ইসলামী শরীআহ অনুসরণের মূলনীতি (২য় পর্ব)
ইসলামী শরীআহ অনুসরণের মূলনীতি (২য় পর্ব)
লেখক: মাহবুব হোসেন অনিক ,
তরুণ ইসলামিক গবেষক ও দাঈ।
Email: [email protected]
ইসলামী শরীআহ অনুসরণের মূলনীতি সম্পর্কে মাযহাবের ইমাম গণদের উক্তি সমূহ
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উক্তিসমুহঃ
কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণে ইমাম আবু হানীফা অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তার অনেক উক্তি আমরা দেখতে পাই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
(১) ইমাম আবু হানীফা বলতেনঃ তোমরা যদি আমার কোন কথা প্রকাশ্য কোরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীত দেখতে পাও, তাহলে তোমরা কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করবে এবং আমার কথাকে দেয়ালে ছুঁড়ে মারবে। (দেখুন – মীযানে কুবরা গ্রন্থের ১ম খন্ড, পৃঃ- ৫৭)
(২) তিনি আরও বলতেনঃ আমার কোন কথা যদি আল্লাহ্র কিতাব কোরআন ও রাসুলের সহীহ হাদীসের বিপরীত হয়, তাহলে আমার কথা বা মত পরিহার কর। (দেখুন – আল ইকায আল ফাল্লানী গ্রন্থের পৃঃ নং- ৫০)
(৩) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) –কে জিজ্ঞাসা করা হলঃ আপনার কোন কথা যদি আল্লাহর কিতাবের বিপরীত হয়, তখন আমরা কি করবো? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কিতাবের মোকাবেলায় আমার কথা পরিহার করবে। তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলঃ আপনার কথা যদি রাসুল (সাঃ) এর বিপরীত হয় তাহলে আমরা কি করবো? তিনি বললেনঃ রাসুল (সাঃ) এর কথার মোকাবেলায় আমার কথা পরিহার করবে। তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলঃ যদি আপনার কোন কথা সাহাবাদের কথার বিপরীত হয় তাহলে কি করবো? তিনি বললেনঃ সাহাবাদের কথার বিপরীতে আমার কথা পরিত্যাগ করবে। (দেখুন – ইকদুল জীদ গ্রন্থের ৫৩ নং পৃঃ)
(৪) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, আমার কোন কথা গ্রহন করা কারো জন্য বৈধ হবে না যে পর্যন্ত না সে জানে আমি কোন সুত্রে তা বলেছি বা কোথা থেকে গ্রহন করেছি তা অবগত না হবে অর্থাৎ যে পর্যন্ত প্রমাণ না মিলবে। ( দেখুন – মুকাদ্দামাতুল হেদায়া, ১ম খন্ড, পৃঃ৯৩ ; বাহরুর রায়েক, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৯৩ ; হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন ৬/২৯৩) ;
(৫) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) আরও বলেন যে, সেই ব্যক্তির জন্য আমার কথা দ্বারা ফতোয়া দেয়া হারাম যে আমার দলীল সম্পর্কে অবগত হতে পারেনি।
(৬) তিনি বলতেনঃ যদি কোন বিষয়ে দলীল প্রকাশ হয়ে যায়, তাহলে তোমরা তদানুযায়ী কথা বলবে। (দেখুন- রদ্দুল মুখতারঃ ১ম খন্ড, পৃঃ- ৪৭)
(৭) ইমাম আবু হানীফা আরও বলতেনঃ যখন কোন বিষয়ে সহীহ হাদীস পাওয়া যায় তখন তা-ই হবে আমার মাযহাব অর্থাৎ তা-ই হবে আমার মত এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। (দেখুন- মুকাদ্দামা ফতোয়ায়ে আলমগীরীঃ পৃঃ- ২৩ ; আল হাশিয়াঃ ১ম খন্ড , পৃঃ- ৬৩ ; রসমুল মুফতীঃ ১ম খন্ড, পৃঃ- ৪৬২ ; রদ্দুল মুখতারঃ ১ম খন্ড, পৃঃ- ৪)
ইমাম মালিক (রহঃ) এর উক্তিসমুহঃ
মুওয়াত্তা গ্রন্থের লেখক ইমাম মালিকও কুরআন সুন্নাহর অনুসারে ইসলামী শরীআহ অনুসরণের প্রতিগুরুত্বারোপ করেছে। তার বিখ্যাত উক্তিগুলোর মধ্যে প্রধান কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
(১) ইমাম মালিক বলতেন, আমি একজন মানুষ মাত্র, আমি সঠিক যেমন বলি, ভুলও করতে পারি। সুতরাং তোমরা আমার রায় অর্থাৎ মতামতকে চিন্তা করে দেখবে। যে সমস্ত কথা কোরআন ও সুন্নাহ বা সহীহ হাদীস অনুযায়ী হয় তা গ্রহন করবে। আর যে সমস্ত কথা কোরআন ও সুন্নাহ বা সহীহ হাদীস অনুযায়ী না হয় তা পরিহার করবে। (দেখুন- জলবুল মানফাআঃ কিতাবের পৃঃ- ৪৭ ও ইকাযুল ইমাম কিতাবের পৃঃ- ১০২)
(২) তোমরা মতামত বা রায় বা কিয়াস পন্থীদের (অর্থাৎ শুধু কিয়াসের ভিত্তিতে যারা কথা বলে তাদের থেকে) বেচে থাক। কেননা তারা রাসুলের সুন্নাতের শত্রু। (দেখুন- আল আহকাম কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ নং- ৫৬)
(৩) ইমাম মালিক আরও বলতেনঃ রাসুল (সাঃ) এর পর এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার ঊর্ধ্বে। কেবল রাসুল (সাঃ) এরই কথা এবং কাজ সমালোচনার ঊর্ধ্বে। (ইরশাদুস সালিকঃ ১ম খন্ড, পৃঃ- ২২৭ ও উসূলুল আহকামঃ ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ- ১৪৫)
ইমাম শাফে’য়ী (রহঃ) এর উক্তিসমুহঃ
ইমাম মালিকের ছাত্র ও উসুলে হাদীসের রচয়িতা ইমাম শাফেয়ী তাঁর অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলের সুন্নাতের বিপরীতে তার কথাকে পরিত্যাগ করতে বলেছেন। তিনি বলেন:
(১) যদি আমি এমন কোন কথা বলি অথচ নবী (সাঃ) আমার কথার বিপরীত কথা বলেছেন, তাহলে যা নবী (সাঃ) এর হাদীস দ্বারা সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে সেটাই উত্তম। তোমরা সে ক্ষেত্রে আমার অন্ধ অনুসরণ করো না। (দেখুন- ইকদুল জীদ গ্রন্থের ৫৪ নং পৃঃ)
(২) তিনি আরও বলতেনঃ এ ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কখনো যদি কারও সামনে রাসুল (সাঃ) এর কোন সুন্নাত বা হাদীস প্রকাশ পায় তখন তার কাছে অন্য কোন লোকের বা ইমামের কথার ভিত্তিতে রাসুল (সাঃ) এর হাদীস ত্যাগ করা বৈধ নয়। (দেখুন- ইবনুল কাইয়ুম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৬১ ; আল ফাল্লানী, পৃঃ ৬৮)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর উক্তিসমুহঃ
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল অন্ধ অনুসরণের সর্বাধিক কঠোর ছিলেন। তিনি তার ফতোয়া লিখতে নিষেধ করতেন। এমনকি তিনি অন্যদেরও অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
(১) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলতেনঃ তোমরা আমার অন্ধ অনুসরণ করো না, এমন কি ইমাম মালেক, শাফেয়ী, হানীফা, সাওরী – তাদেরও না; বরং তারা যেখান থেকে সমাধান নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকে যাচাই বা প্রমাণ করে নাও। (ঈলামুল মুওয়াক্কেয়ীন ২/৩০২ ; ইকদুল জীদ এর ৮১ নং পৃঃ)
(২) তিনি বলতেনঃ যে ব্যাক্তি আমলের ক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) এর হাদীস বাদ দিয়ে আমল করে, সে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। (ইকদুল জীদ এর ১৮২ নং পৃঃ)
এই হল ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সহ অন্যান্য মাজহাবের ইমামগণের পক্ষ থেকে রাসুল (সাঃ) এর হাদীস অনুসরণের এবং তাদের (ইমামদের) অন্ধ অনুসরণ থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে স্বয়ং ইমামগণের নির্দেশ। এ ব্যাপারে সাহাবী হজরত ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেছেনঃ সাবধান ! তোমাদের কেউ যেন তার দ্বীনকে কোন একক ব্যাক্তির অনুসরণ না বানায় (জামিউ বায়ানিল এলমে ওয়া ফযলিহী)।
সুতরাং কোন বিষয়ে যার কথা কোরআন কিংবা সহীহ হাদীসের সাথে মিল বেশী, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার কথায় হবে নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য। নিজের পছন্দের ইমামের কোন কথা যঈফ হাদীসের উপর ভিত্তি করে কোন সহীহ হাদীস বা সহীহ সুত্রে বর্ণিত সাহাবীর আমলের বিপরীত হলেও তা অন্ধভাবে মেনে চলতে হবে এমন কোন নিয়ম ইসলামের শরীয়তে নেই।
মুসলিমদের মধ্যে মাযহাবী পরিচয়ের পরিণাম:
মাযহাবের শাব্দিক অর্থ মত বা পথ। পরিভাষায় মাযহাব বলতে বুঝায় শরয়ী ব্যাখ্যা – বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট মুজতাহিদ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ইমামের রায় বা মতের অনুসরণ করা। শরীয়াহ ব্যাখ্যা – বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যার রায় বা মতের অনুসরণ করা হোক না কেন তা মূলত কোরআন কিংবা সুন্নাহরই অনুসরণ – যদি ঐ রায় বা মত সহীহ হাদীস বা সহীহ সুত্রে হয়ে থাকে। কেউ যদি কোন ইমামের রায় বা মত গ্রহন করে থাকেন তাহলে তাকে ঐ ইমামের অনুসারী নামে ডাকা বা পরিচয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আর কোন ইমামই নিজের কোন রায় বা মত অপরকে মানতে বলেননি বরং ইমামগণ বলেছেনঃ- সহীহ হাদীসের মোকাবেলায় আমার নিজের কোন মত বা রায় মানা যাবে না। যেমন – জামাতে নামায পড়ার সময় যখন ইমামের অনুসরণ করা হয়, তখন তা দৃশ্যত ইমামের অনুসরণ করা হলেও মূলত তা কোরআন ও সুন্নাহরই অনুসরণ। কারন ইমাম কোরআন বা সুন্নাহরই আমল করছেন। তাই কোন মুসাল্লী বলে না যে, আমি অমুক মসজিদের ইমামের অনুসারী। অনুরূপভাবে মাজহাব হলো শরীয়াহ-র কোন মুজতাহিদের ইনস্টিটিউত বা দীনী গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাত্র। আর এর প্রধানই হল ইমাম। তিনি যে রায় বা মত প্রদান করে থাকেন তা মূলত কোরআন ও হাদীসের অনুযায়ী করেন তাই কেউ যদি কোন ইমামের রায় বা মত গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তাকে ঐ ইমামের অনুসারী বলে পরিচয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অতএব শরীয়াহ কোন ব্যাখ্যা – বিশ্লেষণের মত বা রায় যদি কেউ ইমাম আবু হানীফার পক্ষ গ্রহণ করে থাকেন সে নিজেকে “ হানাফী ” বলা , আর কেউ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর পক্ষ থেকে কোন রায় বা মত গ্রহণ করেছেন বলে নিজেকে “ হাম্বলী ” বলা – এ ধরনের পরিচয় মুসলিমদের মধ্যে রীতিমত একটি ফিতনা। কারন ইসলামী শরীয়াহ-র মধ্যে মুসলিমদের ইতিহাসে এ ধরনের পরিচয়ের কোন অস্তিত্ব নেই। ইমামের মত বা রায় যদি কোরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে মিলে যায় তাহলে তা অবশ্যই মানতে হবে। আর সেই ইমামের রায় বা মত যদি যঈফ হাদীসের উপর ভিত্তি করে কোরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীত হয় তাহলে তা মানা যাবে না। শাফেয়ী ও অন্যান্য মাযহাব সহ বিশেষ করে হানাফী মাজহাবের অনেক আমল রয়েছে যা যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনজ) হাদীস এবং মউযূ অর্থাৎ জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে হয়েছে , যেগুলির পক্ষে কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোন প্রমান পাওয়া যায় না বরং সেসব মাযহাবী আমলের বিপরীতে কোরআন ও সহীহ হাদীসের অসংখ্য দলীল রয়েছে, কিন্তু আফসোস ! অনেক আলেম সহ সাধারণ মানুষ কোরআন ও সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মাযহাবের ফিকাহ-র উপরেই নির্ভর করে আছে। আবার যারা মাযহাব মানে তারা আবার একজন নির্দিষ্ট করা ইমাম ব্যাতিত অন্য কোন ইমামের রায় বা মত গ্রহণ করে না। এটা খুবই ভুল এবং ভ্রান্ত কাজ। রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর খিলাফতে রাশেদার মধ্যে যারা হজরত আবু বকর (রাঃ) এর রায় বা মতের অনুসরণ করেছিলেন তারা কোন সময় বলেননি যে আমরা “ আবু বকরী ” ; আবার যারা হজরত উমর (রাঃ) এর মত বা রায় মেনে চলতেন তারাও কোন দিন বলেননি যে, আমরা “ উমরী ”। কারন তারা কেউ ব্যাক্তি আবু বকর বা ব্যাক্তি উমরকে অনুসরণ কিংবা মেনে চলেননি, বরং তারা অনুসরণ বা মেনে চলতেন প্রকারান্তরে কোরআন এবং সুন্নাহ বা হাদিসকে।
ü রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি ; যতখন তোমরা দৃঢ়ভাবে তা ধারণ করে থাকবে, ততক্ষণ তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব (কোরআন) ও তার রাসূলের সুন্নাহ (সহীহ হাদীস)। [ দেখুন – মুয়াত্তা মালেক , হাদীস নং ১৩৯৫ ; সুনানে হাকিম , হাদীস নং ২৯১ ; সনদঃ সহীহ ]
কিন্তু আফসোস ! আজ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ রাসুলের নির্দেশকে অমান্য করে কোরআন ও সহীহ হাদীস ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র মানুষ দ্বারা রচিত মাযহাবের ফিকাহ গ্রন্থগুলোকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এজন্যই আজ আমাদের এই দশা, রাসূল (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বানীর মত আজ আমরা আল্লাহর সহজ সরল সঠিক পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছি। মাযহাবী পরিচয়ের ন্যায় এ ক্ষেত্রে আবার যারা “ আহলে হাদীস ” বা “ সালাফী ” পরিচয় দেন তাদের এই পরিচয় ও আরও একটি ফিতনা। কারন এসব পরিচয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় , এই পরিচয় পক্ষ – বিপক্ষ হয়ে পরস্পরের হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও নিন্দার ন্যায় জঘন্য অপরাধেরও বিস্তার লাভ হয়েছে পুরো মুসলিম উম্মাহর মধ্যে। শরীয়াহ-র এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে যারা কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন তাদেরকে অনেক আলেমগণ কটূক্তি করে লা-মাযহাবী বলে নিন্দা করে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে সাহাবাগন , তাবেঈ , তাবে-তাবেঈগন তো আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ব্যাতিত আর কোন ইমাম বা মাযহাব মানেননি। তাহলে তারাও কি লা-মাযহাবী বা মাযহাব না মানার দোষে দোষী? অথচ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ঐসব লোককে যুগের সর্বোত্তম লোক বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
ü আমার সর্বোত্তম উম্মত হলো তারাই যাদের যুগে আমি প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তাদের সাথে যারা মিলিত হবে তারাই। এরপর তাদের সাথে যারা মিলিত হবে তারাই। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুস ফাযাইল সাহাবা ; আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সুন্নাহ)
সুতরাং কোন ইমাম বা মাজহাবের অন্ধ অনুসরণ করা ফরয বা জরুরী নয়। জরুরী হলো আমল সহীহ করা আর এর জন্য রাসুল (সাঃ) এর ভাষ্য অনুযায়ী কোরআন ও সহীহ হাদীসই যথেষ্ট। আজকে উম্মতদের আমলের মধ্যে মত পার্থক্যের একমাত্র কারন হলো – আমলের ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসকে গ্রহণ না করে মাজহাবের ফিকাহকে গ্রহণ করা এবং হাদীসের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল না করা ও হাদীস গ্রহনের মূলনীতি অনুসরণ না করা। এই ক্ষেত্রে সব ইমামই বলেছেন যে, আমলের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করা (আল মীযানুল কুবরা)। আর যারা হানাফী , মালেকী , শাফেয়ী , হাম্বলী , আহলে হাদীস ইত্যাদি নামে এ উপপরিচয় যারা পোষণ করে, তারা প্রকারান্তরে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভাজনই লালন করেন। অথচ যুগে যুগে ইসলামের অনুসারীর জাতীয় পরিচয় হল মুসলিম। শুরুতেও মুসলিম আর শেষেও মুসলিম , অন্য আর কোন নাম বা উপনামও নয়। আল্লাহ বলেনঃ
ü আল্লাহ তোমাদের নাম রেখেছেন “ মুসলিম ” , পূর্বেও এবং এই কোরআনেও। (সূরা হজ্জ , আয়াত নং- ৭৮)
ü তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান , আয়াত নং- ১০৩)
ü তোমারা তাদের মত হয়োনা , যাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমান (কোরআন) আসার পরও ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে এবং কলহ কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান , আয়াত নং- ১০৫)
ü যারা তাদের দ্বীনকে (অর্থাৎ ইসলামকে) খন্ড – বিখন্ড করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার (মুহাম্মদ সাঃ এর) কোন সম্পর্ক নেই। (সূরা আন’আম , আয়াত নং- ১৫৯)
সুতরাং ইসলামের মধ্যে সকল অনুসারীর একমাত্র পরিচয় হল মুসলিম। এছারা ইসলামের ইতিহাসে মুসলিমদের অন্য কোন উপ-পরিচয় নেই। কোরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তি ব্যাতীত কোন ইমাম বা ব্যাক্তি বিশেষকে অন্ধ অনুসরণ বা তাকলীদ করে মুসলিমদের মধ্যে যারা মাযহাব নামে দল উপদল সৃষ্টি করেছেন প্রকৃতপক্ষে তাও একটি ফিতনা। আর যে কোন ফিতনার পরিনাম সম্পর্কে সতর্ক করে আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ
ü ফিতনা খুন বা রক্তপাতের চেয়েও বড় অপরাধ। (সূরা বাকারা , আয়াত নং- ২১৭)
ü ফিতনা ফাসাদ হত্যার চেয়েও জঘন্য কাজ। (সূরা বাকারা , আয়াত নং- ১৯১)
ü অন্ধ ভাবে মাযহাব মানার বাস্তব পরিণতির কপিতয় উদাহরণ
(১) জামাতের নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়া ও ইমাম সহ শব্দ করে আমীন না বলাঃ আমাদের দেশে কোন কোন ভাইয়েরা ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন না, এটা নবী (সাঃ) এর সুন্নাত ও আমলের বিপরীত। সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, প্রত্যেক নামাযিকে অবশ্যই নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে, না পড়লে তার নামায হবে না। এখানে অনেক মাযহাবী আলেম না বুঝেই কোরআন থেকে কিয়াস দ্বারা বুঝান যে নামাযে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে না , কিন্তু তারা ইসলাম শরিয়ার মূলনীতি না জানার কারনে বুঝতে পারে না যে, সহীহ হাদীস বিদ্যমান থাকলে সেখানে কিয়াস মূল্যহীন। ইমাম যখন সশব্দে সূরা ফাতিহা পড়ে তখন মুক্তাদিগন চুপ করে মনে মনে পড়বে আর নিঃশব্দে পাঠিত নামাযে যেমন জোহর ও আসরের নামাযে মুক্তাদীরা অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়বে (মুসলিমঃ ৩৯৫ ; তিরমিযীঃ ২৯৫৩ ; নাসাঈঃ ৯০৯ ; আবু দাউদঃ ৮১৯ , ৮২০ ; মুসনাদে আহমদঃ ৭২৪৯ ; মুয়াত্তা মালিকঃ ১৮৯)। এই মতটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল , ইমাম আবু হানীফার বিখ্যাত ও নামকরা ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম আবু ইউসুফ, এবং ইবনে তাইমিয়া ও মুহাদ্দিস আলাম্মা নাসিরুদ্দিন আলবানী গ্রহন করেছেন। ইমাম আবদুল হাই লাখনভী তার গ্রন্থেও সেটা বর্ণনা করেছেন। আমাদের দেশে অনেক মসজিদের ইমামগণ সহ মুক্তাদীরা নামাযে সূরা ফাতিহা শেষে সশব্দে উচ্চারন করে আমীন বলে না। সশব্দে কিরাআত পাঠিত নামাযে সশব্দে আমীন না বলা নবী (সা:) ও সাহাবীদের আমলের বিপরীত, বরং ইমাম ও মুক্তাদির সকলেরই সশব্দে আমীন বলতে হবে। এই বিষয়ের গুরুত্তের কারনে ইমাম বোখারী নিজে স্বতন্ত্র একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম “জযুঊ কিরা’আত”। ( বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার লিখিত ও দলীল প্রমান দ্বারা সংকলিত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়েছেন।)
(২) নামাযে পুরুষ ও মহিলার পদ্ধতিতে পার্থক্য করাঃ পৃথিবীতে কোরআনের কোন একটি আয়াত এবং একটিও সহীহ হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে নামাযে পুরুষ ও মহিলার নিয়ম আলাদা। এটা নবী (সাঃ) এর ইন্তিকালের অনেক বছর পর মাযহাব এর নামে মানুষের কতৃক বানানো নতুন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন নিয়ম। পৃথিবীর নামকরা ও বিখ্যাত অনেক বড় বড় আলেম এটাকে মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলেছেন। ( বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার লিখিত ও সংকলিত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়েছেন ; সৌদি আরবের সাবেক সকল মুফতিদের প্রধান এবং ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল আজীজ বিন বায (রঃ) এর নবী করিম (সাঃ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি ; মদীনার রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে নববীর খতীব এবং মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আলাম্মা আবু বাকার জাবির আল-জাযায়েরী রচিত পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায়ের পদ্ধতি ; সৌদি আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল- উসাইমীন (রহঃ) এর ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ; ইত্যাদি।)
(৩) নামাযে হাত বাধা ও রাখার ক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত না মানাঃ আমাদের দেশের হানাফী মাযহাবী আলেমরা বলেন নামাযে নাভির নিচে হাত রাখা সুন্নত। অথচ তাদের এই কথার ভিত্তি কিছু যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনক) হাদীস। তারা যেসব হাদীস পেশ করেন তার সনদ যাচাই করলেই দেখা যাবে যে সেগুলি সব যঈফ ও দুর্বল হাদীস এবং এর সনদ ইমাম আবু দাউদ সহ পৃথিবীর নামকরা ও বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ দিয়েছেন। তারা আবু দাউদ থেকে যঈফ হাদীস পেশ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বরং সুনানে আবু দাউদ, সহীহ ইবনে খুজাইমা, বুলুগুল মারাম এবং সুনানে নাসাঈ, মুসনেদে আহমদ , সুনানে বায়হাকী সহ বোখারী ও মুসলিম শরীফ থেকে অধিক শক্তিশালী ও মজবুত হাদীস দ্বারা প্রমানিত আছে যে, রাসুল (সাঃ) নামাযে নাভির উপরে (বুকের কাছে) হাত বেধেছেন। (বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার লিখিত ও সংকলিত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়েছেন ; সৌদি আরবের সাবেক সকল মুফতিদের প্রধান এবং ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল আজীজ বিন বায (রঃ) এর নবী করিম (সাঃ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি ; মদীনার রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে নববীর খতীব এবং মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আলাম্মা আবু বাকার জাবির আল-জাযায়েরী রচিত পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায়ের পদ্ধতি ; সৌদি আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল- উসাইমীন (রহঃ) এর ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ; মুহাদ্দিস আলাম্মা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর রাসুল (সাঃ) এর নামায ; ইত্যাদি।)
(৪) নামাযে রফ’উল ইয়াদাঈন না করাঃ আমাদের এই দেশে এক শ্রেণীর মুসলিম ভাইয়েরা কাউকে অন্ধ অনুসরন করে নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া কোথাও রাফ’উল ইয়াদাঈন করেন না অথচ আজীবন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসুল (সাঃ) নামাযে তাকবীর তাহরীমা ছারাও রাফ’উল ইয়াদাঈণ বা হাত উত্তোলন করেছেন। পৃথিবীতে এমন কোন হাদীস গ্রন্থ নাই যে ঐ হাদীস গ্রন্থে রাফ’উল ইয়াদাঈন করার সহীহ হাদীস নেই। এছারা ইমাম বোখারী (রহঃ) এর গুরুত্তের জন্য স্বতন্ত্র একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম “ জুযউ রফইল ইয়াদাঈন ” এবং এই কিতাবে ইমাম বোখারী (রহঃ) প্রমান করে দেখিয়েছেন যে রফইল ইয়াদাঈন এর বিপক্ষে অর্থাৎ রফ’ইল ইয়াদাঈন না করার সকল হাদীস গুলো দুর্বল , সন্দেহযুক্ত , ভুল , বাতিল ,মিথ্যা, বানোয়াট এবং জাল হাদীস। তার এই কথার সাথে ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ), ইমাম বায়হাকী (রহঃ), ইমাম ইবনে খুযাইমা (রহঃ), হাসান বসরী (রঃ), ইমাম তারাবানী (রহঃ), ইমাম ইবনু আবী শাইবা (রহঃ), ইমাম তাহাবী (রহঃ), ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম ইবনু আব্দুল বারের তাহামীদ (রহঃ), ইমাম মালেক (রঃ), ইমাম শাফী (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ), ইমাম হাকীম (রহঃ), ইমাম হিব্বান (রহঃ), ইমাম দারা কুতনী (রহঃ), এবং আরও অনেক বিখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দীস গন একমত হয়েছেন এবং রফ’উল ইয়াদাইন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের দেশের অন্ধ মাযহাবী কিছু অজ্ঞ ও মূর্খ লোকেরা রাফ’উল ইয়াদাঈন না করার জন্য এর বিপক্ষে নানা ধরনের মনগড়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বনোয়াট, এমনকি নবী (সাঃ) এর নামে মিথ্যা, ভুয়া ও জাল হাদীস বলে বেড়াচ্ছেন। যেমনঃ বগলের তলে মূর্তি রাখা, এই আইন রহিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সর্বসাধারন মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, এই সকল কথা পৃথিবীর কোন হাদীস গ্রন্থে নেই বরং এই সব কথা মাযহাব রক্ষার লক্ষ্যে মনগড়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, ও বানোয়াট। (বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার লিখিত ও সংকলিত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়েছেন ; ইমাম বোখারী (রহঃ) রচিত জযুউ রফ’উল ইয়াদাঈন ; সৌদি আরবের সাবেক সকল মুফতিদের প্রধান এবং ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল আজীজ বিন বায (রঃ) এর নবী করিম (সাঃ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি ; মদীনার রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে নববীর খতীব এবং মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আলাম্মা আবু বাকার জাবির আল-জাযায়েরী রচিত পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায়ের পদ্ধতি ; সৌদি আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল- উসাইমীন (রহঃ) এর ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ; মুহাদ্দিস আলাম্মা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর রাসুল (সাঃ) এর নামায ; ইত্যাদি।)
(৫) বিতরের নামাযের রাকায়াত নির্দিষ্ট করাঃ আমাদের দেশের মাযহাবের আলেমগণ রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে বিতর নামায কে ৩ রায়াকাত এর মধ্যে নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ করে নিয়েছেন এবং অন্যান্য যেকোন বেজোড় রাকায়াত কে তারা অনুমতি দেন না। অথচ বোখারী ও মুসলিম শরীফ সহ অনেক হাদীস গ্রন্থ আছে যেখানে প্রমান আছে যে বিতর ১/৩/৫/৭/৯ যেকোন বিজোড় রাকায়াতে পড়া যাবে। রাসুল (সাঃ বলেছেনঃ আল্লাহ্ তোমাদের জন্য আরও একটা নামায যোগ করেছেন, সেটা বিতর আর যদি কেউ ৫ রাকায়াত বিতরের নামায পড়তে চায় সে সেটা পড়তে পারে। যদি কেউ ৩ রাকায়াত পড়তে চায়, সেও পড়তে পারে। যদি কেউ বিতরের নামায ১ (এক) রাকায়াত পড়ে তাহলেও কোন সমস্যা নেই। ( আবু দাউদ শরীফ, খন্ড – ১ , হাদীস নং- ১৪১৭ )। (বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার সংকলিত “ কিয়ামুল লাইল ” )
(৬) দুই ঈদের ওয়াজিব নামাযে সুন্নত অনুযায়ী অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ পূর্ণ না করাঃ আমাদের বাংলাদেশ সহ ভারত , পাকিস্তানে ২ ঈদের নামাযে ৬ তাকবীর দিয়ে নামায আদায় করা হয়। আবার মক্কা , মদীনা , কুয়েত , বাগদাদের মসজিদ সহ সমস্ত আরব দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে ঈদের নামায ১২ তাকবীরে আদায় করে থাকে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ১২ তাকবীরেই ঈদের নামায পড়েছেন যার দলীল প্রমান আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, মুয়াত্তা মালিক, মুয়াত্তা মুহাম্মদ, সহীহ ইবনে খুজাইমা, সুনানে দারাকুতনী, মুসতাদরাক হাকিম, শরহুস সুন্নাহ, তাহাবী শরীফ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, সুনানে বায়হাকী, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসনাদে আহমদ, তবারানী শরীফ, মুসনাদে বাযযার, সুনানে আদ দারেমী সহ আরও অনেক হাদীস গ্রন্থে মোট ১৫২ টি হাদীস রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল ৬ তাকবীরের কোন সহীহ হাদীসই পৃথিবীর কোন হাদীস গ্রন্থে নেই। এভাবেই হাদীসের তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট মাযহাব আঁকড়ে ধরে নিজেদের মন মত ঈদের নামায পড়া হচ্ছে। (বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার সংকলিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঈদের নামাযের তাকবীরের সংখ্যা )
(৭) সুন্নত অনুযায়ী জানাযার নামায পূর্ণ না করাঃ আমাদের দেশে মাযহাবী আলেমগণ জানাযার নামেযে সূরা ফাতিহা না পড়ে প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া হয় এবং তাতে “ওয়া তাআলা জাদ্দুকা” এর পর “ওয়া জাল্লা ছানাউকা” এ বাক্য বাড়িয়ে বলা হয় এবং শেষে দুদিকেই সালাম ফেরানো হয় অথচ তাদের এ কথার কোন সহীহ ভিত্তি নেই। বরং তিরমিযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, রাসূল (সাঃ) প্রথম তাকবীর বলেই সূরা ফাতিহা পড়তেন, তারপর দ্বিতীয় তাকবীতে দুরুদে ইব্রাহীম, তৃতীয় তাকবীরে দু’আ এবং চতুর্থ তাকবীরে শুধু ডান দিকেই সালাম ফেরাতেন। নবী (সাঃ) আরও বলেছেনঃ সূরা ফাতিহা ছাড়া কোন নামাযই হয় না। (বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ মুহাদ্দিস আলাম্মা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর আহকামুল জানায়িয ; আন্তর্জাতিক আলেম , গবেষক , দাঈ , মুহাক্কিক ও লেখক আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী এর জানাযা দর্পণ ; ইত্তাদি।)
(৮) নামাযের শুরুতে মুখে নিয়ত পড়াঃ আরবী নিয়ত শব্দের অর্থ হল মনে ইচ্ছা পোষণ করা। আমাদের দেশের বাজারে হানাফী মাযহাবের বেহেশতী জেওর সহ অসংখ্য নামাযের বই রয়েছে যেখানে ৫ ফরজ , ওয়াজিব , সুন্নাত ও নফল নামাযের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামাযের নিয়ত রয়েছে যা সবই রাসুল (সাঃ) এর ইন্তিকালের অনেক বছর পর মানুষ দ্বারা বানানো ভিত্তিহীন , বানোয়াট , কাল্পনিক ও মনগড়া নিয়ত। বরং মুখে উচ্চারন করে নিয়ত করা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত বিরোধী একটি বিদ’আত। কেউ কেউ নাওয়াইতুয়ান উসাল্লি…… পড়ে থাকেন এবং অনেক সময় কিছু মূর্খ লোক যারা অনেক সময় সমাজে আলেমের বেশ ধরে থাকেন তারাও এটা পড়তে বলে অথচ কোরআন ও হাদীসে তন্ন তন্ন করে খুজলেও কোথাও এ ধরনের নিয়ত পাওয়া যাবে না, এমনকি এটাও পাওয়া যাবে না যে, রাসুল (সাঃ) জীবনে কখনো মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করেছেন বা করতে বলেছেন বরং তিনি মনে মনে নিয়ত করেছেন (দেখুন সহীহ বোখারী শরীফ)। সহীহ হাদীস তো দূরের কথা কোন যঈফ হাদীসেও মুখে নিয়ত উচ্চারনের কথা বলা নেই। তাই ইসলামের শরীয়াতের বিধান হল মনে মনে নিয়ত করা। (সহীহুল বোখারী – ১/১ , সহীহ মুসলিমঃ ৪৬)। [ বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ আমার লিখিত ও সংকলিত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়েছেন ; সৌদি আরবের সাবেক সকল মুফতিদের প্রধান এবং ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল আজীজ বিন বায (রঃ) এর নবী করিম (সাঃ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি ; মদীনার রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে নববীর খতীব এবং মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আলাম্মা আবু বাকার জাবির আল-জাযায়েরী রচিত পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায়ের পদ্ধতি ; সৌদি আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল- উসাইমীন (রহঃ) এর ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ; মুহাদ্দিস আলাম্মা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর রাসুল (সাঃ) এর নামায ইত্যাদি।)
এছারাও মাযহাবের আরো অনেক ও অসংখ্য মাসয়ালা আছে যা সবই বোখারী ও মুসলিম শরিফ সহ অগণিত সহীহ হাদীসের বিরোধী।
ইসলাম ধর্মে বা শরীয়াহ-তে নতুন ফরয বৃদ্ধি – কিসের ইঙ্গিত
চার মাযহাব ফরজের দলীল আছে কিঃ ইসলামের মধ্যে যদি কোন বিষয় ফরয করতে হয় বা কোন ফরয রহিত করতে হয় তাহলে তার পূর্বশর্ত হলো, তা কোন নবীর মাধ্যমে হতে হবে এবং তা ফেরেশতা তথা জিবরাঈল (আঃ) দ্বারা আল্লাহ্র তরফ হতে ওয়াহী হতে হবে এবং তা শরয়ী কিতাব কোরআন এবং সহীহ হাদীসে প্রকাশ্যে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সকল মুসলিমই একমত। আমাদের সমাজে প্রচার রয়েছে চার মাযহাব চার ফরজ। সে মতে যখন কোন বিষয়ে মাযহাবীদের মধ্যে মত-বিরোধ হয় তখন তারা বলে, এটা আমাদের মাযহাবে নেই। একটি ফরয সমস্ত মুসলিম জাতির জন্যই হয়। তাই চার মাযহাব সমস্ত মুসলিম জাতির জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয় অথচ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত আলেম শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) বলেনঃ জেনে রাখো , নিশ্চয় মানুষেরা অর্থাৎ মুসলিমগণ হিযরী চতুর্থ শতাব্দীর পূর্বে অর্থাৎ ৪০০ হিযরীর পূর্বে কোন একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের প্রতি অন্ধ অনুসরণে একমত ছিল না (দেখুন- হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা কিতাবের ১৫৭ পৃষ্ঠা)। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মাযহাবীরা তাদের ফরয মাযহাবকে ভাগ করে নিয়েছেন। অর্থাৎ যিনি হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করেন তিনি হাম্বলী , মালিকী বা শাফেয়ী মাযহাবের অনুসরণ করেন না। এমনিভাবে অন্য মাযহাবীরাও একে অন্যের মাযহাব মানেন না। তাদের কথা হল ফরয অর্থাৎ চার মাযহাবের যে কোন একটি মানলেই হবে। যদি আসলেই তাই হয় তাহলে তো আরেক ফরয পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের এক ওয়াক্ত মানলে বা পড়লেই হলো। যারা রীতিমত নামায পড়ে না তাদেরকে বেনামাযী বলা হয় কেন? যদি চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব মেনে ফরয পালন করা যায় অর্থাৎ মাযহাবী হওয়া যায় , তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বদলে যে কোন এক ওয়াক্ত নামায পড়ে নামাযী হওয়া যাবে না কেন বা ফরয পালন হবে না কেন? পাঠক বুঝতেই পারছেন সমাজের কিছু আলেম নামধারী প্রানী কিভাবে আল্লাহ , রাসুল (সাঃ) ও সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা করছে মাযহাবকে ফরযের নাম দিয়ে। এ চার মাযহাব কোন নবীর মাধ্যমে ফরয হয়েছে? কোরআনের কোন আয়াত দ্বারা ফরজ হয়েছে? এর কোন উত্তর আসবে না। বরং এটা বলতে হবে যে, মাযহাব ফরযের দাবীদার ব্যাক্তি মিত্থা নবীর দাবীদার কাফির। মাযহাব যে কোন ব্যাক্তি বিশেষের দ্বারা ফরজ হয়েছে তা “মাকসুদুল মুহসেনীন বা বেহেশতের পুঞ্জী” নামক বইয়ের দিকে লক্ষ্য করলে প্রতীয়মান হয়। লেখক উক্ত বইয়ের ২১৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, কতক আলেমের মতে চার মাযহাব চার ফরয এবং “মাকসুদুল মু’মিনীন বা বেহেশতের কুঞ্জী” নামক বইয়ের ১৪১ পৃষ্ঠায় লেখক আলহাজ্জ মাওলানা কাজী মুহাম্মদ গোলামুর রহমান উক্ত চার মাযহাব চার ফরয উল্লেখ করে টীকায় লিখেছেন যে “এটা (অর্থাৎ চার মাযহাব চার ফরয) আম বা সাধারন মানুষের আকাঙ্ক্ষা মিটানোর জন্য লেখা হয়েছে”। পাঠক চিন্তা করেন! উক্ত লেখক বিনা দলীল প্রমানে শুধুমাত্র সাধারন মানুষের আকাঙ্ক্ষা মিটানোর জন্য কোন কিছুকে ফরয বলে চালিয়ে দিলেন অথচ কোন কিছু ফরয করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর-ই। আল্লাহ কোরআনে বলেনঃ
ü তবে কি তোমরা আমার সঙ্গে এমন বিষয়ে বিতর্ক করছ যা তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা নির্দিষ্ট করে নিয়েছ? অথচ আল্লাহ্ এদের সমন্ধে কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। আল্লাহ্ ছাড়া কারও বিধান দেয়ার অধিকার নেই… কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। ( সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ৪০ ও সূরা আ’রাফ, আয়াত নং- ৭১ )
ü কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহ্ সমন্ধে কোন জ্ঞান ছাড়া, কোন প্রমাণ ছাড়া ও কোন উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই কথা বলে। …… তাকে আস্বাদন করাব দোযখের দহন যন্ত্রনা। ( সূরা আল হাজ্জ, আয়াত নং- ৮ ও ৯ এবং সূরা লুকমান, আয়াত নং- ২০ )
ü জালিমরা বিনা প্রমানে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরন করে থাকে। ( সূরা রূম, আয়াত নং- ২৯ )
চার মাযহাব যে বানোয়াট , মিথ্যা উক্ত লেখকের লেখনিতে তার প্রমান রয়েছে। কারন কোন আলেম কোন কিছু ফরয করতে চাইলে তা ফরয হয়ে যায় না। ফরয করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ্র। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে উক্ত কথিত চার মাযহাব ফরয এর উপর বিশ্বাস করা বা মানা হলো কুফরী এবং শিরক। আল্লাহ সমস্ত মুসলিমদেরকে উক্ত কুফরী ও শিরক থেকে রক্ষা করুন। আমীন।।
মাযহাবীদের নিকট কপিতয় প্রশ্নঃ (১) প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরজ? ; (২) যদি ফরয হয়ে থাকে তাহলে এ ফরযটি উদ্ভাবন করল কে? ; (৩) যদি মাযহাব ফরজ হয়ে থাকে তাহলে নবী (সাঃ) কি এই ফরযটি পালন করেছিলেন ; (৪) এই চার মাযহাব কখন সৃষ্টি হয়েছে ; (৫) যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে তারা কি এ মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছে? ; (৬) না বলে থাকলে এগুলি কে বানিয়েছে এবং কেন বানিয়েছে? ; (৭) চার মাযহাব বাদ দিয়ে কি নবী (সাঃ) এর মাযহাব মানা যায় না? ; (৮) নবী (সাঃ) এর কথা অনুযায়ী যে একটি দল জান্নাতে যাবে সেটি কোন দল বা কোন মাযহাবের ? (৯) নবী (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর ইসলাম কি পরিপূর্ণ ছিল না অসম্পূর্ণ? ; (১০) মাযহাব মানার দলীল কোরআনের কোন আয়াত বা কোন সহীহ হাদীসে আছে? (১১) সম্মানিত চার খলীফা ও সাহাবাদের মাযহাব না হয়ে ইমামদের কেন হল? (১২) মাযহাব না মানলে কি জাহান্নামী হতে হবে?
আমাদের দেশের মাযহাবীদের যখন কোরআন ও বিশেষ করে সহীহ হাদীস এর দলীল পেশ করা হয় এবং সেই ভাবে আমল করতে বলা হয় তখন তারা বলে আমাদের মাযহাবে এটা নেই তাই আমরা এটা মানবো না, তারা কোরআন ও সহীহ হাদীস ছেড়ে তাদের ইমাম বা আলেমদেরকে প্রভু বা রব বানিয়ে নিয়েছে। আর এদের সম্পর্কেও আল্লাহ কোরআনে বলেনঃ
ü তারা আল্লাহ ব্যাতীত তাদের আলেম এবং দরবেশদেরকে তাদের প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে। ( সূরা আত তওবা , আয়াত নং ৩১)
উক্ত আয়াতের তাফসীর হাদীসে নাব্বীতেই রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
ü আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসুল (সাঃ) কে এ আয়াত পড়তে শুনলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমরা তো তাদের (আলেম বা পীরদের) পূজা বা ইবাদত করি না। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আচ্ছা তোমরা কি এরুপ করো না যে তারা (আলেম বা পীরেরা) আল্লাহর হালাল ঘোষিত বিষয়গুলোকে হারাম বলে দেয় আর তোমরা তা হারাম বলে মেনে লও। পক্ষান্তরে আল্লাহ কর্তৃক হারাম ঘোষিত বিষয়গুলোকে তারা (আলেম বা পীরেরা) হালাল বলে দেয় আর তোমরা তা হালাল বলে মেনে লও। তিনি উত্তর দিলেনঃ হ্যাঁ । রাসুল (সাঃ) উত্তরে বললেনঃ এটাই তোমাদের ইবাদত অর্থাৎ এভাবেই তারা তাদেরকে (আলেম বা পীরদের) প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে। (মুসনাদে আহমদ ; আত তিরমিযী , কুতুবখানা রশিদিয়া দিল্লী , ২য় খন্ড , ১৩২ পৃষ্ঠা ; কিতাবুত তাওহীদ , আরবী উর্দু , ১৪৬ পৃষ্ঠা ; তাকভিয়াতুল ঈমান , ১৬০ পৃষ্ঠা)
এভাবেই মানুষেরা কোরআন ও সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে তাদের মাযহাবের নির্দিষ্ট আলেমের মতামতের উপর ভিত্তি করে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম এবং জায়েয কে নাজায়েয ও নাজায়েয কে জায়েয করে নিয়েছে। এছাড়াও আল্লাহর নবী (সাঃ) তথাকথিত চারটি মাযহাব তৈরী হবে বলে হাদীস দ্বারা ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন এবং এগুলিকে অর্থাৎ উক্ত পথগুলিকে ভ্রান্ত ও শয়তানের পথ বুঝিয়েছেন। নিচে হাদিসটির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা পেশ করা হল।
ü জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুল (সাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। নবী (সাঃ) এভাবে সামনের দিকে একটি সরল রেখা আঁকলেন, অতঃপর বললেন এটাই আল্লাহর পথ। অতঃপর নবী (সাঃ) সরল রেখার ডানদিকে দু’টি ও বামদিকে দু’টি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলো শয়তানের পথ। অতঃপর রাসুল (সাঃ) তার হাতকে মধ্য রেখায় রেখে পাঠ করলেনঃ আল্লাহ বলেন, এটাই আমার পথ। তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং অন্য (ডানে ও বামের) পথসমূহের অনুসরণ করো না। যদি (ডানে ও বামের পথসমুহের অনুসরণ) কর, তাহলে সেসব পথ তোমাদেরকে আল্লাহ্র পথ হতে বিভ্রান্ত করে দিবে। আল্লাহ তোমাদেরকে (সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থাৎ মধ্য পথে থাকার) এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা (ডানের ও বামের গোমরাহি পথসমূহ হতে) বেঁচে থাকতে পার – সূরা আন’আম, আয়াত নং ১৫৩। (মুসনাদে আহমদ, সুনানে নাসাঈ শরীফ, সুনানে আদ দারেমী , সুনানে ইবনে মাজাহ , ১ম খন্ড , হাদীস নং- ১১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মীনা প্রকাশনী) , ; তাফসীরে ইবনে কাসীর )
পাঠক একটু চিন্তা করে দেখুন, কেন আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) একটি সরল রেখা টেনে তার ডানে ও বামে ৪ টি রেখা টানলেন ? কেন রাসুল (সাঃ) ডানে ও বামে একটি একটি করে ২ টি রেখা টানলেন না বা কেন রাসুল (সাঃ) ডানে ও বামে ৩ টি করে ৬ টি রেখা টানলেন না। তিনি ৪ টি রেখাই কেন টানলেন ?? তার বাস্তব নমুনা আজ আমরা ৪ মাযহাবের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো। নবী (সাঃ) এর ইন্তিকালের ৪০০ বছর পর আল্লাহ্র পথ বাদ দিয়ে নতুন ৪ টি পথের আবিষ্কার করা হয়েছে এবং ৪ মাযহাবের পৃথক পৃথক নিয়ম ও ইবাদাতের পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে ফলে এক মাযহাবের সাথে অন্য মাযহাবের নিয়ম বা পদ্ধতি মিলে না এবং এগুলিকে প্রতারণার মাধ্যমে ফরযের নাম করে ইসলামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অপর একটি বানী বা হাদীসে এইভাবে ভবিষ্যৎ বানী করেছেন বা বলেছেনঃ
ü রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ অবশ্যই আমার উম্মতের উপর এমন এক পর্যায় আসবে যেরূপ অবস্থা হয়েছিল বনী ইসরাঈলদের। নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলরা বাহাত্তর (৭২) টি দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত তিয়াত্তর (৭৩) টি দলে বিভক্ত হবে, তাদের থেকে একদল ব্যাতীত সকল দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবাগন বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল ! সে দল কোনটি যে দলটি জান্নাতে যাবে? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবাগন যে দলের উপর আছি, সে দলটিই জান্নাতে যাবে এবং এ দলের উপর যারা অবিচল থাকবে অর্থাৎ শুধুমাত্র এই দলটিকেই যারা অনুসরণ করবে। (আত তিরমিযী ; মুসনাদে আহমদ ; আবু দাউদ , অধ্যায়ঃ সুন্নতের অনুসরণ ; মিশকাত – ৩০ পৃঃ)
পাঠক ! এই হাদীসের আলোকে আমাদের প্রশ্নঃ আল্লাহর নবী (সাঃ) ও সাহাবাগন কোন দলে ছিলেন। তারা কি হানাফী দলে ছিলেন? না মালেকী দলে? না শাফেয়ী , নাকি হাম্বলী দলে ছিলেন। যে একমাত্র দলটি জান্নাতে যাবে সেটি কোন মাযহাবের, সেটি কি হানাফী , না মালেকী , না শাফেয়ী নাকি হাম্বলী মাযহাব। একটি দল জান্নাতে গেলে চারটি দল বা মাযহাব কেন? তাও সেগুলিকে তথাকথিত ফরযের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসলে যে দল জান্নাতে যাবে তা হল নবী (সাঃ) ও সাহাবাদের দল এবং সেই দলের নাম শুধুমাত্র মুসলিম , শুরুতেও মুসলিম আর শেষেও মুসলিম ; অন্য আর কোন দলও নয় , অন্য আর কোন উপনামও নয়। যদি পবিত্র কোরআন ও হাদীস গ্রন্থ তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে থাকেন তাহলে দেখবেন সেখানে তাদেরকে একমাত্র মুসলিম ছাড়া আর অন্য কোন নামে ডাকা হয়নি। তখন পর্যন্ত একটি মাত্র দলই ছিল ; অতঃপর বিভিন্ন দলের উদ্ভাবন হল। যখন শিয়া গঠিত হল তখন অন্য দল পরিচয় দেয়া শুরু করল সুন্নি নামে। তারপর সুন্নিদের মাঝেও বিভক্ত হল এবং একে একে উদ্ভাবন হতে থাকল হানাফী , মালেকী , শাফেয়ী , হাম্বলী , আহলে হাদীস , সালাফে ইত্যাদি নামে এর মধ্যে চার মাজহাবই বর্তমানে প্রধান দল। যদি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে থাকেন তাহলে দেখবেন এইসব দল থেকেও বিভিন্ন ভাগ হয়েছে। এখন হানাফীরা ভাগ হয়েছে ৪ টি দলে , শাফেয়ীরা হয়েছে ২ টি দলে , আহলে হাদীসরা ৪ টি দলে এভাবে আরো নানা দল সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। এইভাবেই নবী (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবানী মত ৭৩ টি দলে বিভক্ত বা ভাগ হবে, অতঃপর একটি দল ছাড়া সব দলই জাহান্নামে যাবে। এবং একটি দল ছাড়া সেই বাকী দল গুলোর সাথে নবী (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক থাকবে না। কারন আল্লাহ কোরআনে বলেনঃ
ü যারা তাদের দ্বীনকে (অর্থাৎ ইসলামকে) খন্ড – বিখন্ড করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার (মুহাম্মদ সাঃ এর) কোন সম্পর্ক নেই। (সূরা আন’আম , আয়াত নং- ১৫৯)
ü তোমারা তাদের মত হয়োনা , যাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমান (কোরআন) আসার পরও ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে এবং কলহ কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান , আয়াত নং- ১০৫)
পাঠক ! আপনিই ঠিক করুন আপনি কোন দলে থাকতে চান এবং কোথায় যেতে চান জাহান্নামে না জান্নাতে ???
এভাবেই আল্লাহ্ ও তার রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে সাবধান করে গেছেন। তাই আসুন নতুন আবিষ্কৃত মানুষের বানানো পথ ছেড়ে আল্লাহ্র ও রাসুলের একমাত্র পথ ধরি এবং কেবলমাত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস মেনে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।।
পূর্ব পুরুষ ও বাপ–দাদা দের দোহাই দেয়া ফেরাউন , আবু জাহেল ও মুশরিকদের নীতি
মাযহাবীরা পূর্ব পুরুষ বাপ – দাদা ও পীর – দরবেশের দোহাই দেয়া ফরয বানিয়ে নিয়েছে। এদেশের অধিকাংশ লোক একটি দোহাই দিয়ে থাকে যে, অত বড় বড় আলেম মুফতিগণ কি কোরআন হাদীস বুঝে না ! তারা তো আপনার মতো বলে না বা করে না। এইসব দোহাই দেয়ার একমাত্র কারন স্বার্থবাদী আলেমগণ সমাজে সঠিক ইসলাম শিক্ষা দেয়নি। তারা যদি সঠিক ইসলাম শিক্ষা দিত তাহলে এ দোহাই সমাজে লোক দিত না। তারা সঠিক ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা দিলে তাদের বিনা পুঁজির ব্যবসা থাকতো না। তারা ধোঁকা দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারত না। যার কারনে তারা সমাজে শিরক , বিদআত , মিথ্যা মাযহাবের সুবিধাবাদী মাসয়ালাহ প্রচার করেছে। বিশেষকরে বিদআতকে পুণ্যের কাজ বলে প্রচার করে তারা তাদের বিনা পুঁজির জমজমাট ব্যবসার পথকে সুগম করে নিয়েছে। তারা যদি মিলাদ , কুলখানী , চল্লিশা , উরশ , খতমে কোরআন আরও ইত্যাদি বিদ’আতী ও শিরকী অনুষ্ঠান না করত, তাহলে তাদের অর্থ উপার্জনের পথ কঠিন হয়ে যেত। উপরন্তু তারা কোরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীতে তাদের বাপ দাদার রসম রেওয়াজ অনুযায়ী অনেক কর্মে লিপ্ত ছিল , যা ছিল শরীয়াত বিরোধী। কোন রকমে আরবীতে কোরআন পড়া শিখেই বিভিন্ন জাল হাদীস ও যঈফ হাদীসের উপর ভিত্তি করে তারা বিভিন্ন ফাতাওয়া দেওয়ায় লিপ্ত ছিল কিন্তু কোরআনের ও সহীহ হাদীসের অর্থ কোন দিনো জানতে চায় নাই বা বুঝতে চায় নাই। তাদের জানা ছিল না যে দোহাই দেয়া ইসলাম বিরোধী কাজ। ফলে যখন কিছু সংখ্যক মানুষ কোরআন ও সহীহ হাদীসের সাধ্যমত বিদ্যাঅর্জন করে সমাজে তা প্রচার শুরু করল তখন মানুষ মনে করে এ আবার কি প্রচার শুরু করেছে? এটা তো কোনদিন শুনিনি। এ কারনে তারা কোরআন ও সহীহ হাদীসের কথাকে মেনে নিতে পারেনি। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক জ্ঞানবান লোক, যারা কোরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করতে চায় তারা ঐ প্রচারিত কথাকে পরীক্ষা করে গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ ও বেশীরভাগ লোকই তাদের পীর , দরবেশ, নির্দিষ্ট আলেম এবং বাপ দাদার দোহাই দিয়ে থাকে। তারা বলে অমুক পীর অমুক আলেম কি কোরআন জানে না? তারা কি বুঝে না? আবার অনেকেই বলে আমাদের বাপ দাদারা এটা করে আসছে তাই আমরাও করি এবং করে যাব। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম পীর , দরবেশ , বাপ দাদার দোহাই প্রত্যাখ্যান করেছে। মুমিন মুসলিম ব্যাক্তির দলীল নির্দিষ্ট আলেম বা বাপ দাদা নয় , বরং তাদের দলীল পবিত্র আল কোরআন ও সহীহ হাদীস। যখন কোন ব্যাক্তি বা আলেম কোন মাসায়ালা প্রচার করে তখন তা কোরআন ও সহীহ হাদীসের সহিত পরীক্ষা করে সঠিক হলে গ্রহণ করা এবং সঠিক না হলে পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যাক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
ü যখন তাদের (মানুষদের) বলা হয়ঃ তোমরা তা অনুসরণ কর যা আল্লাহ নাযিল করেছেন। তখন তারা বলেঃ কখনো না , বরং আমরা আমাদের বাপ দাদাদের যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি যদিও তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞানই রাখত না এবং হেদায়াত প্রাপ্তও ছিল না অর্থাৎ সঠিক পথ প্রাপ্তও ছিল না। ( সূরা নং ০২ , সূরা বাকারা , আয়াত নং ১৭০ )
যে সমাজে আল্লাহর বিধান এবং তার রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসের প্রচার প্রসার এবং আমল নেই বরং যে সমাজে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের পরিবর্তে বিদআত চালু হয়ে আসছে বহু যুগ থেকে, সে সমাজে যদি কেউ কোরআন ও সহীহ হাদীসের প্রচার করে তাহলে জাহেল , অজ্ঞ আলেম বা ভন্ড পীর দ্বারা এক বিশাল আওয়াজ শুনা যাবে যে, সেই কবে থেকে বাপ দাদা পূর্ব পুরুষের আমল হতে অমুক অমুক কাজ করে আসছি , আর এত হাজার হাজার মাদ্রাসা ও আলেমরা এসব কাজ করছে ও প্রচার করছে তারা কি কিছু বুঝে না। তাদের উত্তর আল্লাহ কোরআনে এভাবে দিয়েছেঃ
ü আর যখন তাদের (মানুষদের) বলা হয় “ তোমরা এস আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেদিকে এবং রাসুলের দিকে ”। তখন তারা বলে , “ আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট যার উপর আমরা আমাদের বাপ দাদা বা পূর্ব পুরুষদের পেয়েছি ”। তবে কি যদিও তাদের পূর্ব পুরুষেরা কোন জ্ঞানই রাখে না এবং হেদায়াত প্রাপ্ত না হয় , তবুও কি তারা তাই করবে? ( সূরা নং ০৫ , সূরা মায়িদাহ , আয়াত নং ১০৪ )
ü আল্লাহ বলবেন – তোমরা দোজখে প্রবেশ কর জ্বিন ও মানুষের ঐসব দলের সাথে যারা তোমাদের পূর্বে (অর্থাৎ পূর্ব পুরুষেরা বা বাপ দাদারা) গত হয়েছে। যখনি কোন দল প্রবেশ করবে , তখনি অন্য দলের উপর লা’নত করবে। তখন পরবর্তী (অর্থাৎ সন্তানেরা) লোকেরা পূর্ববর্তী (অর্থাৎ বাপ – দাদা) লোকদের সম্বন্ধে বলবে – “ হে আমাদের রব ! এরাই (অর্থাৎ বাপ দাদারা) আমাদের গোমরাহ করেছিল , সুতরাং এদের দোজখের দ্বিগুণ আযাব দিন ”। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুণ , কিন্তু তোমরা তা জান না। ( সূরা নং ০৭ , সূরা আ’রাফ , আয়াত নং ৩৮ )
ü আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা তার অনুসরণ কর যা আল্লাহ নাযিল করেছেন , তখন তারা বলে , বরং আমরা তো তার অনুসরণ করব , যার উপর আমাদের বাপ দাদাদের পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকতে থাকে, তবুও কি? ( ৩১ নং সূরা লোকমান , আয়াত নং ২১ )
প্রিয় পাঠক ! বাপ দাদার দোহাই এর চাইতে যদি উত্তম জিনিষ আপনাদের নিকট দেয়া হয়, তবুও কি আপনারা বাপ দাদার দোহাই দিবেন। অর্থাৎ আপনারা যে মাযহাবের ও বাপ দাদাদের ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মাসায়েল অনুযায়ী শিরক ও বিদ’আতের মধ্যে হাবু ডুবু খাচ্ছেন এমন মুহূর্তে যদি আপনাদের সম্মুখে পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস পেশ করা হয় তাহলেও কি আপনারা বাপ দাদার নীতি অনুযায়ী চলবেন? আল্লাহ তো বলেনঃ
ü তোমরা তোমাদের বাপ – দাদাকে যে নীতির অনুসারী পেয়েছ তার অপেক্ষা অধিক উত্তম হেদায়েতের বিধান যদি আমি তোমাদের নিকট নিয়ে উপস্থিত হয়ে থাকি তা হলেও কি তোমরা সে বাপ দাদারই অনুসরণ করতে থাকবে? ( সূরা নং ৪৩ , সূরা যুখরুফ , আয়াত নং ২৪ )
প্রিয় পাঠক ! এতগুলো দলীল কোরআন থেকে পেশ করার পরেও যদি আপনারা মাযহাবের নির্দিষ্ট আলেম বা বাপ দাদাদের দোহাই দিয়ে কোরআন ও সহীহ হাদীসকে বাদ দিয়ে মাযহাব রক্ষার লক্ষ্যে শিরক ও বিদ’আতের অনুসরণ করতে থাকেন তাহলে আমার শুধু আফসোস করা ছাড়া করার আর কিছুই নেই। আমার দায়িত্ব হলো কেবল মাত্র আপনাদের নিকট পৌছে দেয়া, মানা না মানা আপনাদের কাজ। তাই আপনাদের নিকট কোরআন থেকে জানিয়ে দিলাম যে, মাযহাবের নির্দিষ্ট আলেম বা বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণ করা মুশরিকদের কাজ। অত;এব আপনারা নির্দিষ্ট মাযহাব বা বাপ দাদার আমলের যে সব শিরক ও বিদ’আত অনুসরণ করছেন, তা পরিহার করে যদি কোরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল না করেন তাহলে আপনারা যে আল্লাহর সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থাৎ সহজ সরল সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে গোমরাহ ও ভ্রান্তির মধ্যে থাকবেন তাতে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ আপনাদের আমাদের সকলকে সঠিক পথ বুঝার ও মানার তওফিক দান করুন। আমীন।।
ইসলামের সঠিক পথ বা সহীহ আমল করার একমাত্র উপায়
আল্লাহ্ নিজেদের মত খেয়াল খুশির অনুসরন এবং ধারনা পোষণ করতে নিষেধ করিতেছেন বিশেষ করে ইসলামের মধ্যে এবং কেউ ইসলাম বা এর আইন কানুন নিয়ে কেউ কিছু বলিলে সে যত বড় আলেমই হোক না কেন, তার কাছে প্রমাণ চাওয়ার জন্য নির্দেশ এবং উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা এও বলে দিচ্ছেন যে সেই প্রমানের সনদ থাকতে হবে এবং ভিত্তি হতে হবে কোরআন এবং সহীহ হাদীস, এই দুটো ছাড়া অন্য কিছু সেই প্রমানের ভিত্তি হলে তা গণ্য করা হবে না, এমনকি কোরআন এবং সহীহ হাদীস ছাড়া কোন মানুষ দ্বারা রচিত কিতাব গ্রহণযোগ্য হবে না যদিও সেই কিতাবের লেখক পৃথিবীর যত বড় ইমাম বা আলেমই হোক না কেন। তখন সেই আলেম প্রমাণ দেখাতে না পারিলে আল্লাহ্ তার সেই কথাকে বর্জন করিতে বলিতেছে এবং যেই পর্যন্ত প্রমাণ পেশ করিতে না পারিবে সেই পর্যন্ত আল্লাহ্ তায়ালা তার কথা কে পরিহার করিতে বলিতেছে এবং এও সতর্ক করিয়ে দিতেছে, যে তার এই আইন অমান্য করিবে সে আল্লাহ্র সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থাৎ তার সঠিক সহজ-সরল পথ থেকে বের হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্র হেদায়ত থেকে বঞ্চিত হবে ও জাহান্নামী হবে। এর প্রমাণ নিচের উল্লেখিত আয়াত থেকেই পাওয়া যায়। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে অধিকাংশ মানুষই কোন আলেম বা মানুষের কাছ থেকে কোন ফতোয়া বা মাসআলা চাওয়ার সময় কোন সনদ বা প্রমাণ চায় না। তার থেকে বড় কস্টের বিষয় এই যে তারা কেউ কেউ আলেমদের কাছে সনদ বা প্রমাণ চাইতে ভয় পায় কেউবা লজ্জা পায় কিন্তু এর ফলে যে আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে এতে তাদের বিন্দুমাত্র ভয় বা লজ্জা বোধ হয় না। এর ফলে অনেক আলেম বা মানুষেরা ফতোয়া বা মাসআলা দেয়ার সময় কোরআন এবং সহীহ হাদীস না দেখে অজ্ঞতাবশত কোন আলেম বা ইমামের অন্ধ অনুসরন করে এমন কিছু ফতোয়া বা মাসআলা প্রদান করিতেছেন যা অনেক সময় কোরআন এবং সহীহ হাদীস বিরোধী, এমনকি সেটা অনেক সময় শিরক করার পর্যায় চলে যায় কিন্তু সাধারন মানুষ তা কখনোই জানতে ও বুঝতে পারে না এবং তারাও সেই আলেম বা মানুষের অন্ধ অনুসরন করার ফলে সত্যি টা জানতে পারে না এবং ভুল তথ্য নিয়ে ভুল আমল করিতে থাকে এবং সেটাকেই আল্লাহ্র আইন মেনে থাকে এবং ভুলটা প্রচার করিতে থাকে এবং বংশগত ভাবে প্রচার হতে থাকে। তারা মনে করে আলেমরা কি আর না জেনেই কোন মাসআলা দিবে কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সাঃ) ছাড়া আর কেউই নির্ভুল বা নিস্পাপ মানুষ নয়, তাদের দ্বারা ও অজ্ঞতাবশত ভুল হয়ে যেতে পারে। কারন ইমাম আবু দাউদ বলেন “ এমন কোন লোক নেই যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য কেবল রাসূল (সাঃ) ছাড়া ” – (মাসাইলে ইমাম আহমদঃ২৭৬)।
সুতরাং আমাদেরকে সঠিক পথ পেতে হলে পবিত্র কোরআনের নিচের আয়াতগুলোর আনুসরন করতে হবে।
ü হে মুহাম্মদ আপনি বলুনঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে প্রমাণ নিয়ে এস। ( সূরা বাকারা, আয়াত নং- ১১১ এবং সূরা নামল, আয়াত নং- ৬৪ )
ü হে মানুষ! অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ থেকে প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল আলো (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি। ( সূরা নিসা, আয়াত নং- ১৭৪ )
ü হে মুহাম্মদ আপনি তাদের (মানুষের) মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদানুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেরে তাদের খেয়াল খুশির অনুসরন করবেন না আর তাদের সমন্ধে সতর্ক থাকবেন যাতে তারা আপনাকে বিচ্যুত না করতে পারে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার কোন কিছু থেকে…… আর মানুষের মধ্যে তো অনেকেই নাফরমান। ( সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং- ৪৮ ও ৪৯)
ü হে মুহাম্মদ আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের খেয়াল খুশির অনুসরন করি না। করলে আমি বিপথগামী হয়ে যাব এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের মধ্যে থাকব না। (সূরা আন”আম, আয়াত নং- ৫৬)
ü নিশ্চয় আমি বিশদভাবে বর্ণনা করেছি প্রমাণ সমূহ জ্ঞানী লোকদের জন্য এবং তাদের জন্য যারা বুঝে। ( সূরা আন’আম, আয়াত নং- ৯৭ , ৯৮ )
ü অবশ্যই এসে গেছে তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ থেকে স্পষ্ট প্রমানসমূহ। অতএব যে কেউ তা দেখবে সে তো নিজেরই উপকার করবে যে না দেখে অন্ধ থাকবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। এমনিভাবে আমি প্রমাণসমূহ বিভিন্ন ধারায় বর্ণনা করি এবং যাতে তারা বলেঃ তুমি তো পড়ে নিয়েছ এবং যাতে আমি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দেই তাদের জন্য, যারা জানে। (সূরা আন”আম, আয়াত নং- ১০৪ , ১০৫ )
ü হে মুহাম্মদ আপনি বলুনঃ আছে কি তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ? যদি থাকে তবে তা আমার কাছে পেশ কর। তোমরা তো শুধু অনুমানের পেছনেই চলছ এবং কেবল আন্দাজ করে কথা বলছ। (সূরা আন”আম, আয়াত নং- ১৪৮)
ü তবে কি তোমরা আমার সঙ্গে এমন বিষয়ে বিতর্ক করছ যা তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা নির্দিষ্ট করে নিয়েছ? অথচ আল্লাহ্ এদের সমন্ধে কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। আল্লাহ্ ছাড়া কারও বিধান দেয়ার অধিকার নেই… কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। ( সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ৪০ ও সূরা আ’রাফ, আয়াত নং- ৭১ )
ü নিশ্চয় এরা যে কাজে নিয়োজিত রয়েছে তা তো ধ্বংস হবে এবং তারা যা কিছু করছে তা ভিত্তিহীন। ( সূরা আ’রাফ, আয়াত নং- ১৩৯ )
ü তোমাদের কাছে কোন সনদ নেই এই দাবীর পক্ষে। তোমরা কি আল্লাহ্ সমন্ধে এমন কথা বলছ যা তোমরা জান না? ( সূরা ইউনূস, আয়াত নং- ৬৮ )
ü এরা (মানুষরা) এদের সম্পর্কে কোন প্রকাশ্য প্রমাণ কেন উপস্থিত করে না? ( সূরা কাহফ, আয়াত নং- ১৫ )
ü হে মুহাম্মদ আপনি বলুনঃ তোমরা তোমাদের সপক্ষে প্রমাণ উপস্থিত কর। ….. কিন্তু তাদের অধিকাংশ মানুষই সত্য জানে না, তাই তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ( সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং- ২৪ )
ü কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহ্ সমন্ধে কোন জ্ঞান ছাড়া, কোন প্রমাণ ছাড়া ও কোন উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই কথা বলে। …… তাকে আস্বাদন করাব দোযখের দহন যন্ত্রনা। ( সূরা আল হাজ্জ, আয়াত নং- ৮ ও ৯ এবং সূরা লুকমান, আয়াত নং- ২০ )
ü জালিমরা বিনা প্রমানে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরন করে থাকে। ( সূরা রূম, আয়াত নং- ২৯ )
ü ধ্বংস হোক ভিত্তিহীন উক্তিকারীরা ( সূরা যারিয়াত , আয়াত নং – ১০ )
এখন সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে যে আমাদের এই দেশে ইসলামের এই আইনটা তো বেশীর ভাগ মানুষই প্রয়োগ করিতেছে না, তখন তারা আজুহাত দেখিয়ে বলে কত জন মানুষ কোন মাসআলা চাওয়ার সময় প্রমাণ চায় ? যেহেতু এতগুলো মানুষ এবং আলেমরা মাসআলা দেয়া নেয়া করার সময় প্রমাণ দেয় না তাই ইহা খুব একটা প্রয়োজন নেই কারন এতগুলো মানুষ তো আর ভুল হতে পারে না কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এর বিপরীত কথা বলিতেছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই যে জ্ঞানহীন, অকৃতজ্ঞ, অজ্ঞ, মূর্খ, নাফরমান, কাফির, বিশ্বাসঘাতক, সীমালঙ্ঘনকারী, ফাসেক এবং অল্প সংখ্যক মানুষই যে ঈমানদার, মুমিন, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান এবং সত্যের পথে পরিচালনাকারী তা আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমেই আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন সুতরাং অধিকাংশ মানুষদের দেখে ভুলটা আঁকড়ে ধরে রাখার কোন মানে নেই। অধিকাংশ মানুষদের কে না দেখে আমাদেরকে কোরআন এবং সহীহ হাদীস দেখতে হবে। এর প্রমাণ কোরআনের নিচের আয়াত গুলোর মধ্যেই পাওয়া যায়।
ü আপনি যদি দুনিয়ার বেশীর ভাগ অর্থাৎ অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিপথগামী করে দিবে। তারা তো কেবল ধারনার অনুসরন করে এবং মনগড়া কথা বলে। ( সূরা আন’আম, আয়াত নং – ১১৬ )
ü আপনি (আল্লাহ্) যদি আমাকে (ইবলিশ) কেয়ামতের দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন তাহলে আমি মানুষদের মধ্যে অল্প সংখ্যক ছাড়া তার বেশীর ভাগ বংশধরদেরকে আমার বশীভুত করে ফেলব। ( সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং- ৬২)
ü তাদের (মানুষরা) অধিকাংশই অনুমানের অনুসরন করে চলে। সত্যের ব্যাপারে অনুমান কোন কাজেই আসে না। ( সূরা ইউনূসঃ ৩৬ )
ü আপনি যতই আকাঙ্ক্ষা করেন না কেন, অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনার নয়। ( সূরা ইউসূফঃ ১০৩ )
ü তাদের (মানুষরা) খুব কম সংখ্যকই ঈমান আনে। ( সূরা বাকারা, আয়াত নং- ৮৮ ; সূরা নিসাঃ ৪৬ ও ১৫৫ )
ü অধিকাংশ মানুষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করে না। ( সূরা বাকারাঃ ২৪৩ ; সূরা আ’রাফঃ ১৭ ; সূরা ইউনূসঃ ৬০ )
ü তুমি সর্বদা তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সবাইকে দেখতে পাবে কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতা করতে। ( সূরা মায়িদাহঃ ১৩ )
ü মানুষদের মধ্যে অনেকেই দুনিয়ায় সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল। ( সূরা মায়িদাহঃ ৩২ )
ü তোমাদের (মানুষদের) অধিকাংশই ফাসেক। ( সূরা মায়িদাহঃ ৫৯ ও ৮১ ; সূরা তওবাঃ ৮ )
ü তাদের (মানুষরা) অধিকাংশই নিকৃষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। ( সূরা মায়িদাহঃ ৬৬ )
ü তাদের (মানুষরা) অধিকাংশই কোন জ্ঞান রাখে না। ( সূরা মায়িদাহঃ ১০৩ )
ü তাদের (মানুষরা) অধিকাংশই তা জানে না। ( সূরা আন’আমঃ ৩৭ ; সূরা আ’রাফঃ ১৩১ , ১৮৭ ; সূরা আনফালঃ ৩৪ ; সূরা ইউনূসঃ ৫৫ ; সূরা ইঊসূফঃ ৪০ ও ৬৮ ; সূরা নাহলঃ ৩৮ , ৭৫ , ১০১ )
ü তাদের (মানুষরা) অধিকাংশই অজ্ঞ – মূর্খ। ( সূরা আন’আমঃ ১১১ )
ü আমি তাদের অধিকাংশই লোককেই ওয়াদা পালনকারী পাইনি বরং তাদের অধিকাংশকে আমি নাফরমান পেয়েছি। ( সূরা আ’রাফঃ ১০২ ; সূরা মায়িদাহঃ ৪৯)
(সমাপ্ত)
অনিক ভাই, ধন্যবাদের সবটুকু রইলো। আরও অধিক পোষ্টের আশা করিতেছি