হযরত মুহাম্মদ (সা), ইসলাম ও আমরা
রচনায়: ড. কাজী দীন মুহম্মদ
১.
আজকের এ অশান্ত দুনিয়ায় যতখানি বিপর্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর সময়ে তদানীন্তন বিশ্বের অবস্থা তার চাইতে তেমন কিছু কম ছিল না। আজ বৈজ্ঞানিক উন্নতির তুঙ্গে আরোহণ করে, বিশ্ব-সভ্যতার চরম বিকাশের সময়, অর্থাৎ আমাদের এ কালেও আমরা আজ কি দেখছি?
অপ্রিয় হলেও এ কথা সূর্যালোকের মত সত্য যে, বিশ্ব-সমাজ আজ নানা রোগে ভুগছে। সমাজে আজ নৈতিকতার ও মনুষ্যত্বের একান্ত অভাব। চারদিকে হক-বাতিল, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব অক্টোপাসের মত আমাদের ঘিরে ধরেছে। মূল্যবোধের জন্য, মনুষ্যত্বের জন্য সবত্র সবার মধ্যে এক অসাধারণ আর্তি।
এ-ই কি মনুষ্য-জীবন? মানুষ না সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ–আশরাফুল মাখলুকাত? তাহলে তার এ দুর্দশা কেন? কেন অশান্ত এ দুনিয়া? এ অবক্ষয়ের মূল কোথায়? প্রকৃত শিক্ষা, জ্ঞানানুশীলন, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবোধের উৎকর্ষ পরিত্যক্ত কেন? কেন মানবিক, আত্মিক ও মানসিক প্রবণতা দুর্দশাগ্রস্ত? আত্মা-পরমাত্মার কথা কেন আজ নিরাপদ দূরত্বে? জৈবিক ও দৈহিক প্রবৃত্তি এবং পার্থিব ও ইহজাগতিক নেশায় আজ সবাই উন্মাদ কেন? এর কি কোন প্রতিকার নেই? সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান জীব তার জ্ঞানানুশীলনে কি এর উৎসের সন্ধান করে, মূল কারণ চিহ্নিত করে, এ সর্বনাশা অবক্ষয়ের শিকড়সহ উৎপাটনের উপায় নির্ধারণ করতে পারে না? এ কর্তব্য কি তারই নয়? বিশ্বের যাবতীয় উন্নতি, বিজ্ঞানের যাবতীয় অবদান ও সভ্যতার সামগ্রিক অগ্রগতি যদি তার সাধনায় সমৃদ্ধ হতে পারে, তবে এ কাজটি কি তারই করণীয় নয়?
যখনই বিশ্ব এমনি ধারার অচলাবস্থায় পতিত হয়েছে, যখনই নির্যাতিত মানবতার কান্না বিশ্ব-পরিমণ্ডল, আকাশ-বাতাস ভরে তুলেছে, তখনই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন অনুগ্রহ করে উদ্ধারকর্তা পাঠিয়েছেন। তাঁরা স্রষ্টার তরফ থেকে মুক্তির বাণীসহ প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহর মনোনীত সেই আদর্শ পুরুষই রাসূল বা নবী। তাঁরা আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি আদম সন্তানদের আত্মচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে আত্ম-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আর তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মানবাদর্শমণ্ডিত যে ‘বাদ’ বা ‘ইজম’ সেটিই অমোঘ শান্তির বাণীবহ ইসলাম।
২.
পৃথিবীতে একসময় ছিল যখন মানুষকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাস করতে হত। আর বেঁচে থাকার জন্য Servival of the fittest – ‘যোগ্যতমেরই টিকে থাকার অধিকার’-এ আদর্শই প্রচলিত ছিল। বাহুবলই ছিল বাঁচার একমাত্র উপায়। যুদ্ধ করে বনের পশুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষকে জয় করে তাকে বশ করতে হতো।
ক্রমে ধারণা বদলালো। অর্থবলই মানুষের শ্রেষ্ঠ বল বলে স্বীকৃত হল। কারণ অর্থ সম্পদের মাধ্যমে বাহুবল, মানে পশুশক্তিই আয়ত্ত করা হল। যার রাজ্য যত বড়, যার সম্পদ যত বেশি; তার অর্থবলও তত বেশি। সুতরাং তার বাহুবল অর্থাৎ সৈন্যসামন্তও অধিক। তাই অর্থবলই বাহুবলের স্থান দখল করল।
ধীরে ধীরে মানুষের ভাবনা-চিন্তা, ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন হলো। মানুষ দেখল যে, বলে যা করা যায় না, কৌশলে তা সহজেই করা যায়। তখন কৌশল বা বুদ্ধি তথা জ্ঞানই বাহুবল ও অর্থবলের স্থান অধিকার করল। মানুষ ‘জ্ঞানই শক্তি’ আদর্শকে আদর্শ মনে করল। বনের মধ্যে যুদ্ধ করে বাস করতে করতে যেমন নানাভাবে স্বীকৃত হল যে, সিংহই সবচাইতে শক্তিশালী; তাই তাকে পশুর রাজা মনে করা হলো, তেমনি আগের দিনের মানুষ বাহুবলে ইচ্ছার চরিতার্থতার সুযোগ খুঁজেছে, বাহু ও অর্থের বলের সামনে বিরুদ্ধশক্তি টিকে থাকতে পারেনি। ফেরাউন থেকে আমাদের কালে এসে চেঙ্গিশ-নেপোলিয়ান পর্যন্ত এ-ইতো দেখি। কিন্তু জ্ঞান সাধনার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত হওয়ার পর জ্ঞানবান সকল মনীষীই বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করলেন। প্ল্যাটো, সক্রেটিস, এরস্টিটল প্রমুখের চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণায় তখন মানব-বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হল।
পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ নানা অলৌকিক গুণে বিভূষিত হয়ে তাঁদের কওমকে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছেন। কেউ যাদু প্রতিহত করার ক্ষমতার, কেউ বা দুরারোগ্য রোগ উপশমের ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁদের আমলের লোকদের বিশ্বাস জন্মানোর জন্য এগুলোর প্রয়োজন ছিল।
হযরত মুহাম্মদ (সা) একটি বিশেষ গুণ সাথে নিয়ে এলেন। প্রাচীন কালের মানব- মর্যাদা রক্ষা করা দৈহিক ও আর্থিক শক্তি এবং জ্ঞানের অপরিসীম গুণাবলী ছাড়াও যে মানুষ আত্মবলে বলীয়ান হয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে গোপন রহস্যটি তিনি বিশ্বের সমকালীন ও ভবিষ্যত মানুষের সামনে তুলে ধরলেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন যে, বাহুবল, ধনবল, এমনকি জ্ঞানবলই সব কিছু নয়। সবার উপরে যে বলটি মনুষ্য- সমাজে ক্রিয়াশীল সেটি হল চরিত্রবল। চরিত্রবলের কোন সীমা নেই; চরিত্র শক্তির কোন তুলনা নেই।
‘সকল ধর্মের সার বিদ্যা মহাধন; এই ধন কেহ নাহি নিতে পারে কেড়ে’ যেমন একটা পরম সত্য, তেমনি ‘সকল বলের ওপর চরিত্র মহাবল; এইবল কেহ নাহি নিতে পারে কেড়ে’-এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন তিনি। তিনি আপন চরিত্র দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন যে, বিশ্বের কোন শক্তিই প্রকৃত শক্তি নয়, যদি না চারিত্র-শক্তির সঙ্গে তার সামঞ্জস্য ঘটে।
তিনি তাঁর নিজের মধ্যে বাহুবল, ধনবল, সর্বোপরি জ্ঞানবলের আশ্চর্য সংযোজন ঘটিয়ে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন যে, বাহুবল মানে পেশীশক্তি, ধনবল মানে অর্থশক্তি, জ্ঞানবল মানে বুদ্ধিশক্তি। এ সবই কল্যাণমুখী কার্যকারিতায় সংযুক্ত হয় একমাত্র চরিত্রবলের মাধ্যমে।
শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী। চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তো তিনি নবী বলে পরিচিত হন নি। তখনো তিনি সমাজের একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল সেই অসাধারণ বিশেষ ক্ষমতা ও বিশেষ জ্ঞান, যার বলে তিনি নীতি-বিগর্হিত কোন কাজ করেন নি। তিনি ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য এসবের কাছে নতি স্বীকার করেন নি; বরং অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করেছেন। আশৈশব লালিত এ নিষ্ঠা ও বলিষ্ঠ চরিত্রশক্তিই তাঁকে একদা নবুয়ত প্রাপ্তির যোগ্য করে তুলেছিল। তিনি যদি নবী না-ও হতেন, আল্লাহ তা’আলা যদি তাঁকে বিশ্বের মানব-কল্যাণের জন্য রাসূলরূপে মনোনীত না-ও করতেন, তবুও তাঁর চরিত্রের এ বৈশিষ্ট্য তাঁকে মহামানবের পর্যায়ে উন্নীত করত, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত – সকল কালের সকল মানুষের জন্য যে তিনি মুক্তির বাণী নিয়ে আসবেন এ খবর তিনি নিজে না জানলেও অলক্ষ্যে সে বিশেষ উদ্দেশ্যেই সেই প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ চলছিল। নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি যখন কাফির ও মুশরিকদের আচরণে অতীষ্ঠ হয়ে উঠতেন এবং নিজের মিশন সম্বন্ধে নিরাশ হয়ে পড়তেন তখন আল্লাহ্ রাব্বুল ইয্যত তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন: “আপনি আশা করেন নি যে, আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হবে। এ তো আপনার প্রতিপালকের রহমতস্বরূপ নাযিল হয়েছে। সুতরাং আপনি কাফিরদের সহায়ক-পৃষ্ঠপোষক হবেন না।[1] কাজেই তাঁর চরিত্রের অমোঘ শক্তিই তাঁর সবকিছুর ঊর্ধ্বে কাজ করেছিল। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর প্রতিটি কাজে ও কথায় তা সত্য বলে প্রমাণ করেছেন।
৩. হযরত মুহম্মদ (সা) যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন আরব অঞ্চলের অবস্থা কি ছিল? তৎকালীন আরব সমাজ অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, খুনখারাবি, ডাকাতি, মদ্যপান, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি অসামাজিক কলুষ-কালিমায় লিপ্ত ছিল। মানুষ অর্থের জন্য চুরি, ডাকাতি, শঠতা, সুদ, ঘুষ ও খুন-খারাবির আশ্রয় নিত। যৌন সংযম বলতে কিছুই ছিল না। যৌন লালসা চরিতার্থ করতে গিয়ে পরনারী হরণ, ব্যভিচার, বলাৎকার ও নারী নির্যাতন চরমে পৌছেছিল। নামমাত্র মূল্যে নর-নারী হাটে বাজারে বিক্রি হতো।[2]
কেউ কারো কর্তৃত্ব স্বীকার করতো না। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থা পৌঁছেছিল চরমে। ধর্ম, নীতিবোধ ও বিচার বলতে কোনকিছুই ছিল না। জোর যার মুলুক তার’ ছিল প্রচলিত নীতি। বিচার না থাকলে যা হয়, সে অবিচার ও অরাজকতা দেশের সর্বত্র মানবতার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দিয়েছিল।[3]
নির্বিচারে নর-নারী হত্যা, দাস-দাসীদের প্রতি কুকুর-বিড়ালের মত ব্যবহার ইত্যাদি দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গিয়েছিল। সমস্যা সমস্যার জন্ম দেয়। জন মার্কুইস বলেছেন: সমাজে সমস্যা যত বাড়বে, মিথ্যাবাদীর সংখ্যা ততই বাড়বে।[4]
তাদেরও হাজারো সমস্যা, সুতরাং অযুত মিথ্যা বহুগুণে বেড়েই চলেছিল। নিপীড়িত মানবতা অধীর আগ্রহে একজন ত্রাণকর্তার আগমনের অপেক্ষায় দিন গুণছিল। আরবের সে তমসাচ্ছন্ন রজনীর ঘোর অন্ধকার কাটিয়ে আল্লাহর অসীম রহমতে সকল সমস্যার সমাধানকারী অসম সাহসী বীর চরিত্রবান হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর আবির্ভাব সমগ্র বিশ্বে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করল।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং ঘোষণা করলেন- তিনি সে সত্তা যিনি স্বীয় রাসূলকে সঠিক পথ ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, যাতে অপর সকল মতবাদের উপর এ ধর্ম বিজয়ী হতে পারে।[5]
তিনি ঘোর অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরব সমাজে ইসলামের সুবিমল জ্যোতি বিকীরণ করেন। তিনি নিজের ব্যক্তিগত মনগড়া কথা বলেন নি। হযরত ঈসা (আ) যে বলেছেন:[6]
Howbit, when he, the spirit of truth is come, he will guide you in to all truth, for he shall not speak of himself. But whatever he shall hear, shall he speak.
তাঁর আবির্ভাবে সমগ্র আরব দুনিয়ায় যে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি তৎকালীন আরবের ঘূণে ধরা সমাজের নানা জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য যে অবদান রেখেছিলেন, তার তুলনা হয় না। তাঁর সম্বন্ধে টমাস কারলাইল সত্যি বলেছেন:
To the Arab nation it was a birth from darkness into light. Arabia first became alive by means of it. A poor shepherd people roaming unnoticed in the desert since the creation of the world; a hero Prophet was sent down to them with a word they could believe, see, the unnoticed became world notable, the small has grown world-great; within one century afterwords, Arabia is at Granada on this hand, and Delhi on that-glancing valour and the light at genious; Arabia shines through long ages ever a great sec- tion of the world. Belief is great life giving. The history of a nation becomes fruitfull, sould elevating great so soon as it believes. These Arabs, the man Mahomet and that one century-is it not as if a spark had fallen. One spark on a world of what seemed black unnoticable sand; but to the sand proves explosive powder blazes heaven high from Delhi to Granada,..
I said, the great man was always as lightning out of heaven the rest of men wait for him like fuel and then they too would flame.[7]
হযরত মুহম্মদ (সা)-এর সমাজ সংস্কারমূলক কর্ম-প্রচেষ্টা শৈশব থেকেই তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তিনি কেবল সে যুগের নয়, ভবিষ্যতেরও সবচাইতে প্রগতিশীল সমাজসেবক ও সমাজ-সংস্কারকের ভূমিকা পালন করেছেন। তৎকালীন ঘুণেধরা সমাজকে তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির বহু আগে থেকেই ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দুনিয়ার বুকে মিথ্যা ও সত্যের, পাপ ও পুণ্যের, ঘৃণা ও প্রেমের দুর্যোগ নেমে এসেছে অসুর শক্তির পাশব প্রয়োগে। যুগ-যন্ত্রণায় মানবতা বারবার কাতরিয়ে উঠেছে, কঁকিয়ে উঠেছে। হারিয়ে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে জীবনের সহজ-সরল সাবলীলতা। আধ্যাত্মিকতার সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো হয়ে গেছে ভোঁতা, অকর্মণ্য। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অমানবিকতার দাম্ভিক পাশবিকতা। তাদের দাপটে মানব-হৃদয়ের কোমল বৃত্তিগুলো অপসৃত হয়েছে দুনিয়া থেকে। কায়েম হয়েছে পশু- প্রবৃত্তি। মানবতার করুণ আর্তগোঙানি তাকে কিছুমাত্র বিচলিত করতে পারেনি।
মানবতা যখন এভাবে অবজ্ঞায়-অবহেলায় এক পাশে পরিত্যক্ত, তখন আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এসেছিলেন এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশ্বের যাবতীয় সমস্যার সামগ্রিক সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। ব্যক্তিজীবনে ও সমষ্টিজীবনে যাবতীয় অসমতা দূর করে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন ‘তোমার, আমার, তার’- প্রত্যেকের জন্য শান্তি। তাঁর কালের ও অনাগত ভবিষ্যতের কওমের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন সুদৃঢ় সুষ্ঠু জীবন ব্যবস্থার। তিনি নিজের জীবনে, দেশ-রাষ্ট্র-জাতি-সমাজ-ধর্ম-অর্থ- সকল ক্ষেত্রে নীতির আদর্শ প্রয়োগ করে বড়-ছোট, ধনী-গরীব, উঁচু- নীচু, সাদা-কাল, নর-নারী সকলের জন্য রেখে গেছেন তাঁর অমোঘ শিক্ষা। তাঁর অতুলনীয় চরিত্রে ঘটেছে যার সম্যক বিকাশ, তারই অনুশীলন করে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে চেয়েছেন তিনি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন: আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। এ আদর্শের প্যাটার্নেই বাঁচাতে চেয়েছেন তিনি সমস্যা জর্জরিত মানব সমাজকে। সমসাময়িক ও অনাগত ভবিষ্যতকে মারণাস্ত্রে নয়, ধ্বংস-যজ্ঞের মাধ্যমে নয়; বরং তাঁর নির্দেশিত সে অমোঘ অস্ত্রটি আত্মপ্রত্যয়ের সাথে প্রয়োগের মাধ্যমেই কি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি না বিশ্বময় প্রকৃত শান্তি, প্রকৃত কল্যাণ-সমাজ?
তথ্যনির্দেশ
[1] আল-কুরআন, ২৮ সূরা কাসাস: আয়াত ৮৬।
[2] মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত।
[3] ম্যালিন্ডার বলেছেন: যে দেশে বিচার নেই, সে দেশে সমস্যার কোন সমাধান নেই।
[4] মারকুইস।
[5] আল কুরআন, সূরা তওবা, আয়াত ৩৩।
[6] বাইবেল (New Testament)।
[7] কারলাইল।
***উক্ত লিখাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘কল্যাণ সমাজ গঠনে মহানবী (সা)’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে সংগৃহীত।