জানি না.. কে সেই মহিয়সী; যিনি এমন পবিত্র ফুলের জন্ম দিয়েছেন

আমার ছোট ভাইটা আমার অনেক ছোট, সতের বছরের ছোট। সেইইই ছোট থাকতে সে মসজিদে নিয়ে যেতাম আমার সাথে। তাকে সাথে করে সামনের কাতারে নিয়ে নামাজ পড়তাম, অনেক মুরুব্বী তাকে পিছনের কাতারে ঠেলে দিত, আমিও তেমন কিছু বলতাম না। একদিন আর সহ্য হল না। আছরের সালাতে আমার যেতে একটু দেরী হইসে, ভাই আগেই গিয়ে সামনের কাতারে শামিল হইসে, আমি পিছনের কাতারে।
জামাত দাঁড়ানোর সময় জনৈক মুরুব্বি তাকে ঠেলে পিছনে দিচ্ছিল, আমি তাকে ইশারা করলাম সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে, স্বাভাবিক ভাবেই আমার কথা শুনে সামনেই পড়ল।
সে চলে যাওয়ার পর মুরুব্বিকে বললাম, মাঠে কতগুলি ছেলে খেলতেছে, এই ছেলেটা খেলা বাদ দিয়ে মসজিদে এসেছে, তাকে পিছনে ঠেলে দেয়া কেন? অন্যান্য বাচ্চাদের মত সেত দুষ্টামি ও করেনা মসজিদে। যাহোক সেদিনের পর থেকে আর কখনো কেউ এমন করেনি। পুরো এলাকায় চিনতো আমার ছোট ভাই হিসেবে। ক্লাস ফাইভের পর জামাত মিস হত তার, লোকজন জিজ্ঞেস করত ছোট ভাই কোথায়। স্কুলের সেকেন্ডারি লেভেলে উঠার পরে স্কুল ব্যাচের রুটিনের কারনে, বেশিরভাগ সময়ই জামাতে শরীক হওয়া তার হতো না। স্কুলের শিক্ষা বেবস্থার উপর বিভিন্ন কারনে আক্রোশ আছে, তার ভিতর এইটি একটি।
তাবলীগে যুক্ত ছিলাম, মুরুব্বিদের এহেন আচরণে একজনকে বলেছিলাম, ছোট পোলাপাইনদের ছোট বয়সে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিবেন, আর বড় হলে তাদের হাতে পায়ে ধরে মসজিদে আনার জন্য গাশত করবেন। ছোট থাকতে এটা করলে বড় হবার পর এত কষ্ট করা লাগত না।
💐
জুম’আর সালাত পড়তে এসেছি। অজুখানায় ঢুকে দেখি একটা বাচ্চা পানির কল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম.. হয়তো পানি নিয়ে খেলা করছে। একেবারেই ছোট বাচ্চা। এই বয়সের বাচ্চারা সুন্দর কিছু দেখলে খেলায় মেতে ওঠে।
কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি সে ওযু করছে। হাত ধোয়ার সময় বলছে— এক… দুই… তিন…। এভাবে তিনবার করে নিজের ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে হাত-পা ধৌত করছে।
তাকে বললাম— মাশা আল্লাহ। তুমি তো ভালোই ওযু করতে জানো দেখি!
আমার কথা শুনে ভাঙা ভাঙা বুলিতে সে যা বলল তা ছিল এমন—
‘ওযু করা এক্কেবারে সহজ। এতে আমার অসুবিধা হয় না কখনও। অসুবিধা হয় নামাজে দাঁড়াতে গেলে। ছোট বলে সবাই আমাকে পেছনের কাতারে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আমি তো অন্যদের মতো দুষ্টুমি করি না। তখন বরং ওদের দুষ্টুমির কারণে আমিও নামাজ পড়তে পারি না ঠিকমতো।’
বললাম— ‘তোমার আব্বুর সাথে নামাজে দাঁড়াবে। তাহলে কেউ তোমাকে পেছনে পাঠাবে না।’
বলল— ‘আব্বু মারা গেছেন। প্রতিবেলা নামাজের সময় হলে আম্মু আমাকে মসজিদে পাঠান। আর বলে দেন, আব্বুর সাথে দেখা করতে চাইলে; নামাজ পড়ে তার জন্য দুআ করো। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আব্বুর সাথে সুন্দর একটা জায়গায় তোমার দেখা হবে।’
এটি কোনো গল্প নয়। বাস্তব ঘটনা। জানি না.. কে সেই মহিয়সী; যিনি এমন পবিত্র ফুলের জন্ম দিয়েছেন। সালাম তাকে।
✒️ আবু হাসানাত কাসিম

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button