জামাল আরমানিউস এর ইসলাম গ্রহণ
একটি বিস্ময়কর ঘটনাঃ
পবিত্র কুরআনের পরশে এসে জামাল আরমানিউস হয়ে গেলেন জামাল যাকারিয়া ইবরাহীম।
মিশরের একটি খৃষ্টান গির্জার স্বেচ্ছাসেবক জামাল আরমানিউস মাত্র আট বছর বয়স থেকে ই নিয়মিত গীর্জায় গিয়ে উপাসনা করত এবং পাদ্রীদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে বড় হয়ে গীর্জার প্রধান পুরোহিত হবার স্বপ্ন দেখত। কালক্রমে সে উক্ত গীর্জায় একজন নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পায়, তাঁর পিতা ও দাদা ও ঐ গীর্জার প্রধান পুরোহিত ছিলেন।
আরমানিউস ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করে এবং গীর্জায় তিরিশ বছর চাকুরী করে সর্বোচ্চ পদে প্রমোশন পাওয়ার লক্ষ্যে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তাকে একটি গবেষণা পত্র জমা দিতে হবে এই মর্মে একটি শর্ত জুড়ে দেন।
গবেষণার বিষয় নির্ধারিত হয়ঃ
‘ইসলাম ধর্মের কুরআনে পরস্পর বিরোধী ও অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং ভুল সমূহ চিহ্নিত করণ’।
সে প্রধান পুরোহিত হবার স্বপ্নে বিভোর ছিল, তাই এমন শর্ত পূরণের জন্য সে বিচলিত না হয়ে কুরআন শেখায় মনোযোগ দিয়ে একজন দক্ষ ক্বারী হলেন,তার মাতৃভাষা আরবী হওয়ায় কুরআন বুঝতে অসুবিধে হত না, মাত্র ছয়
মাসের প্রচেষ্টায় কুরআন পড়ার মজা পেয়ে সে বাস ট্রেন লঞ্চ সহ সব সফরেই কুরআন কারীম সঙ্গে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, প্রতিমাসে তিন খতম করে দশ খতম দিয়ে হঠাৎ একটি আয়াতে তার সম্বিত ফিরে, সূরা বাকারার ২য় আয়ত ।
এই সেই কিতাব, যাতে কোনই সন্দেহ নেই,এ টি মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ।
আরমানিউসের মনে দাগ কাটে, পৃথিবীর সব গ্রন্থের ভূমিকায় বলা হয় যদি কোন ভুল ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয় অনুগ্রহ পূর্বক জানালে কৃতজ্ঞ থাকব,অথচ পবিত্র কুরআন ঘোষণা করছে,এই গ্রন্থে ভুল তো দুরের কথা সন্দেহ পর্যন্ত নেই। কথাটির তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা করতে করতেই সূরা আনআমের ১২৫ নাম্বার আয়াতে চোখ পড়লোঃ
‘আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মত ই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে,যারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ তাদেরকে এরূপে লাঞ্ছিত করেন’ ।
জামাল আরমানিউস কেবলমাত্র কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন খতম ই করত না বরং সে কুরআন কারীমের বক্তব্য নিয়ে গবেষণা করত, বেশি বেশি পড়ার কারণে বহু আয়াত তার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। থিসিসের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে একটি লাইন ও লিখতে সক্ষম হয়নি।
মহা সত্যের সন্ধান পেয়ে সে এখন পাদ্রী পুরোহিত হবার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে একজন মুসলিম হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক পৃষ্ঠায় ছয়টি শব্দের থিসিস লেখে কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিল,,
‘আমি কুরআনে কোথাও কোন ভুল বা পরস্পর বিরোধী কথা পাইনি।
স্বাক্ষর/ জামাল যাকারিয়া ইবরাহীম।
কতৃপক্ষ তার কর্মকান্ড দেখে হতবাক,তখন সে সবাইকে শুনিয়ে স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেন
انى قد أسلمت لله رب العلمين فاشهد أن لا إله إلا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله
এই ঘোষণা শুনে খৃষ্ট ধর্মের সহকর্মীদের পক্ষ থেকে নেমে আসতে লাগল একের পর এক নির্যাতন, ফিরিয়ে নেয়ার কুটকৌশল, এমনকি আশানুরূপ থিসিস ছাড়াই তাকে পুরোহিত করার প্রলোভন দেখান হয়, কিন্তু যার অন্তর ঈমানের আলোতে উদ্ভাসিত ,তাঁকে ফিরিয়ে অন্ধকারে নেয়ার শক্তি কোথায় আছে?
জামাল যাকারিয়া এরপর দ্রুত অসুস্থ মায়ের খিদমতে উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই খবর দেন আম্মা! আমি অনেক গবেষণা করে সত্য কে পেয়েছি, এবং তা গ্রহণ করেছি, তাঁর মনে ভয় ছিল মা হয়ত নতূন ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কথা শুনে দুঃখ কষ্ট পাবেন, কিন্তু মা বলে উঠলেন সত্যের সন্ধান পেতে বডড দেরি করে ফেলেছ, প্রিয় বৎস্য! আমি বেশ কিছু দিন আগে ই সেই সত্যের সন্ধান পেয়ে মুসলিম হয়েছি, আমার আশা ছিল তুমি সত্যের সন্ধান পেলে তোমাকে নিয়ে আল্লাহর ঘর যিয়ারত করব, কিন্তু এখন আমি এতটাই দুর্বল যে সশরীরে মক্কা সফরে যাওয়া অসম্ভব। সুতরাং অবিলম্বে তুমি হজ্জ সফরে যাবে এবং আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
জামাল যাকারিয়া ইবরাহীম হাজ্জ সফর শেষে দেশে ফিরে আর মায়ের সাক্ষাৎ পাননি। আল্লাহ তাদের সবাইকে জান্নাতবাসী করুন আমীন।