ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার পন্থা

রচনায় : সাঈফুদ্দীন বিলাল মাদানী
উম্মত ফিতনার বিপদ থেকে নিরাপদে থাকার কিছু বিষয়:

প্রথম: ফিতনার উসাসগুলো শুকানো এবং তার মাধ্যমসমূহ বন্ধ করা।

আর ফিতনার শুরুটা বিনষ্ট করা এবং এর পিছনে ছুটে এমন বোকাদের হা ধরে বিরত রাখা। কতই নাএকনিষ্ঠ মূর্খ ব্যক্তির ভাল নিয়ত তার অজ্ঞতার জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করে, যাসে ভাবতেই পারে না। আর উম্মতকে ফিতনায় ডুবিয়ে মারে যতিও সে ভাবে তার চাইতেবড় দয়ালু আর কেউ নেই। এ ছাড়া কতই না মুনাফেক তার জিভ দ্বারা ভক্ষণ করে এবংতার কথা দ্বারা ফিতনার আগুন জ্বালাই।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ
“যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অত:পর তওবা করেনি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা।” [ সূরা বুরুজ: ১০]


عَنْ النُّعْمَانَ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ قَالَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِيحُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةًفَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَعْلَاهَافَكَانَ الَّذِي فِي أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَفِي أَعْلَاهَا فَتَأَذَّوْا بِهِ فَأَخَذَ فَأْسًا فَجَعَلَ يَنْقُرُأَسْفَلَ السَّفِينَةِ فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْبِي وَلَا بُدَّ لِي مِنْ الْمَاءِ فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِأَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُوَأَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ

নু‘মান ইবনে বাশীর [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“আল্লাহর বিধিবিধানেঅবহেলা প্রদর্শনকারীর এবং তা লঙ্ঘনকারীর উদাহরণ হলো: ঐ লোকদের মত যারা একটিষ্টিমারে লটারী করে কেউ উপর তলায় আর কেউ নিচ তলায় সিট পেল। এরপর নিচের লোকপানির জন্য উপরে অতিক্রম করলে তারা কষ্ট পায়। তাই নিচের লোক কুড়াল নিয়েষ্টিমারের নিচে ছিদ্র করা শুরু করল। অত:পর উপরের লোকেরা এসে তাকে বলল:তোমার কি হয়েছে? সে বলল: আপনারা আমার দ্বারা কষ্ট পান অথচ আমার পানি ছাড়াউপাই নেই। এরপর যদি উপরের লোকেরা তার হাতে ধরে তাকে ছিদ্র করা থেকে বিরতরাখে, তবে তাকে এবং নিজেদেরকে বাঁচাবে। আর যদি তারা তাকে ছেড়ে দেয়, তাহলেতাকে এবং নিজেদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।”

দ্বিতীয়: অনিষ্ট থেকে ভয় করা একটি উত্তম পন্থা:

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِরা يَقُولُ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَرَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْخَيْرِوَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي، فَقُلْتُيَا رَسُولَ اللَّهِ: إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَااللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟قَالَ:্র نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ গ্ধ. قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ:্রقَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُগ্ধ.قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ:্র نَعَمْ ،دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُفِيهَاগ্ধ. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ: صِفْهُمْ لَنَا، قَالَ: ্র هُمْمِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَاগ্ধ. قُلْتُ: فَمَاتَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: ্র تَلْزَمُ جَمَاعَةَالْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ গ্ধ. قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْجَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ:্র فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَاوَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُوَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ গ্ধ.متفق عليه.

হুযাইফা ইবনে ইয়ামান [রা] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ [সা] কে মানুষ কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। আর অকল্যাণ আমাকে পেয়ে বসবে এ ভয়ে আমি জিজ্ঞাসা করতাম অনিষ্ট-অকল্যাণ সম্পর্কে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও অনিষ্টকর যুগে ছিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের কল্যাণে এনেছেন। আচ্ছা এ মঙ্গলের পর আবারও কি অমঙ্গল আসবে? তিনি [সা] বললেন: হ্যাঁ, আমি আবার বললাম: আচ্ছা এ অনিষ্টের পর আবারও কি কল্যাণ আসবে? তিনি [সা] বললেন: হ্যাঁ, কিন্তুতাতে ধোঁয়াথাকবে। আমি বললাম: ধোঁয়া আবার কি? তিনি [সা] বললেন: ধোঁয়া হলো, এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটবে যারা আমার হিদায়াত পরিহার করে অন্যদের হিদায়াত গ্রহণকরবে। তাদের মাঝে কিছু ভাল পাবে আর কিছু মন্দও দেখবে। আমি বললাম: আচ্ছা এধোঁয়া মিশ্রিত কল্যাণের পর কি আর কোন অনিষ্ট আসবে? তিনি [সা] বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর দ্বীনের পথে এক শ্রেণীর আহ্বানকারী, যারা জাহান্নামের দরজার উপরহতে জান্নাতের নামে আহ্বান করবে। তাদের ডাকে যারা সাড়া দেবে তাদেরকেজাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে তাদেরসম্পর্কে বর্ণনা দেন। তিনি [সা] বললেন: তারা আমাদের জাতির (মুসলিম) মানুষ।তারা আমাদের (ইসলামের) ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম: যদি সে অবস্থা আমাকে পেয়েবসে তাহলে কি নির্দেশ করেন। তিনি [সা] বললেন: সম্মিলিত মুসলমানদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে থাকবে। আমি বললাম: যদি সম্মিলিত মুসলমানদের কোন জামাত ও ইমাম (রাষ্ট্রপতি) না থাকে তবে কি করব? তিনি [সা] বললেন: ঐ সমস্ত দল ছেড়ে একাকীথাকবে; যদিও গাছের শিকড় দাঁত দ্বারা ধরে হোক না কেন। আর এভাবে মৃত্যু আসাপর্যন্ত থাকবে।”

তৃতীয়: ফিতনার সময় রব্বানী আলেমদের সঙ্গে থাকা;

কারণ ফিতনা হচ্ছে অন্ধকার রাত্রির একটি টুকরা। এ অন্ধকারে চলন- ব্যক্তি ধ্বংসের মুখে যদি তার সাথে ঈমান ও জ্ঞানের আলো না থাকে; যা তাকে পথ দেখয়ে দেবে। এছাড়া ফিতনা থেকে তাকে নাজাত দেবে। আর তা হলো কুরআনুল কারীম।

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

قَدْ جَاءَكُم بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا ۚ وَمَا أَنَا عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ
“তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদের্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরইক্ষতি করবে। আমি তোমাদের প্রতি পর্যবেক্ষক নই।” [সূরা আন‘আম: ১০৪]

রব্বানী আলেমগণ হলেন নূহ [আ]-এর কিসিমের মত। যে ব্যক্তি তাঁদের থেকে দূরে থাকবে এবং বিপরীত করবে সে পানিতে ডুবন্তদের অনর্ভুক্ত হবে। রব্বানী আলেম সমাজ হলেন উম্মতের নক্ষত্ররাজি; তাঁরাই তো মানুষকে তাদের দ্বীন শিখাবেন, ফরজসমূহ কিভাবে আদায় করবে তা বর্ণনা করে দেবেন। আর বলে দিবেন কিভাবে হারাম থেকে দূরে থাকবে। এ ছাড়া তাদেরকে নেকি ও তাকওয়ার কাজের সহযোগিতার নির্দেশ এবং পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করা হতে বারণ করবেন।
আর যখন আলেম সমাজ মারা যাবেন তখন মানুষ হয়রান-পেরেশানে পড়ে যাবে এবং সত্য থেকে বক্রপথে চলে যাবে। এ ছাড়া জ্ঞান উঠে যাবে, অজ্ঞতা প্রকাশ পাবে এবং ফিতনা বেড়েযাবে। আর নি:সন্দেহে ফিতনার প্রচার ও প্রসার জ্ঞান ও আলেমদের চলে যাওয়ারসাথে সম্পৃক্ত।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنْالْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّىإِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًافَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّواগ্ধ.متفقعليه.

অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সা] কে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ মানুষ থেকে জ্ঞানকে একেবারে ছিনিয়ে নিবেন না। বরং আলেমদেরকে উঠিয়ে নিয়ে জ্ঞান উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না তখন মানুষ অজ্ঞদেরকে প্রধান (মুফতি) বানিয়ে নেবে। অত:পর তারা জিজ্ঞাসিত হবে এবং জ্ঞান ছাড়াই ফতোয়া দেবে। এর ফলে পথভ্রষ্ট হবে নিজেরা এবং মানুষকেও পথভ্রষ্ট করবে।”
আল্লাহ তা‘য়ালা আলেম সমাজকেউম্মতের ধ্বংস থেকে বাঁচানোর এক উপায় বানিয়েছেন। তাই ফিতনা যখন আগমন করে তখন প্রতিটি আলেম তা বুঝতে পারেন। আর ফিতনা যখন ধ্বংসলীলা ঘটিয়ে চলে যায় তখন প্রতিটি অজ্ঞরা জানতে পারে।
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
“আর যখনতাদের কাছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকেরটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদেরপর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধানকরার মত। বস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকততবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত!” [সূরা নিসা: ৮৩]
ফিতনার অনিষ্ট থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ পন্থা এবং ভ্রষ্টতা ও বক্রতা হতে হেফাজত ও ধ্বংস থেকে নাজাতের উপায় হচ্ছে: আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধরা, আলেমদের সাথে থাকা এবং তাঁদের সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করা।

যেমনটি আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী ও হেফাজত করেছেন আবু বকর [রা]-এর দ্বারা রিদ্দতের সময়। এ ছাড়া অন্যান্য হিদায়াতপ্রাপ্ত ইমামদের দ্বারাও। ঈমানী সমাজকে রব্বানী আলেমগণ পরিচালিত করেন। যাঁদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা জ্ঞান ও হেদায়েতের মিনার বানিয়েছেন। আর জাহেলি সমাজে বিশৃঙ্খলা ও মিথ্যার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর এমন সমাজকে গ্রাস করে আসওয়াদ আনাসীর মত লোকেরা যেমনটি হয়েছিল ইয়ামেনে এবং ইয়ামামাতে মুসাইলামাতুল কায্‌যাব।
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۚ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ۗ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
“আপনার পূর্বেও আমি অহি মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব, জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; প্রেরণ করেছিলামতাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকাঅবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিববৃত করেন, যেগুলো তাদেরপ্রতি নাজিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।” [সূরা নাহ্‌ল:৪৩-৪৪]

চতুর্থ: জামাতুল মুসলিমীনের সাথে থাকা।

আর জামাত হলো আহলে ঈমান ওমুত্তাকীরা যাতের সাথে আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা থাকে। মনে রাখতে হবে সমস্ তউম্মত কখনো ভ্রষ্টতার উপরে ঐক্যমত হবে না এবং উম্মত যত দিন থাকবে ততদিন সত্য থাকবে।
আল্লাহ তা‘য়ালা সত্যের উপর একত্রিত হওয়ার জন্য নির্দেশ এবং দলাদলি থেকে নিষেধ কেরছেন। অতএব, জামাতবদ্ধতা হলো রহমত এবং দলাদলি হলো জহমত। জামাতের পরিণাম হলো আল্লাহর দয়া, সন্তুষ্টি ও অনুকম্পা এবং দুনিয়া ওআখেরাতে সুখ-শান্তি। আর দলাদলির পরিণতি আল্লাহর শাস্তি, অভিশাপ, অসন্তুষ্টি এবংদুনিয়া-আখেরাতে অশান্তি।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“আর তোমরা সকলেআল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পরশত্রু ছিলে। অত:পর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহর কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। এরপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহনিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার। আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সত্কর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হলো সফলকাম। আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শসমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।” [সূরা আল-ইমরান: ১০৩-১০৫]
২. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথপ্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলিমের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐদিকেই ফেরার যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আরতা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান” [সূরা নিসা: ১১৫]

নিয়মিত জামাতে সালাত আদায় জামাতবদ্ধ থাকার উপকারি শক্তিশালী কারণ। এ ছাড়া নিরাপত্তা ও কল্যাণ হাসিলের জন্য একটি বিশাল উপায়। ইহা ফিতনাকে মূলোত্পাটন করতে নাপারলেও তার আগুন বুঝিয়ে দিতে সক্ষম এবং তার ক্ষতিকে বিরত রাখতে পারে।

যেমন আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
“আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।” [সূরা আনকাবূত:৪৫]

পঞ্চম: খবররাদির যাচাই-বাছাই করা;

কারণ ফিতনা বলা হয়েছে এবং বলেছে এমন কথা দ্বারাই প্রসার লাভ করে থাকে। আর বিশাল আকার ধারণ করে প্রচার ও বাতিল দ্বারা।
সবচেয়ে দ্রুত ফিতনার আগুনে নিপতিত হয় মূর্খ, অহঙ্কারী, ধোকাবাজরা; যারা উম্মতকে প্রতিটি বালা-মুসিবত ও ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে যায়। কোন মাথা হতে বের হয়েছে এবং কোন মাটিতে প্রবেশ করেছে তা না জেনে বলা কথার উপর ভিত্তি করেই ফিতনার জন্ম নিতে থাকে।
তাই উম্মতের সাথে সম্পৃক্ত বাতার কোন ব্যক্তি কিংবা মূল বিষয়ের খবরাদির সত্যতার যাচাই-বাছাই করা ওয়াজিব। আর শুধুমাত্র বর্ণানাকারীর প্রতি বিশ্বাস যথেষ্ট হবে না বরং নিশ্চিত হওয়া জরুরি; কারণ মানুষের নফসের ভিতরে পক্ষ্যপাতিত্য, মন পূজা ওশাহওয়াতের প্রভাব পড়ে। এ ছাড়াও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও লোভ-লালসাও কাজ করেথাকে।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
“মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারীব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে করে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সমপ্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবংপরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” [সূরা হুজুরাত:৬]
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِندَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنتُم مِّن قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলা না যে, তুমি মুসলিম নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর। বস্তুত আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরাও তো এমন ছিলে ইতিপূর্বে; অত:পর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের খবর রাখেন।” [সূরা নিসা: ৯৪]

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ﮋوَلَاتَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَى إِلَيْكُمْ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا ﮊ قَالَ: قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ كَانَ رَجُلٌ فِي غُنَيْمَةٍ لَهُ فَلَحِقَهُالْمُسْلِمُونَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَقَتَلُوهُ وَأَخَذُواغُنَيْمَتَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِي ذَلِكَ إِلَى قَوْلِهِ ﮋ تَبْتَغُونَعَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا : تِلْكَ الْغُنَيْمَةُ.متفق عليه.
ইবনে আব্বাস [রা] থেকে বর্ণিত। আল্লাহর বাণী: “এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলা না যে, তুমি মুসলিম নও।” এ সম্পর্কে বলেন: একজন মানুষ তার ছাগলপালে ছিল। সেখানে মুসলিম দল গিয়ে পৌঁছলে ঐ ব্যক্তি আসসালামু ‘আলাইকুম, বলার পরেও তাকে তারা হত্যা করে তার ছাগলগুলো নিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘য়ালা “তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর।” এ পর্যন্ত আয়াতটি নাজিলকরেন। জীবনের সম্পদ তালাশ কর মানে ছাগল পাল।”
আর মুসলিম ব্যক্তি যখন নিশ্চিতভাবে খবর জানবে তখন তা সাধারণের মাঝে তা প্রচার না করাই উত্তম; কারণ প্রতিটি জানা বিষয় বলা ঠিক না। আর প্রতিটি শুনা কথা বর্ণনা করাই একজন মানুষের মিথ্যুক হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আর যদি আমরা কিছু বলতেই চাই, তবে মুত্তাকী আলেমদেরকে বলব; কারণ আমরা যা জানি না তাঁরা তা জানেন। আল্লাহর বাণী:

وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
“আর যখন তাদের কাছে পৌঁছে কোন সংবাদ শাস্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারাসেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদেরশাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছেঅনুসন্ধান করার মত। বস্তুত: আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপরবিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণকরতে শুরু করত!” [সূরা নিসা: ৮৩]
আর আল্লাহ তা‘য়ালা যার পদস্খলন ঘটে তার ব্যাপারে নির্দেশ করেছেন গোপন রাখতে ও নসিহত এবং মীমাংসা ও সমাধান করতে।তাই কারো জন্য পর্দা উঠানো এবং গোপন তথ্য প্রচার ও ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা জায়েজ নেই।
আর ফাসেকের (পাপীষ্ঠের) জন্য আল্লাহর বিশেষ দয়া হলো তার বিপর্যয় সংশোধন করা ওয়াজিব; যদিও সে বড় ধরনের শক্তিশালী ও বিরোধিতাকারী হোকনা কেন। আর যে অন্যের ত্রুটির পর্দা উঠাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে তার ঘরেরভিতরে হলেও অপদস- করে ছাড়বেন।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা পছন্দকরে যে, মুমিনদের মাঝে ব্যভিচার প্রকাশ লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ওপরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানে, তোমরা জান না।” [সূরা নূর: ১৯]
عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَاللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:্র إِنَّ اللَّهَكَرِهَ لَكُمْ ثَلَاثًا قِيلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَالسُّؤَالِগ্ধ.متفق عليه.
২. মুগীরা ইবনে শু‘বা [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সা] কে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি জিনিসকে ঘৃণা করেন। বলা হয়েছে ও বলেছে এমন ভিত্তিহীন কথা বলা, সম্পদ বিনষ্ট করা এবং বেশি বেশি প্রশ্ন করা।”
অতএব, প্রতিটি মুসলিমের প্রতি ওয়াজিবহলো সব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া। সে প্রচারিত বিষয়কে সত্য মনে করবে না; যাতে করেসে এবং অন্যান্যরা ফিতনা ও অপবাদের পাপ থেকে নিরাপদে থাকতে পারে।
عَنْأَبِي هُرَيْرَةَ يَقُولُا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ:্র يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَيَأْتُونَكُمْ مِنْ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَاآبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَايَفْتِنُونَكُمْ গ্ধ. أخرجه مسلم.
৩. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: “আখেরী জামানায় দাজ্জাল ও মিথ্যুক জন্ম নিবে, যারা এমন কথা শুনাবে যা না তোমরা আর না তোমাদের বাবারা শুনেছ। অতএব, তাদের থেকে সাবধান! তাদের থেকে সাবধান! তারা যেন তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট না করে এবং ফিতনায় পতিত না করতে পারে।”
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنُ عَبَّاس:রাقال: حَدَّثَنِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ لَمَّا اعْتَزَلَ نَبِيُّاللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءَهُ قَالَ دَخَلْتُالْمَسْجِدَ فَإِذَا النَّاسُ يَنْكُتُونَ بِالْحَصَى وَيَقُولُونَ طَلَّقَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءَهُ -وفيه- فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَطَلَّقْتَهُنَّ قَالَ:্র لاَ গ্ধ. قُلْتُيَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَالْمُسْلِمُونَيَنْكُتُونَ بِالْحَصَى يَقُولُونَ طَلَّقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءَهُ أَفَأَنْزِلُ فَأُخْبِرَهُمْ أَنَّكَ لَمْتُطَلِّقْهُنَّ قَالَ:্র نَعَمْ إِنْ شِئْتَগ্ধ. أخرجه مسلم.

ইবনে আব্বাস [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার ইবনে খাত্তাব আমাকে হাদীস বর্ণনা করে বলেন, যখন নবী [সা] তাঁর স্ত্রীগণ থেকে একাকী হয়ে যান তখন আমি মসজিদে প্রবেশ করি। সে সময় মানুষ (মাটিতে) কঙ্কর মারতে ছিল এবং বলতেছিল যে, রসূলুল্লাহ [সা] তাঁর স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন। (এ হাদীসে আছে) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন? তিনি [সা] বলেন:না, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, মানুষরা কঙ্কর মারতে ছিল এবং বলতেছিল যে, রসূলুল্লাহ [সা] তাঁর স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন। আমি কি মসজিদে গিয়ে তাদেরকে খবর দেব যে, আপনি তালাক দেননি। তিনি [সা] বলেন: হ্যাঁ, যদি তুমি চাও।”

মানুষ যা কিছু জানে সবই বলবে এমনটা ঠিক নয়। বরং যদি হেকমত ও উপকারিতা চুপ করাতে হয় তবে চুপ থাকায় ওয়াজিব। আর ইহা বিপর্যয়কে বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। বিশেষ করে ফিতনায় সময় যা সত ও অসত্ সকলকে থাপ্পড় মারে। তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন সে ব্যতিরেকে।

عَنْ أَبِيهُرَيْرَةَ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ وِعَاءَيْنِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ وَأَمَّاالْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ. أخرجه البخاري.
আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সা] থেকে জ্ঞানের দু’টি থলে মুখস্থ করেছি। তার মধ্যে একটি প্রচার করেছি। আর অপরটি যদি প্রচার করি তবে এ কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে।”

ষষ্ঠ: জবানের হেফাজত:

প্রতিটি মুসলিমের প্রতি ওয়াজিব হলো তার জিভকে বিরত রাখা এবং প্রত্যেক বাতিল হতে সকল সময় ও অবস্থাতে হেফাজত করা। আর বিশেষ করে ফিতনার সময় হেফাজত করা তাকিদ সহকারে প্রয়োজন। কেননা সে সময় অনর্থক কথাবার্তা বেড়ে যায় এবং কথা বলাও শুনার চাহিদা অধিক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কান যাকিছু বলা ও প্রচার করা হয় তাগ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে।
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
“যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়বেন না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা বানি ইসরাঈল: ৩৬]
অতএব, জবানকে এমনপ্রতিটি শব্দ থেকে হেফাজত করতে হবে যা ফিতনাকে বাড়িয়ে দেয় এবং তার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তাই বিবেকবান ব্যক্তি তার জবানকে আল্লাহ যা পছন্দ করেন এবং সন্তুষ্টি হন যেমন: জিকির, দোয়া ও দা‘ওয়াতে ব্যস্ত রাখেন।

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا
“আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথায় বলে। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্যশত্রু।” [সূরা বানি ইসরাঈল: ৫৩]
নড়াচড়ার দিক থেকে জবান সবচেয়ে সহজ একটি অঙ্গ যা মানুষের প্রতি মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই তো মানুষ যখন তার জিভকে ছেড়ে দেয় তখন কতই না বিপর্যয় ও অনিষ্ট সৃষ্টি হয়। জীবিত ও মৃতদের সম্মানে অপবাদ দেয় এবং কীল-কাল করে উম্মতের ঐক্য টুকড়া টুকড়া করে ফেলে ও বিভিন্ন ধরনের বাতিল আওয়াজ উঠে।
অতএব, জবানকে হেফাজত করা ও বিরত রাখা সকল কল্যাণের মূল। আর জবানকে ছেড়ে দেয়া সব অনিষ্টের মূল এবং জবান থেকে যা উড়ে যায় তা ফিরে নিয়ে আসা অসম্ভব।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউবে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস সংস্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকে পাপ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালেম।” [সূরা হুজুরাত: ১১]

عَنْعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَالْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَانَهَى اللَّهُ عَنْهُগ্ধ.متفق عليه.
২. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর [রা] থেকেবর্ণিত, তিনি নবী [সা] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন:“প্রকৃত মুসলিম হলো যার জবান ও হাতের অনিষ্ট থেকে মুসলিমরা নিরাপদে থাকে। আর মুহাজির (হিজরতকারী) হলো যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করে।”
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍعَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র مَنْيَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُالْجَنَّةَগ্ধ. أخرجه البخاري.
১. সাহল ইবনে সা‘দ [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ [সা] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার জবান ও লজ্জাস্থানের যিম্মাদার হবে আমি তার জন্যে জান্নাতের যিম্মাদার হব।”
আর অনর্থক কথাবার্তা থেকে চুপ থাকায় রয়েছে নিরাপদ এবং চুপ থাকা ইবাদাতের চাবিকাঠি। তাই ধৈর্যশীল ও নিশ্চুপ ব্যক্তি কখনো লজ্জিত হয় না। আর যার কথাবেশি তার ভুলও বেশি এবং যার ভুল বেশি তার পাপও বেশি। এ ছাড়া যার পাপ বেশি সেই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। তাই তো বিবেকবান ব্যক্তি প্রয়োজন ও সওয়াবের আশা ছাড়া কথা বলেন না।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“হে মুমিনগণ!আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সূরা আহযাব: ৭০-৭১]
عَنْ أَبِيهُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ:্র مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَايُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِفَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِالْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
২. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশিকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।”
জবান হলো ক্ষতিকর হিংস্র জন্তু, যে তাকে মুক্ত করে দেবে তাকে সে খেয়ে ফেলবে। অতএব, তার থেকে শতর্ক থাকা ওয়াজিব।
মনে রাখতে হবে যে, চুপ থাকার সবচেয়ে ছোট উপকার হলো নিরাপদ লাভ করা এবং এরদ্বারা সুস্থ থাকা যায়। আর কথা বলার সবচেয়ে ছোট ক্ষতি খ্যাতি লাভ এবং এরদ্বারা মানুষ বিপদে পড়ে। আর কথা মানুষের বন্দী কিন্তু যখন তা মানুষ থেকে বেরহয়ে যায় তখন সেই তার বন্দী হয়ে পড়ে। আর আল্লাহ তা‘য়ালা প্রত্যেক কথকের কথা জানেন।
“সে যে কথায় উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” [সূরা ক্ব-ফ: ১৮]
যুদ্ধ ক্ষেত্রে তালুয়ারের চাইতে ফিতনায় সময় মুখের কথা বেশি ধারালো। আরনফ্‌সে আম্মারা আল্লাহ যাকে দয়া করবেন সে ছাড়া মানুষকে কীল-কাল, গিবত, চোগলখোরী, ঝগড়া-ফ্যাসাদ, মিথ্যা, লোকাচারী ও শুনানী এবং ফিতনা ইত্যাদির গভীরে প্রবেশ করতে নির্দেশ দেয়। যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনার আগুনজ্বালাই। অতএব, ইহা থেকে সাবধান থাকার চেষ্টা করবেন।
“যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়বেন না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা বানি ইসরাঈল: ৩৬]
ফিতনার সময় মানুষের সাথে ঐভাবে মিলবে যেমন আগুনের সাথে মিলে থাকেন। তা হতে যা উপকারী তা গ্রহণ করুন এবং যা আপনাকে জ্বালিয়ে দেয় তা থেকে সাবধান থাকুন। আর ফিতনা যখন অগমন করে তখন হেকমতের সাথে তার মোকাবেলা করুন এবং ঈমানকে সত্যায়ন করুন। এ ছাড়া তাকে প্রতিহত করার জন্য আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। তাই যখন ফিতনা ব্যাপক হয়ে যাবে এবং তার ধোঁয়া অন্ধকার করে ফেলবে তখন নিজের জিবকে ভাইদে থেকে বিরত রাখার নিয়তে একাকীত্ব অবলম্বন করুন।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াতসমূহে ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়। যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।” [সূরা আন‘আম: ৬৮]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قِيلَ يَارَسُولَ اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّىاللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র مُؤْمِنٌ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِبِنَفْسِهِ وَمَالِهِ قَالُوا ثُمَّ مَنْ قَالَ مُؤْمِنٌ فِي شِعْبٍ مِنْالشِّعَابِ يَتَّقِي اللَّهَ وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ গ্ধ.متفقعليه.
২. আবু সাঈদ খুদরী [রা] থেকে বর্ণিত। একজন মানুষ নবী [সা]-এর নিকট এসে বলল, সর্বোত্তম মানুষ কে? তিনি [সা] বললেন:“ মুমিন মুজাহিদ যে তারজানমাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে। তারা বলল, অত:পর কে? তিনি বললেন: মুমিন ব্যক্তি যে কোন গিরি পথে অবস্থান করে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষের অনিষ্ট থেকে নিজেকে বাঁচাই।”


সপ্তম: প্রতিটি অবস্থায় ধৈর্যধারণ করা; কারণ সবর প্রত্যেক অবস্থায় প্রশংসনীয়।

বিশেষ করে বিপদ ও ফিতনার সময়। আর সবরসবচেয়ে বড় বিষয় যা আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা দান করেন। এছাড়া সবর হলো বিপদ দূর হওয়া ও সহজতার চাবিকাঠি।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“আমি কি আপনার বক্ষ উন্মুক্ত করে দেইনি? আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝ, যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দু:সহ। আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। আর আপনার পালনকর্তার প্রতি মোননিবেশ করুন।” [সূরা ইনশিরাহ: ১-৮]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّ نَاسًا مِنْالْأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَفَأَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَأَلُوهُفَأَعْطَاهُمْ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ:্র مَا يَكُونُ عِنْدِيمِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أَدَّخِرَهُ عَنْكُمْ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُاللَّهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ وَمَنْ يَتَصَبَّرْيُصَبِّرْهُ اللَّهُ وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَمِنْ الصَّبْرِগ্ধ.متفق عليه.

২. আবু সাঈদ খুদরী [রা] থেকে বর্ণিত। কিছুআনসারী মানুষ রসূলুল্লাহ [সা]-এর নিকট যে যা চাইল তিনি তাকে তাই দিলেন। একপর্যায়ে তাঁর নিকট যা ছিল সব শেষ হয়ে গেল। তাঁর হাতে যা ছিল তা নি:শেষ হয়েগেলে তাদেরকে বললেন: “আমার নিকট কোন সম্পদ থাকলে তা তোমাদেরকে না দিয়ে নিজেরকাছে জমা রাখি না। আর যে কারো নিকট চাওয়া থেকে নিজেকে পবিত্র রাখবে আল্লাহতাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে সবর করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে সবর দানকরবেন। আর যে অন্যের অমুখাপেক্ষী থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষীবানাবেন। আর সবরের চাইতে সর্বোত্তম ও ব্যপৃত দান আর কিছুই নেই।”
আরফিতনা যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং পাপ বেড়ে যায়, নাফরমানি ছড়িয়ে পড়েতখন মুসলিম ব্যক্তির কঠিনভাবে সবর করা জরুরি হয়; যার দ্বারা সে কঠিনপরিসি’তি ও ফিতনার মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।

“হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণকর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরাতোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।” [সূরা আল-ইমরান: ২০০]
আর যখনবিবেকের খুঁটি ক্ষমাশীলতা তখন সবর হলো সবকিছুর মূল। আর মানুষ বিবেকরউচ্চশিখরে ততক্ষণ পৌঁছতে পারে না যতক্ষণ তার ক্ষমাশীলতা অজ্ঞতার উপরে এবংসবর মুনের চাহিদার উপরে বিস্তার লাভ করতে না পারে। আর সবচেয়ে বড় বাহাদুর তোসেই ব্যক্তি যে তার অজ্ঞতাকে ক্ষমাশীলতা দ্বারা দূর করে এবং সবচেয়ে সম্মানিব্যক্তি হলো যে দ্বীনের জন্য তার জীবন ও দুনিয়া দান করে।
“সমান নয় ভালও মন্দ। জবাবে তাই বলুন যা উসাকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তিরশত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এ চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা সবরকরে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন- ভাগ্যবান। যদি শয়তানেরপক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন।নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা হা-মীম সেজদা: ৩৪-৩৬]
যাদ্বারা মানুষ নিজেকে ভূষিত করে তার মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্র হলো কোমল আচরণ, ক্ষমাশীলতা ও লজ্জা। আর যে কোমল আচরণ হতে বঞ্চিত সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকেমাহরুম। ক্ষমাশীলতা চরিত্রের সরদার এবং লজ্জশীলতা হলো ঈমানের শাখাসমূহেরএকটি শাখা।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলুন, সসাকাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাকুন।”[সূরা আ‘রাফ: ১৯৯]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ اسْتَأْذَنَ رَهْطٌ مِنْالْيَهُودِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُواالسَّامُ عَلَيْكَ فَقُلْتُ بَلْ عَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَةُفَقَالَ:্র يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِيالْأَمْرِ كُلِّهِগ্ধ. قُلْتُ أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا قَالَ: ্রقُلْتُ وَعَلَيْكُمْ গ্ধ.متفق عليه.

২. আয়েশা [রা:] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদিদের একটি দল নবী [সা]-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি নেয়। অত:পর বলে, ‘আসসামু ‘আলাইকা’ অর্থ আপনার মুত্যু হোক। আমি বলি, বরং তোমাদের প্রতিমৃত্যু ও অভিশাপ বর্ষিত হোক। এ সময় তিনি [সা] বলেন: হে আয়েশা! নিশ্চয় আল্লাহকোমল, তিনি প্রতিটি ব্যাপারে কোমলতাকে পছন্দ করেন। আমি বললাম, আপনি কিশুনেননি তারা কি বলেছে? রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: আমি বলেছি: তোমাদের প্রতিও।”

عَنْ عَائِشَةَ قالت قال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্রإِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُمِنْ شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُগ্ধ. أخرجه مسلم.
৩. আয়েশা [রা:] থেকেবর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: “নিশ্চয় কোমলতা যে জিনিসের মাঝে হয়তার সুন্দর্য বেড়ে যায় এবং যে জিনিসের মধ্য হতে তা ছিনিয়ে নেয়া হয় তা অসুন্দর হয়ে পড়ে।”
জেনে রাখুন! ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে। তাড়াহুড়া ও অস্থিরতা কঠিন রোগ যার পরিণাম আফসোস ও লজ্জা। অতএব, বিষয়সমূহের সুস্পষ্ট করুন, পরিণাম নিয়ে ভাবুন এবং বিপদে সবর করুন আল্লাহ আপনাকে ভালবাসবেন সাথে থাকবেন।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“অতএব, আপনি সবর করুন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।” [সূরা রূম:৬০]
عَنْ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَتِّ قَالَ شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِيظِلِّ الْكَعْبَةِ قُلْنَا لَهُ أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُواللَّهَ لَنَا قَالَ: كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُفِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَىرَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِوَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْعَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللَّهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَاالْأَمْرَ حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَلَا يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ أَوْ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْتَسْتَعْجِلُونَগ্ধ. أخرجه البخاري.

২. খাব্বাব ইবনে আরাত [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সা]-এর কাছে অভিযোগ করি। এ সময় তিনি কাবা ঘরের ছায়াতে তাঁর চাদর বালিশ বানিয়ে শুয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আমাদের জন্য সাহায্য চাইবেন না? তিনি [সা] বলেন: “তোমাদের পূর্বে মানুষকে নিয়ে এসে মাটিতে গর্ত করে সেখানে পুঁতে দেয়া হত। অত:পর তার মাথায় করাত রেখে ফেড়ে দুই ভাগ করা হত। এরপরেও ইহা তাকে তার দ্বীন থেকে বিরত করতে পারেনি। আর লোহার চিরুণী দ্বারা হাড় ও রোগ হতে শরীরের মাংস আলাদা করে নেয়া হত। তারপরেও তাকে তার দ্বীন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! এ দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে যেদিন একজন আরোহী সান‘আ থেকে হাজরামওত পর্যন্ত চলবে যখন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। অথবা নেকড়েকে ছাগল ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা শুধু তাড়াহুড়া করছ।”

অষ্টম: নেক আমল দ্বারা ফিতনার মোকাবেলা করা।

ফিতনার দিনগুলোকে নবী [সা]-এর দিক নির্দেশনা হলো নেক আমলের দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া; কারণ ইহাই হলো সত্য ও হেদায়েতের উপর দৃঢ় থাকার সর্বচেয়ে বড় মাধ্যম ও কারণ।মনে রাখতে হবে যে, নফ্‌স সত্য দ্বারা ব্যস্ত না থাকলে বাতিল দ্বারা ব্যস্তহয়ে পড়বে।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“আর যদি আমি তাদের নির্দেশদিতাম যে, নিজেদের প্রাণ ধ্বংস করে দাও কিংবা নিজেদের নগরী ছেড়ে বেড়িয়ে যাও, তবে তারা তা করত না; অবশ্য তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন। যদি তারা তাই করে যা তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এবং তাদেরকে নিজের ধর্মের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা উত্তম হবে। আর তখন অবশ্যই আমিতাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে মহান সওয়াব দেব। আর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করব। আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সসাকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাঁদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম। এটা হলো আল্লাহ-প্রদত্ত মহত্ত্ব। আর আল্লাহ যথেষ্ট পরিজ্ঞাত।” [সূরা নিসা:৬৬-৭০]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّىاللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًاكَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِيكَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُبِعَرَضٍ مِنْ
২. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: “তোমরা ফিতনার সময় দ্রুত নেক আমল করবে; কারণ ইহা অন্ধকার রাত্রির টুকরা। সকাল বেলার মুমিন সন্ধা বেলা কাফির হয়ে যাবে। অথবা সন্ধা বেলার মুমিন সকাল বেলা কাফির হয়ে যাবে। মানুষ দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করবে।”
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍفَقَالَ:্র سُبْحَانَ اللَّهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنْ الْفِتَنِوَمَاذَا فُتِحَ مِنْ الْخَزَائِنِ أَيْقِظُوا صَوَاحِبَاتِ الْحُجَرِفَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الْآخِرَةِগ্ধ. أخرجهالبخاري.
৩. উম্মে সালামা [রা:] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী [সা] একরাতে ঘুম থেকে জেগে বললেন:“সুবহানাল্লাহ! আজ রাতে ফিতনার কি যে নাজিল করা হয়েছে? ধন-সম্পদের ভাণ্ডরের কি যে খুলে দেয়া হয়েছে? কামরাবাসীদেরকে জাগাও। দুনিয়ার অনেক সম্মানি ব্যক্তিরা আখেরাতে অসম্মানি হবে।”

عَنْ أَبِيهُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَقَالَ:্র بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سِتًّا: طُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْمَغْرِبِهَا أَوْ الدُّخَانَ أَوْ الدَّجَّالَ أَوْ الدَّابَّةَ أَوْخَاصَّةَ أَحَدِكُمْ أَوْ أَمْرَ الْعَامَّةِ
২. আবুহুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“ছয়টি জিনিস আসার পূর্বে নেক আমল দ্রুত কর। সূর্য তার পশ্চিম গনন থেকে উদিত হওয়া অথবা ধোঁয়া বের হওয়া কিংবা দাজ্জালের প্রকাশ বা জন্তর আগমন অথবা তোমাদের কারো মৃত্যু বা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া।”
আর সালাত হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত যার মাধ্যমে আল্লাহ সর্বপ্রকার বালা-মসিবত দূর করেন। অতএব, মুমিন ব্যক্তি যখন আতঙ্কিতহবে বা কোন মসিবতে পতিত হবে কিংবা তার প্রতি বিপদ কঠিন আকার ধারণ করবে তখনসে আল্লাহ অভিমুখী হবে এবং দ্রুত তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে।
“সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তুবিনয়ী লোকদের ছাড়া।” [সূরা বাকারা:৪৫]
আর সত্কর্মশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সম্মানি। তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে তার স্থান উঁচু করে দেন এবং কখনো তাকে লাঞ্ছিত করেন না।
“আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে।নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, শক্তিধর। তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতেশক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সসাকাজেরআদেশ ও অসসাকাজের নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়াভুক্ত।” [সূরা হাজ্ব:৪০-৪১]
সকল সত্কর্ম অসত্কর্মের বিপদ থেকে দূরে রাখে।আর ফিতনার সময় ইবাদাতে মশগুল ব্যক্তি মানুষ থেকে তার দয়াময় পালনকর্তারইবাদাতে নিবেদিত হয়, তার সওয়াব ঐ মুহাজির ব্যক্তির ন্যায় যে তার দ্বীন নিয়েতাদের থেকে ভেগে যায় যারা তাকে বাধা দেয়।
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্রالْعِبَادَةُ فِي الْهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِلَيَّ গ্ধ. أخرجه مسلم.
মা‘কেল ইবনে ইয়াসার [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:

“ফিতনার সময় ইবাদাত আমার নিকট হিজরত করার মত।”

নবম: ফিতনাকে দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করা।

আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁর প্রতি বিনয়ী হওয়া সবচেয়ে বড় হাতিয়ার; যার মাধ্যমে নাজিল হয় সাহায্য এবং দূর হয় বালা-মসিবত।
“আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তুতারা তাদের পালনকর্তারসামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনতিও করল না।” [সূরা মুমিনূন:৭৬]
আর ফিতনার সময় বিবেক উড়ে যায় এবং অন্তর পেরেশানে পড়ে ও বিপদ কঠিন আকার ধারণ করে। এ সময় মুমিনের জন্য তার পালনকর্তা ছাড়া আর কোন আশ্রয় ও নাজাতের উপায় থাকে না।
“আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও রসূল প্রেরণকরেছিলাম। অত:পর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াওকরেছিলাম যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। অত:পর তাদের কাছে যখন আমার আজাব আসল, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করল না? বস্তুত তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তানতাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল।”  [সূরা আন‘আম:৪২-৪৩]
ফিতনা অনেক যার মাঝে বিষয়াদি ঘোরপাক খেয়ে যায় এবং তাতে সত্যের চেহারালুকিয়ে থাকে ও তালগোল পাকিয়ে ফেলে। আর এ থেকে নাজাতের পথ হলো সর্বশক্তিশালীআল্লাহকে মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধরা। এ ছাড়া আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং তারনিকট বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমারইবাদাতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে প্রবেশ হবে লাঞ্ছিত হয়ে।” [সূরামুমিন: ৬০]
২. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“আর বান্দারা যখন আপনার কাছেজিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে-বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমারহুকুম মান্য কর এবং আমার প্রতি নি:সংশয়ে বিশ্বাস কর তাদের একান্ত কর্তব্য।যাতে তারা সসাপথে আসতে পারে।” [সূরা বাকারা: ১৮৬]
عَنْ أَبِي ذَرٍّ عَنْالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا رَوَى عَنْ اللَّهِتَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ:্র يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُالظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَاتَظَالَمُوا يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُفَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْأَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارٍإِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ يَا عِبَادِيإِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُالذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادِيإِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِيفَتَنْفَعُونِي يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْوَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍمِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّأَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِقَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا يَاعِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْقَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍمَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُالْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَأَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْوَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدْ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَايَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ

৩. আবু যার [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি নবী [সা] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁর পালনকর্তা বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন: “হে আমার বান্দা! আমি আমার নিজের প্রতি জুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করেছি। অতএব, আপোসে তোমরা কেউ কারো প্রতি জুলুম করবে না।
হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলে পথভ্রষ্ট। কিন্তু আমি যাকে হিদায়াত দিয়েছি। অতএব, তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দিব।
হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। কিন্তুআমি যাকে খাদ্য দান করি। অতএব, তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও আমি তোমাদের কে খাদ্য দান করব।
হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলে বস্ত্রহীন। কিন্তুযাকে আমিবস্ত্র দান করি সে ব্যতিরেকে। অতএব, তোমরা আমার নিকট বস্ত্র তলব কর আমি তোমাদেরকে বস্ত্র পরাব।
হে আমার বান্দারা! তোমরা রাত-দিন ভুল করে থাকআর আমি সকল প্রকার পাপ মাফ করি। অতএব, তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করআমি তোমাদেরকে মাফ করে দেব।
হে আমার বান্দারা! নিশ্চয় তোমরা আমার কোনক্ষতি করার সামথ্য রাখ না, যে আমার কোন ক্ষতি করবে। আর তোমার আমার কোনউপকার করার ক্ষমতা রাখ না, যে আমার উপকার করবে।
হে আমার বান্দারা! যদিতোমাদের আগের ও পরের এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মাঝের সবচেয়ে বেশিমুত্তাকী ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাও তাতে ইহা আমার রাজত্বে কোন প্রকার বৃদ্ধিপাবে না।
হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের আগের ও পরের এবং মানুষ ও জিনসকলে তোমাদের মাঝের সবচেয়ে বেশি জঘন্য ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাও তাতে ইহা আমার রাজত্বে কোন প্রকার কমতি হবে না।
হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদেরআগের ও পরের এবং মানুষ ও জিন সকলে একটি ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে চাও, আর আমি প্রত্যেককে তার চাওয়া-পাওয়া দান করি তাতে আমার নিকট যা আছে তারততটুক কমবে যতটুক সাগরে একটি সূচ প্রবেশ করালে কমবে।
আমি তো শুধুমাত্রতোমাদের আমলগুলো তোমাদের জন্য গুণে রাখি। অত:পর তার পূরণ করব। অতএব, যেব্যক্তি ভাল পাবে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে আর যে এর বিপরীত পাবে সে যেননিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভর্ৎসনা না করে।”
সর্বযুগে ও প্রতিটি অবস্থাতে দোয়া ও আল্লাহর কাছে অভিযোগ করা হলো মুমিনের ভারি অস্ত্র।
নূহ [আ] দোয়া করেছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেন।
“তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যারোপ করেছিল। তারা মিথ্যারোপ করেছিল আমার বান্দা নূহের প্রতি এবং বলেছিল: এ তো উন্মাদ। তারা তাঁকে হুমকিপ্রদর্শন করেছিল। অত:পর সে তার পালনকর্তাকে ডেকে বলল: আমি অক্ষম, অতএব, তুমি সাহায্য কর। তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারিবর্ষণের মাধ্যমে। আর ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম প্রস্রবণ। অত:পর সব পানি মিলিত হল একপরিকল্পিত কাজে। আমি নূহকে আরোহণ করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে।যা চলত আমর দৃষ্টির সামনে। এটা তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।” [সূরা কামার: ৯-১৪]
ইবরাহীম [আ] দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁকে আগুন থেকে নাজাত দেন।
“তারা বলল: একে পুড়িয়ে ফেল এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরাকিছু করতে চাও। আমি বললাম: হে অগ্নি, তুমি ইবরাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়েযাও। তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অত:পর আমি তাদেরকেইসর্বাধিক ক্ষতিগ্রস- করে দিলাম। আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশেপৌঁছিয়ে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি।” [সূরাআন্বিয়া: ৬৮-৭১]
ইউনুস [আ] দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁকে পানিতে ডুবা থেকে নাজাত দান করেন।
“আর মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অত:পর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অত:পর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করলেন: তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার। অত:পর আমি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনিভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।” [সূরা আন্বিয়া: ৮৭-৮৮]
মূসা [আ] দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁকে ফেরাউন ও তার জাতি থেকে নাজাত দেন।
“অত:পর সূর্যোদয়ের সময় তারা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমারা যে ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনই নয়, আমর সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন। অত:পর আমি মূসাকেআদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেলএবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল। আমি সেথায় অপর দলকে পৌঁছিয়েদিলাম। আর মূসা ও তাঁর সঙ্গীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম।” [সূরা শু‘আরা:৬০-৬৬]

ফিতনা কঠিন পরীক্ষা এ থেকে সেই নাজাত পায় যে তার পালনকর্তার নিকট ডুবন্ত ব্যক্তির মত প্রার্থনা করে।

মহান আল্লাহ বলেন,

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ

وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ ۚ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ 
“তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পালনকর্তার নিকট, তখন তিনিতোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করবধারাবাহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে। আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দানকরলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়াঅন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নি:সন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী, হেকমত ওয়ালা।” [সূরা আনফাল: ৯-১০]
ফিতনার সময় সত্যের হিদায়াত লাভ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক রাব্বানী দান এবং ইলাহী হিদায়াত। ইহা শুধুমাত্র আল্লাহ তাঁর মুমিন অলিদেরকে দিয়ে থাকেন।
১. আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
“সকল মানুষ একই জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অত:পর আল্লাহ রসূল পাঠালেনসুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেনসত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতকিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তুপরিস্কার নির্দেশ এসে যাবারপর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশত: তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল।অত:পর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হিদায়াত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারেতারা মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ বাতলে দেন।” [সূরা বাকারা: ২১৩]
عَائِشَةَ أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَنَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْتَتِحُ صَلَاتَهُإِذَا قَامَ مِنْ اللَّيْلِ قَالَتْ كَانَ إِذَا قَامَ مِنْ اللَّيْلِافْتَتَحَ صَلَاتَهُ:্র اللَّهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَوَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِوَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِيَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنْ الْحَقِّ بِإِذْنِكَإِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
২. আয়েশা [রা:] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] যখন রাতে উঠতেন তখন তাঁর সালাত এ বলে আরম্ভ করতেন: আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈল, ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরয, ‘আালিমাল গাইবি ওয়াশশাহাদাহ্‌, আনাতাহকুমু বাইনা ‘ইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহদিনী লিমাখতুলিফাফীহি মিনাল হাক্কি বিইযনিক, ইন্নাকা তাহদিনা মান তাশা‘য়ু ইলাস্বিরাত্বিন মুস্তাকীম।”
যখন চাইবেন তখন একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাইবেন। আর যখন সাহায্য চাইবেন তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন। যে আল্লাহর নিকট চাইবে তিনি তাকে দান করবেন এবং যে তাঁকে ডাকবেন তিনি তার ডাকে সাড়া দিবেন। আর যে তাঁর প্রতি ভরসা করবে তিনি তার জন্যে যথেষ্ট হবেন।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
“আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। অতএব, মুমিনরা আল্লাহরই উপর ভরসা কর।” [সূরা তাগাবুন:১৩]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْاللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَلِيَعْزِمْ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُগ্ধ.متفق عليه.
২. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“তোমাদের কেউ যেন নাবলে, হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও তাহলে আমাকে মাফ কর। হে আল্লাহ! যদি তুমি চাওতাহলে আমাকে দয়া কর। দৃঢ়তা সহকারে চাইবে; কারণ তাঁকে বাধ্য করার কেউ নেই।”


দশম: ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।

আল্লাহ তা‘য়ালা যিনি সত্য মালিক, যাঁর হাতে রয়েছে সৃষ্টি ও নির্দেশ। আর ফিতনা মহা পরীক্ষা; তাই মুমিনের প্রতি করণীয় হলো ফিতনার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ قَالَ قال رسوال الله صَلَّىاللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ مَاظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ قَالُوا نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ مَاظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ. أخرجه مسلم.
১. জায়েদ ইবনে সাবেত [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও। তারা বলল, আমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি।”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:إِذَاتَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنْ أَرْبَعٍ يَقُولُاللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِالْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِالْمَسِيحِ الدَّجَّالِ. أخرجه مسلم.
২. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেন:“যখন তোমাদের কেউ সালাতের বৈঠক করবে তখন যেন আল্লাহর কাছেচারটি জিনিস থেকে পানাহ চাইবে। বলবে: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিল জাহান্নাম, ওয়া মিন ‘আযাবিল ক্বব্‌র, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়াওয়াল মামাতি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ্দাজ্জাল।”

একাদশ: ফিতনা থেকে দূরে থাকা।

উম্মত যখন ধ্বংসকারী এমন ফিতনায় পতিত হবে যা কাঁচা ও শুকনা সবকিছুকে খেয়েফেলে এবং নেক ও বদকারদেরকে তামাচা মারে তখন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তাতেঅংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই। বরং তা থেকে দূরে থাকবে এবং তার হাত তা থেকে বন্ধরাখবে ও সত্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তা থেকে ভেগে থাকবে।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ أَرْضِي وَاسِعَةٌ فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
“হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ! আামর পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব, তোমরা আমারই ইবাদাতকর। জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অত:পর তোমরা আমারই কাছেপ্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আনকাবূত: ৫৬-৫৭]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍالْخُدْرِيِّ أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ: يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ غَنَمٌيَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ وَمَوَاقِعَ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِينِهِمِنْ الْفِتَنِ. أخرجه البخاري.
২. আবু সাঈ খুদরী [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: “অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম ব্যক্তির সর্বোত্তম মাল হবে ছাগল-দুম্বা। এ নিয়ে সে পর্বতচূড়াতে ও বৃষ্টি বর্ষণের স্থানসমূহে চলে গিয়ে ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য তার দ্বীন নিয়ে ভেগে যাবে।”

عَنْأَبِي بَكْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ:্র إِذَا تَوَاجَهَ الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَكِلَاهُمَامِنْ أَهْلِ النَّارِ قِيلَ فَهَذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِقَالَ إِنَّهُ أَرَادَ قَتْلَ صَاحِبِهِ.متفق عليه.
৩. আবু বাকরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন: “যখন দুইজন মুসলিম তাদের তলোয়ার নিয়ে লড়াই করে তখন উভয়েই জাহান্নামী হয়ে যায়। বলা হলো, হত্যাকারী জাহান্নামী হবে কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন: “সেও তার সাথীকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল।”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُاللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُفِيهَا خَيْرٌ مِنْ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنْ الْمَاشِيوَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنْ السَّاعِي مَنْ تَشَرَّفَ لَهَاتَسْتَشْرِفُهُ وَمَنْ وَجَدَ فِيهَا مَلْجَأً فَلْيَعُذْ بِهِ.أخرجه مسلم.
৪. আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেন: “যখন ফিতনা প্রকাশ পাবে তখন বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চাইতে উত্তম থাকবে, দাঁড়ানো ব্যক্তি চলন-ব্যক্তির চাইতে কল্যাণে থাকবে এবং দৌড়ানো ব্যক্তির চাইতে চলন্ত ব্যক্ তিউত্তম থাকবে। যে তার প্রতি দৃষ্টি দেবে সে তাতে পতিত হবে। আর যে তা থেকে বাঁচার কোন আশ্রয় পাবে সে যেন তা থেকে আশ্রয় গ্রহণ করে।”
عَنْ عَامِرِبْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ فِي إِبِلِهِفَجَاءَهُ ابْنُهُ عُمَرُ فَلَمَّا رَآهُ سَعْدٌ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِمِنْ شَرِّ هَذَا الرَّاكِبِ فَنَزَلَ فَقَالَ لَهُ أَنَزَلْتَ فِيإِبِلِكَ وَغَنَمِكَ وَتَرَكْتَ النَّاسَ يَتَنَازَعُونَ الْمُلْكَبَيْنَهُمْ فَضَرَبَ سَعْدٌ فِي صَدْرِهِ فَقَالَ اسْكُتْ سَمِعْتُ رَسُولَاللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَيُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الْغَنِيَّ الْخَفِيَّ.أخرجه مسلم.
৩.আমের ইবনে সা‘দ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস [রা] তাঁর উটের পালে ছিলেন। এ সময় তাঁর ছেলে উমার তাঁর নিকটে আসল। সা‘দ [রা] যখন তাকে দেখলেন তখন বললেন, এ আরোহীর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ছেলে উমার বাহন থেকে নেমে বলল, আপনি আপনার উট ও ছাগল-দুম্বার সন্ধ্যানে এসেছেন আর মানুষ আপোসে রাজত্ব নিয়ে ঝগড়া করছে। সা‘দ ছেলেন বুকে আঘাত করে বললেন, চুপ কর! আমি রসূলুল্লাহ [সা] কে বলতে শুনেছি: “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর মুত্তাকী, নির্ভরশীল ও আত্মগোপনকারী বান্দাকে ভালবাসেন।”
ফিতনার সময় দুই ব্যক্তির প্রতি একাকীত্ব থাকা জরুরি
প্রথম: যার নিজের দ্বীনের ফিতনায় পতিত হওয়ার ভয় হয় এবং দ্বীন ছাড়ার জন্য তাকে জবরদস্তি করা হয়।
দ্বিতীয়: মতামত ওয়ালা ও বিচক্ষণতা ব্যক্তি; যার মতামত দ্বারা মানুষবিপদগ্রস- হবে এবং যার শক্তিধর ব্যক্তি যার শক্তি মানুষের ক্ষতি সাধন করবে।
ফিতনার মূল হলো পরীক্ষা। আর প্রতিটি শক্তিবান ব্যক্তির জন্য অসত্কর্মথেকে নিষেধ করা ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি হকপন্থীদেরকে সাহায্য করবে সে সঠিককরবে এবং সওয়াব পাবে। আর যে ভুলকারীদেরকে সহযোগিতা করবে সে ভুল করল এবংপাপীষ্ঠ হলো। আর যার নিকট বিষয় অস্পষ্ট সে যেন একাকী থাকে যতক্ষণ তার কাছেতা সুস্পষ্ট না হয়।
ফিতনার সময় একাকীত্বের মাঝে রয়েছে নিজের দ্বীনকে ত্রুটি থেকে হেফাজকরণ। জীবনকে ধ্বংস থেকে বাঁচানো এবং সম্মানকে বিনষ্ট থেকেরক্ষা করা। এ ছাড়া সম্পদকে বিলুপ্ত থেকে রক্ষা করা, প্রতিটি মুমিনের ব্যাপারে অন্তরকে পরিস্কার রাখা এবং ফিতনাকে নিভানো ও তার আগুনকে বুঝানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
অতএব, মানুষ যখন ফিতনা থেকে একাকী থাকবে তখন ফিতনাকারীর সংখ্যা কমে যাবে; যার ফলে তার অনিষ্টও কম হয়ে যাবে এবং তার আগুন নিভে যাবে। আর যখন মানুষ ফিতনার সময় দাঁড়াবে এবং তার আগুন জ্বালানোতে শরিক হবে তখন ফিতনাবাজদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়া তার অনিষ্ট বাড়ার সাথে সাথে বিপদ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
১. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবার সত্কাজ করতে অথবা মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকল্পে করতো তা স্বতন্ত্র। যে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট সওয়াব দান করব। যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” [সূরা নিসা: ১১৪-১১৫]

২. আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ أَن صَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَن تَعْتَدُوا ۘ وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“আরতোমরা সত্কর্ম ও তাকওয়ার কাজে আপোসে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজেআপোসে সহযোগিতা কর না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।” [সূরা মায়েদা: ২]


দ্বাদশ: ফিতনার সময় মত্যু কামনা না করা।

সর্বোত্তম মানুষ ঐ মুমিন যার বয়স দীর্ঘ এবং তার আমল সুন্দর; কারণ প্রতি বছরতার নেক আমল বৃদ্ধি পাবে; যার দ্বারা সে তাঁর পালনকর্তার সান্নিধ্য লাভকরবে এবং এ দ্বারা তার মর্যদা উঁচু ও পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।

عَنْأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَقَالَ: لَا يَتَمَنَّى أَحَدُكُمْ الْمَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُيَزْدَادُ وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ.متفق عليه.
১.আবু হুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুকামনা না করে; কারণ সে যদি সত ব্যক্তি হয় তবে তার নেকি সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে আর যদি পাপীষ্ঠ হয় তবে সম্ভবত সে তওবা করবে।”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَايَتَمَنَّى أَحَدُكُمْ الْمَوْتَ وَلَا يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْيَأْتِيَهُ إِنَّهُ إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ انْقَطَعَ عَمَلُهُ وَإِنَّهُلَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُهُ إِلَّا خَيْرًا.أخرجه مسلم.
২. আবুহুরাইরা [রা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন : “তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তার সময়ের পূর্বে যেন না ডাকে; কারণ মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিনের বয়স কল্যাণ ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি করে না।”
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ أَنَّ أَعْرَابِيًّاقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ خَيْرُ النَّاسِ؟ قَالَ: مَنْ طَالَعُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ.أخرجه مسلم.
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর [রা]থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুইজন গ্রাম্য মানুষ রসূলুল্লাহ [সা]-এর নিকট এসেএকজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম মানুষ কে? তিনি বললেন: “যার বয়স দীর্ঘহলো এবং আমলও উত্তম হলো।”
আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য মৃত্যু কামনা করা জায়েজ যদি তার দ্বীনের মাঝে ফিতনার আশঙ্কা হয়।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّىاللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ الْمَوْتَلِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا لِلْمَوْتِفَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتْ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِيوَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتْ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي.متفق عليه.
আনাস [রা] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ [সা] বলেন:“কারো কোন পিবদ আসার কারণে মৃত্যুকামনা না করে। যদি একান- মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে বলবে: “আল্লাহুম্মাআহ্‌য়িনী মা কানাতিল হায়াতু খইরান লী, ওয়া তাওয়াফ্‌ফানী ইযা কানাতিলওয়াফাতু খাইরান লী।
অর্থ: হে আল্লাহ! যতক্ষণ জীবিত থাকা আমার জন্যকল্যাণকর ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখ। আর আমাকে মৃত্যু দান কর যদি মৃত্যু আমারজন্য কল্যাণকর হয়।”

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan