মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ করার বিধান

প্রশ্ন: কাফের-মুশরিকরা মারা গেলে তাদের জন্য কি দুআ করা এবং তাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে কি “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করা জায়েজ আছে?
••••••••••••••••••••••
উত্তর:
নিম্নে সংক্ষেপে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হল: و بالله أستيعن
❑ মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ করার বিধান:
মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের জন্য দুআ করা জায়েজ নেই।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয় একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।” (সূরা তওবা: ১১৩)
◈ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হুদাইবিয়া সন্ধির সময় প্রিয় নবী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- সাহাবীদের সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাথে আছে এক হাজার ঘোড় সওয়ার। মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত আবওয়া নামক স্থানে তাঁর প্রাণ প্রিয় মা-জননী চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি যাত্রা বিরতি করে তাঁর মা’র কবর যিয়ারত করতে গেলেন। কবরের কাছে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي في أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي، وَاسْتَأْذَنْتُهُ في أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي، فَزُورُوا القُبُورَ فإنَّهَا تُذَكِّرُ المَوْتَ
“আমি আল্লাহর দরবারে আমার মা’র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু তার কবর জিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাতে অনুমতি দেন। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, কবর জিয়ারত করলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।” (সহীহ মুসলিম)
❑ কাফের-মুশরিকদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ইন্নালিল্লাহ…পাঠ করা:
যে কোন বিপদ-বিপর্যয়, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, জীব-জন্তু, ফল-ফসল ইত্যদির ক্ষয়-ক্ষতির খবর শুনে ইন্নালিল্লাহ..পাঠ করায় কোন আপত্তি নাই। অনুরূপভাবে কাফের-মুশরিক, নাস্তিক, ভালো-মন্দ, নেককার-পাপিষ্ঠ ইত্যাদি যে কোন মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে এ কথা বলতে কোন অসুবিধা নেই।
‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ অর্থ: “আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” এটি কোন দুআ নয় বরং মহান আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা ও তার নিকট সবাইকে ফিরে যেতে হবে এ কথার স্বীকৃতি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ- الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের (ধৈর্য ধারণকারীদের)। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন- ”নিশ্চয় আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” [সূরা বাকারা: ১৫৫ ও ১৫৬]
তবে ইসলাম বিদ্বেষী বা ইসলামের দুশমন কোন কাফের মারা গেলে আনন্দ প্রকাশ করা বা আল হামদু লিল্লাহ পাঠ করা জায়েজ। কারণ, ইসলামের দুশমনদের ধ্বংস মুসলিমদের জন্য একটি নিয়ামত। এ মর্মে কুরআন, সুন্নাহর দলীল ও সালাফদের আমল রয়েছে।
◍◍ মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ করা বিষয়ে আলেমদের ফতোয়া:
➧ ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع .
“কোনো কাফিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (funeral) করা এবং তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা কুরআনের আয়াত ও উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম” (আল মাজমু: ৫/১১৯)
➧ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহ.) বলেন-
فإن الاستغفار للكفار لا يجوز بالكتاب والسنَّة والإجماع
“নিশ্চয় কাফিরদের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত অনুযায়ী নাজায়েয।” [মাজমুঊল ফাতাওয়া:১২/৪৮৯]
➧ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
الكافر إذا مات فلا بأس أن نقول: إنا لله وإنا إليه راجعون، والحمد لله، ولو كان من غير أقربائك؛ لأن كل الناس إليه راجعون، وكل الناس ملك لله سبحانه وتعالى، فلا بأس بهذا. ولكن لا يدعى له ما دام كافراً،
“যদি কোন কাফের মারা যায় তাহলে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন, ওয়াল হামদুলিল্লাহ’ ”নিশ্চয় আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” বলতে কোন অসুবিধা নেই-যদিও সে তোমার অনাত্মীয় হয়। কারণ প্রতিটি মানুষই তার কাছে ফিরে যাবে এবং প্রতিটি মানুষই আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। অত:এব এ কথা বলতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যেহেতু সে কাফের সেহেতু তার জন্য দুআ করা যাবে না।” [সূত্র: শাইখের অফিসিয়ার ওয়েব সাইট]
আল্লাহ আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88