তাকদীরের প্রতি ঈমান
লিখেছেনঃ Abdullah Shahed Al-madani
ইসলামের মধ্যে القضاء والقدر বা তাকদীরের প্রতি ঈমানের রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা ও বিরাট গুরুত্ব। এটি তাওহীদের কেন্দ্রবিন্দু। এর মাধ্যমে বান্দার তাওহীদ সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় হয়। ইসলামী শয়ীয়তের হুকুম-আহকাম ও বিধিবিধান আসা শুরু হয়েছে তাকদীরের প্রতি ঈমান দিয়ে এবং সমাপ্তিও হয়েছে এর মাধ্যমে। ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে তাকদীরের প্রতি ঈমান অন্যতম। এর প্রতি ঈমান বান্দার এবাদতের মূলভিত্তি।
সবকিছুর তাকদীর নির্ধারণ করা আল্লাহর কুদরত বা ক্ষমতার মধ্যে গণ্য। মুমিনগণ আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন। যারা এটিকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহ তাআলার ক্ষমতাকেই অস্বীকার করে।
কুরআন ও হাদীছে বার বার তাকদীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসআলায় পরিণত হয়েছে। শরীয়তের দলীলসমূহ তাকদীরের যথাযথ বর্ণনা দিয়েছে, এবং এর প্রতি ঈমান আনয়নকে আবশ্যক করেছে।
আকীদাহ বিষয়ে লিখিত কিতাবগুলো তাকদীরের মাসআলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে, এবিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছে, এ ব্যাপারে সন্দেহগুলো দূর করেছে এবং এ বিষয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ করেছে ও তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষ বিরাট সুফল অর্জন করে। তাই এমাসআলাটির গুরুত্ব ও বিরাট মর্যাদা থাকার প্রমাণ। ব্যক্তি ও সমাজের উপর তাকদীরে প্রতি ঈমানের বিরাট প্রভাব রয়েছে।
তাকদীরের প্রতি কুফুরী করার কারণে এবং তা বুঝার ব্যাপারে বিভ্রান্ত হওয়ার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতে যে দুর্ভাগ্য, দুঃখ-কষ্ট এবং আযাব রয়েছে, তাও প্রমাণ করে যে, তাকদীরের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অস্বীকার করার কারণে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সুতরাং সঠিকভাবে তাকদীরের মাসআলা বুঝা এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এব্যাপারে গভীরতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ মানুষ তাকদীরের মাসআলায় বিভ্রান্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলার শরীয়তগত ও সৃষ্টিগত ফয়সালার বিরোধিতা করেছে। ফলে তারা তাকদীরের উপর ঈমান আনয়ন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং এর উপকারিতা ও সুফল হারিয়ে ফেলেছে।
কাযা ও কাদার তথা তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করা একটি সৃষ্টিগত বিষয়। জাহেলী যুগে কিংবা ইসলামী যুগে আরবরা তাকদীর অস্বীকার করতো না। আরবী ভাষার ইমাম আহমাদ বিন ইয়াইয়াহ ছা’লাব সুস্পষ্ট করেই বলেছেন, مافي العرب إلا مثبت القدر خيره وشره أهل الجاهلية وأهل الإسلام সকল আরবই তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। জাহেলী ও ইসলামী উভয় যুগের সকলেই তাকদীরের ভালো-মন্দ সবকিছুর প্রতিই ঈমান আনয়ন করেছে।
জাহেলী যুগের কবিতা ও ভাষণ-বক্তৃতার মধ্যেও তারা তাকদীর সাব্যস্ত করেছে। তাকদীর সম্পর্কে দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করার সময় তা উল্লেখ করা হবে। তারা তাকদীর বিশ্বাস করেছে এবং তা অস্বীকার করেনি। যদিও তাদের বিশ্বাসের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তির সংমিশ্রণ ছিল এবং তাকদীদেরর প্রকৃত অবস্থা বুঝার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অজ্ঞতা ছিল।
যুহাইর বিন আবু সালমা তার সুপ্রসিদ্ধ মুআল্লাকায় বলেন,
فَلاَ تَكْتُمُنَّ اللهَ مَا فيِ نفوسِكُمْ + لَيخْفَى، وَمَهْمَا يُكْتَمِ اللهُ يَعْلمِ
يؤخر فيوضع في كتاب فيدخر + ليوم الحساب اويعجل فينتقم
তোমাদের মনের মধ্যে যা আছে তা গোপন করো না। তা যতই গোপন করা হোক না কেন, আল্লাহ তা জেনে নিবেন। কেউ গোপনে অপরাধ করলে তাকে অবকাশ দেয়া হবে, আমলনামায় লিখা হবে এবং কিয়ামত দিবসের জন্য সংরক্ষণ করা হবে অথবা তার আগেই দুনিয়াতে প্রতিশোধ নেয়া হবে। কবি যুহাইর তার মুআল্লাকার অন্যত্র বলেন,
رَأَيتُ المَنايا خَبطَ عَشواءَ مَن تُصِب + تُمِتهُ وَمَن تُخطِئ يُعَمَّر فَيَهرَمِ
আমি মৃত্যুকে কানা উটনীর মত উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখেছি। এটি যার উপর গিয়ে পড়ে তার মৃত্যু ঘটায় এবং যার উপর পড়তে ভুল করে সে দীর্ঘজীবি হয়ে বৃদ্ধ হয়।
কবি তাকদীরকে অস্বীকার না করলেও তাকে এমন কানা বা দুর্বল দৃষ্টি সম্পন্ন উটনীর সাথে তুলনা করেছেন, যেটি দিশেহারা অবস্থায় চলাচল করে। তার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার কারণে যার সাথে ধাক্কা লাগে তাকেই আক্রমণ করে এবং মেরে ফেলে। আর যার উপর পড়তে ভুল করে সে বেঁচে যায়।
তাকদীর সম্পর্কে এটি তার মারাত্মক অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির প্রমাণ। কেননা প্রত্যেকের মৃত্যুর সময় নির্ধারিত এবং লিখিত আছে। জাহেলী যুগের অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের কাব্যগ্রন্থে তা সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সাবআ মুআল্লাকাতের অন্যতম কবি আমর বিন কুলছুম বলেন,
وَإِنَّا سَوْفَ تُدْرِكُنا الَمنَايا + مُقَدَّرَةً لَنا وَمُقَدِّرِينا
অচিরেই মৃত্যু আমাদেরকে আক্রমণ করবে। এটি আমাদের জন্য নির্ধারিত এবং আমাদেরকেও এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাহেলী ও ইসলামী যুগের সুপ্রদ্ধি কবি লাবীদ বিন রাবীআ আল-আমেরী নীল গাভীর সাথে হিংস্র বন্যপ্রাণীর আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে তার মুআল্লাকায় বলেন,
صادفن منها غرة فأصبنها إن المنايا لا تطيش سهامها
নেকড়ের দলটি নীল গাভীর বাচ্চাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে সেগুলোকে ধরাশায়ি করে ফেললো। নিশ্চয়ই মৃত্যুর তীর কখনো ভুল করে না। এখানেও লাবীদ বলেছেন যে, সবার মৃত্যু নির্ধারিত রয়েছে এবং তা যথাসময়েই আগমণ করে থাকে। মৃত্যু কখনো সময় হওয়ার আগে কারো উপর ভুলক্রমে আক্রমণ করে না।
নির্ধারিত সময়েই প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যু হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ﴾
“তারপর যখন সেই সময়টি এসে যায় তখন তারা তা থেকে এক মুহূর্তও আগাতে পারে না, পিছেও যেতে পারে না”। (সূরা নাহাল: ৬১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا﴾ “কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না৷ মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে”। (সূরা আল-ইমরান: ১৪৫)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া প্রেরিত হয়ে অন্যান্য নবীর মতই তাকদীরের বিষয়টির সর্বোচ্চ বর্ণনা প্রদান করেছেন। তাকদীর এবং অন্যান্য বিষয়ে তার উপকারী বক্তব্যসমূহ সংক্ষিপ্ত; কিন্তু সবকিছুকে শামিলকারী। এবক্তব্যগুলো অন্তরের রোগ নিরাময় করার জন্য যথেষ্ট। তিনি কখনো তাকদীরের মাসআলাসমূহকে এক সাথে একত্র করে বর্ণনা করেছেন আবার কখনো আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যগুলো খুব পরিস্কার। কুরআনে তাকদীর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনাগুলো উহার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে।
তাঁর সাহাবীগণ একই পথ অনুসরণ করেছেন, তাঁর নিকট থেকে তাকদীরের মাসআলাগুলো শিখেছেন, তাঁর প্রদর্শিত মজবুত পথের অুনসরণ করেছেন এবং তার সরল-সঠিক মানহাজের উপর চলেছেন। তাকদীর সম্পর্কে সাহাবীদের বক্তব্যগুলো পরিস্কার এবং পরবর্তীকালের লোকদের বক্তব্যের পরিবর্তে সেগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তাকদীরের বিষয়ে তাদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত ও উপকারী। কেননা তারা ছিলেন নবুওয়াতের যুগের খুব নিকটবর্তী এবং নবুওয়াতের চেরাগ থেকে তারা সরাসরি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। নবুওয়াতের চেরাগ থেকে তাদের আলো নির্গত হয়েছে, সমস্ত কল্যাণ উৎসারিত হয়েছে এবং এটিই হেদায়াতের মূলভিত্তি। সুতরাং অন্যদের তুলনায় তাকদীরের মাসআলায় তারাই ছিলেন সর্বাধিক বুঝবান এবং সবচেয়ে জ্ঞান সম্পন্ন। তারাই ছিলেন সবচেয়ে বেশি ঈমানদার এবং ঈমানের দাবি অনুযায়ী সর্বাধিক আমলকারী। সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুমগণ ছিলেন নবী আলাইহিমুস সালামের পরে সবচেয়ে আল্লাহ ভীরু, সবচেয়ে দানশীল এবং সর্বাধিক সাহাসী।
অতঃপর সাহাবীদের পরে উত্তমভাবে তাদের অনুসারী তাবেঈগণ তাদের অনুসরণ করেছেন, তাদের হেদায়াত গ্রহণ করেছেন এবং তারা যেদিকে দাওয়াত দিয়েছেন তারাও সেদিকে দাওয়াত দিয়েছেন ও সাহাবীগণ যে পথের উপর ছিলেন তারাও সেখানে পৌঁছেছেন।
তাবেঈদের যুগের পরে এই উম্মতের মধ্যে অন্যান্য উম্মতের ব্যাধি ঢুকে পড়েছে। তারা তাদের পূর্ববতীদের পথ ও রীতি-নীতির অনুসরণ করেছে। ইসলামী আকীদাহ ও দেশগুলোর মধ্যে গ্রীক দর্শন, ভারতীয় সংস্কৃতি, পারস্য কুসংস্কারসহ অন্যান্য অপসংস্কৃতির কালো ছায়া ঢুকে পড়েছে। এর ফলে সর্বপ্রথম বসরা ও দামেস্কে কাদারীয় মাযহাব অর্থাৎ তাকদীর অস্বীকার করার বিদআত প্রবেশ করেছে এবং এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম শির্ক অনুপ্রবেশ করেছে। তা হলো তাকদীর অস্বীকার করার শির্ক। এটি ছিল সাহাবীদের যুগের শেষের দিকের কথা। তারা এই বিদআতের তিব্র প্রতিবাদ করেছেন এবং তা থেকে ও তার অনুসারীদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
এর পর আগমণ করেছেন সালাফদের আলেমগণ। তারা তাকদীর অস্বীকার বিদআতটি তিব্র প্রতিবাদ করেছেন, এটি বানোয়াট হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন, এর মুখোশ উন্মুক্ত করেছেন এবং এর অসার ভিত্তিকে ভেঙ্গে চুরমার করেছেন। সেই সঙ্গে তারা এবিষয়ে মূল সত্যটি প্রকাশ করেছেন, তা প্রচার করেছেন এবং উম্মতকে এদিকে আহবান করেছেন।
এখানে আরেকটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস করা সৃষ্টিগত ও স্বভাবগত বিষয়। শরীয়তের দলীলগুলো কেবল এটিকে সবিস্তারে বর্ণনা করেছে এবং পরিস্কারভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। তবে নিঃসন্দেহে এটি আকীদার একটি জটিল ও কঠিন বিষয়। তাই এর সূক্ষ্ণ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করা, শাখা-প্রশাখা গুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করা, এতে বেশি বেশি গবেষণা করা এবং এ সম্পর্কে সন্দেহ ছড়ানো হলে বিষয়টি বুঝা সহজ হওয়ার চেয়ে আরো কঠিন হয়ে যায়। তা আয়ত্ত করাও দুঃসাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং পূর্ব ও বর্তমান কালের মানুষ এটি বুঝতে গিয়ে হয়রান হবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। জ্ঞানীরা এবিষয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরাফেরা করেছে, প্রতিটি উপায় অবলম্বন করেছে, সংকীর্ণ ও কঠিন পথ অতিক্রম করেছে, এর জ্ঞান অর্জন করার দৃঢ় সংকল্প করেছে এবং এর প্রকৃত অবস্থা অবগত হওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা এতে উপকৃত হতে পারেনি এবং লাভবান করতে পারেনি। কেননা তারা হেদায়াতের আসল উৎস বাদ দিয়ে অন্যস্থান থেকে তা অন্বেষণ করেছে। তারা শুধু নিজেরা ক্লান্ত হয়েছে, অন্যদেরকেও ক্লান্ত করেছে, দিশেহারা হয়েছে, অন্যদেরকে দিশেহারা করেছে এবং গোমরাহ হয়েছে ও অন্যদেরকে গোমরাহ করেছে।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদেরকে তাকদীর বুঝার তাওফীক দিয়েছেন। কেননা তারা এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহয় যা এসেছে, কেবল তারাই অনুসরণ করে এবং সালাফে সালেহীনদের পথের অনুসরণ করে থাকে। কেননা এই উম্মতের সালাফগণ তাকদীরকে যেভাবে বুঝেছে, সেভাবে না বুঝলে বিস্তারিতভাবে এটি সঠিকভাবে বুঝা সম্ভব নয়।
এ বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝে তারাই সর্বাধিক ধন্য হয়েছে, যারা সুপষ্ট অহীর চেরাগ থেকে এর শিক্ষা নিয়েছে, স্বীয় ফিতরাত ও ঈমানের দাবিতেই দিশেহারাদের মতামত পরিত্যাগ করেছে, সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্ধে লিপ্তদের সন্দেহ পরিহার করেছে এবং সীমালংঘনকারীদের বাড়াবাড়ি থেকে বর্জন করেছে।
এজন্যই দেখা যায় যে, সাধারণত আকীদাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তা থেকে বিচ্যুত হওয়া বিশেষ করে তাকদীরের মাসআলাকে সঠিকভাবে না বুঝাই পরবর্তী যুগের মুসলিমদের অধপতনের সবচেয়ে বড় কারণ।
পৃথিবীতে অগ্রগতি, উন্নতি, সম্মান-মর্যাদা ও পতিষ্ঠা লাভের জন্য উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা বাদ দিয়ে অনেক মুসলিম তাদের অপারগতা, অক্ষমতা ও ধ্বংসের পক্ষে এবং কর্মহীন জীবন-যাপন করার পক্ষে যখন তাকদীর দিয়ে খোঁড়া যুক্তি প্রদর্শন করেছে, তখনই তারা পতনের সম্মুখীন হয়েছে। তারা ভুলে গেছে যে, আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীর তাঁর অপরিবর্তনীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী চলতে থাকবে, তাতে কোনো রদবদল হবে না এবং কারো প্রতি সৌহার্দ প্রদর্শন করে না। সে যে কেউ হোক না কেন।
আমরা আশা করি মুসলিম জাতি তাদের গভীর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মানব জাতির নের্তৃত্ব ও সংশোধনের দায়িত্ব নিবে এবং বিশ্বের মাঝে তাদের সম্মানজনক স্থান পুনরুদ্ধার করবে। আর এটি পরিশুদ্ধ ইসলামী আকীদার দিকে ফিরে আসার মাধ্যমেই সম্ভব। এটিই হলো মুসলিমদের মর্যাদা ও শক্তির মূল উতস।
তাকদীরের বিষয়টি খুব কঠিন এবং শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। আমার ইলমী যোগ্যতাও কম। এবিষয়ে আমার অভিজ্ঞা খুব দুর্বল। এটি জেনেও এবিষয়ে লিখার দিকে অগ্রসর হলাম। কারণ যুগযুগ ধরে মানুষের মাঝে তাকদীরের বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে, একের পর এক সন্দেহের দ্বার উন্মুক্ত হয়েই চলছে, এতে দিশেহারা লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিনা ইলমে এতে মানুষ বেশি বেশি তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে।
তাই আমি আল্লাহ তাআলার কাছে ইস্তেখারা করেছি। অতঃপর এবিষয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিষগুলো একত্র করে, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত থেকে আলো সংগ্রহ করে, সালাফে সালেহীনদের বুঝ দ্বারা উপকৃত হয়ে এবং আল্লাহর সাহায্য নিয়ে যতদূর সম্ভব এবিষয় সংক্রান্ত সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ মাসআলাগুলো সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বিষয়টির সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা এবং এর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করার প্রতি আমার আগ্রহ থেকেই লিখতে অগ্রসর হয়েছি।
এতে আমি মূল সত্যটি বর্ণনা করতে সক্ষম হতে পারলে তা কেবল আল্লাহর অনুগ্রহেই হবে। আর এতে যদি কোনো ভুল-ত্র“টি করে থাকি কিংবা নিরর্থক কিছু বলে থাকি, তাহলে তা হবে আমার নিজের নফস্ ও শয়তানের পক্ষ থেকে।
﴿إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ﴾
“আমি তো আমার সাধ্য অনুযায়ী সংশোধন করতে চাই৷ যাকিছু আমি করতে চাই তা সবই আল্লাহর তাওফীকের উপর নির্ভর করে৷ তাঁর উপর আমি ভরসা করেছি এবং সব ব্যাপারে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি”৷ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম কার্য সম্পাদনকারী।