‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পড়ার নিয়ম

‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’-এর মধ্যে ‘লা’ অক্ষরটি টেনে না পড়লে কি তা সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশ করবে?
প্রশ্ন: ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর মধ্যে ‘লা’ অক্ষরটি টেনে না পড়লে কি অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে? কারণ ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখা যায়, যেখানে বলা হচ্ছে যে, ‘লা’ টেনে না পড়লে তার অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে যাবে। তা হল, “অবশ্যই আল্লাহ ছাড়া উপাস্য আছে।” এ কথা কি সঠিক?
আর লাম অক্ষরটি কি তিন আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে?
উত্তর:
“লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) হল, বিশ্ব চরাচরের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় এবং মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য। এটি সর্বোত্তম জিকির এবং জান্নাতের চাবি। কারণ তা আল্লাহর তাওহিদ বা একত্ববাদের স্বীকৃতি জ্ঞাপক বাক্য।
তাই আমাদের উচিত, এটিকে সঠিক নিয়মে নির্ভুলভাবে পাঠ করা এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
🔸‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’-এর প্রথম লামের মধ্যে সামান্য টান (মাদ্দ) সহকারে পড়াটাই বিশুদ্ধ। তবে আরবি ভাষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে অথবা তাড়াতাড়ি পড়ার কারণে কেউ যদি তা টান ছাড়া পরে তাহলে তা নিঃসন্দেহে আরবি ব্যাকরণগত ভুল বলে গণ্য হবে। কিন্তু এই ভুলের কারণে তার অর্থের মধ্যে কোনও পরিবর্তন হবে না। কেননা আরবি গ্রামার অনুযায়ী الجملة الإسمية (জুমলাহ ইসমিয়্যাহ)-এর শুরুতে (মুবতাদায়) কখনো লামে তাকিদ (لام تاكيد বা নিশ্চয়তা জ্ঞাপক লাম) আসে না। অতএব আরবি ব্যাকরণের দৃষ্টিতে উপরোক্ত ব্যাখ্যা নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত।
মোটকথা, ‘লা ইলা-হা’-এর শুরুতে লাম অক্ষরে সামান্য টান (মাদ্দ) সহকারে পড়তে হবে। এটাই আরবি ভাষার নিয়ম অনুযায়ী সঠিক উচ্চারণ। তবে টান ছাড়া পড়লে উচ্চারণগত ভুল হলেও বাক্যের অর্থ বিকৃত হবে না‌।
সুতরাং যেমনটি বলা হচ্ছে যে, ‘লা’ অক্ষরটি টান ছাড়া পড়লে অর্থ হবে, “অবশ্যই আল্লাহ ছাড়া উপাস্য আছে”-এ কথা সঠিক নয়। কেউ কেউ আরও একধাপ বাড়িয়ে বলে যে, লাম অক্ষর টেনে না পড়লে কাফের হয়ে যাবে! এটা নিতান্তই বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়।
🔸আর ‘লা’ অক্ষরটি তিন আলিফ টেনে পড়া জরুরি নয়। কেননা তাজবিদের নিয়মাবলী শুধু কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; অন্য কোন দুআ, তাসবিহ, জিকির, হাদিস বা সাধারণ আরবি ভাষার ক্ষেত্রে নয়।
আল্লাহু আলম।
– আরও পড়ুন:
আরবি সাধারণ কথাবার্তায় তাজবিদের ব্যবহার এবং “ইনশাআল্লাহ” বনাম “ইং শা‌ আল্লাহ”
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button