মহিলাদের নামায শিক্ষা ( ইসলামী বই )
আমাদের সমাজে পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের মধ্যে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি নারীদের জন্য আলাদা নামায শিক্ষাও বিদ্যমান। কিন্তু নারী পুরুষের সলাতের পদ্ধতির মধ্যে বিশাল পার্থক্য নেই। বরং নবী (সা) বলেছেন, তোমরা সেভাবেই সালাত আদায় করো যেমনভাবে আমাকে আদায় করতে দেখো। ( বুখারী ) এছাড়া সালাতের অনেক বিধান নারী সাহাবী যেমন আইশাহ (রা), উম্মে সালমা (রা), উম্মে হানী (রা), হাফসা (রা), উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনাহ (রা) প্রমুখ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেগুলোতে আলাদা করে নিয়ম বলা নেই। বরং নারী সাহাবীগণ যে পুরুষদের মতো তাশাহহুদে বসতে এই মর্মে বুখারী শরীফের তাশাহহুদ পর্বে উম্মে দারদা হতে ত্বালীক রয়েছে। এবং তিনি ছিলেন দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে একজন ফকীহ। নারী পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে যেসব হাদীস আনা হয় সেগুলো চতুর্থ ও পঞ্চম পর্বের হাদীসগ্রন্থ যেমন মুসান্নাফে ইবনে শাইবাহ, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে বিদ্যমান । যেসব হাদীসগুলো সঠিক নয়। দু:খের বিষয় এসব হাদীস বর্ণণা করা হলেও এগুলোর সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় না। ভবিষ্যতে এই সব হাদীসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
পুরুষ ও নারীদের সালাতে যেসব মৌলিক পার্থক্য রয়েছে সেগুলো হলো :
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে; কিন্তু পুরুষের না ঢাকলেও সালাত হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৭) স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত।
মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৮) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাত তালি দিয়ি বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে।
৯) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে (অবশ্য ওজর না থাকলে)। কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে হাত রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে; তাকবীরের সময়ও এভাবে করতে হবে।
১০) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই বের হয়ে যাবে। আর পুরুষরা পরে বের হবে।
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই। পুরুষ মহিলাদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত বাঁধা, রুকু, সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। মহিলাদের সালাত আদায়ে আমাদের দেশে যে পার্থক্য প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীস ভিত্তিক তো নয়ই, দলীল ভিত্তিকও নয় বরং কতকগুলো যঈফ নিতান্ত দুর্বল বাতিল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া লেখা বই হতে প্রচলিত হয়েছে।
এসম্পর্কে আরো জানতে এই বইটি ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।
অথবা