুল ধরতে যাওয়া নিম্নমানের আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুইনা।
ফুটনোটঃ
১। ইবনে কাসীর (র)।
২। মোল্লা আলী ক্বারী (র) ,মিশকাত আল মাসাবীহ এর ব্যাখ্যা।
৩। ঐ
৪। বদরুদ্দিন আইনী (র), বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা।