আমাদের কাছে আসার গল্প

২০১২ সাল, সবে এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে অবসর সময় পার করছি। চার থেকে পাঁচ দিন যাবার পর রাতে খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। বাবা আর মা দুজন মিলে আমাকে ডেকে তাদের রুমে নিয়ে গেলেন, বাবা বললেন দেখ তুমি এতদিন পরীক্ষা দেওয়ায় অনেক ক্লান্ত আর মানসিক ভাবে খুবই টেনশানে ছিলা। আমরা চাই তুমি কয়েকদিন মোসাদ্দেক কে (মোসাদ্দেক আমার চাচাত ভাই + ক্লাসম্যাট + ক্লোজ ফ্রেন্ড) সাথে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসো। তাহলে তোমার মন ভাল থাকবে আর অনেক কিছু দেখবে আর জানবে।
রাতের সিদ্ধান্ত মত পরের দিন বিকেলে আমি আর মোসাদ্দেক কক্সবাজারের উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম। চিটাগাং, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন মিলে ৭ দিন থাকলাম। অনেক আনন্দ ফুর্তি করলাম, জীবনের সব একগুয়েমি ছেড়ে একান্তে নিজের মত করে দুই বন্ধু মিলে সাতদিন উপভোগ করলাম।

বাড়ি ফিরে আসার পর অনেক ক্লান্ত থাকায় ২ দিন বিশ্রামে ছিলাম। ২ দিন বিশ্রাম করার পর আমার বাবা মা, বড় চাচা এবং ফুফু মিলে আমাকে তাদের ঘরে ডাকলেন। ডেকে আমার ফুফু প্রথমে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে বাবা তুমিতো অনেক ভাল একটা ছেলে আমরা কখনো তোমার কাছে খারাপ কোন আচরন পাইনি, তাই সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি, কোন মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে নাকি?
আমি একটু অবাক হলাম, এ আবার কোন ধরনের প্রশ্ন? আমি কি করি না করি বা কোথাই যাই সব তো আপনাদের জানা। এই প্রশ্ন করা মানে আমাকে অপমান করা। এবার বাবা ফুফুর কথা কেড়ে নিয়ে বললেন দেখো বাবা যা বলার আমি সরাসরি তোমাকে বলি।
এখন যুগ অনেক খারাপ, সমাজ অনেক কলুষিত হয়ে গেছে। অশ্লীলতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আছে। তাই আমরা চাইনা তুমি এইসব অশ্লীলতার ধারে কাছেও যাও। তাই আমরা পারিবারিক ভাবে সবাই মিলে তোমাকে বিবাহ করানোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।
আমি তখন মনে হল আকাশ থেকে পড়লাম। এই সব কথা শুনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। আমি লজ্জায় রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আর তারা ও আমাকে ডাকলেন না। তারা চাচ্ছিল আমি একা একা চিন্তা করি। এই জন্য আর আমাকে ডাকে নাই।
তখনো শীত মৌসুম ছিল, এই শীতে ও আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম বার বার। আর মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা ভর করছিল। চিন্তায় সারা রাত ঘুমাইনি। এর মধ্যে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কে কল দিয়ে বিষয়টা জানালাম। তিনি আমার বন্ধুর মত ছিলেন। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন যে তোমাকে না শিখিয়েছিলাম ইস্তিখারার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। সেটা এখন কাজে লাগাও। আজ রাতে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সিদ্ধান্ত চাইবা। আশাকরি আল্লাহ তোমার জন্য উত্তম কিছু রেখেছেন। ইমাম সাহেবের পরামর্শ মতে সেই রাতে ইস্তিখারার নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে চাইলাম। সকালে ফজর পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাংলো তখন মনে অনেক প্রশান্তি অনুভব করলাম। আর মাথায় কাজ করছে যে বাবা মা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাই মেনে নিব। যদি ও আমার বিবাহ সম্পর্কে কোন আইডিয়া নেই বা আমি প্রস্তুত ও নই।
বিকাল বেলা গ্রামের মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ ছিল, সেখানে ক্রিকেট খেলে বাসায় এলাম। হালকা নাস্তা সেরে নিজে থেকেই বাবার সাথে দেখা করলাম। এবং কোন সংকোচ না রেখেই বাবাকে নিজের মতামত জানিয়ে দিলাম যে আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমি রাজি।
বিয়ে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত সেটা লক্ষ করলাম এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় থেকেই, বয়সে কিশোর থাকায় নিজেকে নিয়ে ভাবার একদম সময় পাইনি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ঈমান ও আমলে ব্যাপক পরিবর্তন হতে লাগলো অটোমেটিক ভাবে। চিন্তা কাজ করতে লাগলো, বিয়ে তো করবো ঠিক আছে কিন্তু কোরআনের ভাষ্য মতে নিজেইতো দ্বীনদ্বার না তাহলে আমার বউ কিভাবে দ্বীনদ্ধার হবে?
তাই সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে নিজের দ্বীন দ্বারিত্ব বাড়াতে লেগে গেলাম। ইবাদাত বন্দেগীর সময় অটোমেটিক বেড়ে গেল, আর বেশীবেশী আল্লাহর দরবারে তওবাহ করতে লাগলাম যে, আল্লাহ যেহেতু আমি ছোট সেহেতু জানা অজানায় অনেক ভুল করে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য যাকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে লিখে রেখেছেন তাকে ও ক্ষমা করুন। এবং আমাদেরকে দ্বীনদ্বার হিসেবে কবুল করে জান্নাতে ও একসাথে রাখার বন্দোবস্ত করুন। আমিন।
আমার সিদ্বান্ত নেওয়া যেখানে শেষ, আমার ফ্যামিলির মেয়ে খোজার কাজ সেখান থেকে শুরু হল। চারদিকে খোজ নেয়া ও মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গেল, আর এ কাজটায় সবচেয়ে বেশী সময় দিলো আমার মা আর ফুফু। চারদিকে মেয়ে দেখা চলছে খুবই গোপনে, আম্মার সিদ্ধান্ত ছিল যে মেয়ের ফ্যামিলিতে কিছু না জানিয়ে মেয়ে দেখবে, পছন্দ হলে পরে তাদের কাছে সরাসরি প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
এভাবে প্রায় সপ্তাহ খানেক মেয়ে দেখতে লাগল আমার মা আর ফুফু। কিন্তু ছেলের বয়স কম দেখে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল।কারন মেয়ে পক্ষ ও তো বিয়ে দিতে রাজি হতে হবে। আর ১৬ বছরের কিশোরের জন্য ঠিক কত বছরের পাত্রি বাছাই করতে হবে তাও একটা চিন্তার বিষয় ছিল।
সপ্তাহ দুয়েক পর হঠাৎ একদিন আমার ফুফা খবর নিয়ে আসল যে আমাদের পাশের উপজেলায় উনার এক বন্ধু আছে, তার নাকি বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে আছে। আর ফুফা আম্মাকে রিকোয়েষ্ট করল যে আপনি একবার দেখে আসুন, মেয়ে পছন্দ হলে ফুফা নিজেই তার বন্ধুর সাথে কথা বলবেন। আর তার অনুরোধ নাকি সেই বন্ধু কোন ভাবেই অগ্রায্য করতে পারবেন না।
মেয়েদের বাড়ি আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় আম্মা মেয়ে দেখতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে ফুফু বুঝিয়ে শুনিয়ে আম্মাকে নিয়ে গেলেন যে আমরা গিয়ে একবার দেখে আসি। সেখানেই যে বিবাহ করাতে হবে এমন তো কোন কথা নাই। যাক শেষ পর্যন্ত আম্মা রাজি হওয়ায় দুজনেই তাদের বাড়ির পথে রওয়ানা দিলেন।
পুর্বের পরিকল্পনা মোতাবেক আমার মা এবং ফুফু, ফুফার বন্ধুর বাড়ি গেল তার মেয়ে দেখতে। আমাদের বাড়ি থেকে ১৫ কিলো দূরে হওয়ায় আর রাস্তা খারাপ হওয়ায় আম্মার অস্বস্থি লেগে গেল। অর্ধেক পথ গিয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিল। যে এত দূর বিয়ে করালে রাস্তার যে অবস্থা আমাদের এখানে আসতেই মারা যাওয়া লাগবে। পরে ফুফু জোরাজুরি করে নিয়ে গেল।
আম্মা আর ফুফু তাদের বাড়ি আর মেয়ে দেখে চলে আসল। সম্পুর্ন গোপনীয় ভাবে। তারা বুঝতেই পারে নাই যে এরা মেয়ে দেখতে এসেছে। তাদের একা বাড়ি। আম্মা গিয়ে মেয়ের আম্মার কাছে পানি খেতে চায়। আর এই পানি খেতে খেতেই গল্পে মেতে গেল। আর এই ফাঁকে তাদের মেয়েকে একদম স্বাভাবিক ভাবে দেখে নিল। আর তাদের সম্পর্কে ও বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করল। আর মেয়ে বিয়ে দিবে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করেছে। মেয়ের মা আফসোস করে বলে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু দ্বীনদ্বার পাত্র না পাওয়ায় দিতে দেরি হচ্ছে।
তো আম্মা বাড়িতে এসে ঘোষনা দিলেন যে এই মেয়েকেই তার পুত্র বধু হিসেবে চাই। কারন আমার আম্মার কওমি মাদ্রাসা নিয়ে দুর্বলতা আছে। আর মেয়ে যেহুতু কওমি মাদ্রাসার ছাত্রী আর স্কুলে পড়েনাই তাই আম্মার এই আকুতি।
এদিকে ফুফাকে জানানো হলো যে আম্মার মেয়ে পছন্দ হয়েছে। ফুফা তার বন্ধুকে নিয়ে আমাদের বাড়ি হাজির পরের দিন। আগে থেকে বলেনাই। শুধু বলেছে যে আমার শশুর বাড়ি দাওয়াত আছে আমরা দুইজন যাব।
তারা আমাদের বাড়ি এসে খাওয়া দাওয়ার পর আব্বা আর ফুফা এবার মেয়ের বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলল এবং আমাকে ও ঢেকে এনে পরিচয় করিয়ে দিল। সবচেয়ে সুবিধা হল আল্লাহ আমাকে ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির মানুষ বানানোয়। আমাকে দেখে বুঝতেই পারেনাই যে আমি ১৬ বছরের কিশোর। বা সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি। পরে অবশ্যই ব্যাপার টা মেয়ের বাবাকে বলায় তিনি অবাক হয়েছেন।
তো মেয়ের বাবাকে আমার ফুফা আর আব্বা মিলে অনেক রিকোয়েষ্ট করায় মেয়ের বাবা মেয়ের মা আর তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে আলাপ করে জানাবে বলে আমাদের বাড়ি ত্যাগ করলো।
দুই দিন পর মেয়ের বাবা ফুফাকে তাদের বাড়ি ঢেকে পাঠালেন। তারপর আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। আমার সম্পর্কে ও বিস্তারিত জানলেন। তো শ্বশুর মশাই বললেন আমি রাজি আছি। কিন্তু মেয়ে আর মেয়ের মা পুরোপুরি রাজি না। তাদের আপত্তি এক জায়গায় যে ছেলের বয়স কম আর মেয়ের বয়স বেশী। ফুফা তার সাধ্য মত আমাদের পক্ষে উকালতি করতে লাগলেন। যে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবেনা। ছেলের সব খরচ তার বাবা চালাবে। আপনাদের মেয়ের কোন কষ্ট হবেনা। আর ছেলে সারা জীবন চাকুরী না করলে ও চলবে। বাবা তাকে চালিয়ে নিতে পারবে। এক পর্যায়ে ফুফা তাদের রিকুয়েষ্ট করায় তারা ছেলে দেখতে রাজি হল। ফুফা ও ঝোপ বুঝে একটা কথা বলে দিল যে ছেলে আসবে আপনাদের বাড়ি। যদি আপনাদের ছেলে পছন্দ হয় আর ছেলের ও যদি আপনাদের পছন্দ হয় তাহলে ঐ দিনই বিয়ে দিতে হবে। তারা রাজি হল।
তো আমার মায়ের যেহেতু মেয়ে পছন্দ হয়েছে তিনি ফুফাকে বললেন । আমার ছেলে বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েই যাবে। তাই তিনদিন পর বৃহ্স্পতিবার সময় দিলেন। আর তাদের কে ও প্রস্তুতি নিতে বললেন । বৃহ্স্পতিবার আমি আমার বাবা আর ফুফা তাদের বাড়ির উদ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আর এদিকে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতি সব শেষ করে একটা মাইক্রো ভাড়া করেছে। আর বর যাত্রী হিসেবে বাড়ির চারজন মুরব্বী আর আমার খালা আর ফুফু মিলে ৩ জন। মহিলারা যাবে বউ আনতে। আর পুরুষেরা যাবে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করতে।
আমি, বাবা, ফুফা ১৯ এপ্রিল ২০১২ দুপুরে মেয়েদের বাড়িতে পৌঁছালাম। তারা আমাদের আথিথেয়তা দিলেন। তাদের আত্মীয় স্বজন সবার সাথে আলোচনা হলো। এর পর আসলো আমার একা একা মেয়ে দেখার পর্ব।
তো মেয়েদের চাচার বিল্ডিংয়ের এক রুমে আমাকে আর মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হলো। আমিতো ভয়ে অস্থির। কি জিজ্ঞাসা করবো আর কি জবাব দেব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দুজনেই প্রায় ১৫ মিনিট চুপ করে ছিলাম। আমার শরীর কাঁপছিল। তিনি বুঝতে পেরে আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। তার প্রশ্ন শুনে আমার সম্বিত ফিরে এলো। তিনি আমার নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি আমার নাম বলে উনার নাম জিজ্ঞাসা করলাম। জবাব দিল অনেক সুন্দর করে। এর পর আমি প্রশ্ন করে গেলাম অনবরত। প্রশ্ন গুলো হলো,
আমিঃ আমাকে কি আপনি ভাল করে দেখেছেন?
উনিঃ না দেখি নাই, তবে অপেক্ষা করুন ভাল করে দেখে নেই, এই কথা বলে উনি আমাকে দেখলেন। উনার চাহনিতে বুঝলাম যে আমি যেন দাড়িয়ে হাটি সেটা উনি চাচ্ছেন। তাই উনি বলার আগেই আমি হাটা হাটি শুরু করলাম। উনি বাঁধা দিয়ে বললেন আপনি অনেক লম্বা মাশা আল্লাহ। আর হাটতে হবেনা বসুন।
আমিঃ আচ্ছা আপনি তো কওমি মাদ্রাসায় পড়েন আর আমি আলিয়াতে সবে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছি। আর যতটুকু আপনার ব্যাপারে শুনেছি মায়ের কাছে আপনি আমার থেকে দু বছরের বড় হবেন। তো আমাকে বিয়ে করতে আপনার আপত্তি আছে?
উনিঃ আসলে প্রত্যেকটা নারী বিয়ে হয়ে স্বামীর ঘরে যায় এটাই বাস্তবতা। তবে যেদিন আপনার ফুফা এসে আব্বার সাথে বিস্তারিত কথা বলল সেদিন আমার বাবার ভাব সাব দেখে মনে হল তিনি রাজি আছেন। তাই আমি ও মনে মনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।
আমিঃ আমাকে বিয়ে করলে আপনি যে যে সমস্যায় পড়তে পারেন তা শুনে সিদ্ধান্ত নিন। যা আপনার ও আমার জন্য কল্যানকর হবে।
১) আমি সবে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছি। আমার বাবা মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে করছি। তাই অন্তত আগামী ১০ বছর আমার বাবা ই আমাদের সব ব্যায় ভার চালাবেন। তাই হয়তো সব সময় আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবনা। এই ব্যাপারে আপনাকে অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
২) আপনার বান্ধবী মহলে আমাদের বয়স নিয়ে হাসা হাসি হতে পারে। এটা হজম করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
৩) আমাদের ছোট সংসার। আমার আম্মা আলহামদুলিল্লাহ্‌ সুস্থ আছেন। তাই হয়তো এখন আপনি অনেক আদরেই থাকবেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হলে আপনাকে পুরো সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। সেই মানসিকতা এখন থেকেই রাখতে হবে।
৪) আপনার স্বামী বেকার থাকবে বলে আশে পাশের অনেক মানুষ অনেক কথা বলবে তা শুনে থাকতে হবে আর বিয়ে হলে আমার বাবা মাকে নিজের বাবা মায়ের মতই দেখতে হবে।
উনিঃ আপনার কথা গুলো আমার ভালো লেগেছে। আর আপনাকেও। আমি সব কিছু মেনে নিয়ে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।
আমিঃ আমার সম্পর্কে আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করুন।
উনিঃ আমার কিছু জিজ্ঞাসা নাই। শুধু এতটুকু মনে রাখুন। “মেয়ে মানুষ একটু রাগী হয়। তাই কখনো আমি রাগ করলে আপনি চুপ থেকে আমাকে বুঝিয়ে দিবেন। আর আমাকে সব সময় ইসলাম পালন করতে বাধ্য করবেন। এছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।“
আমিঃ আরেকটা কথা। আমার কাছে যেহেতু অর্থ সম্পদ নেই তাই মোহর কিন্তু সামান্যই দিতে পারব। আর তা আমি নগদ দিবো। আর গহনা আমার বাবা কিনে রেখেছেন তাই দিতে পারবো।
উনিঃ দেখুন মোহর নিয়ে জোর জবরদস্তি নেই। আর আমি আপনাকে বিয়ে করছি। ধন সম্পদকে নয়। তাই আপনি যা দিবেন তাতেই সন্তুষ্ট। আর ঐটা (মোহর) আপনি দিলেও আমি আপনাকে গীফট হিসেবে দিয়ে দেব।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে ২০ হাজার টাকা করলে কেমন হয়। এটা মনে হয় বর্তমান সময়ে রেকর্ড হয়ে থাকবে।
উনিঃ আপনার খুশি।
আমিঃ আর আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আপনি চাইলে আজই বিয়ে হতে পারে ইনশা আল্লাহ।
উনিঃ আমার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। কিন্তু বাবা মাকে জানাবো উনারা রাজি থাকলে আজই হবে ইনশা আল্লাহ।
আমার ভয় পুরো কেটে গেছে। এরপর উনার বাবাকে ডাকলাম সাথে আমার বাবাকেও। দুইজনকেই রুমে ডেকে এনে আমাদের সিদ্ধান্ত জানালাম। পূর্বের প্ল্যান অনুযায়ী আমার বাবা বললেন তাহলে আজই বিবাহ হোক। মেয়ের বাবা ও রাজি হলেন। এরপর আমরা ঐ রুম থেকে আসলাম।
বাড়িতে খবর দেওয়া হলো যে তারা সবাই যেন আসে। তো এক ঘন্টার মধ্যে আমাদের বাড়ি থেকে এক মাইক্রোতে করে মেহমানরা আসলেন প্রায় ১০ জনের মত। মহিলা আসলেন আমার আম্মা, ফুফু আর এক বোন।
এর মধ্যে মেয়ের বাবা ক্বাজী খবর দিয়ে আনলেন। মাগরিবের নামাজের পর মসজিদে বিয়ে হল।আমাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ হাজার টাকা। ক্বাজী বলল ২০ হাজার এক টাকা করার জন্য। আমার বাবা বলল এই সব এক টাকা বাদ দেন। ২০ হাজার বলেছে ২০ হাজারই।
মুসল্লীদের মাঝে খেজুর বিতরন করে সবাই মসজিদ থেকে মেয়েদের বাড়ি আসলাম। আমাদের বাড়ি থেকে হবু বউয়ের জন্য কোন গয়না ঘাটি তো দূরের কথা কোন কিছুই আনে নাই। শুধু একটি শাড়ি। আর একটি বোরকা। কোন কসমেটিকস ও না কোন আনুসাঙ্গিক জিনিস ও না।
এশার পর খাওয়া দাওয়া করে সবাই নতুন বউকে না সাজিয়ে এক কাপড়ে বোরকা পরিয়ে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসলাম।
রাত ১০ টা নাগাদ আমাদের বাড়ি পৌঁছে নতুন বউকে স্বামীর জন্য সাজালেন আমার ফুফু। আর তার পরের কাহিনি আপনাদের না শুনাই ভাল।
আলহামদুলিল্লাহ, চেষ্টা করেছি সুন্নাহ অনুস্বরন করে বিবাহ করতে। জানিনা পেরেছি কিনা। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যেন জান্নাতে ও আল্লাহ আমাদের একসাথে রাখেন। আমীন।
এই হলো সংক্ষিপ্ত বিয়ের ইতিহাস। অনেক ভাই এই ঘটনা গুলো শুনার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছেন। আমাকে ভালবেসে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আবার অনেকে দুঃখ পেয়ে হতাশ এখনো। চার বছর আগের ঘটনা তবুও আমি যতটুকু সম্ভব সত্য ঘটনা শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে। অনেক সময় অনেকের সাথে মজা করেছি। অনেকে আমার সাথে মজা করেছেন। আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা করুক। আমীন।
লিখেছেনঃ আবু আব্বাস
উৎসঃ ফেসবুক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot gacor skybet88 slot online skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot shopeepay slot gacor skybet88 demo slot skybet88