ইসলাম শরীয়াহ অনুসরণের মূলনীতি
লেখক: মাহবুব হোসেন অনিক ,
তরুণ ইসলামিক গবেষক ও দাঈ।
Email: irl.anik@yahoo.com
ইসলাম অনুসরনের প্রকৃত মূলনীতি
ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র বৈধ জীবন বিধান। ইসলামী জীবন বিধানকে ইসলামী শরীয়াহ বলে। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য একমাত্র সমাধান হলো ইসলামী শরীয়াহ। ইসলামী শরীয়াহ বলতে ইসলামের বিধিবিধানকে বুঝায় । ইসলামী শরীয়াহ অনুসরণের প্রকৃত মূলনীতি হল – সর্বপ্রথম অনুসরণের বিষয় হবে আল্লাহ্র কিতাব, মানে পবিত্র আল – কোরআন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ [٧:٣]
তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কোরআনকে) তার অনুসরণ কর, তাকে (কোরআনকে) ছেড়ে অন্য কোন মিত্র বা আওলিয়ার অনুসরণ করো না। (সূরা আরাফ, আয়াত নং- ০৩)
এছাড়া অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইসলাম তথা আল্লাহর পথ অনুসরণ করতে এবং অন্য পথ অবলম্বন না করতে বলেছেন।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [٦:١٥٣]
“এটিই (অর্থাৎ এ কোরআনের অনুসরণই) আমার (আল্লাহর) সরল-সহজ পথ। সুতরাং তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করে চল, এটা ছাড়া অন্য কোন পথে চলো না। চললে সেসব পথ তোমাদের তার (আল্লাহর) পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। তিনি (আল্লাহ) এ নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা সাবধান হও”। (সূরা আনআম, আয়াত নং- ১৫৩)
আল্লাহ তাআলা ইসলামী বিধানকে পূর্ণতা দান করেছেন। মানবজীবনের সকল প্রয়োজনীয় বিধান ইসলামে অন্তভূর্ক করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা তার কিতাবে বান্দার প্রয়োজনীয় সকল বিধানই পূর্ণ করে দিয়েছেন। তিনি কুরআনে কোন কিছুই উল্লেখ করতে বাকি রাখেন নি। তিনি বলেছেনঃ
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُم ۚ مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ [٦:٣٨]
আমি কোন বিষয়ই কিতাবে (কোরআনে) লিখতে বাদ রাখিনি। (সূরা আনআম, আয়াত নং- ৩৮)
পরিপূর্ণ দ্বীনে ঘোষণা বিদায় হজ্জের দিন আল্লাহ তাআলা নবী (সা)-এর মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। সূরা মায়িদাহ-তে আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ (অর্থাৎ বিদায় হজ্জের দিন) আমি (আল্লাহ) তোমাদের (সকল মানুষের) জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্নাঙ্গ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন (জীবনবিধান) হিসেবে মনোনীত করেছি। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং- ০৩)
কোরআন মাজিদের পর অনুসরণের দ্বিতীয় বিষয় হবে আল্লাহ্র সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাহ বা হাদীস। কারন তিনিই হলেন কোরআনের সকল বিষয়ের একমাত্র আদর্শ। আল্লাহ্ সকল মানুষকে তার অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন কারন মানুষের সঠিক পথের ব্যাপারে আল্লাহ্ তার রাসুলকে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনঃ
ü অবশ্যই আল্লাহর রাসুলের (জীবনের) মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াত নং- ২১)
তিনি আরো বলেন,
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [٧:١٥٨]
তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তার প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে নিজেই আল্লাহ এবং তার সকল বানীকে মেনে চলে। তোমরা তারই অনুসরণ করো যাতে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পার। (সূরা আরাফ, আয়াত নং- ১৫৮)
নীতির প্রশ্নে বা কোন আইন বা নিয়মের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ ও তার রাসুলের ফয়সালাই হবে চূড়ান্ত ফয়সালা। আল্লাহ্ বলেছেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]
কোন মুমিন পুরুষ ও কোন মুমিন মহিলার এ অধিকার নেই যে, আল্লাহ ও তার রাসুল যখন কোন বিষয়ে ফয়সালা করে দেন, তখন সে নিজেই সেই ব্যাপারে কোন ফয়সালা করার এখতিয়ার রাখবে। ( সূরা আহযাব, আয়াত নং – ৩৬)
মতভেদ বা বিবাদপূর্ণ বিষয়ে রাসূল (সা)কে চূড়ান্ত ফায়াসালাকারী ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা কসম করে বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا [٤:٣٥]
তোমার রবের কসম, তারা (মানুষেরা) যতদিন পর্যন্ত তোমাকে (মুহাম্মদ সাঃ কে) তাদের বিবাদ-মতভেদে চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হিসেবে মানবে না ; অতঃপর তুমি (মুহাম্মদ সাঃ) যা ফয়সালা করে দিয়েছ তে মেনে নিতে অন্তরে কিছুমাত্র কুণ্ঠাবোধ না করে এবং পরিপূর্ণভাবে প্রশান্ত চিত্তে তা মেনে নিবে না , ততদিন পর্যন্ত তারা (মানুষেরা) মুমিন হতে পারবে না। (সূরা নিসা , আয়াত নং – ৬৫)
আল্লাহ তাআলা যা আদেশ নিষেধ করেছেন সেগুলোর গুরুত্ব আর রাসূল (সা) যা নির্দেশদেন দুটোর গুরুত্ব একই। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
রাসুল তোমাদেরকে যা কিছু প্রদান করেন (অর্থাৎ যে নির্দেশ দেন) তা তোমরা গ্রহণ করো (অর্থাৎ পালন করো)। আর যা হতে তিনি তোমাদেরকে বিরত রাখেন তা হতে তোমরা বিরত থাক। (সূরা হাশর , আয়াত নং – ৭)
রাসূল (সা) কে ভালাবাসা যে আল্লাহর প্রতিই ভালোবাসা সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣:٣١]
[ হে রাসুল! লোকদের ] বলঃ তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্কে ভালোবাসো (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চাও) তাহলে আমাকেই (রাসুলকেই) অনুসরণ করো ; তাহলে আল্লাহ্ও তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং – ৩১)
সুতরাং শরীয়াহ আমলের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আল্লাহর কোরআন ও তার রাসুলের সুন্নাহ বা সহীহ হাদীসের অনুসরণ করতে হবে সম্পূর্ণ এখলাস বা নিস্থার সাথে। তৃতীয় ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগনকে এ অনুসরণের ক্ষেত্রে সামান্যতম হকদারও মনে করার সুযোগ নেই। যদি মনে করা হয় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক। কোরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ ও আনুগত্যই হলো ঈমান ও তাওহীদের দাবি। এ বিষয়ে ভিন্নমতের কোন অবকাশ নেই।
শর’য়ী আহকামের মধ্যে অস্পষ্ট বিষয়ে করনীয় সমূহ
(১) কোরআন-ই হবে কোরআনের ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ কোরআনের কোন আয়াত বা শব্দের অর্থ যদি কারো কাছে স্পষ্টভাবে বুঝা না যায়, তাহলে দেখতে হবে অন্য কোন আয়াতে এর অর্থ কি বুঝানো হয়েছে কারন কোরআনের কোন কোন আয়াত অন্য কোন আয়াতেরই সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা। যেমন সূরা ফাতিহার ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে – “ আমাদেরকে সহজ-সরল পথ দেখাও ”। কোরআনের এ আয়াতের প্রেক্ষিতে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সহজ-সরল পথ কি বা কোনটা? তাহলে সূরা আন’আমের ১৫৩ নং আয়াত পড়লেই এর উত্তর পাওয়া যাবে । সেখানে বলা হয়েছেঃ “ এটিই (অর্থাৎ এ কোরআনের অনুসরণই) আমার (আল্লাহর) সরল-সহজ পথ। সুতরাং তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করে চল, এটা ছাড়া অন্য কোন পথে চলো না। চললে সেসব পথ তোমাদের তার (আল্লাহর) পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। তিনি (আল্লাহ) এ নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা সাবধান হও ”। এছারাও সূরা ইয়াসীন এর ৬১ নং আয়াতেও এর উত্তর আছে, বলা হয়েছেঃ “একমাত্র আমারই আনুগত্য করো (অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মানে কোরআন মেনে চলো)। এটাই (তোমাদের জন্য) একমাত্র সহজ-সরল পথ।
(২) সহীহ হাদীসই কোরআনের মুল ভাষ্যঃ কোরআনের কোন বিষয় যদি অস্পষ্ট কিংবা বোধগম্য না হয় তাহলে দেখতে হবে রাসুল (সাঃ) এর হাদীসে তা কি বলা হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
জেনে রেখো, আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে অনুরূপ আরও একটি। জেনে রেখো, আমাকে কোরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে অনুরূপ আরও একটি অর্থাৎ আমার সুন্নাহ বা হাদীস……। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৭৩০৬ ; আবু দাউদ , অধ্যায়ঃ কিতাবুস সুন্নাহ)
সুতরাং সহীহ হাদীস কোরআনেরই পরোক্ষ ভাষ্য। যেমন সূরা বাকারার ১১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে “নামায কায়েম কর”। কোরআনে নামায কায়েম করতে বলা হয়েছে কিন্তু কিভাবে কায়েম করতে হবে বা পড়তে হবে তা বলা হয়নি। এর পদ্ধতি বলা হয়েছে রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসে। অর্থাৎ নামায কোন সময় পড়তে হবে, কিভাবে শুরু ও শেষ করতে হবে এবং কোন ওয়াক্তে কত রাকায়াত নামায পড়তে হবে তার সম্পূর্ণ বিবরণ পেশ করা হয়েছে হাদীসে। তাই হাদীসই কোরআনের পরোক্ষ ভাষ্য ও ব্যাখ্যা। তবে রাসুল (সাঃ) এর হাদীস গ্রহনের ক্ষেত্রে এমন কিছু উসুল বা মূলনীতি রয়েছে যা অবশ্যই মেনে চলতে হবে তা না হলে সঠিক ভাবে আমল করা যাবে না এবং উম্মতদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হবে।
তাই আমাদেরকে অবশ্যই এই মূলনীতিগুলো মেনে চলতে হবে। নিচে পর্যায়ক্রমে এর বর্ণনা করা হল।
একঃ রাসুল (সাঃ) এর ফে’লী অর্থাৎ আমলী হাদীস থেকে কাওলী অর্থাৎ ফরমানী হাদীসকে অগ্রাধিকার বা প্রাধান্য দিতে হবে। অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর কাজ থেকে তার নির্দেশকে অগ্রাধিকার বা প্রাধান্য দিতে হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আমি যখন তোমাদেরকে দ্বীন সম্পর্কে কোন আদেশ করি তখন তোমরা তা আঁকড়ে ধরো। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলিল আম্বিয়া)
দুইঃ রাসুল (সাঃ) এর কোন আমল যদি বর্ণনাকারী সহীহ ও যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনক) হওয়ার মধ্যে পার্থক্য বিরাজ করে তাহলে অবশ্যই সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হবে। সহীহ হাদীস ছেড়ে কোন ভাবেই যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনক) হাদীসের উপর আমল করা যাবে না। সুতরাং কোন যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনক) হাদীস শরীয়তের কোন দলীল হবে না। আর কোন মওযু বা জাল হাদীস দলীল হওয়ার তো প্রশ্নই উঠেনা। পৃথিবীর সকল মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে একমত যে হাদীসের নামে মওযু বা জাল হাদীস বর্ণনা করা হারাম। আমরা যখনই কোন হাদীস বলব, পড়ব বা আমল করবো, আমাদের তখন হাদীসের সনদ অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে অর্থাৎ হাদীসটার সনদ কোন ধরনের, সহীহ (আসল ও শক্তিশালী) , যঈফ (দুর্বল/সন্দেহজনক) নাকি মওযু বা জাল হাদীস এবং সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সহীহ হাদীস এর উপর আমল করতে হবে।
তিনঃ কোন বিষয়ে যদি মারফু হাদীস অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর হাদীসের সাথে মাওকুফ হাদীস অর্থাৎ সাহাবীর কথা বিরোধ হয়, তাহলে ঐ বিষয়ে মারফু হাদীসকে অগ্রাধিকার বা প্রাধান্য দিতে হবে। উল্লেখ্য, সাহাবীদের কাজ ও সমর্থনকেও সাধারণত হাদীস বলা হয়। এ হাদীসকেই বলা হয় মাওকুফ হাদীস বা আছার। মূলত যে বিষয়ে রাসুল (সাঃ) এর কোন হাদীস বিদ্যমান নেই সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা হিসেবে সাহাবীর হাদীসও দলীল হয় কিন্তু সেটা তখনি হবে যখন সেই বিষয়ে রাসুল (সাঃ) এর কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে না।
চারঃ কোন বিষয়ে যদি কারো কাছে রাসুল (সাঃ) এর কোন হাদীসের মর্ম যদি অস্পষ্ট কিংবা বোধগম্য না হয়, তাহলে ঐ বিষয়ে সাহাবাগনরা কি আমল কিভাবে করেছেন তা দেখতে হবে। কারন,
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ভবিষ্যতে তোমরা যারা জীবিত থাকবে, তারা বহু বিভেদ-মতভেদ দেখবে। তোমরা ইসলামে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে দূরে থাকবে কারন তা গোমরাহী। তোমাদের কেউ সে যুগ পেলে সে যেন আমার সুন্নাতে ও হেদায়াত প্রাপ্ত খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতে দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকবে। তোমরা এসব সুন্নাতকে চোয়ালের দাতের সাহায্যে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর কেননা দ্বীনের (ইসলামের) মাঝে নতুন কিছু আবিষ্কার করা অর্থাৎ (ইসলামের মধ্যে) বিদআত সবচেয়ে মন্দকাজ এবং (ইসলামের মধ্যে) প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।। (বিদায়ী হজ্জের ভাষণ ; তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং – ২৬১৩, পৃঃ ৭৬৫ ; আদ দারেমী – পৃঃ ৮১, প্রকাঃমিনা ; একই প্রসঙ্গে- মুসনাদে আহমাদ, খন্ড-১, অধ্যায়- ৫, পরিচ্ছেদ- ২, হাদীস নং- ৭, পৃঃ- ১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ; আবূ দাউদ , অধ্যায়ঃ কিতাবুস সুন্নাহ ; ইবনে মাজাহ ; ইবনে হিব্বান ; সুনানে হাকিম)
তবে এ জাতীয় আমলের ক্ষেত্রে যদি সাহাবীদের মধ্যে সংখ্যায় বেশী-কম হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যাধিক্য সাহাবীদের আমলই দলীল হবে।
পাচঃ একই বিষয়ে যদি রাসুল (সাঃ) এর দু ধরনের আমল পাওয়া যায় তাহলে তার শেষ আমলটিই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটি সহীহ হাদীস এবং অপরটি যঈফ হাদীস হলে হবে না। এই নিয়ম তখনি প্রযোজ্য হবে যখন দুটি সহীহ হাদীসের আমল এর দু ধরনের পাওয়া যায় তাহলে তার শেষ আমলটিই গ্রহণ করতে হবে। এছারাও রাসুল (সাঃ) এর কোন হাদীস অপর কোন সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
(চলবে)