ইসলামে মাযহাব মানার বিধান

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর। অতঃপর:
মাযহাব মানার ব্যাপারে আমরা অনেক কথাই শুনে থাকি। এক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু ভাই মাযহাব মানার ব্যাপারে চরমপন্থা অবলম্বন করেন এবং সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরেও মাযহাবের প্রতি গোঁড়ামি করে তা গ্রহণ করেন না।
আবার কিছু ভাইকে দেখা যায়, তাঁরা মাযহাব না মানার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এবং মাযহাব না মানাকে—সালাফী মানহাজ নিরুপণের মাপকাঠি নির্ধারণ করে বসে থাকেন।
কেউ কেউ তো এভাবে ভাগ করে বসেন যে, সে কি সালাফী, না কি মাযহাবী?! যেন কারও মাযহাবী হওয়াটা তার সালাফী হওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।
অপরপক্ষে সাধারণ মানুষদের মধ্যে কিছু ভাই আছেন, যাঁরা সংশ্লিষ্ট মাযহাবের হালহকিকত সম্পর্কে কিছুই না জেনে সেই মাযহাবের দিকে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেন। তাই এসব বিষয় সালাফী ভাইদের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। সেজন্য আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে নির্ভরযোগ্য ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্য উল্লেখ করে বিষয়গুলো খোলাসা করার প্রয়াস পেয়েছি। ফালিল্লাহিল হামদ।
আমরা প্রথমে এ ব্যাপারে ইমাম সালিহ আল-ফাওযানের একটি বিস্তারিত বিধান সংবলিত ফতোয়া উল্লেখ করেছি। তারপর যথাক্রমে নির্দিষ্ট মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিধান সম্পর্কে, মাযহাব মানা ওয়াজিব কি না সে সম্পর্কে এবং সাধারণ মানুষের নির্দিষ্ট মাযহাব আছে কি না সে সম্পর্কে ‘উলামাদের বক্তব্য উল্লেখ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “শরিয়তের কোনো বিধানের ক্ষেত্রে মানুষ যে মাযহাবের অনুসরণ করে সে মাযহাবের প্রতি গোঁড়ামি করা কি জায়েজ, যদিও এ বিষয়ে তা সঠিকতার বিপরীত হয়? নাকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই মাযহাব পরিত্যাগ করে সঠিক মতের অনুসরণ করা বৈধ? আর নির্দিষ্ট একটি মাযহাব আঁকড়ে ধরার বিধান কী?”
উত্তর: “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের যে চারটি মাযহাব মুসলিমদের মধ্যে অবশিষ্ট, সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত রয়েছে, তার মধ্য থেকে কোনো একটি মাযহাব অবলম্বন করায় এবং সে মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো সমস্যা নেই। যেমন বলা হয়: অমুক শাফি‘ঈ, অমুক হাম্বালী, অমুক হানাফী, অমুক মালিকী।
‘উলামাদের মধ্যে, এমনকি বড়ো ‘উলামাদের মধ্যেও অনেক পূর্ব থেকেই এই উপাধীর অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। বলা হয়, অমুক হাম্বালী। যেমন বলা হয়, ইবনু তাইমিয়্যাহ হাম্বালী, ইবনুল ক্বাইয়্যিম হাম্বালী প্রভৃতি। এতে কোনো সমস্যা নেই। কোনো মাযহাবের দিকে স্রেফ নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একটি শর্ত রয়েছে। আর তা হলো—এই মাযহাবে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। এভাবে যে, উক্ত মাযহাবে যা আছে সে তার সবই গ্রহণ করে। চাই তা সঠিক কিংবা ভুল হোক, অথবা ভুল কিংবা সঠিক হোক।
বরং সে তা থেকে কেবল সেটাই গ্রহণ করবে, যেটা সঠিক। আর যেটাকে সে ভুল হিসেবে অবগত হয়েছে, সেটার ওপর আমল করা জায়েজ নয়। তার কাছে যদি (অনেকগুলো মতের মধ্যে) কোনো মত অগ্রাধিকারযোগ্য হিসেবে উদ্ভাসিত হয়, তাহলে সেই মত গ্রহণ করা তার জন্য ওয়াজিব। চাই সেই অগ্রাধিকারযোগ্য মতটি তার মাযহাবে থাকুক, কিংবা অন্য মাযহাবে থাকুক। কেননা যখন কারও কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ স্পষ্ট হয়ে গেছে, তার জন্য অন্য কারও কথা অনুসরণ করে সেই সুন্নাহ বর্জন করার কোনো অধিকার নেই।
প্রকৃতপক্ষে আদর্শ হলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাযহাবের কথা গ্রহণ করব, যতক্ষণ না তা রাসূলের ﷺ কথার বিরোধী হচ্ছে। যখন মাযহাবের কথা রাসূলের ﷺ কথার বিরোধী প্রমাণিত হবে, তখন সেটা মুজতাহিদের ভুল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে মুজতাহিদের কথা বর্জন করে সুন্নাহকে গ্রহণ করা এবং সুন্নাহ মোতাবেক অগ্রাধিকারযোগ্য মতকে বরণ করা—সে মতটি যে মাযহাবেরই হোক না কেন—আমাদের জন্য ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিরঙ্কুশভাবে কোনো ইমামের মত—সেটা ভুল হোক কিংবা সঠিক—গ্রহণ করে, তার এই কাজ অন্ধ তাক্বলীদ (অনুসরণ) হিসেবে গণ্য হবে। সে যদি মনে করে, কোনো নির্দিষ্ট মানুষের তাক্বলীদ করা ওয়াজিব, তাহলে সেটা হবে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার নামান্তর (রিদ্দাতুন ‘আনিল ইসলাম)।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির তাক্বলীদ করা ওয়াজিব, তাকে তাওবাহ করাতে হবে। সে যদি তাওবাহ করে তো ভালো, নচেৎ তাকে হত্যা করতে হবে। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ ব্যতীত কারও আনুগত্য করা ওয়াজিব নয়। পক্ষান্তরে তিনি ﷺ ব্যতীত মুজতাহিদ ইমামগণের ক্ষেত্রে (আমাদের অবস্থান হলো), তাঁদের যেসব কথা সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, আমরা কেবল সেগুলোই গ্রহণ করব। কিন্তু মুজতাহিদ যদি তাঁর ইজতিহাদে ভুল করেন, তাহলে তাঁর সেই ইজতিহাদ গ্রহণ করা আমাদের জন্য হারাম। আর মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭০১-৭০২; দারু ইবনি খুযাইমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
❏ চার মাযহাবের কোনোটির দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিধান:
সৌদি আরবের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৮৯ হি.] বলেছেন,
التمذهب بمذهب من المذاهب الأَربعة سائغ، بل هو بالإِجماع، أَو كالاجماع، ولا محذور فيه، كالانتساب إِلى أَحد الأَربعة؛ فإِنهم أَئمة بالإِجماع، والناس في هذا طرفان ووسط: قوم لا يرون التمذهب بمذهب مطلقًا، وهذا غلط، وقوم جمدوا على المذاهب ولا التفتوا إلى بحث، وقوم رأَوا أَن التمذهب سائغ لا محذور فيه، فما رجح الدليل مع أَي أَحد من الأَربعة أَو غيرهم أَخذوا به.
“চার মাযহাবের মধ্য থেকে কোনো একটি মাযহাব অবলম্বন করা জায়েজ। এমনকি এ ব্যাপারে ইজমা‘ (মতৈক্য) হয়ে গেছে। অথবা বিষয়টি ইজমা‘র মতোই। এতে কোনো বাধা নেই। তথা চার ইমামের কারও দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো বাধা নেই। কেননা তাঁরা সকলেই ইজমা‘র ভিত্তিতে ইমাম। এ ব্যাপারে মানুষ দুটি প্রান্তিক ও একটি মধ্যপন্থি দলে বিভক্ত। একদল বিলকুল মাযহাব মানা বৈধ মনে করে না। এটা ভুল। আরেকদল মাযহাবের ওপর অটল হয়ে গেছে। তারা গবেষণা করার দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। আরেকটি দল রয়েছে, যারা মনে করে, মাযহাব মানা বৈধ, এতে কোনো নিষিদ্ধতা নেই। দলিল যে কথাকে প্রাধান্য দেয়, সেটা চার ইমাম অথবা চার ইমাম বাদে অন্য যারই কথা হোক না কেন—তারা তা গ্রহণ করে নেয়।” [ফাতাওয়াশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০]
·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
مذهبي في الفقه هو مذهب الإمام أحمد بن حنبل رحمه الله وليس على سبيل التقليد ولكن على سبيل الاتباع في الأصول التي سار عليها . أما مسائل الخلاف فمنهجي فيها هو ترجيح ما يقتضي الدليل ترجيحه والفتوى بذلك سواء وافق ذلك مذهب الحنابلة أم خالفه. لأن الحق أحق بالاتباع . وقد قال الله عز وجل : صلى الله عليه وسلم يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا.
“ফিক্বহের ক্ষেত্রে আমার মাযহাব হলো ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র মাযহাব। কিন্তু তা তাক্বলীদের ভিত্তিতে নয়, বরং তাঁর অবলম্বিত মূলনীতি (উসূল) অনুসরণ করার ভিত্তিতে। পক্ষান্তরে মতদ্বৈধতাপূর্ণ মাসআলাহয় আমার মানহাজ হলো—যে মতকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও তদানুসারে ফতোয়া দেওয়া দলিলসম্মত হয়, সে মতকেই অগ্রাধিকার দেওয়া, চাই তা হাম্বালী মাযহাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হোক কিংবা না হোক। কেননা হকই অনুসৃত হওয়ার সবচেয়ে বড়ো হকদার। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। তারপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করো। যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ইমান রাখ। এটিই সর্বোত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” (সূরাহ নিসা: ৫৯)” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৬৬; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২০ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
·
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
ينقسم الناس إلى أقسام بالنسبة لالتزام المذاهب، فمن الناس من ينتسب إلى مذهبٍ معين لظنه أنه أقرب المذاهب إلى الصواب، لكنه إذا تبين له الحق اتبعه وترك ما هو مقلدٌ له وهذا لا حرج فيه، وقد فعله علماء كبار، كشيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله، بالنسبة لمذهب الإمام أحمد بن حنبل فإنه أعني ابن تيمية كان من أصحاب الإمام أحمد ويعد من الحنابلة، ومع ذلك فإنه حسب ما اطلعنا عليه في كتبه وفتاويه إذا تبين له الدليل اتبعه ولا يبالي أن يخرج بما كان عليه أصحاب المذهب، وفعله كثير فهذا لا بأس به؛ لأن الانتماء إلى المذهب، ودراسة قواعده وأصوله يعين الإنسان على فهم الكتاب والسنة، وعلى أن تكون أفكاره مرتبة، ومن الناس من هو متعصب لمذهبٍ معين يأخذ برخصه وعزائمه دون أن ينظر في الدليل، بل دليله كتب أصحابه، وإذا تبين الدليل على خلاف ما في كتب أصحابه ذهب يؤوله تأويلاً مرجوحاً من أجل أن يوافق مذهب أصحابه، وهذا مذموم وفيه شبه من الذين قال الله فيهم: ﴿ألم ترَ إلى الذين يزعمون أنهم آمنوا بما أنزل إليك وما أنزل من قبلك يريدون أن يتحاكموا إلى الطاغوت وقد أمروا أن يكفروا به ويريد الشيطان أن يضلهم ضلالاً بعيدا * وإذا قيل لهم تعالوا إلى ما أنزل الله وإلى الرسول رأيت المنافقين يصدون عنك صدودا﴾، وهم وإن لم يكونوا بهذه المنزلة لكن فيهم شبهٌ منهم، وهم على خطرٍ عظيم؛ لأنهم يوم القيامة سوف يقال لهم: ماذا أجبتم المرسلين؟ لا يقال: ماذا أجبتم الكتاب الفلاني أو الكتاب الفلاني أو الإمام الفلاني. القسم الثالث: من ليس عنده علم وهو عاميٌ محض فيتبع مذهباً معيناً؛ لأنه لا يستطيع أن يعرف الحق بنفسه، وليس من أهل الاجتهاد أصلاً فهذا داخلٌ في قول الله سبحانه وتعالى:﴿فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون﴾، ويتفرع على هذا السؤال سؤال آخر، وهو إذا سأل العامي شيخاً من العلماء فأفتاه وسمع شيخاً آخر يقول خلاف ما أفتي به فمن يأخذ بقوله؟ يتحير العامي أيأخذ بقول هذا أو هذا وهو ليس عنده قدرة على أن يرجح أحد القولين بالدليل، فيقال في جواب هذا السؤال: لا يكلف الله نفساً إلا وسعها، أنظر ما يميل إليه قلبك من الأقوال واتبعه، فإذا مال قلبك إلى قول فلان لكونه أعلم وأورع فاتبعه، وإذا تساوى عندك الرجلان فقيل: يؤخذ بأشدهما وأغلظهما احتياطاً، وقيل: يؤخذ بأيسرهما وأسهلهما؛ لأنه الأقرب إلى قاعدة الشريعة، والأصل براءة الذمة، وقيل: يخير والأقرب أنه يأخذ بالأيسر؛ لقول الله تعالى: ﴿يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر﴾، والأدلة متكافئة؛ لأن المفتين أو لأن المفتيين كلاهما في نظر السائل على حدٍ سواء.
“মাযহাব মানার দিক থেকে মানুষ কয়েক ভাগে বিভক্ত। কিছু লোক নির্দিষ্ট মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এই ধারণার ভিত্তিতে যে, উক্ত মাযহাব সঠিকতার অধিক নিকটবর্তী। কিন্তু যখন তার কাছে হক উদ্ভাসিত হয়, তখন সে হকের অনুসরণ করে এবং সে যে মাযহাবের তাক্বলীদ করে সে মাযহাবের মত পরিত্যাগ করে। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। বড়ো ‘উলামারাও এরকম করেছেন। যেমন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি ছিলেন ইমাম আহমাদের মাযহাবের অনুসারী। তাঁকে হাম্বালীদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়।
এতৎসত্ত্বেও আমরা তাঁর বইপুস্তক ও ফতোয়া পড়ে যতটুকু অবগত হয়েছি, সে অনুযায়ী—তাঁর কাছে যখন দলিল উদ্ভাসিত হয়েছে, তখনই তিনি তার অনুসরণ করেছেন। মাযহাবের ‘উলামারা যে মতের ওপর রয়েছেন, তিনি সে মত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কিনা তার পরোয়া করেননি। এরকম অনেকে করেছেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করা এবং সেই মাযহাবের উসূল ও ক্বাওয়া‘ইদ (মূলনীতি) অধ্যয়ন করলে তা কিতাব ও সুন্নাহ বুঝতে সহায়ক হয়। এর ফলে তার চিন্তাধারাও সুশৃঙ্খল হয়।
আর কিছু লোক আছে, যারা নির্দিষ্ট মাযহাবের জন্য গোঁড়ামি করে। দলিলের দিকে না তাকিয়ে মাযহাবের যাবতীয় কঠিন ও সহজ বিধান গ্রহণ করে। বরং তার মাযহাবের ‘উলামাদের বইপুস্তকই তার দলিল। ফলে যখন মাযহাবের ‘উলামাদের বইপুস্তকে যা আছে তার বিপরীতে দলিল প্রকাশিত হয়, তখন সে ওই দলিলের অপব্যাখ্যা করে অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দাড় করায়, যাতে করে সে তার অনুসরণীয় ‘উলামাদের মতের সাথে একমত হতে পারে। এটা নিন্দনীয় কাজ।
এই কাজের সাথে তাদের কর্মের মিল আছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, “তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার প্রতি তারা বিশ্বাস করে? অথচ তারা নিজেদের বিচার তাগুতের নিকট নিয়ে যেতে চায়, যদিও তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল যেন তাকে অবিশ্বাস করে; পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করতে চায়। আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সেই দিকে এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি মুনাফিকদেরকে দেখবে, তারা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।” (সূরাহ নিসা: ৬০-৬১)
তারা যদিও এই পর্যায়ের নয়, তবুও এদের (আয়াতে আলোচ্য ব্যক্তিবর্গের) সাথে তাদের মিল রয়েছে। তারা রয়েছে ভয়াবহ বিপদে। কেননা কেয়ামতের দিন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা রাসূলদের আহ্বানে কী জবাব দিয়েছ? একথা বলা হবে না যে, অমুক কিতাব কিংবা অমুক ইমামের আহ্বানে কী জবাব দিয়েছ?
তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষ সে, যার নিকট (শরিয়তের) ‘ইলম নেই, সে নিতান্তই এক সাধারণ মানুষ। সে নির্দিষ্ট একটি মাযহাব অনুসরণ করে। কেননা সে নিজে থেকে হক জানতে পারে না। আর বাস্তবেই সে ইজতিহাদ করতে সক্ষম—এমন মুজতাহিদদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে সে মহান আল্লাহর এই কথার অন্তর্গত হবে, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” (সূরাহ নাহল: ৪৩; সূরাহ আম্বিয়া: ৭)
এই প্রশ্ন থেকে আরেকটি প্রশ্ন উদ্গত হয়। সেটা হলো—যখন একজন সাধারণ মানুষ কোনো ‘আলিমকে বা শাইখকে প্রশ্ন করে ফতোয়া নিবে, আবার অন্য একজন শাইখ থেকে এর বিপরীত ফতোয়া শুনবে, তখন সে কার কথা গ্রহণ করবে? এসব ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ পেরেশান হয়ে যায়। এঁর কথা গ্রহণ করবে, না কি এঁর কথা গ্রহণ করবে? অথচ তার কাছে এমন ক্ষমতাও নেই, যার মাধ্যমে দলিলের আলোকে দুটো মতের মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দিবে।
তাহলে এই প্রশ্নের জবাবে বলা হবে, আল্লাহ কারও ওপর সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করেন না। (সূরাহ বাক্বারাহ: ২৮৪) তুমি দেখ, বিভিন্ন মতের মধ্যে যে মতের দিকে তোমার অন্তর ধাবিত হচ্ছে, তুমি সে মত অনুসরণ করো। অমুক ব্যক্তি বেশি জ্ঞানী ও পরহেজগার হওয়ার কারণে তোমার অন্তর যদি তাঁর মতের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তুমি সেই মতেরই অনুসরণ করো। দুজন ব্যক্তিই যদি তোমার কাছে (জ্ঞান ও পরহেজগারিতায়) সমান হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে বলা হয়, সতর্কতামূলক দুই মতের মধ্যে কঠিন মতটি গ্রহণ করবে। আবার বলা হয়, বরং দুই মতের মধ্যে সহজ মতটি গ্রহণ করবে। কেননা এটাই শরিয়তের মূলনীতির অধিক নিকটবর্তী। আসল কথা হলো জিম্মাদারি মুক্ত হওয়া। আবার বলা হয়, (এক্ষেত্রে) দুই মতের মধ্যে যেটা খুশি সেটাই গ্রহণ করবে।
তবে (শরিয়তের দলিলের) সবচেয়ে কাছে রয়েছে যে মত, সেটা হলো—এক্ষেত্রে সে সহজ মতটি গ্রহণ করবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিন কামনা করেন না।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৮৫) যেহেতু দলিলসমূহ সমমানের। কিংবা দুই মুফতিই প্রশ্নকারীর দৃষ্টিতে একই মানের।” [ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্ব, ৩৫৪ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: http://binothaimeen.net/content/12760]
·
❏ মাযহাব মানা কি ওয়াজিব?
সত্যিকারার্থে মাযহাব মানা কোনোভাবেই ওয়াজিব নয়। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
الله سبحانه وتعالى فرض على الخلق طاعته وطاعة رسوله صلى الله عليه وسلم ، ولم يوجب على هذه الأمة طاعة أحد بعينه في كل ما يأمر به وينهى عنه إلا رسول الله صلى الله عليه وسلم ، حتى كان صِدِّيق الأمة وأفضلها بعد نبيها يقول : أطيعوني ما أطعت الله ، فإذا عصيت الله فلا طاعة لي عليكم . واتفقوا كلهم على أنه ليس أحد معصوما في كل ما يأمر به وينهى عنه إلا رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ولهذا قال غير واحد من الأئمة : كل أحدٍ مِن الناس يؤخذ من قوله ويترك إلا رسول الله صلى الله عليه وسلم.
মহান আল্লাহ মানুষের ওপর তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর রাসূলের ﷺ আনুগত্য ফরজ করেছেন। যাবতীয় আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে কেবল রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির অনুসরণ করা আবশ্যক করেননি। এমনকি নবির পরে এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এবং এই উম্মতের সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) পর্যন্ত বলেছেন, “আমি যেক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করেছি, তোমরা সেক্ষেত্রে আমার অনুসরণ করো, কিন্তু আমি যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করি, তখন তোমাদের ওপর আমার আনুগত্য নেই।” তাঁরা সবাই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত যাবতীয় আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে কেউই ভুলমুক্ত মাসুম নয়। একারণে একাধিক ইমাম বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত প্রত্যেকের কথাই গৃহীত হতে পারে, আবার বর্জনীয়ও হতে পারে’।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ২১১]
·
গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’ গ্রন্থের রচয়িতা মুহাম্মাদ ‘আলী সাবূনীকে (জন্ম: ১৯৩০ খ্রি.) রদ (খণ্ডন) করতে গিয়ে বলেছেন,
قوله عن تقليد الأئمة الأربعة (إنه من أوجب الواجبات) لا شك أن هذا الإطلاق خطأ، إذ لا يجب تقليد أحد من الأئمة الأربعة ولا غيرهم مهما كان علمه؛ لأن الحق في اتباع الكتاب والسنة لا في تقليد أحد من الناس، وإنما قصارى الأمر أن يكون التقليد سائغا عند الضرورة لمن عرف بالعلم والفضل واستقامة العقيدة، كما فصل ذلك العلامة ابن القيم رحمه الله في كتابه (إعلام الموقعين)، ولذلك كان الأئمة رحمهم الله لا يرضون أن يؤخذ من كلامهم إلا ما كان موافقاً للكتاب والسنة، قال الإمام مالك رحمه الله: (كل يؤخذ من قوله ويرد إلا صاحب هذا القبر)،يشير إلى قبر رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهكذا قال إخوانه من الأئمة في هذا المعنى. فالذي يتمكن من الأخذ بالكتاب والسنة يتعين عليه ألا يقلد أحداً من الناس ويأخذ عند الخلاف بما هو أقرب الأقوال لإصابة الحق، والذي لا يستطيع ذلك فالمشروع له أن يسأل أهل العلم، كما قال الله عز وجل: فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ.
“চার ইমামের তাক্বলীদ করার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এটা হলো সবচেয়ে বড়ো ওয়াজিব! নিঃসন্দেহে সার্বজনিকভাবে এমন কথা বলা ভুল। কেননা চার ইমামের কারও কিংবা অন্য কারও তাক্বলীদ করা ওয়াজিব নয়, তাঁর ‘ইলম যে পর্যায়েরই হোক না কেন। যেহেতু কিতাব ও সুন্নাহর অনুসরণের মধ্যেই হক রয়েছে, কোনো মানুষের তাক্বলীদ করার মধ্যে হক নেই। অবশ্য একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে (নিতান্তই বাধ্য হয়ে) প্রয়োজন দেখা দিলে সেই ব্যক্তির তাক্বলীদ করা বৈধ রয়েছে, যিনি ‘ইলম, ফজল ও দৃঢ় ‘আক্বীদাহর ব্যাপারে হয়েছেন সুপরিচিত।
যেমনটি ‘আল্লামাহ ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর “ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন” গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। একারণেই ইমামগণ (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে সন্তোষ ছিলেন না যে, কিতাব ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক হয়—তাঁদের এমন কথা (মানুষের কাছে) গৃহীত হবে। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই কবরবাসী ব্যতীত প্রত্যেকের কথাই গৃহীত হতে পারে, আবার বর্জনীয়ও হতে পারে।” এ কথা বলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কবরের দিকে ইশারা করলেন। কাছাকাছি অর্থে তাঁর অন্য ইমাম ভাইয়েরাও অনুরূপ কথা বলেছেন।
সুতরাং যে ব্যক্তি কিতাব ও সুন্নাহ থেকে (সিদ্ধান্ত) গ্রহণ করতে সক্ষম, তার জন্য ফরজে আইন হচ্ছে—সে কোনো মানুষের তাক্বলীদ করবে না, আর মতানৈক্যের সময় যেই মত হকের অধিক নিকটবর্তী, সেই মত গ্রহণ করবে। আর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম নয়, তার জন্য ‘উলামাদেরকে জিজ্ঞাসা করা বিধেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” (সূরাহ নাহল: ৪৩; সূরাহ আম্বিয়া: ৭)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫২; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২০ হিজরি]
·
❏ সাধারণ মানুষের কি নির্দিষ্ট মাযহাব আছে?
সঠিক কথা হলো সাধারণ মানুষের কোনো নির্দিষ্ট মাযহাব নেই। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,
لا يصح للعامي مذهب، ولو تمذهب به؛ فالعامي لا مذهب له ؛ لأن المذهب إنما يكون لمن له نوع نظر واستدلال، ويكون بصيرا بالمذاهب، على حَسَبِه، أو لمن قرأ كتابا في فروع ذلك المذهب، وعرف فتاوى إمامه، وأقواله. وأما من لم يتأهل لذلك ألبتة، بل قال أنا شافعي أو حنبلي أو غير ذلك : لم يصر كذلك بمجرد القول، كما لو قال أنا فقيه، أو نحوي، أو كاتب : لم يصر كذلك بمجرد قوله! يوضحه : أن القائل : إنه شافعي، أو مالكي، أو حنفي؛ يزعم أنه متبع لذلك الإمام، سالك طريقه! وهذا إنما يصح له : إذا سلك سبيله في العلم والمعرفة والاستدلال؛ فأما مع جهله ، وبعده جدا عن سيرة الإمام، وعلمه وطريقه؛ فكيف يصح له الانتساب إليه، إلا بالدعوى المجردة، والقول الفارغ من كل معنى؟!
“একথা সঠিক নয় যে, সাধারণ মানুষের মাযহাব আছে। যদিও সে মাযহাব মানার দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের কোনো মাযহাব নেই। কেননা মাযহাব মূলত তাঁর জন্য, যাঁর দলিল অবলোকনের ও দলিলগ্রহণের সামর্থ্য আছে এবং এ অনুযায়ী সে মাযহাবসমূহের ব্যাপারে জ্ঞানী হয়েছে। কিংবা সে ওই মাযহাবের শাখাগত (ফুরূ‘ঈ) মাসআলাহর কোনো কিতাব পড়েছে এবং মাযহাবের ইমামের ফতোয়া ও মতামত সম্পর্কে অবগত হয়েছে। পক্ষান্তরে যে এ ব্যাপারে যোগ্যতা অর্জন করেনি, অথচ সে বলে, আমি শাফি‘ঈ, অথবা হাম্বালী, তাহলে স্রেফ এই কথার মাধ্যমেই সে তা হয়ে যাবে না। যেমন কেউ যদি বলে, আমি ফাক্বীহ, কিংবা নাহূবিদ (আরবি ব্যাকরণবিদ), কিংবা লেখক, তাহলে স্রেফ এই কথার মাধ্যমেই সে তা হয়ে যায় না।
আরও স্পষ্ট করে বললে, একজন ব্যক্তি বলে, সে শাফি‘ঈ, কিংবা মালিকী, কিংবা হাম্বালী, কিংবা হানাফী, আর ধারণা করে, সে ওই ইমামের অনুসারী এবং তাঁর পথ অবলম্বনকারী। এটা কেবল তার জন্যই সঠিক, যে জ্ঞান, সমঝ ও দলিলগ্রহণের ক্ষেত্রে ওই ইমামের পথ অবলম্বন করে। পক্ষান্তরে যার এ সম্পর্কে জানা নেই এবং সে নিজেও ইমামের ‘ইলম ও পথ থেকে অনেক দূরে রয়েছে, তার জন্য কীভাবে ওই ইমামের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করা সঠিক হয়, কেবল কতগুলো ফাঁকা বুলি আর নিছক দাবি ছাড়া?!” [ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৬২]
·
অনুরূপভাবে ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
العامي لا يلتزم مذهبا لأنه العامي لا مذهب له، مذهبه مذهب مفتيه فهو أي عالم يسأله يمشي على كلامه أخطأ أو أصاب هو ما عليه مسئولية، هو عمل بقوله تعالى: فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون.
“সাধারণ মানুষ কোনো মাযহাবকে আঁকড়ে ধরবে না। কারণ সাধারণ মানুষের কোনো মাযহাব নেই। সাধারণ মানুষের মাযহাব হলো তার মুফতির মাযহাব। যে ‘আলিমকে সে জিজ্ঞাসা করবে, ওই ‘আলিমের কথার ওপর সে চলবে। ওই ‘আলিম ভুল করুক কিংবা সঠিক, তার ওপর কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এটা হবে মহান আল্লাহর কথার প্রতি আমল, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করো।” (সূরাহ নাহল: ৪৩; সূরাহ আম্বিয়া: ৭)” [সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ১৩৮ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: আল-আসার (alathar) ডট নেট]
·
পরিশেষে বলি, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যিনি ফিক্বহ সম্পর্কে জানার জন্য কোনো মাযহাব ভিত্তিক ফিক্বহ পড়তে চান, তার জন্য উক্ত মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে আরও স্পষ্ট হলো যে, নির্দিষ্ট কোনো মাযহাবের তাক্বলীদ করা কারও জন্য ওয়াজিব নয় এবং সাধারণ মানুষের নির্দিষ্ট কোনো মাযহাবও নেই। বরং তার মুফতির মাযহাবই তার মাযহাব হিসেবে বিবেচিত হবে। আর সকল বিষয়ে নির্দিষ্ট একজন ‘আলিমের তাক্বলীদ করা হারাম।
সাধারণ মানুষ কোনো মাসআলাহর উত্তর না জানলে, তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য এমন জ্ঞানী ‘আলিমকে জিজ্ঞেস করবেন। সেটা অনুযায়ী তিনি আমল করতে পারবেন। তবে যখনই এর বিপরীতে হক প্রকাশিত হবে, তখনই উক্ত ‘আলিমের তাক্বলীদ বাদ দিয়ে হক গ্রহণ করে নিতে হবে। আর তিনি যদি একাধিক আলিম থেকে ফতোয়া নিয়ে যা তার কাছে হকের কাছাকাছি মনে হয় সেটা গ্রহণ করতে চান, তাহলে তাও করতে পারবেন। কিন্তু তারপরও তাঁদের বিপরীতে অন্য ‘আলিমের কথা হক প্রমাণিত হলে, তাঁদের কথা ছেড়ে ওই ‘আলিমের কথার দিকে—যেটাকে হক বিবেচনা করা হচ্ছে—ফিরে যেতে হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member