মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা

মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা

 

প্রশ্ন :

মীলাদুন্নবীর দিন সিয়াম পালন করা কি বৈধ, যেমন সহীহ মুসলিম, নাসায়ী ও আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন : এ দিন আমি জন্ম গ্রহণ করছি… এ হাদীসের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তেবায় কোন ব্যক্তির নিজের জন্ম দিনে সিয়াম পালন করা কি বৈধ ? আশা করছি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

 

উত্তর :

আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :

তিরমিযীতে ইমাম মুসলিম আবু কাতাদা আল-আনসারী থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন : “এ দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমার উপর ওহি নাযিল করা হয়েছে।” মুসলিম : (১১৬২) ইমাম তিরমিযি আবু হুরায়রা -রাদিআল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, আমি চাই সিয়াম অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।” তিনি হাদিসটি হাসান বলেছেন। আল-বানি সহীহ তিরমিযীতে হাদিসটি সহীহ বলেছেন।

উপরের বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মের শোকর আদায় কল্পে সোমবার দিন সিয়াম পালন করেছেন। আবার এ দিনের ফজিলতের কারণেও তিনি সিয়াম পালন করেছেন, যেমন এ দিনেই তার উপর ওহি নাযিল করা হয়েছে এবং দিনেই বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, তাই তিনি পছন্দ করেন, তার আমল সিয়াম অবস্থায় পেশ করা হোক। অতএব সোমবার দিন সিয়াম পালন করার কয়েকটি কারণের একটি কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম।

এ হিসেবে কেউ যদি সোমবার দিন সিয়াম পালন করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করেছেন, এতে আল্লাহর মাগফেরাত কামনা করে, আল্লাহর নি‘আমতের শোকর আদায় ইচ্ছা করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও নবুওয়তের নি‘আমত এবং সে এ দিনে মাগফেরাত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা করে, তাহলে ভাল, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও বটে। কিন্তু এর জন্য এ সপ্তাহ নয় অমুক সপ্তাহ, এ মাস নয় অমুক মাস নির্দিষ্ট করা যাবে না, বরং জীবনের প্রতি সোমবারেই সাধ্যমত সিয়াম পালন করার চেষ্টা করা।

তবে মীলাদুন্নবী উপলক্ষে বছরের শুধু একটি দিন সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করা বিদআত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত বিরোধী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন সিয়াম পালন করেছেন। হাদিসে এ দিনটিই নির্দিষ্ট। আর এ দিনটি বছরের প্রতি সপ্তাহে বিদ্যমান।

 

দ্বিতীয়ত :

বর্তমান মানুষেরা যে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করছে ও তার জন্য মাহফিলের আয়োজন করছে, এসব বিদআত ও নাজায়েজ। মুসলিমদের আনন্দ-উৎসবের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই।

 

এরপরও কোথায় মীলাদুন্নবী, যা প্রকৃত পক্ষেই নি‘আমত, সকল মানব জাতির জন্য রহমত, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : “আর আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” [সূরা আম্বিয়া : ১০৭] আর কোথায় অন্যান্য লোকের জন্ম ও মৃত্যু !? কোথায় ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম?! কোথায় ছিলেন তাদের পরবর্তী নেককার লোকেরা ?! এই আমাল থেকে ?! যদি নিজের জন্ম দিনের শোকর আদায় উপলক্ষে সিয়াম পালন করা বৈধ হতো, তাহলে অবশ্যই তারা তা পালন করতেন।

 

তাদের কারো থেকে প্রমাণিত নেই যে, সপ্তাহের কোন একদিন, অথবা মাসের কোন একদিন, অথবা বছরের কোন একদিন, অথবা নির্দিষ্ট কোন এক দিনকে তারা নিজের জন্ম দিন উপলক্ষে ঈদ পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত যদি অন্য কারো জন্ম দিন উপলক্ষে সিয়াম পালন করা সাওয়াবের কাজ হতো, তাহলে আমাদের পূর্বে তারাই এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, যারা অন্যান্য সকল কল্যাণে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তারা যেহেতু তা করেননি, এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, এসব আমল বিদআত, এর উপর আমল করা বৈধ নয়। আল্লাহ ভাল জানেন।

সমাপ্ত

সূত্র

প্রবন্ধটি ডাউনলোড করে পড়তে চাইলে

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan