উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য
মতভেদ মানুষের এক প্রকৃতি। কোন এক বিষয়কে পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে দ্বিমত হওয়া স্বাভাবিক। রং নিয়ে, স্বাদ নিয়ে, গন্ধ নিয়ে এক এক মানুষের ভালো লাগা- না লাগার ব্যাপারে এক এক মত, এক এক ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ। মানুষের প্রায় সকল ব্যাপারেই মতভেদ অস্বাভাবিক কিছু নয়। এক ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসা অন্য ডাক্তারের সাথে মিল খায় না। এক প্রকৌশলীর প্রকৌশল অন্য প্রকৌশলীর সাথে খাপ খায় না। সুতরাং শরীয়তের বিষয়াবলীতেও অনুরূপ দ্বিমত থাকা অস্বাভাবিক নয়, বরং তা স্বাভাবিক। তাই কোন বিষয়ে মতভেদ শুনে আশ্চর্য হওয়ার এবং আক্ষেপ করার কিছু নেই। বরং জানতে হবে এটাই তো প্রকৃতি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ
إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ
অর্থাৎ, তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে। তবে ওরা নয় যাদের প্রতি তোমার প্রতিপালক দয়া করেন। আর তিনি তাদেরকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন। (সূরাহ হূদ ১১৮-১১৯ আয়াত)
তবে মতভেদ যে রহমত তা নয়। এ বিষয়ে উল্লেখ্য হাদীসটি সহীহ নয়, বরং তা জাল।
পক্ষান্তরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, মতভেদ হল মন্দ জিনিস ।” মতভেদ স্বাভাবিক হলেও সে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, হক জানার পর তা প্রত্যাখ্যান করা বা তার দিকে প্রত্যাবর্তন না করা, বরং তা নিয়ে কলহবিবাদ তথা লাঠালাঠি ও যুদ্ধ করা অবশ্যই বাঞ্ছিত নয়। কিন্তু এই অবাঞ্ছিত ঘটমান-বর্তমানের ফলেই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, আমাদের আল্লাহ এক, নবী এক, কিতাব এক, কিবলাহ এক তবে মতভেদ কিসের ও কেন? কেন উলামাগণ একমত নন? কেন এত মযহাব ও ফিকাহবন্দী তথা দলাদলি?
এ সকল প্রশ্নের কিছু কিছু উত্তর দেওয়া হয়েছে অত্র পুস্তিকায়। মতানৈক্যের বিভিন্ন কারণ বলার পর নির্দেশ করা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট কোন মযহাবের তাকলীদ নয়, নির্দিষ্ট কোন দলের দলীয় নীতি বা মতবাদের অনুসরণ নয়, নির্দিষ্ট কোন ইমাম বা আলেমের অন্ধ অনুকরণ নয়, বরং মুসলিমের উচিত, সহীহ দলীলের অনুসরণ করা।
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর অন্ধানুকরণই মুসলিমের একমাত্র নাজাতের পথ। একই বিষয়ে বহুমত থাকলে সেই মতকে গ্রহণ করা উচিত, যা সহীহ দলীল ভিত্তিক এবং বলিষ্ঠ। কক্ষণই সে মত গ্রহণ করা উচিত নয়, যা নিজের মনঃপূত ও যাতে নিজের স্বার্থ রক্ষা হয়। কার মত গ্রহণ করা হবে তা নিয়েও নিজের বিবেক-বিবেচনাকে কাজে লাগাতে হবে। কোন আলেম ইলম ও আমলে বড় তা নির্বাচন করতে হবে সুস্থ মন-মস্তিষ্কের মাপকাঠিতে।
বইটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
- নাম: ‘উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য’
- মূল লেখক: আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উছায়মীন (রহ.)
- অনুবাদক: আব্দুল হামীদ ফায়যী আল মাদানী
- প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ঢাকা
- পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩১
বইটির সূচীপত্রঃ
- মতানৈক্যের প্রথম কারণ
- দ্বিতীয় উদাহরণ
- মতানৈক্যের দ্বিতীয় কারণ
- মতানৈক্যের তৃতীয় কারণ
- মতানৈক্যের চতুর্থ কারণ
- মতানৈক্যের পঞ্চম কারণ
- মতানৈক্যের ষষ্ঠ কারণ
- আমাদের কর্তব্য