রিট খারিজ, জাতীয় সঙ্গীত ও ওলামায়ে কেরামের করণীয়
দেশের কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা রিট খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন যে, ‘পবিত্র কুরআনের কোন্ জায়গায় বলা হয়েছে যে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না? পবিত্র কুরআনের কোথাও লেখা নেই যে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না।’ (২৭ মার্চ, ২০১৮, প্রিয়ডটকম)।
মাননীয় আদালতের কাছে বিনীতভাবে পাল্টা প্রশ্ন-
তাহলে কুরআনের কোথায় বলা আছে যে, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক?
যাই হোক, দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া জরুরি মনে করি। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কোনটা গাইবে আর কোনটা গাইবে না—কিংবা কোনটা তারা গাইতে চায় আর কোনটা গাইতে চায়না—এই বিষয়গুলো তো পর্যালোচনায় নিতে হবে।
ধর্মীয় দিক থেকে তাদের আপত্তি থাকতে পারে কিংবা ইতিহাসের আলোকেও তাদের আপত্তি থাকতে পারে, সেসব বিবেচনায় নেওয়াও জরুরি। কিন্তু তা না করে আইন করে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাইতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতে চাওয়াটা নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করি।
একটা বিষয় এখনো আমার আশ্চর্য লাগে যে, বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম এখন পর্যন্ত জাতীয় সঙ্গীত প্রশ্নে কোনো সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি! ফলে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে যখন এত বিতর্ক চলছে, তখন তাদের পক্ষ থেকে জাতীয়ভাবে এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ফতোয়া প্রদান আবশ্যক ছিল। কেননা চলমান এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা না-গাওয়ার ব্যাপারে ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা বিভ্রান্তি ও দ্বিধার মধ্যে আছে।
উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, সাম্প্রতিককালে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল (বিজেপি) ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশপ্রেমের নামে ভারতীয় মুসলমানদের ঈমান-আকিদার বিরোধী স্লোগান দিতে এবং জাতীয় সঙ্গীতের নামে হিন্দুত্ববাদী ‘বন্দে মাতরম’ গান গাইতে তাদের ওপর জোরজবরদস্তি করে যাচ্ছে। মুসলিমবিদ্বেষী বঙ্কিমচন্দ্রের লিখিত ‘বন্দে মাতরম’ গানটি পৌত্তলিক ভাবমূলক হওয়ায় মুসলমানদের তা গাইতে নিষেধ করে ভারতের একাধিক মুসলিম সংগঠন ফতোয়াও দিয়েছে।
দেওবন্দে জমিয়ত উলমায়ে হিন্দ ২০০৯ সালে একটা কনফারেন্সের আয়োজন করে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার আলেম ও ইসলামিক স্কলার অংশগ্রহণ করেন। সেই কনফারেন্সে ভারতের মুসলমানদের ‘বন্দে মাতরম’ গানটি না গাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কারণ তাদের মতে- এই গানের কিছু কথা ইসলামের আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক।
জমিয়ত উলমায়ে হিন্দের এই আহ্বানকে ভারতের মুসলিম ল বোর্ডও সমর্থন করে বলেছিল যে, ‘আমরা দেশকে ভালোবাসতে পারি, কিন্তু দেশকে পূজা করতে পারি না। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আমরা প্রার্থনা করতে পারি না।’ (Jamiat issues fatwa against singing Vande Mataram, India Today, Nov 3, 2009 )
এমনকি মুসলমানদের জন্য ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান উচ্চারণের বিরুদ্ধেও দেওবন্দের সুস্পষ্ট ফতোয়া রয়েছে! (দেখুন, ২ এপ্রিল, ২০১৬ দৈনিক ইনকিলাব)
আমি মনে করি, আসল সংকটটা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা না-গাওয়া প্রসঙ্গে নয়। বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক ছাড়াও কোরাস কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যেতে পারে। বাদ্যযন্ত্র ছাড়া খালি গলায় ইসলামী সঙ্গীত গাওয়া যেতে পারলে মিউজিক ছাড়াও কোরাস কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে কোনো সমস্যা দেখি না। সুতরাং, মূল সমস্যাটা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা না-গাওয়া নিয়ে নয়।
কিন্তু আসল সমস্যাটা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্ধারিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি নিয়েই। এই গানের সমস্যাটা দুই দিক থেকে: প্রথমত, মুসলমানদের ঈমান-আকিদার জায়গা থেকে এর সমস্যা। দ্বিতীয়ত, গানটার রচনাকালের বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সমস্যা।
ইসলামে বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক নিষিদ্ধ বিধায় আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা সাধারণত জাতীয় সঙ্গীত গাইতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু মিউজিক বা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও তো খালি গলায় কোরাস কণ্ঠে গাওয়া যেতে পারে, যেভাবে বাদ্যযন্ত্র ছাড়া ইসলামী সঙ্গীত গাওয়া হয়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা না-গাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। বরং বলতে হবে, ঈমান-আকিদার জায়গায় গানটির কিছু কথা ও ভাবের সমস্যা আছে। এবং গানটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথেও গুরুতর সমস্যা আছে। দুটো দিক নিয়েই নিচে আলোচনা করা হলো।
১. গানটির গুরুতর ঐতিহাসিক সমস্যা
ইতিহাসের যে-পর্যায়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লেখা হয়েছিল, সেটা বিবেচনায় নিলে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষই শুধু নয়, একইসাথে এদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় ও উপনিবেশবিরোধী চেতনাধারী জনগণেরও উচিত নয় গানটি গাওয়া। এমনকি মুক্তিযুদ্ধবাদী চেতনাপন্থীদেরও গাওয়া উচিত নয়।
‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লেখা হয়েছিল ১৯০৫ সালে। তখন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে রবিঠাকুর এটা লিখেছিলেন। ইতিহাস বিশ্লেষকরা বলেন, বঙ্গভঙ্গ হলে সেদিন আমাদের এই পূর্ববাংলায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়তো। রাজনৈতিক ক্ষমতা তাদের হাতে চলে যাওয়ার বেশ সম্ভাবনা ছিল। এর ফলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের নির্যাতিত মুসলিম ও দলিত শ্রেণীর প্রজাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথও প্রশস্ত হতো।
এছাড়া তখন বঙ্গভঙ্গ হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো শোষক জমিদারশ্রেণীর জমিদারিত্ব হুমকির মুখে পড়তো। তাই নিজের জমিদারিত্ব, পূর্ববাংলার মুসলমান ও দলিত শ্রেণীর প্রজাদের শোষণ এবং অভিজাত বর্ণহিন্দুর আধিপত্য নিরঙ্কুশ রাখার স্বার্থে রবিঠাকুর বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে এই গানটি লিখেছিলেন।
গানটি এমনকি পূর্ব-পশ্চিম উভয় বাংলার একত্রীকরণের কিংবা অখণ্ড বাংলার ঐতিহাসিক প্রেরণাও জোগায়। ফলে এটি কোনোভাবেই বাঙালি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের চেতনার প্রতি সর্মথন দেয়না। অথচ আজকের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আর কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অধীন একটি পরজীবী অঙ্গরাজ্য মাত্র!
‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লেখার সময় ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশদের অধীনে। গানটিতে রবিঠাকুরের উল্লেখিত ‘সোনার বাংলা’ ছিল ব্রিটিশদের একটি উপনিবেশ মাত্র। সেই উপনিবেশ ‘সোনার বাংলা’য় দখলদার ব্রিটিশদের সহযোগী হিন্দু বলশালী জমিদারশ্রেণী কর্তৃক অমানবিক নির্যাতন ও শোষণে জর্জরিত হচ্ছিল পূর্ববাংলার দলিত ও মুসলিম প্রজারা। সুতরাং বুঝতে কষ্ট হয়না যে, রবিঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গরিব চাষাভূষা মুসলমান প্রজাদের শোষণ করে কাদের জন্য সোনা ফলিয়েছে?
‘সোনার বাংলা’য় বিশেষত পূর্ববাংলার গরিব মুসলিম প্রজাদের ওপর নির্যাতন, শোষণ ও নিপীড়ন জারি রেখে সামন্তবাদ কায়েম করা হয়েছিল। আর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সেই অত্যাচারী ও শোষক সামন্তবাদী হিন্দু জমিদারশ্রেণীর একজন জলজ্ব্যান্ত প্রতিভূ! তখন রবিঠাকুরের কাছে এটা ‘সোনার বাংলা’ মনে হলেও গরিব নির্যাতিত মুসলিম ও দলিত শ্রেণীর প্রজাদের জন্য ছিল ‘নরক বাংলা’।
সেসময় এই পূর্ববাংলা থেকে হিন্দু জোতদার ও জমিদাররা শোষণের মাধ্যমে লুটপাট করে সব নিয়ে যেতো পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায়। ঠিক যেমন পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করে সব নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। এই পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ বাংলাদেশেও রবীন্দ্রনাথের জমিদারি ছিল, শিলাইদহে। সামন্তবাদী জমিদার রবিবাবুর প্রজানিপীড়ন সম্পর্কে একটি বিশেষ উদ্ধৃতি না দিলেই নয়, তা হলো: ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামন্তবাদী প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন। তাঁর দফায় দফায় খাজনা বৃদ্ধি এবং জোর-জবরদস্তি করে তা আদায়ের বিরুদ্ধে ইসমাইল মোল্লার নেতৃত্বে শিলাইদহে প্রজা-বিদ্রোহ ঘটেছিল।’ (জমিদার রবীন্দ্রনাথ, অমিতাভ চৌধুরী, দেশ, শারদীয় সংখ্যা, কলকাতা ১৪৮২)।
সুতরাং ইতিহাসের আলোকে পর্যালোচনা করলে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট— বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মুক্তিযুদ্ধের তিন মূলনীতি: ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়নীতি’র চেতনা এবং আমাদের ঐতিহাসিক এন্টি-কলোনিয়াল সংগ্রামের চেতনার বিরোধী!
এছাড়া স্বয়ং বঙ্গবন্ধুরও নাকি ইচ্ছা ছিলনা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার! বরং বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হোক, কারণ এ গানটি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। কিন্তু তৎকালীন সাংস্কৃতিক নীতি-নির্ধারক বামপন্থী কমিউনিস্টরা বঙ্গবন্ধুর আবেগকে মূল্যায়ন করলো না! যদিও পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানটিকে ‘জাতীয় গীত’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়।
২. ঈমান-আকিদার জায়গা থেকে গানটির সমস্যা
‘আমার সোনার বাংলা’ গানটা আগাগোড়াই পৌত্তলিক ভাবপুষ্ট। হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে গরুকে ‘মা’ বলে পূজা করে, ঠিক সেভাবে দেশকেও ‘মা’ কল্পনা করে পূজা করার মতো একটা শেরেকি ভাব এই গানটির মধ্যে নিহিত আছে। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মজাত মাতৃভক্তিবাদ ফুটে ওঠে গানটিতে।
মুসলমানরা দেশের মাটি, বাতাস, আলো, বায়ু ইত্যাদিকে আল্লাহ’র দান ও তাঁর সৃষ্টির অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে তাঁর প্রশংসায় শুকরিয়া জ্ঞাপনপূর্বক সিজদাবনত হয়। অথচ গানটিতে তথাকথিত ‘মা’-এর বন্দনা করা হয়েছে, যেন দেশ নিজেই একটা মাতৃদেবী! আর ইসলামের বিশ্বাসব্যবস্থায় কেবল আল্লাহ’র প্রতি ব্যতীত আর কোনো বিশেষ ভক্তিবাদের স্থান নেই, কারণ তা শিরক বলে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আকিদার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক কয়েকটি লাইন গানটি থেকে তুলে না ধরলেই নয়। তা হলো:
‘ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে / দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে / ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিবো চরণতলে / মরি হায়, হায় রে।’
এখানে বিশেষত ‘তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে’ এবং ‘গরিবের ধন যা আছে তাই দিবো চরণতলে’—এ দুটি লাইনে যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেবীর পাদদেশে পূজার অর্ঘ্য নিবেদনের গভীর আর্তি জেগে ওঠে!
তাছাড়া দেশকে ‘মা’ হিসেবে গণ্য করার প্রবণতা একসময় ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে ছিলনা; কিন্তু উনিশ শতকের হিন্দু রেনেসাঁসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে হিন্দুত্ববাদের জাগরণের ফলে হিন্দুদের স্বভাবজাত ধর্মীয় মাতৃভক্তিবাদপ্রসূত ‘দেশমাতা’ ভাবনার জন্ম হয় এবং পরবর্তীতে সাংস্কৃতিকভাবে সেটা ধীরে ধীরে মুসলমানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
গরুকেও হিন্দুরা ধর্মীয় ‘মা’ হিসেবে পূজা করে। সুতরাং মাতৃভক্তিবাদ হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ ধর্মাচার মাত্র। তাই, পৌত্তলিক ভাবপুষ্ট হওয়ায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি নিয়ে বিশেষত ওলামায়ে কেরামের আপত্তি থাকা স্বাভাবিক। এমনকি সেকুলারদেরও আপত্তি থাকা উচিত, যেহেতু তারা ঐশ্বরিকতা বা দেবত্ব জাতীয় কিছু বিশ্বাস করে না। তাদেরও দুর্ভাগ্য যে, এই গানে ধর্মহীন সেকুলার ভাবটাও নেই!
আগেই বলেছি, মিউজিক ছাড়া সম্মিলিত কোরাস কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যেতে পারে। কিন্তু রবিঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির ভাবের সাথে ঈমান-আকিদার বিরোধ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটই ওলামায়ে কেরামের মূল আপত্তি।
তাই, এই মুহূর্তে ত্বরিত ব্যবস্থা হিসেবে কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার উভয় কর্তৃপক্ষ অন্তত এ ব্যাপারে আলোচনায় বসে ঈমান-আকিদা এবং আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা দেশাত্মবোধক গজল বা গান নির্ধারণ করে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। গান বা গজল যেটাই হোক, গানের মধ্যে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ থাকলেই হলো। এটা মোটেও উদ্ভট প্রস্তাব নয়। উদাহরণ হিসেবে ভারতের কথা বলা যায়, সেখানে জাতীয় সঙ্গীত দুটো। সুতরাং আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আপত্তি বিবেচনায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত দুটো হলে নিশ্চয়ই তা অযৌক্তিক হবেনা।
পরিশেষে বলবো, গানটি শুধু ঈমান-আকিদার সাথেই সাংঘর্ষিক তা-ই নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। ইন অ্যা ওয়ার্ড, ডিসকোয়ালিফাইড। অতএব ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার ঈমান-আকিদা রক্ষার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ফতোয়া দিয়ে সঠিক করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে আশা করি।
লেখকঃ তারেকুল ইসলাম