দল, ইমারত ও বায়আত সম্পর্কে উলামাগণের বক্তব্য (পর্ব ১১)

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য (এগারতম পর্ব)

শায়খ উছমান মুহাম্মাদ আল-খামীস([1])

শায়খ উছমান আল-খামীসকে প্রচলিত ইসলামী সংগঠনগুলির কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, প্রচলিত ইসলামী সংগঠনগুলির কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অপরিহার্য নয়; বরং তোমার উপর কর্তব্য হলো, সালাফী আক্বীদা পোষণ করা এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী আঁকড়ে ধরা। যদি তোমার কোনো মুসলিম ভাইকে এ পথ থেকে সরে যেতে দেখ, তাহলে তাকে ফিরে আসার নছীহত কর এবং তার জন্য দু‘আ কর।([2])

 শায়খ ইবরাহীম ইবনে আমের আর-রুহায়লী([3])

প্রশ্নঃ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে অগণিত সংগঠন ও দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সেখানে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আতের আক্বীদা পোষণকারীদের মধ্যেও বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সংগঠন ও তার আমীর বা সভাপতির প্রতি অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামী করে থাকে। প্রশ্ন হলো, এসমস্ত সংগঠনে যোগদানের হুকুম কি? এবং এসব দলাদলি থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তরঃ কোনো সংগঠন, দল বা প্রতিষ্ঠানে যোগদান বা তার সাথে সংশ্লিষ্টতা ও সম্পৃক্ততা দুই প্রকারঃ

এক. সাধারণ সংশ্লিষ্টতা, যেমনঃ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো একটি দেশের সাথে সংশ্লিষ্টতা। এই প্রকার সংশ্লিষ্টতা স্বাভাবিক এবং বৈধ। কারণ এর উপর ভিত্তি করে ‘অলা ও বারা’ (মিত্রতা ও শত্রুতা) কিংবা গোঁড়ামী সৃষ্টি হয় না। বরং মানুষের বিভিন্ন বিষয়কে সুশৃংখলিত করার জন্য এসব সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন রয়েছে। তেমনিভাবে কোনো দেশে যদি নিয়ম থাকে যে, কোনো সংস্থার অধীনে ছাড়া একাকী দা‘ওয়াতী কাজ করা যাবে না, তাহলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনো একটি সংস্থার অধীনে দা‘ওয়াতী কাজে বাধা নেই।কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে, এর উপর ভিত্তি করে যেন ‘অলা ও বারা’ না হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সংস্থার অধীনে থাকবে, তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি এ সংস্থার বাইরে থাকবে, তার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। কারণ, প্রত্যেক দা‘ঈকে এ সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে এমনটি নয়। যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইবে, সে সম্পৃক্ত হবে। পক্ষান্তরে, যে এর সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে মসজিদে দারস দিতে চায়, সে তা পারবে, তাতে কোনো বাধা নেই।

দুই. ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এরূপ বলা যে, এটিই আহলুস-সুন্নাহ্‌র সংগঠন; সুতরাং যে এই সংগঠনে আসবে, সে সুন্নী। আর যে এখানে আসবে না, সে বিরোধী এবং বিদ‘আতী। সংগঠনের অবস্থা এরূপ হলে তাতে যোগ দেওয়া হারাম। কোনো সংগঠনের উপর ভিত্তি করে যদি ‘অলা ও বারা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কারো জন্য তাতে যোগ দেওয়া আদৌ বৈধ নয়, ঐ সংগঠনের প্রধান যত বড় বিদ্বানই হোক না কেন।

আর অন্ধভক্তির ব্যাপারে বলব, অন্ধভক্তি শুধুমাত্র সংগঠনের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কিছু মানুষ মনে করে, সংগঠন বন্ধ হয়ে গেলে অন্ধভক্তি বন্ধ হয়ে যাবে। এটি ভুল ধারণা। কারণ, সংগঠনের অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামী ছাড়াও রয়েছে নির্দিষ্ট আলেমের বিষয়ে গোঁড়ামী, বইয়ের গোঁড়ামী, বংশের গোঁড়ামী ইত্যাদি। সুতরাং গোঁড়ামীর দোহায় দিয়ে কোনো বৈধ জিনিষকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। যাহোক, সকল প্রকারের গোঁড়ামী দূরীকরণের চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে বলব, সুশৃঙ্খলভাবে দা‘ওয়াতী কাজ করার স্বার্থে কেবল কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত হতে কোনো বাধা নেই।([4])

আবু মালেক আর-রেফাঈ আল-জুহানী([5])

প্রশ্নঃ দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে ইমারত গঠনের ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

উত্তরঃ দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে ইমারত গঠন দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি। বরং সঠিক পদ্ধতি হলো, সুপরিচিত বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের ছাত্রদের নিয়ে দা‘ওয়াতী কাজ সম্পাদন করবেন। যেমনঃ ইবনে তাইমিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, আলবানী, ইবনে বায, রবী আল-মাদখালী, আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, মুক্ববিল আল-ওয়াদে‘ঈ প্রমুখ আলেমগণ তাঁদের ছাত্রদেরকে যথারীতি দ্বীনী শিক্ষা দিয়েছেন এবং কেউ কেউ এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁদের ছাত্রগণ সারা দুনিয়ায় দা‘ওয়াত ছড়িয়ে দিয়েছেন। মূলতঃ এটিই হচ্ছে সালাফী দা‘ওয়াত। আমি আবারও বলছি, ইমারত গঠন করে দা‘ওয়াতী কাজ করা সুস্পষ্ট বিদ‘আত।([6])

 তথ্যসূত্র :

([1]) শায়খ উছমান মুহাম্মাদ আল-খামীস কুয়েতী উলামায়ে কেরামের একজন। তিনি কাছীমের মুহাম্মাদ ইবনে সুঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন, ইবরাহীম আল লাহেম প্রমুখ আলেমগণ। শী‘আদের সাথে বাহাছ-মুনাযারায় তিনি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। তাঁর জিহ্বা খোলা তরবারীর ন্যায় তীক্ষ্ন। দলীল ছাড়া তিনি কোন কথা বলেন না। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ ১. মিনাল ক্বলবি ইলাল ক্বলব ২. মাতা ইয়াশরাক্বু নুরুকা আইউহাল মুনতাযির ৩. শুবুহাত ওয়া রুদূদ ৪. হিক্ববাতুন মিনাত তারীখ।

([2]) শায়খের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের (www.almanhaj.net) নিম্নোক্ত লিংক থেকে ১০/১২/২০১২ইং তারিখে লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছেঃ

http://almanhaj.net/cms/index.php/fatwa/show//480

([3]) শায়খ ইবরাহীম আর-রুহায়লী ১৩৮৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্বীদা বিভাগের অধ্যাপক এবং মসজিদে নববীতে নিয়মিত দারস প্রদান করেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ ১. মাওক্বিফু আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ মিন আহলিল আহওয়া ওয়াল বিদ‘আহ ২. আত-তাকফীর ওয়া যওয়াবিতুহু। তিনি ত্রিশটিরও অধিক বইয়ের ভাষ্যকর। যেমনঃ ১. শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসেতিইয়াহ ২. শারহুল আরবা‘ঈন আন-নাবাবিইয়াহ ইত্যাদি।

([4]) হিজরী ২৯/০৪/১৪৩৩ তারিখে মসজিদে নববীতে দারস্ প্রদানের সময় জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত কথাগুলি বলেন।

([5]) শায়খ আবু মালেক আল-জুহানী ১৩৯০ হিজরীতে ইয়ামবু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইয়মবুর ওমর জামে মসজিদের ইমাম ও খত্বীব এবং সঊদী ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত প্রসিদ্ধ দা‘ঈ। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে ১. আস-সীরাহ আন-নাবাবিইয়াহ ২. আল-ক্বযা ওয়াল ক্বদার আলা যওয়ে মু‘তাক্বাদে আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল-আছার উল্লেখযোগ্য।

([6]) শায়খের ‘মা‘আলিমুদ দা‘ওয়াহ’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

  1. খুব ভাল একটা পোষ্ট দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। সাইটটিতে ইসলামের অনেক ভাল বিষয়ের উপর আলোচনা আছে। মতীয়ুর রহমান মাদানীর বই থাকলে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88