সুন্দরী প্রতিযোগীতা ও পারিবারিক ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব
লিখেছেন – Golam Muktadir
– “এরা কারা মা? কি করছে হেঁটে হেঁটে?” – ছোট্ট খুকির কৌতুহলী প্রশ্ন।
– “এরা সারা দেশের সেরা সেরা সব সুন্দরী, মা। স্টেজ পারফর্ম করছে, প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হওয়ার জন্যে।”
– “কিসের প্রতিযোগিতা, মা?”
– “কিসের আবার? বললাম না, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় এসেছে তারা। সবচেয়ে সেরা সুন্দরী যাকে বাছাই করা হবে, তার জন্যে আছে অনেক পুরস্কার, সাথে বিশাল ক্যারিয়ার তৈরির সুযোগ।”
– “কি কি পুরস্কার দিবে মা? ক্যারিয়ার কি মা?”
– “আহ খুকি! আর কোন কথা বলিস না তো। খালি কথা!! চুপচাপ টিভি দেখ তো এখন। মুখ একদম বন্ধ।” মা শাসানি দেয় কড়া করে।
খুকি ফ্যালফ্যাল করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় জমায়, কিন্তু মায়ের বকা খাওয়ার ভয়ে মুখ খোলে না। আচ্ছা, তার মাও তো অনেক সুন্দরী, তাহলে মা নিজেও যায় না কেন সেখানে? মাও তো তাহলে কত পুরস্কার পাবে, ক্যারিয়ার না কি বলে, সব হবে। মাকে কি একবার বলে দেখবে একথা? নাহ!! সাহসে কুলায় না খুকির। চুপ করে মায়ের পাশে বসে টিভি দেখে। শুধু এইটুকু বুঝতে পারে, মা খুব মজা পাচ্ছে সুন্দরীদের এসব কাজকর্ম দেখে। খুকিও মন দেয় এবার টিভিতে।
বহু বছর পর…
খুকি লাইনে দাঁড়িয়ে, রেজিস্ট্রেশানের লাইন। দেশে এই প্রথম বারের মত আয়োজন করা হয়েছে সুন্দরী প্রতিযোগিতার। সারা দেশের আনাচে কানাচের হাজারো সুশ্রী মেয়েরা এসে ভিড় জমিয়েছে লাইনে। সবার স্বপ্ন একটাই, সেরা সুন্দরীর খেতাবটা জিতে নেওয়া। কিন্তু পথ মোটেই সহজ নয়, খুকি জানে। সবে তো যাত্রা শুরু। কত রকম নাকি পরীক্ষা দিতে হবে সামনে বিভিন্ন ধাপে ধাপে। খুকির বুক দুরুদুরু করে। যেভাবেই হোক, তাকে যেতেই হবে সবাইকে টপকিয়ে। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে দম ছাড়ে খুকি। লাইনের সামনে এগিয়ে যায় ধীরে ধীরে।
আরো বছর পাঁচেক পর…
খুকিদের ফ্ল্যাটে গোটা বিশেক পুলিশ আর সাংবাদিক গিজগিজ করছে। সবগুলো চ্যানেলে একসাথে ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে খুকির খবর-
“ সুন্দরী খেতাব বিজয়ী দেশের অন্যতম সফল মডেল কন্যা খুকির ঝুলন্ত লাশ আজ তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে তাকে ঘিরে নানা রকম স্ক্যান্ডালের চাপ সইতে না পেরে আত্নহত্যার এ পথ বেছে নিয়েছে খুকি। আর কোন মোটিভ আছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ … ”
খুকির মা তার বিছানায় জ্ঞান হারাচ্ছে কিছুক্ষন পরপর। জ্ঞান আসলেই শুধু “আমার খুকি, ও আমার খুকি” বলে চিৎকার করে করে আবারও চেতনা হারিয়ে ফেলছে। তাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা যে কারোরই জানা নেই।
———————————————————-
ইনি সেই খুকির মা, যিনি ছোটবেলা থেকেই তার খুকিকে পাশে বসিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখেছেন খুব আয়েশ করে। আর আদরের অবুঝ সেই খুকিও তাই ধীরে ধীরে পেয়েছে সেপথ মাড়ানোর পারিবারিক সাপোর্ট। মা তাকে একবারও কাছে ডেকে কোনদিন বোঝায় নি, আসলে কত নিকৃষ্ট এদের পথ!! কত ঘৃণ্য এদের শেষ পরিণতি!! মুসলিমাহ একজন নারী হিসেবে কতটা অমার্যাদার, কতটা সম্মানহানির এক আয়োজন এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা। পুলিশ কি কোন দিনও জানতে পারবে, খুকির মৃত্যুর জন্যে তার মাও সেদিক থেকে অন্যতম শাস্তিযোগ্য আসামী? এটা নিশ্চিত, এই হিসেব কেউ জানবে না, কেউ করবেও না দুনিয়ায়। শুধু সকল বিচারকের বিচারক, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল ছাড়া।
প্রিয় বাবা-মায়েরা!! আমরা কবে বুঝবো, এসব সুন্দরী প্রতিযোগিতা আসলে কিছু ধুর্ত লোকের এমন এক আয়োজন, যাদের কাজই হলো সমাজের সেসব নারীদের খুঁজে বের করা যারা নিজেদের রুপকে, নিজেদের দৈহিক সৌন্দর্যকে বিনিয়োগ করতে চায় শুধু মাত্র দুনিয়ার কিছুদিনের সম্মান আর খ্যাতির আশায়, কিছু অর্থ আর ক্যারিয়ারের স্বপ্নে। বিনিময়ে যারা সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।
তাদের সামান্যই হয়তো কিছুদিনের জন্য দুনিয়া পায় । আসলে হয়ে যায় সমাজের সস্তা পণ্য সামগ্রী আর পুরুষের মনোরঞ্জনের বস্তুতে। আবার রুপের ভাটা পড়লে এই সমাজই তাকে এক সময় ছুড়ে দেয় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে, আবার তারা খোঁজে নতুন মুখ, চলে নতুন ফাঁদ পাতার আয়োজন। নানা রকম স্ক্যান্ডাল মাড়িয়ে শেষে আত্নহত্যা- এসব ঘটনা তো এসব সুন্দরী আর মডেলদের জীবনের অন্যতম শেষ পরিণতি। তবুও কি আমরা শিখবো না? সন্তানদের বোঝাবো না?
আর আখিরাত???
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
“তিন ব্যক্তি আছে, যাদের জন্যে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতকে হারাম করেছেন। তারা হলো- মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য আর দাইয়ুস।” [মুসনাদে আহমাদ-২/৬৯]
আর দাইয়ুস হলো সেই হতভাগা অভিশপ্ত ব্যক্তি, যে ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয়। আল্লাহু আকবার!!!
আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন আমাদের-
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না”। [ সূরা আন-নূর, আয়াত- ১৯]