তোমার রব কে?

মূল রচনা :  মুহাম্মাদ ইবন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-আম্মারী

অনুবাদ: আলী হাসান তৈয়ব

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মানুষকে (বিদ্যা) শিখিয়েছেন কলম দ্বারা। শিক্ষা দিয়েছেন এমন বিষয় যা সে জানত না। সকল স্তুতি তাঁরই জন্য, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা বলতে শিখিয়েছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক ঐ সত্তার প্রতি, যিনি মনগড়া কিছু বলেন না, যা বলেন আল্লাহর অহী প্রাপ্তির আলোকেই বলেন।

পরকথা, প্রতিটি মানুষের কর্তব্য তার রবের পরিচয় জানা। কেননা আমাদের যে কেউ মারা গেলে তাকে কবরে শোয়ানোর পর তার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসবেন। তারা তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করবেন তার রব কে? যেমন বারা’ ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন বান্দাকে কবরে রাখার পরের অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বললেন,

«فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ، فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ: أَنْ صَدَقَ عَبْدِي».

“অতঃপর তার দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তখন তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসবেন। তারা তাকে তুলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করবেন: তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তারা তাকে বলবেন, তোমার দীন কী? সে বলবে, আমার দীন ইসলাম। তারা তাকে বলবেন, তোমাদের মাঝে প্রেরিত এ ব্যক্তি কে ছিলেন? সে বলবে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বলবেন, তুমি তা জানলে কী করে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। অতঃপর তাতে ঈমান এনেছি এবং তা সত্যে পরিণত করেছি। তখন আসমানে এক ঘোষক ঘোষণা দেবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে।”[1]

অতএব, আমরা জানলাম, যে কেউ কুরআন মাজীদ পড়বে, সে তার রবের পরিচয় জানতে পারবে।

প্রথমত: যে আল-কুরআন পড়বে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহই একমাত্র রব

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖۚ﴾ [الانعام: ١٦٤]

“বল, ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন রব অনুসন্ধান করব’ অথচ তিনি সব কিছুর রব?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٤]

“নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ‘আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

দ্বিতীয়ত: যে কুরআনে মাজীদ পড়বে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর অনেক সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, যার কিছু সামষ্টিকভাবে বর্ণিত হয়েছে আর কিছু বর্ণিত হয়েছে বিস্তারিত।

কুরআন পড়লে জানা যায়, আল্লাহর সু্ন্দর নামসমূহ রয়েছে,

যার কিছুর আলোচনা এসেছে মুজমাল তথা সামষ্টিকভাবে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ لَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ ٨﴾ [طه: ٨]

“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৮]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا، مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি (তথা) এক বাদে একশটি নাম রয়েছে, যে এসব (যথার্থভাবে) আয়ত্ব করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[2]

একই সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীসে মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,

«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا، مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ إِنَّهُ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ»

“নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি (তথা) এক বাদে একশটি নাম রয়েছে, যে এসব (যথার্থভাবে) আয়ত্ব করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বেজোড়- বেজোড়ই পছন্দ করেন।” [সহীহ মুসলিম: ২৬৭৭]

কুরআন পড়লে আরও দেখতে পাবে যে, আল-কুরআনের কোথাও কোথাও সেসব নাম বিস্তারিত এসেছে

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِۖ هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ٢٢ هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡمَلِكُ ٱلۡقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلۡمُؤۡمِنُ ٱلۡمُهَيۡمِنُ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡجَبَّارُ ٱلۡمُتَكَبِّرُۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٢٣ هُوَ ٱللَّهُ ٱلۡخَٰلِقُ ٱلۡبَارِئُ ٱلۡمُصَوِّرُۖ لَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٢٤﴾ [الحشر: ٢٢،  ٢٤]

“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, গায়েব ও উপস্থিত উভয়ের জ্ঞানী, তিনিই পরম করুণাময়, দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে তা হতে অত্যন্ত পবিত্র-মহান। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’’ [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২২-২৪]

এ বিষয়ে বহু আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল-কুরআনের প্রায় আয়াতই তো শেষ হয়েছে তিনি সর্বশ্রোতা, তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞ, তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আর তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় প্রভৃতি এ জাতীয় আল্লাহর নাম বা গুণবাচক শব্দের মাধ্যমে।

কুরআন পড়ে আমরা আরও জানতে পারি যে আল্লাহর নামসমূহ জানার উদ্দেশ্য তাঁকে সেসব নামে ডাকা এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০]

অতএব, আমরা পাপাচার থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে তাঁকে গাফুর তথা ক্ষমাশীল নামে ডাকব। তাওবা করতে গিয়ে তাওয়াব তথা তাওবা কবুলকারী নামে, জ্ঞান প্রার্থনা করতে আলীম তথা মহাজ্ঞানী নামে, রিজিক প্রার্থনা করতে রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা নামে, দান-দক্ষিণা পেতে ওয়াহহাব তথা মহাদাতা নামে আল্লাহকে ডাকব। অনুরূপ অন্যান্য নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে সে তা থেকেই জানতে পারবে যে, মুসলিমদের মধ্যে কিছু লোকের উদ্ভব হবে যারা আল্লাহর নামসমূহকে অস্বীকার করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে।” [সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]

তাই দেখা যায় মুসলিমদের মধ্য থেকে জাহামিয়্যা সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। তারা আল্লাহর ভবিষ্যৎবাণী মতে আল্লাহর নামসমূহকে অস্বীকার করে। আল্লাহর কোনো নাম নেই বলেই তাদের দাবি।

তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন :

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক।” [সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]

শুধু তাই নয়, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। একই আয়াতে তিনি বলেছেন,

﴿وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়।” [সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]

উপরন্তু তাদের সাবধান করে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন,

﴿سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে।” [সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৮০]

তৃতীয়ত: কুরআন মাজীদ পাঠে জানতে পারবে যে, আল্লাহর অনেক সিফাত তথা গুণাবলি রয়েছে। 

যে কেউ কুরআন পড়লে আল্লাহর নানা গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাবে। যেমন সে জানতে পারবে যে আল্লাহর নফস বা আত্মা রয়েছে।

কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿كَتَبَ رَبُّكُمۡ عَلَىٰ نَفۡسِهِ ٱلرَّحۡمَةَ﴾ [الانعام: ٥٤]

“তোমাদের রব তাঁর নিজের (আত্মার) উপর দয়া লিখে নিয়েছেন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৪]

আবার এই কুরআনই তাকে শেখাবে যে, আল্লাহর আত্মা আর দশজন সৃষ্টির আত্মার মতো নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলে,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা-সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

তেমনি কুরআন পড়লে জানতে পারবে যে, আল্লাহর চেহারা রয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٢٧﴾ [الرحمن: ٢٧]

“আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা।” [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ২৭]

আবার এই কুরআনই তাকে শেখাবে যে আল্লাহর চেহারা আর দশজন সৃষ্টির চেহারা মতো নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা- সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অনুরূপ কেউ কুরআন পড়লে তা তাকে শেখাবে যে, আল্লাহর হাত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ﴾ [المائ‍دة: ٦٤]

“আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তাঁর দু’হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৪]

আবার এ কুরআন পড়লেই সে জানবে যে, তাঁর হাত আর সব সৃষ্টির হাতের মতো নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা- সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অনুরূপ যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর শ্রবণশক্তি রয়েছে এবং তিনি বধির নন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّتِي تُجَٰدِلُكَ فِي زَوۡجِهَا وَتَشۡتَكِيٓ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ يَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَآۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ ١﴾ [المجادلة: ١]

“আল্লাহ অবশ্যই সে নারীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিল আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিল। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১]

আরেক আয়াতে তিনি বলেন,

﴿لَّقَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ فَقِيرٞ وَنَحۡنُ أَغۡنِيَآءُۘ سَنَكۡتُبُ مَا قَالُواْ﴾ [ال عمران: ١٨١]

“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী।’ অচিরেই আমি লিখে রাখব তারা যা বলেছে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮১]

আল্লাহ আরও বলেন,

﴿إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦﴾ [طه: ٤٦]

“আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।” [সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৪৬]

আরও বলেন,

﴿إِنَّا مَعَكُم مُّسۡتَمِعُونَ ١٥﴾ [الشعراء: ١٥]

“অবশ্যই আমরা আছি তোমাদের সাথে শ্রবণকারী।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৫]

আবার এই কুরআন পড়লেই সে শিখবে যে, আল্লাহর শ্রবণশক্তি  আর সব সৃষ্টির শ্রবণশক্তির মতো নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে তা তাকে শিখাবে যে, আল্লাহর চোখ রয়েছে, যা দিয়ে তিনি দেখেনঅতএব, তিনি অন্ধ নন।

যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ ١﴾ [المجادلة: ١]

“নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১]

আল্লাহ আরও বলেন,

﴿أَلَمۡ يَعۡلَم بِأَنَّ ٱللَّهَ يَرَىٰ ١٤﴾ [العلق: ١٤]

“সে কি জানে না যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন?”

আরেক সূরায় তিনি বলেন,

﴿ٱلَّذِي يَرَىٰكَ حِينَ تَقُومُ ٢١٨ وَتَقَلُّبَكَ فِي ٱلسَّٰجِدِينَ ٢١٩﴾ [الشعراء: ٢١٨،  ٢١٩]

“যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দণ্ডায়মান হও এবং সাজদাকারীদের মধ্যে তোমার উঠাবসা।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২১৮-২১৯]

আবার এই কুরআন পড়লেই সে শিখবে যে, আল্লাহর চোখ আর সব সৃষ্টির চোখের মতো নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

আর যে কেউ কুরআন পাঠ করবে সে অবশ্যই জানতে পারবে যে, আল্লাহর বাকশক্তি রয়েছে; তিনি কথা বলেন, যা শ্রোতা শুনতেও পারে।

আল্লাহ তা‘আলা যেমন বলেছেন,

﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآيِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِيٌّ حَكِيمٞ ٥١﴾ [الشورى: ٥١]

“কোনো মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু অহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোনো দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَكَلَّمَ ٱللَّهُ مُوسَىٰ تَكۡلِيمٗا ١٦٤﴾ [النساء: ١٦٤]

“আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪]

তিনি শব্দ উচ্চারণ করে সশব্দে কথা বলেন। অতএব, তিনি মূক নন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِيٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِي﴾ [الاعراف: ١٤٣]

“আর যখন আমার নির্ধারিত সময়ে মূসা এসে গেল এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রব, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনো দেখবে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৩]

তিনি যখন চান যে বিষয়ে চান কথা বলেন। তাঁর কথার কোনো শেষ নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي وَلَوۡ جِئۡنَا بِمِثۡلِهِۦ مَدَدٗا ١٠٩﴾ [الكهف: ١٠٩]

“বল, ‘আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায় তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই। যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি।” [সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ১০৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ﴾ [لقمان: ٢٧]

“আর যমীনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২৭]

অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে সে অবশ্যই জানবে যে, আমাদের রব সব কিছু জানেন। তাঁর জানা সামষ্টিকভাবে এবং বিস্তারিতভাবে।

তিনি সব জানেন সামষ্টিকভাবে যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٣١﴾ [البقرة: ٢٣١]

“আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩১]

﴿أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢﴾ [الطلاق: ١٢]

“আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ১২]

আল্লাহ সব জানেন বিস্তারিতভাবে: যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩﴾ [الانعام: ٥٩]

“আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯]

তিনি সব কিছু জানেন তা সংঘটিত হবার আগেও:

যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدۡ جِئۡنَٰهُم بِكِتَٰبٖ فَصَّلۡنَٰهُ عَلَىٰ عِلۡمٍ﴾ [الاعراف: ٥٢]

“আর আমরা তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জেনে-শুনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَقَدِ ٱخۡتَرۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ عِلۡمٍ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ٣٢﴾ [الدخان: ٣٢]

“আর আমরা জ্ঞাতসারেই তাদেরকে সকল সৃষ্টির ওপর নির্বাচিত করেছিলাম।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿أَفَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡمٖ﴾ [الجاثية: ٢٣]

“তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ তাকে জেনেই পথভ্রষ্ট করেছেন।” {সূরা আল-জাছিয়া, আয়াত: ২৩}

তিনি সবকিছু জানেন তা সংঘটিত হবার সময়েও:

যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَآ إِنَّهُمۡ يَثۡنُونَ صُدُورَهُمۡ لِيَسۡتَخۡفُواْ مِنۡهُۚ أَلَا حِينَ يَسۡتَغۡشُونَ ثِيَابَهُمۡ يَعۡلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعۡلِنُونَۚ إِنَّهُۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ٥﴾ [هود: ٥]

“জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা তাদের বুক ফিরিয়ে নেয়, যাতে তারা তার থেকে আত্মগোপন করতে পারে। জেনে রাখ, যখন তারা কাপড় আবৃত হয়, তখন তিনি জানেন যা তারা গোপন করে এবং  যা তারা প্রকাশ করে। নিশ্চয় তিনি অন্তর্যামী।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৫]

তিনি সবকিছু জানেন তা সংঘটিত হবার পরেও:

যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَيَبۡلُوَنَّكُمُ ٱللَّهُ بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلصَّيۡدِ تَنَالُهُۥٓ أَيۡدِيكُمۡ وَرِمَاحُكُمۡ لِيَعۡلَمَ ٱللَّهُ مَن يَخَافُهُۥ بِٱلۡغَيۡبِۚ﴾ [المائ‍دة: ٩٤]

“হে মুমিনগণ, অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন শিকারের এমন বস্তু দ্বারা তোমাদের হাত ও বর্শা যার নাগাল পায়, যাতে আল্লাহ জেনে নেন কে তাঁকে গায়েবের সাথে ভয় করে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯৪]

তিনি আরও বলেন,

﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗاۗ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلۡقِبۡلَةَ ٱلَّتِي كُنتَ عَلَيۡهَآ إِلَّا لِنَعۡلَمَ مَن يَتَّبِعُ ٱلرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِۚ وَإِن كَانَتۡ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُۗ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١٤٣﴾ [البقرة: ١٤٣]

“আর যে কিবলার ওপর তুমি ছিলে, তাকে কেবল এ জন্যই নির্ধারণ করেছিলাম, যাতে আমি জেনে নেই যে, কে রাসূলকে অনুসরণ করে এবং কে তার পেছনে ফিরে যায়। যদিও তা অতি কঠিন (অন্যদের কাছে) তাদের ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন এবং আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমানকে বিনষ্ট করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৩]

চতুর্থত: যে আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, সে অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে সক্ষম হবে:

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব পড়বে সে জানতে পারবে যে আল্লাহ অস্তিত্ববান সত্তা। তিনিই প্রথম যার আগে কেউ নেই, আবার তিনিই শেষ যার পরে কেউ নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ ٣﴾ [الحديد: ٣]

“তিনিই প্রথম ও শেষ এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিকটে, আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৩]

«اللهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ،»

“হে আল্লাহ, তুমিই প্রথম, তোমার আগে কেউ নেই আর তুমিই শেষ, তোমার পরেও কেউ নেই।’ [সহীহ মুসলিম : ২৭১৩]

পঞ্চমত: যে আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, সে জানবে নিখিল সৃষ্টির আগেই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ﴾ [هود: ٧]

“আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, সে সময় তাঁর ‘আরশ ছিল পানির উপর।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৭]

ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ غَيْرُهُ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى المَاءِ، وَكَتَبَ فِي الذِّكْرِ كُلَّ شَيْءٍ، وَخَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ»

“আল্লাহ ছিলেন, তিনি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখন তাঁর সিংহাসন ছিল পানির ওপর। তিনি যিকিরে (তথা লাওহে মাহফূযে) সব কিছু লিখেছেন এবং আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন।”[3]

ষষ্ঠত: যে আল্লাহর কিতাব পড়বে, সে জানতে পারবে সৃষ্টির পরে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ ٱلرَّحۡمَٰنُ فَسۡ‍َٔلۡ بِهِۦ خَبِيرٗا ٥٩﴾ [الفرقان: ٥٨]

“যিনি আসমান, যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি ‘আরশে উঠেছেন। তিনি পরম করুণাময়। সুতরাং তাঁর সম্পর্কে যিনি সম্যক অবহিত, তুমি তাকেই জিজ্ঞাসা কর।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৫৮]

আর আরশ হচ্ছে সপ্তম আসমানের ছাদ।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَسَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ، وَأَعْلَى الجَنَّةِ، وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ»

“সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করবে। কারণ, তা হল, উৎকৃষ্ট ও উন্নত জান্নাত। এ জান্নাতের উপর রয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর আরশ। তা হতে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হয়।”[4]

আর আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর রয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥﴾ [طه: ٥]

“রহমান তাঁর ‘আরশের উপর রয়েছেন”। [সূরা ত্বা-হা: ৫]

আর আল্লাহর ওপর কোনো কিছুই নেই। কারণ, তিনি আয-যাহের, আর তার অর্থই হচ্ছে সবার উপরে, যার উপর আর কিছু নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ﴾ [الحديد: ٣]

“তিনিই প্রথম ও শেষ এবং সর্বোচ্চ।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত:৩]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اللَّهُمَّ أَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ»

“হে আল্লাহ, আপনি সর্বোপরী, আপনার উপরে কিছু নেই।”

সপ্তমত: যে কেউ আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, সে তাতে আল্লাহর একত্ববাদ জানতে পারবে।

আল্লাহলা তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١﴾ [الاخلاص: ١]

“বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।” [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১]

কেউ কুরআন পড়লে রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে জানতে পারবে।

সুতরাং রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্র আল্লাহ এক, তাতে তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖۚ ﴾ [الانعام: ١٦٤]

“বল, ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো রব অনুসন্ধান করব’ অথচ তিনি সব কিছুর রব?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]

রাজত্বের ক্ষেত্রে তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٞ فِي ٱلۡمُلۡكِ﴾ [الاسراء: ١١١]

“আর রাজত্বে তাঁর কোনো শরীক নেই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ﴾ [سبا: ٢٢]

“আর (আসমানসমূহ ও যমীন) এ দুয়ের (রাজত্বের) মধ্যে (আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য যাদের উপাসনা করা হয়) তাদের কোনো অংশীদারিত্বও নেই।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

মুশরিকরা মনে করে আল্লাহর রাজত্বে অংশীদার রয়েছে। আল্লাহ তাদের ধারণার অপনোদন করে বলেন,

﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ﴾ [سبا: ٢٢]

“বল, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহ্বান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনে অণু পরিমাণ কোনো কিছুর মালিক নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣﴾ [فاطر: ١٣]

“তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩]

সৃষ্টি সৃজনে তিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ﴾ [الزمر: ٦٢]

“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬২]

অথচ মুশরিক-পৌত্তলিকরা আল্লাহর সৃষ্টিতে শরীক রয়েছে বলে দাবি করে।

তাদের বক্তব্য অবাস্তব জানিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿أَمۡ جَعَلُواْ لِلَّهِ شُرَكَآءَ خَلَقُواْ كَخَلۡقِهِۦ فَتَشَٰبَهَ ٱلۡخَلۡقُ عَلَيۡهِمۡۚ قُلِ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّٰرُ ١٦﴾ [الرعد: ١٦]

“নাকি তারা আল্লাহর জন্য এমন কতগুলো শরীক নির্ধারণ করেছে, যেগুলো তাঁর সৃষ্টির তুল্য কিছু সৃষ্টি করেছে, ফলে তাদের নিকট সৃষ্টির বিষয়টি একরকম  মনে হয়েছে’? বল, ‘আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি এক, পরাক্রমশালী।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ ٣﴾ [فاطر: ٣]

“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দিবে? তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩]

বিধি-বিধান প্রদানে তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ثُمَّ جَعَلۡنَٰكَ عَلَىٰ شَرِيعَةٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡرِ فَٱتَّبِعۡهَا وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨﴾ [الجاثية: ١٨]

“তারপর আমি তোমাকে দীনের এক বিশেষ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর এবং যারা জানে না তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না।” [সূরা আল-জাছিয়া, আয়াত: ১৮]

অথচ মুশরিকরা দাবী করে, বিধান প্রদানে আল্লাহর অনেক শরীক রয়েছে।

তাদের এ দাবী প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ وَلَوۡلَا كَلِمَةُ ٱلۡفَصۡلِ لَقُضِيَ بَيۡنَهُمۡۗ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢١﴾ [الشورى: ٢١]

“তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্যে সে বিধি-বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ? যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয় যালিমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২১]

আদেশ-নিষেধ প্রদানেও আল্লাহ একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٤]

“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই, সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না বরকতময়!” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

তিনি বিধান প্রদানেও একক; জনগণ (যা গণতন্ত্রের কথা), গোত্র (যা রাজতন্ত্রের কথা) বা ব্যক্তি (যা একনায়কতন্ত্রের কথা)- কোনো কিছুই বিধান প্রদানে কিংবা আইন প্রণয়নে তাঁর সাথে শরীক নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡتَغِي حَكَمٗا وَهُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكِتَٰبَ مُفَصَّلٗا﴾ [الانعام: ١١٤]

“আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদের নিকট বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১৪]

অথচ গণতন্ত্রীরা দাবী করে, আল্লাহ নন, জনগণই বিধান প্রণেতা।

এমন দাবী প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِۖ﴾ [الانعام: ٥٧]

“বিধান দেওয়ার মালিক তো কেবল আল্লাহ।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৭]

আর গোত্রবাদী বা রাজতন্ত্রীরা দাবী করে, আল্লাহ নন রাজা কিংবা গোত্র প্রধানই বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা।

তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [المائ‍دة: ٥٠]

“তারা কি তবে জাহেলিয়্যাতের (গোত্রভিত্তিক বা বংশানুক্রমিক) বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ৫০}

দুঃখজনক হলেও সত্য, কতিপয় মুসলিম ভাই গণতন্ত্র ও রাজতন্ত্রকে ইসলামের সঙ্গে বিধান প্রদানে অংশীদার সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তারা আল্লাহর সঙ্গে জনগণ ও গোত্রকেও বিধান প্রণেতা স্থির করেন।

তাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿وَلَا يُشۡرِكُ فِي حُكۡمِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٦﴾ [الكهف: ٢٦]

“তাঁর সিদ্ধান্তে তিনি কাউকে শরীক করেন না।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৬]

আবার কোনো কোনো তথাকথিত জ্ঞানপাপী মনে করে যে, আল্লাহর কুরআন বাদ দিয়ে অন্য কোনো কিছু দিয়ে বিচার করা বৈধ।

তাদের চিন্তা প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠﴾ [النساء: ٦٠]

“তুমি কি তাদেরকে দেখ নি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০]

আল্লাহ বরং মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর নাযিল করা বিধান তথা কুরআন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতে।

আল্লাহ বলেন,

﴿وَأَنِ ٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعۡضِ ذُنُوبِهِمۡۗ وَإِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَٰسِقُونَ ٤٩﴾ [المائ‍دة: ٤٩]

“আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৯]

তিনি নির্দেশ দিয়েছেন কেবল তাঁর কাছেই বিচার প্রার্থনা করতে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ﴾ [الشورى: ١٠]

“তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে সোপর্দ।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১০]

তিনি আরও বলেন,

﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]

“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]

হালাল ও হারাম করার ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহ্ একক, এতেও তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلۡسِنَتُكُمُ ٱلۡكَذِبَ هَٰذَا حَلَٰلٞ وَهَٰذَا حَرَامٞ لِّتَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُونَ ١١٦﴾ [النحل: ١١٦]

“আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১১৬]

অথচ মুশরিকরা হালাল-হারামকরণে আল্লাহর সঙ্গে শরীক রয়েছে বলে দাবী করে। তাদের এ দাবী নাকচ করে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ أَرَءَيۡتُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ لَكُم مِّن رِّزۡقٖ فَجَعَلۡتُم مِّنۡهُ حَرَامٗا وَحَلَٰلٗا قُلۡ ءَآللَّهُ أَذِنَ لَكُمۡۖ أَمۡ عَلَى ٱللَّهِ تَفۡتَرُونَ ٥٩﴾ [يونس: ٥٩]

“বল, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রিযিক নাযিল করেছেন, অতঃপর তোমরা তার কিছু করে নিয়েছ হারাম ও হালাল’। বল ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর উপর তোমরা মিথ্যা রটাচ্ছ?” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ৫৯]

উলুহিয়্যাত তথা ইবাদতের ক্ষেত্রেও আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ﴾ [النساء: ١٧١]

“আল্লাহই কেবল এক ইলাহ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১]

সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রে তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّا ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٦٥﴾ [ص: ٦٥]

“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। যিনি এক, প্রবল প্রতাপশালী।” [সূরা সাদ, আয়াত: ৬৫]

আর মুশরিকরা দাবী করেছে, ইবাদতের যোগ্য দুই ইলাহ রয়েছে।

আল্লাহ তাদের প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 

﴿۞وَقَالَ ٱللَّهُ لَا تَتَّخِذُوٓاْ إِلَٰهَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِۖ إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ٥١﴾ [النحل: ٥١]

“আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো কেবল এক ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫১]

এদিকে খ্রিস্টানরা দাবী করে ইলাহ তিনজন: আল্লাহ এক ইলাহ, জিবরীল এক এবং ঈসা ‘আলাইহিস সালাম আরেক ইলাহ।

তাদের অসত্য আখ্যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, 

﴿وَلَا تَقُولُواْ ثَلَٰثَةٌۚ ٱنتَهُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ﴾ [النساء: ١٧١]

“আর বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১]

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আরও বলেন,

﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۚ وَإِن لَّمۡ يَنتَهُواْ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٣﴾ [المائ‍دة: ٧٣]

“অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭৩]

মূর্তিপূজারীরা দাবী করে, ইলাহ বা উপাস্য অসংখ্য। যাকে ইচ্ছে তার ইবাদত-অর্চনা করা যাবে। এমনকি কুরআনে যেমন বর্ণিত হয়েছে তারা এমনও বলে,

﴿أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عُجَابٞ﴾ [ص: ٥]

“সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়!” [সূরা সাদ, আয়াত: ৫]

তাদের এ দাবী নাকচ করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿قُل لَّوۡ كَانَ مَعَهُۥٓ ءَالِهَةٞ كَمَا يَقُولُونَ إِذٗا لَّٱبۡتَغَوۡاْ إِلَىٰ ذِي ٱلۡعَرۡشِ سَبِيلٗا ٤٢ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يَقُولُونَ عُلُوّٗا كَبِيرٗا ٤٣﴾ [الاسراء: ٤٢،  ٤٣]

“বল, ‘তাঁর সাথে যদি আরো উপাস্য থাকত, যেমন তারা বলে, তবে তারা আরশের অধিপতি পর্যন্ত পৌঁছার পথ তালাশ করত’। তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা বলে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।” [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৪২-৪৩]

আর যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে, সে নাম ও গুণাবলিতে আল্লাহর একত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে। নাম ও গুণাবলিতে আল্লাহ অদ্বিতীয়।

কেউ তাঁর সঙ্গে তুলনীয় নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

﴿هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيّٗا ٦٥﴾ [مريم: ٦٥]

“তুমি কি তাঁর সমতুল্য কাউকে জান?” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৫]

অষ্টমত: যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব কুরআন পাঠ করবে সে জানবে, আল্লাহ সম্পর্কে কী বর্ণনা করবে:

আল্লাহ এক ও একক, তাঁর কোনো পিতা নেই এবং সন্তানও নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [الاخلاص: ١،  ٤]

“বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।”

উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ الْمُشْرِكِينَ قَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مُحَمَّدُ  انْسُبْ لَنَا رَبَّكَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: {قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ} [الإخلاص: 2] »

মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে বলল, হে মুহাম্মদ, আমাদের সামনে তোমার রবের বংশ পরিচয় তুলে ধর। তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা নাযিল করেন: “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয় নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই। [সূরা আল-ইখলাস]”[5]

নবমত: যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব কুরআন পাঠ করবে সে আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ সত্তা সম্পর্কে যথযথ জ্ঞান লাভ করবে,

যেমন, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡحَيِّ ٱلَّذِي لَا يَمُوتُ﴾ [الفرقان: ٥٧]

“আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি মরবেন না।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৫৭]

তিনি ঘুমান না এবং তাঁকে নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না।” [সূরা আল-বাকারাহহ, আয়াত: ২৫৫]

তিনি পানাহার করেন না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِيّٗا فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَهُوَ يُطۡعِمُ وَلَا يُطۡعَمُۗ﴾ [الانعام: ١٤]

“বল, ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা? তিনি আহার দেন, তাঁকে আহার দেওয়া হয় না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪]

তাঁর কোনো সন্তান কিংবা পিতা-মাতা নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣﴾ [الاخلاص: 3]

“তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি।” [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ৩]

তাঁর কোনো স্ত্রী নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُۥ وَلَدٞ وَلَمۡ تَكُن لَّهُۥ صَٰحِبَةٞ﴾ [الانعام: ١٠١]

“কীভাবে তাঁর সন্তান হবে অথচ তাঁর কোন সঙ্গিনী নেই!” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০১]

তাঁর কোনো ছেলে নেই কিংবা মেয়েও নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَجَعَلُواْ لِلَّهِ شُرَكَآءَ ٱلۡجِنَّ وَخَلَقَهُمۡۖ وَخَرَقُواْ لَهُۥ بَنِينَ وَبَنَٰتِۢ بِغَيۡرِ عِلۡمٖۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يَصِفُونَ ١٠٠﴾ [الانعام: ١٠٠]

“আর তারা আল্লাহর জন্য জিন্নকে শরীক সাব্যস্ত করেছে, অথচ তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশতঃ মনগড়াভাবে নির্ধারণ করেছে তার জন্য পুত্র ও কন্যা সন্তান। তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা বিবরণ দেয় তা থেকে ঊর্ধ্বে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০০]

তিনি মহাশক্তিশালী, কোনো কিছুই তাঁকে অক্ষম বানাতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُعۡجِزَهُۥ مِن شَيۡءٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّهُۥ كَانَ عَلِيمٗا قَدِيرٗا ٤٤﴾ [فاطر: ٤٤]

“আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমানসমূহ ও যমীনের কোন কিছু তাকে অক্ষম করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৪৪]

তিনি অমুখাপেক্ষী। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَرَبُّكَ ٱلۡغَنِيُّ﴾ [الانعام: ١٣٣]

“আর তোমার রব অমুখাপেক্ষী।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৩৩]

তিনি অত্যন্ত সম্মানিত, দাতা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡإِنسَٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ ٱلۡكَرِيمِ ٦﴾ [الانفطار: ٦]

“হে মানুষ কিসে তোমাকে তোমার সম্মানিত-দাতা রব সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলেছে?” [সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত: ৬]

ইয়াহূদীরা তাঁকে দরিদ্র বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। তিনি তাদের জবাবে বলেন,

﴿لَّقَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ فَقِيرٞ وَنَحۡنُ أَغۡنِيَآءُۘ سَنَكۡتُبُ مَا قَالُواْ وَقَتۡلَهُمُ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖ وَنَقُولُ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ١٨١﴾ [ال عمران: ١٨١]

“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী’। অচিরেই আমি লিখে রাখব তারা যা বলেছে এবং নবীদেরকে তাদের অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়টিও এবং আমি বলব, ‘তোমরা উত্তপ্ত আযাব আস্বাদন কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮১]

ইয়াহূদীরা তাঁকে কৃপণ বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। তাদের জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ﴾ [المائ‍دة: ٦٤]

“আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তার দু’হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৪]

দশমত : যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে সে তার উপর আল্লাহর হক সম্পর্কে জানতে পারবে,

কুরআন কারীম পড়লে যে কেউ জানতে পারবে, তার ওপর আল্লাহর কী হক ও পাওনা রয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [الذاريات: ٥٦]

“আর জিন্ন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন,

«كُنْتُ رِدْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ، يُقَالُ لَهُ: عُفَيْرٌ، قَالَ: فَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، تَدْرِي مَا حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ؟ وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوا اللهَ، وَلَا يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ لَا يُعَذِّبَ مَنْ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا»، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلَا أُبَشِّرُ النَّاسَ، قَالَ: «لَا تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوا»

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে একটি গাধার পিঠে বসা ছিলাম, যাকে ‘উফাইর’ বলে ডাকা হত। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘হে মু‘আয! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর কী অধিকায় রয়েছে? আর আল্লাহর ওপর বান্দার কী অধিকার আছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, ‘বান্দার ওপর আল্লাহর হক হচ্ছে তারা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক হচ্ছে, ‘যারা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না, তাহলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।’ আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি এ সুসংবাদ লোকদেরকে জানিয়ে দেব না? তিনি বললেন, তুমি তাদেরকে এ সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা ইবাদত ছেড়ে দিয়ে (আল্লাহর ওপর ভরসা করে) হাত গুটিয়ে বসে থাকবে।”[6]

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে সে আরও জানতে পারবে, আল্লাহর পরিচয় তথা মা‘রেফাত লাভ করতে হলে কিতাব তথা পুরো কুরআনের ওপরই পূর্ণাঙ্গ ঈমান আনয়ন করা ফরয।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتُؤۡمِنُونَ بِٱلۡكِتَٰبِ كُلِّهِ﴾ [ال عمران: ١١٩]

“আর তোমরা কিতাবের পুরোটার ওপরই ঈমান রাখ।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯]

আর সাহাবী ও তাবেঈগণ পূর্ণ কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছিল। তাইতো তাঁরা আল্লাহর পূর্ণ মারেফাত লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧﴾ [ال عمران: ٧]

“আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭]

আর হাদীসে রয়েছে, কবরে প্রশ্ন করা হবে-

«مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ، فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ: أَنْ صَدَقَ عَبْدِي».

“তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তারা তাকে বলবেন, তুমি তা জানলে কী করে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। অতঃপর তাতে ঈমান এনেছি এবং তা সত্যায়ণ করেছি। তখন আসমানে এক ঘোষক ঘোষণা দেবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে।”[7]

আল্লাহর কিতাব পড়লে তাদের ভ্রান্তি অনুধাবন করা যাবে যারা এর কিছু অংশে ঈমান স্থাপন করে আর কিছু অংশে ঈমান রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ﴾ [البقرة: ٨٥]

“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮৫]

যেমন জাহামিয়্যা সম্প্রদায়ের লোকেরা কুরআনের কিছু অংশ আল্লাহর ‘নফস’ থাকার বিষয়টিতে ঈমান আনলেও অন্য কিছু অংশে তারা আল্লাহর নামসমূহ ও অন্যান্য গুণাবলিতে ঈমান আনে না। তারা এসবকে অস্বীকার করে।

তেমনি মুতাজিলা সম্প্রদায় আল্লাহর নামসমূহ এবং গুণাবলির মধ্যে কেবল ‘নফস’ থাকার বিষয়টি ঈমান স্থাপন করলেও অবশিষ্ট গুণাবলি অস্বীকার করে। এভাবে এরাও কুরআনের কিছু অংশ মানে আর অবশিষ্টগুলো মানে না।

একইভাবে আশাইরা সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর নামসমূহে ঈমান রাখে আর গুণাবলির মধ্যে সাতটির উপর  ঈমান আনলেও অবশিষ্টগুলোয় ঈমান আনে না। ফলে তারা কুরআন-সুন্নাহর দলীল ছাড়াই সেগুলোর অপব্যাখ্যা করতে বাধ্য হয়।

আল্লাহর কিতাব পড়লে সে জানতে পারবে যে, মুমিনের উপর ফরয হচ্ছে, আল্লাহর পরিচয় সংক্রান্ত কুরআন ও সুন্নাহর ‘মুহকাম’ শব্দগুলো ব্যাখ্যাহীনভাবে মেনে নেওয়া এবং ‘মুতাশাবেহ’ আয়াতগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ﴾ [ال عمران: ٧]

“তিনিই তোমার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭]

তদ্রূপ যে আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের আয়াত পড়বে সে আল্লাহর পরিচয় (মারেফাত) লাভ করতে গিয়ে জানতে পারবে যে, যারা কুরআনের মুতাশাবিহ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা তালাশে ব্যস্ত থাকে তারা ভুল পথে রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ﴾ [ال عمران: ٧]

“অতঃপর যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭]

তাছাড়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,

«تَلاَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الآيَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِذَا رَأَيْتِ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ فَأُولَئِكِ الَّذِينَ سَمَّى اللَّهُ فَاحْذَرُوهُمْ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি যখন এসব মুতাশাবিহ আয়াতের ব্যাখ্যা তালাশ করতে দেখবে, বুঝে নেবে তারাই সে লোক আল্লাহ যাদের সম্পর্কে এখানে বলেছেন। অতএব, তুমি তাদের থেকে সতর্ক থাকবে।”[8]

কালামশাস্ত্রের লোকেরা (তথা আশায়েরা, মাতুরিদিয়া, মু‘তাযিলা) আল্লাহর পরিচয় উদ্ধারে মুতাশাবিহ আয়াতে পেছনে লেগে থেকেছে, ফলে তারা গন্তব্য হারিয়ে ফেলেছে।

আর যারা আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়েছে, সে স্পষ্টভাবে সে লোকদের ভুল বুঝতে পারবে, যারা আল্লাহর পরিচয় বের করতে গিয়ে কিয়াস তথা অনুমানের উপর নির্ভর করেছে।

মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧٤﴾ [النحل: ٧٤]

“সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৭৪]

অথচ কালামশাস্ত্রের লোকেরা আল্লাহর পরিচয় উদ্ধারে আন্দায-অনুমানের আশ্রয় নিয়েছে, ফলে তারা গন্তব্য হারিয়ে ফেলেছে।

অনুরূপভাবে যারা আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, তারা আল্লাহর মারেফাত বা পরিচয় লাভ করার জন্য তৈরি করা সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার কিয়াস বা ধারণার অসারতা জানতে পারবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]

“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অনুরূপভাবে যারা আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, তারা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহর পরিচয় লাভে কুরআন ও সুন্নাহের স্পষ্ট ভাষ্য বাদ দিয়ে আভিধানিক গবেষণার অনুসরণ করে চলা কত মারাত্মক ভুল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ وَٱحۡذَرۡهُمۡ أَن يَفۡتِنُوكَ عَنۢ بَعۡضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ﴾ [المائ‍دة: ٤٩]

“আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৯]

অথচ কালামশাস্ত্রের লোকেরা কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও আভিধানিক অর্থ উদ্ধারের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় জানার চেষ্টা করেছে। ফলে তারা তাঁর পরিচয় জানতে ব্যর্থ হয়েছে।

তদ্রূপ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব কুরআন পড়বে, সে স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম হবে যে, বিবেক স্বয়ং আল্লাহর পরিচয় দিতে অক্ষম। বরং আল্লাহকে তো কেবল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমেই জানা যাবে।

কারণ, আল্লাহ হলেন গায়েবী জগতের অধিপতি, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কে পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। নবী ও রাসূলদের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা যায়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا كَانَ ٱللَّهُ لِيَذَرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ عَلَىٰ مَآ أَنتُمۡ عَلَيۡهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ ٱلۡخَبِيثَ مِنَ ٱلطَّيِّبِۗ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُطۡلِعَكُمۡ عَلَى ٱلۡغَيۡبِ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَجۡتَبِي مِن رُّسُلِهِۦ مَن يَشَآءُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۚ وَإِن تُؤۡمِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَلَكُمۡ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٧٩﴾ [ال عمران: ١٧٩]

“আল্লাহ এমন নন যে, তিনি মুমিনদেরকে (এমন অবস্থায়) ছেড়ে দেবেন যার ওপর তোমরা আছ। যতক্ষণ না তিনি পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদেরকে গায়েব সম্পর্কে জানাবেন। তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বেছে নেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর যদি তোমরা ঈমান আন এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপ্রতিদান।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৯]

অন্য এক সূরায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ فَلَا يُظۡهِرُ عَلَىٰ غَيۡبِهِۦٓ أَحَدًا ٢٦ إِلَّا مَنِ ٱرۡتَضَىٰ مِن رَّسُولٖ فَإِنَّهُۥ يَسۡلُكُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ رَصَدٗا ٢٧﴾ [الجن: ٢٦،  ٢٧]

“তিনি গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। আর তিনি তখন তার সামনে ও তার পিছনে প্রহরী নিযুক্ত করেন।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৬-২৭]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে তাঁর সম্পর্কে যথাযথ ইলম ও ধারণা লাভ করার তাওফীক দিন এবং সব ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা থেকে দূরে রাখুন। আমীন।

তথ্যসূত্র :

[1] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৮৫৩৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৫৩। হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৩৬।

[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৯১।

[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪২৩।

[5] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২১২১৯, হাসান লিগাইরিহী।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০।

[7] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৮৫৩৪। হাসান লিগাইরিহ।

[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৫৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৬৫।

সূত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button