আল্লাহর আয়াতকে তাবিয হিসেবে ঝুলানোর বিধান

“আল্লাহর আয়াতকে তাবিয হিসেবে ঝুলানোর বিধান
রচনায়: শাইখ আব্দুল্লাহ আল গুনায়মান হাফিযাহুল্লাহ
“আর অবশিষ্ট রইলো, আল্লাহর আয়াত তাবিজ হিসেবে ঝুলানোর বিষয়টি।(অর্থাৎ যখন) কুরআন থেকে কিছু লিখে তা একজন ব্যক্তির সাথে ঝুলানোর হয়। এটি আলেমদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ একটি বিষয়। যারা এটিকে জায়েজ বলেছেন, তারা বলেন যে, এটি আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে আশ্রয় চাওয়ার মতো।
আর আল্লাহ জাল্লা ওয়া আ’লা বলেন, “আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দরতম নাম সমূহ। অতএব, তোমরা তা দ্বারা আল্লাহকে ডাকো।[সূরা আ’রাফ,আয়াত ১৮০]

 

(জায়েজ অভিমত প্রদানকারী আলিমদের মতে), (আল্লাহ তায়ালার নাম) লিখে ঝুলানো তা দ্বারা দুয়া করার মতোই, কেননা এই কাজের মাধ্যমে সে নিজে উপকৃত হওয়ার বিষয়টি কামনা করে। প্রকৃতপক্ষে সে বলে যে, সে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে এবং আল্লাহর কাছেই উপকার চাইছে, কিন্তু তাঁর নামের মাধ্যমে। কারণ কোরআন আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে, এই বিষয়গুলি অবশ্যই দলিলের আলোকে হতে হবে এবং অবশ্যই শরীয়াহ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। আসলে, অজ্ঞতা, সন্দেহ, শিরক এবং অন্যান্য রোগের নিরাময় হিসেবে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
তাবিজ ঝুলানো বা রক্ষাকবচ হিসেবে কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য কাজের জন্য অবতীর্ণ হয়নি। সাহাবীদের মধ্যে কেউ তা করেননি, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করার আদেশ দেন নি কিংবা অনুমোদন করেন নি। এমনটি হওয়ার কারণে এটি হারাম। এটি (হারাম হওয়ার) একটি দলিল।
(হারাম হওয়ার) দ্বিতীয় প্রমাণ হলো যে, এটি (সুস্পষ্ট শিরকি তামিমাহ) ঝুলানোর দিকে নিয়ে যাবে, যা বৈধ নয়।
তৃতীয় দলীল হল, এটা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই উক্তির ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত: “যে তাবিজ পরিধান করে সে শিরক করল” [মুসনাদে আহমদ,১৬৯৬৯,সহিহ] আমরা বলি, এটাও অন্যান্য তাবিজের মত তাবিজ।
চতুর্থ প্রমাণ হলো, এক্ষেত্রে কুরআনকে অসম্মান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ঝুলানো হবে, বালিশের নিচে রাখা হবে এবং এটি নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করাসহ এরূপ অনেক কাজ করা হবে, যা জায়েজ নয়।সুতরাং, এটি নিষিদ্ধ হওয়াটাই সঠিক, যাতে তা নিষিদ্ধ কাজের দিকে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা না হয়। আর, শরীয়তে এমন বহু প্রমাণ রয়েছে যা নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে নিয়ে যাওয়া উপায়গুলির প্রতিরোধের নির্দেশ করে।
সমস্ত উপায় যা হারাম কিছুর দিকে নিয়ে যেতে পারে তাও নিষিদ্ধ। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে, তাদেরকে গালি দিও না, তাহলে অজ্ঞতাবশত তারাও আল্লাহকে গালি দিবে।”
[সূরা আন’আম, আয়াত ১০৮]
অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্য মূর্তি ও উপাস্যদের অভিশাপ দেওয়ার বিষয়টি এখানে উদ্দেশ্য । কিন্তু যদি তা করা হয় এবং আপনি তাদের উপাস্যকে গালি দেন, তাহলে তার পূজারীরা আপনার ইলাহ এবং রবকে গালি দিবে। সুতরাং, (আল্লাহকে গালি দেওয়ার কারণ হওয়াতে) এটি জায়েজ নয়। এই কারণেই হাদিসেও উল্লেখ রয়েছে যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“যে তার পিতামাতাকে লা’নত দেয়, আল্লাহ তাকে লা’নত করেন।”
প্রশ্ন করা হলো,”কিভাবে সে তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়?” তিনি বললেন, একজন অপরজনের পিতামাতাকে গালি দেয়,ফলে ঐলোকও (যার পিতামাতাকে গালি দেওয়া হয়েছে) তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়। সুতরাং ,এটাও এই ধরণের।
অতএব, (কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা তাবিজ ঝুলানো) নিষিদ্ধ হওয়াটাই শরীয়তে অনেক বেশি সংখ্যক এবং শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রাধান্যপ্রাপ্ত। এমনকি যদি তাবিজটি আল্লাহর গুণাবলী কিংবা তাঁর আয়াত লিখে ঝুলানো হয় যাতে, তা নাজায়েজ বিষয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারণ না হয়। আর, এটি (শায়খ কি বলেছেন তা স্পষ্ট নয়) বা কাপড়ের বড় অংশ বা সুতা দিয়ে ঝুলানো থেকে মুক্ত নয়। এ জাতীয় কোনো কিছু এক্ষেত্রে অবশ্যই থাকতে হবে (ঝুলিয়ে রাখতে হলে) এবং তা তামিমার অন্তর্ভুক্ত। হ্যাঁ.”

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button