শিশু প্রশিক্ষণ
আদর্শ শিশু বলে কিছু নেই। পরিবেশ এমন করতে হবে যে শিশু যেন স্বাভাবিক ভাবেই স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুন্দর স্বভাব নিয়ে গড়ে উঠে। শিশু যদি বুঝতে পারে তাকে বিশেষ ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেদিকে যাবেনা।
ইতিবাচক মন
আল্লাহ শিশুদের ইতিবাচক মন দিয়েছেন। তুমি কি বিষ খাবে ? জিজ্ঞাসা করলে শিশু বলবে- খাবো। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি কাল মরবে। সে বলবে – মরবো। তুমি কি আজ বিয়ে করবে, সে বলবে – করবো।
তাজমহল, কুতুব মিনার, আগ্রা দুর্গ ইত্যাদি দেখিয়ে কে কোটি তৈরী করেছে তা জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং সেও সেরূপ তৈরী করবে কিনা জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।
বড়লোক আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে নিয়ে সেও এমন বাড়ী তৈরী করবে কিনা জিজ্ঞাসা করতে হবে। কর্মকর্তার শান শওকত সম্মান দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে সেও সেরূপ বড় সাহেব হবে কিনা।
কোন শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার নয়, যদি তার আকাঙখা এবং মনের ক্ষুধা সৃষ্টি করা যায়। একটি বড় বাড়ী দেখলে বলতে হবে – তুমি কি এমন বাড়ী করবে ? পুল দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করতে হবে- তুমি কি অমন বড় পুল বানাতে পারবে ?
শিশু অনুকরণ প্রিয়। তার প্রয়োজন অনুপম আদর্শ।
বড় জিনিষ, ভালো কাজ, গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে প্রশংসা করে বড় কাজ, ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। ক্ষুদ্র অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে দেখলে নিরুৎসাহিত করতে হবে। উপেক্ষা করে ঐ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় ক্ষুদ্র কাজ হতে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
ব্যর্থতা, আত্মবিশ্বাস
তবে শিশুদেরকে এমন কাজে উৎসাহিত করা ঠিক হবেনা- যে কাজ তারা করতে পারে না। ব্যর্থতার ফলে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় এমন কাজে তাদেরকে উৎসাহিত করা ঠিক হবেনা।
অল্প বয়সে লজ্জিত হওয়ার অভ্যাস রাখতে হবে। তবে আদর করে দিয়ে মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে।
শিক্ষার সাথে সাথে শিশুকে শাসন করতে হবে। তারই অন্যকে শাসন করার অধিকার আছে। যে নিজেকে শাসন করতে পারে।
সমালোচনা শিশুর বোধের অতীত। সমালোচকের কোন প্রয়োজন শিশুর নেই।
শিশুকে প্রশংসা করতে হয়। প্রশংসা ছাড়া শিশুর মনের উপর অন্য কোন প্রভাব ততো কার্যকরী নয়।
শিশুকে ভালো কাজ করে আনন্দ পেতে প্রশিক্ষিত করতে হবে। ভালো কাজ করলে আনন্দিত হলে এবং তাদেরকে বাহবা দিলে তারা আরো ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হবে।
শিশুর প্রশংসা কতটুকু করবো ? ততটুকু নয়, যতটুকু গুণাবলী শক্তি সামর্থ আমি তার মাঝে দেখতে পাই। বরং ততটুকু প্রশংসা করতে হবে যতটুকু আমি তার মাঝে ভবিষ্যতে আশা করি। তা হলে তা অর্জনের আগ্রহ তার মধ্যে সৃষ্টি হবে।
পড়ার পরিবেশ
যে বাড়ীতে শিশুরা বেশী বই নাড়াচাড়া করে সেখানে নিতে হবে। যে বাড়ীতে শিশুরা সকালবেলা পড়ে সে বাড়ীতে নিয়ে বলতে হবে- ওরা পড়ছে, এখন কথা বলছেনা, চলো চলো আমরা বাড়ী গিয়ে পড়বো। এসেই মুখস্ত করালে হবেনা। ছবি দেখিয়ে, তাকে পড়ার বই নিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে।
এ পদ্ধতিতেও যদি কাজ না হয়, যে বাড়ীতে শিশুরা লেখাপড়া করে সে বাড়ীতে শিশুকে নিয়ে তাকে বইয়ের সান্নিধ্যে বসিয়ে রাখতে হবে।
ঐ বাড়ীর কাউকে আগেই বলে রাখতে হবে যে- এ শিশু অন্য কিছু করতে চাইলে বিরক্তির স্বরে বলতে হবে- এটা অন্য কিছু করার সময় নয়। পড়ার সময়।
স্কুলে নিয়ে বসে বসে বই দেখাতে হবে এবং দেখাতে হবে অন্য সকলে বই পড়ে। জিজ্ঞাসা করতে হবে তুমি এখন কি করবে। দেখা যাবে সেও বই পড়তে চাইবে।
কোন বিরাট লাইব্রেরীতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে তুমি কি সবগুলো বই পড়বে ? তুমি সবগুলো বই এর ছবি দেখবে ? সে বলবে দেখবো। তখনই ছবিওয়ালা শিশু দর্শনীয় বই নিয়ে একটির পর একটি ছবি দেখিয়ে কয়েকটি বই দেখিয়ে নিতে হবে। বলতে হবে আরেক দিন। বাকীগুলো এসে দেখবো।
শিশুদের ছবি দেখিয়ে তার নিজের মনের কল্পনা এবং ছবির সাথে মিলাতে হবে। ছবি দেখতে দেখতে বই এর ভিতর কি গল্প আছে তা জানতে চাইবে।
বড় বড় বই দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে – সে এর চেয়ে বড় বই লিখবে কিনা। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ভবিষ্যতের দৃষ্টি তার চোখের সম্মুখে তুলে ধরতে হবে।
সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম
জাঝাকাল্লাহু খইরান