ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণ : এক নাটকীয় কাহিনী

[ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ড. মুহাম্মাদ হুযায়ফা (রাজকুমার) ছিলেন এক কট্টোরপন্থী হিন্দু। তার পরিবার শিক্ষিত হওয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণে ছিল সিদ্ধহস্ত। কোন এক হিন্দু পরিবারের ইসলাম গ্রহণকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার পরিপেক্ষিতে তার ইসলাম গ্রহণ। ভারতের ফুলাতের জনৈক এক আলেমের দাওয়াতের মাধ্যমে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীও ইসলামকে আলিঙ্গন করেন। নিঃসন্তান রাজকুমার ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে এক পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান লাভ করেন। শুধুমাত্র ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি চাকুরী থেকে বরখাস্ত হন। যদিও পরবর্তীতে পুনরায় চাকুরীতে যোগদান করেন। ভারতের মুযাফফরনগর থেকে প্রকাশিত মাসিক উর্দূ পত্রিকা ‘আরমুগান’ ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়। তার সাক্ষাৎকার গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মূল সাক্ষাৎকার থেকে কিছু সংক্ষেপ করে উপস্থাপন করা হল। সহকারী সম্পাদক]

আহমাদ আওয়াহ : আস-সালাম ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : ওয়া ‘আলাইকুমুস সালামু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ।

আহমাদ আওয়াহ : আল্লাহর হাযার শুকরিয়া যে, আপনি এসেছেন। আপনার সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। আপনার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমি খুবই উদগ্রীব ছিলাম। আল্লাহ সে সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : দিল্লীতে এক সরকারী কাজে এসেছিলাম। মাওলানা ছাহেবের ফোন তো পাই না। ধারণা করলাম, ফোন করে দেখি। যদি ফুলাতে (ভারতের একটি স্থানের নাম) থাকেন, তাহলে দেখা করে যাব। বহুদিন যাবৎ দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার দরুণ খুবই অস্থির ছিলাম। ফোন করে জানতে পারলাম, তিনি দিল্লীতেই আছেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির বিষয় আর কী হতে পারে যে, দিল্লীতেই তার সাথে দেখা হয়ে গেল। আমার আল্লাহর পরম অনুগ্রহ যে, রামাযানের আগেই দেখা হয়ে গেল। কেননা (মানসিক) অস্থিরতাও দূর হয়ে গেল, আবার ঈমানের ব্যাটারীও চার্জ হয়ে গেল। সাথে সাথে একটি প্রোগ্রামেও মাওলানা ছাহেবের সঙ্গে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হ’ল। অনেক সান্ত্বনাও পেলাম। আল-হামদুলিল্লাহ।

আহমাদ আওয়াহ : হুযায়ফা ছাহেব! আমি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। আমাদের এই ফুলাত থেকে ‘আরমুগান’ নামে একটি মাসিক ম্যাগাজিন বের হয়। আপনি সম্ভবত জানেনও। এ জন্য আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই, যাতে করে যারা দাওয়াতী কাজ করেন তারা এ থেকে অনেক দিক-নির্দেশনা পান। বিশেষ করে আপনার সাক্ষাৎকারের দ্বারা ভয়-ভীতি হরাস পায় ও উৎসাহ অনুপ্রেরণা বাড়ে।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : হ্যাঁ, আহমাদ ভাইয়া! আমি ‘আরমুগান’ সম্পর্কে বেশ জানি। আমি মাওলানা ছাহেবকে কয়েকবার আবেদন জানিয়েছি যে, তিনি যেন উক্ত পত্রিকার হিন্দী সংস্করণ বের করেন। তাহলে প্রতিবছরে কমপক্ষে পাঁচশ’ গ্রাহক বানাব ইনশাআল্লাহ! আমি জানলাম যে, সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দী সংস্করণ বের হচ্ছে। কিন্তু জানি না কেন সেপ্টেম্বরে তা আর প্রকাশিত হল না।

আহমাদ আওয়াহ : ইনশাআল্লাহ অতি সত্বর তা আসছে। আপনি চিন্তা করবেন না। আববুরা এজন্য খুবই চিন্তিত। অথচ পত্রিকার জন্য লোকের দাবী ও চাহিদা খুব বেশী।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : আল্লাহ করুন। খবরটা যেন সত্য হয়। আহমাদ ভাই, এখন আদেশ করুন আমার কাছ থেকে কী জানতে চান?

আহমাদ আওয়াহ : আপনার পরিচয় দিন?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : ১৯৫৭ সালের ১৩ই আগস্ট তারিখে পূর্ব ইউপির বস্তি যেলার একটি গ্রামে জমিদারগৃহে আমার জন্ম। ১৯৭৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করি। আমার চাচা ইউপি পুলিশে ডি.এস.পি. ছিলেন। তার ইচ্ছায় পুলিশে ভর্তি হই। চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৮২ সালে বি.কম পাস করি এবং ১৯৮৪ সালে এম.এ করি। ইউপির ৫৫টি থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ থাকি। ১৯৯০ সালে আমার প্রমোশন হয় ও সিও হই। ১৯৯৭ সালে একটি ট্রেনিংয়ের জন্য ফ্লোরা একাডেমীতে যেতে হয়। একাডেমির ডাইরেক্টর জনাব এ. এ. ছিদ্দিকী ছিলেন আমার চাচার বন্ধু। তিনি আমাকে ক্রিমিন্যালোজিতে পি.এইচ.ডি. করার পরামর্শ দেন। আমি ছুটি নিয়ে ২০০০ সালে পি.এইচ.ডি. করি। ১৯৯৭ সালে চাকুরীতে সর্বোত্তম দক্ষতা ও কৃতকার্যতার (best performance) ভিত্তিতে আমাকে বিশেষ পদোন্নতি হিসাবে ডি.এস.পি পদে প্রমোশন প্রদান করা হয় এবং মুযাফফরনগর যেলার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে পোস্টিং দেওয়া হয়। আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইঞ্জিনিয়ার। এক বোন আছে, যার বিয়ে হয়েছে এক কলেজ প্রভাষকের সঙ্গে। পরিবারে লেখাপড়া শেখার  রেওয়াজ আছে। বর্তমানে আমি পূর্ব ইউপির এক যেলা হেড কোয়ার্টারের গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান।

আহমাদ আওয়াহ : আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : আমার পরিবার শিক্ষিত। এ কারণে মুসলমানদের প্রতি শত্রুতায় তারা বিখ্যাত। এর একটি কারণ এটাও যে, আমাদের পরিবারের একটি শাখা আনুমানিক একশত বছর আগে ইসলাম কবুল করে ফতেহপুর, হাঁসওয়াহ ও প্রতাপগড়ে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তারা ছিল অত্যন্ত পাকা মুসলমান। এদিকে আমাদের বস্তিতে ত্রিশ বছর আগে বস্তির জমিদারদের ছোঁয়াছুঁয়ির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে আটটি দলিত (অস্পৃশ্য), অচ্ছুত, নিবুণ্রের হিন্দু পরিবার মুসলমান হয়ে যায়। এই দু’টি ঘটনায় আমার পরিবারে মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার মনোভাব আরও বৃদ্ধি পায়। আমাদের খান্দানের কিছু যুবক গ্রামে ‘বজরং দল’-এর একটি শাখা কায়েম করে। পরিবারের যুবকরাই ছিল এর অধিকাংশ সদস্য। আমি এসব কথা এজন্য বললাম যে, কোন মানুষের ইসলাম গ্রহণের জন্য সবচেয়ে বিরোধী পরিবেশ ছিল আমার। কিন্তু আল্লাহ যাঁর নাম হাদী (হেদায়াতকারী) ও রহীম (পরম দয়ালু), তিনি আপন শানের কারিশমা দেখাতে চাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে এক অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক পথ প্রদর্শন করেন।

আসলে হয়েছিল কি, গাযিয়াবাদ যেলার পাল খোয়ার্হ একই পরিবারের নয়জন লোক মাওলানার কাছে এসে ফুলাতে মুসলমান হয়। এদের মধ্যে ছিল মা-বাবা, চার মেয়ে ও তিন ছেলে। ছেলে ছিল বিবাহিত। মাওলানা ছাহেব তাদের কালেমা পড়তে বলেন। তারা বলে, আমরা আটজন তো এখন কালেমা পড়ছি। বড় ছেলেটি বিবাহিত। তার স্ত্রী এখনও মুসলমান হতে রাযী নয়। সে রাযী হলেই আমাদের এ ছেলেও একত্রে কলেমা পড়বে। মাওলানা ছাহেব বললেন, জীবন-মরণের আদৌ কোন ভরসা নেই। এও এক সাথেই কালেমা পড়ে নিক। এখনই তা স্ত্রীকে বলার দরকার নেই। এরপর স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত করুক। তারপর আবার স্ত্রীর সঙ্গে একত্রে দ্বিতীয়বারের মত কালেমা পড়বে। মাওলানা ছাহেব তাদের সকলকে কালেমা পড়ান এবং তাদের অনুরোধে সকলের ইসলামী নামও রেখে দেন। তাদের একান্ত অনুরোধে একটি প্যাডে তাদের ইসলাম গ্রহণ এবং নতুন নামের সার্টিফিকেট বানিয়ে দেন। তাদের এটাও বলে দেন যে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ যরূরী। এ জন্য শপথনামা তৈরি করে ডিএমকে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠিয়ে দেবে এবং কোন পত্রিকায় ঘোষণা প্রদান যথেষ্ট হবে। এরা খুশি হয়ে সেখান থেকে চলে যায় এবং আইনগত পাকা কার্যক্রম গ্রহণ করে। বাচ্চাদেরকে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়।

অতঃপর বড় ছেলের বৌ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর পরিবারের অন্যান্য লোকদের বলে দেয়। এক দু’জন করে সর্বত্র এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হিন্দু সংগঠনগুলো উত্তেজিত হয়ে উঠে। টিভি চ্যানেলের লোকেরা এসে যায়। ফলে দেখতে না দেখতেই দাবানলের মত চতুর্দিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। ‘দৈনিক জাগরণ’ ও ‘অমর উজালা’ এ দুই হিন্দী পত্রিকায় চার কলামব্যাপী বড় বড় হরফে এই খবর ছাপা হয়। যার হেডলাইন ছিল, ‘লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তকরণে সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ : ধর্মান্তকরণ ফুলাত মাদরাসায় হয়েছে’ এই খবরে গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও উত্তাপ সৃষ্টি হয়। সে সময় আমার পোস্টিং ছিল মুযাফফরনগর। অফিসিয়াল দায়িত্ব ছাড়াও এ খবরে আমার নিজের মধ্যেও ক্রোধের সঞ্চার হয়। আমি আমার দু’জন ইন্সপেক্টরসহ ফুলাত পৌঁছি। সেখানে যেসব লোকের সঙ্গে দেখা হয়, তাঁরা অজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং বলে যে, মাওলানা ছাহেবই কেবল সঠিক বিষয় বলতে পারেন। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, আমাদের এখানে কোন বেআইনী কাজ হয় না। মাওলানা ছাহেবের সঙ্গে আপনারা দেখা করুন। তিনি আপনাদেরকে যা সত্য তাই বলবেন। আমি তাদেরকে আমার ফোন নম্বর দিই, যেন মাওলানা ছাহেবের ফুলাত আগমনের খবর আমাকে জানাতে পারে।

তৃতীয় দিন ফুলাতে মাওলানা ছাহেবের প্রোগ্রাম ছিল। ২০০২ সালের ৬ই নভেম্বর বেলা এগারটায় আমরা ফুলাত পৌঁছি। তার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি খুব আনন্দের সাথে আমাদের সঙ্গে মিলিত হন। আমাদের জন্য চা-নাশতার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, খুব খুশি হয়েছি যে, আপনারা এসেছেন। আসলে মৌলভী-মোল্লাদের ও মাদরাসাগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করা হয়ে থাকে। আমি তো আমার সাথীদের ও মাদরাসাওয়ালাদের বারবার বলি, পুলিশের লোক, হিন্দু সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, সি.আই.ডি., সিবিআই-এর লোকদের খুব বেশি বেশি মাদরাসাগুলোতে ডেকে আনা দরকার; বরং কয়েক দিন মেহমান হিসাবে রাখা উচিত, যাতে করে তারা মুসলমানদের  ভেতরকার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন এবং মাদরাসাগুলোর কদর বুঝতে পারেন। আমি বললাম, আপনি একদিন আগেও এসেছিলেন। আপনার জন্যই আজ এসেছি। মাওলানা ছাহেব হেসে বললেন, বলুন আপনার কী সেবা করতে পারি?

আহমাদ ভাই! মাওলানা ছাহেব সাক্ষাতের প্রারম্ভেই এমন আস্থা ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটালেন যে, আমার চিন্তা-ভাবনার ধারাই পাল্টে গেল। আমার ভেতর ক্রোধের আধা ভাগও অবশিষ্ট ছিল না। আমি পত্রিকা বের করলাম এবং জানতে চাইলাম, এ খবর পড়েছেন কি?

মাওলানা ছাহেব বললেন, ‘রাত্রে আমাকে এ পত্রিকা দেখানো হয়েছে। আমি ‘অমর উজালা’-তে এই খবর পড়েছি’। আমি বললাম, ‘এরপর এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?’

মাওলানা ছাহেব বললেন যে, ‘আমি এক সফরে যাচ্ছিলাম। তো যখন গাড়িতে আরোহণ করতে যাচ্ছি এমন সময় একটি জীপ গাড়ি এসে দাঁড়াল। আমার সফরের তাড়া ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলল, এরা আমাদের ভাই। তারা তাদের বাড়ির লোকজনসহ মুসলমান হতে চায়। এজন্য তারা এক মাস যাবৎ পেরেশান। আমি গাড়ি থেকে নেমে আসি, তাদের কালেমা পড়াই। তাদের চাপাচাপিতে আমি তাদের ইসলামী নামও বলে দিই এবং তাদের সবাইকে ইসলাম গ্রহণের একটি সার্টিফিকেটও দিই। তাদের এটাও বলে দিই যে, আইনগত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আপনারা শপথনামা/হলফনামা তৈরি করে ডি.এম-কে জানাবেন। একটি পত্রিকায় ঘোষণা পাঠাবেন। তবে আরও ভাল হয় যদি যেলা গেজেটে দিয়ে দেন। তারা ওয়াদা করল যে, কালই গিয়ে আমরা এসব কাজ করব।

আমি জানতে পেরেছি, তারা তা সম্পন্ন করেছে। মাওলানা ছাহেব বললেন, আমাদের দেশ সেক্যুলার রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের আইন-কানূন আপন ধর্ম মানা ও ধর্মের দাওয়াত প্রদানের মৌলিক অধিকার আমাদেরকে দিয়েছে। কাউকে ঈমানের দাওয়াত দেয়া, কেউ মুসলমান হতে চাইলে তাকে কালেমা পড়ানো আমাদের মৌলিক আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার। যে অধিকার আইন ও সংবিধান আমাদেরকে দেয়, সে ব্যাপারে আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমরা জেনে-বুঝে কোন বেআইনী কাজ কখনো করি না। ভুলক্রমে হয়ে গেলে তার সংশোধন ও ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করি। লোভ দেখিয়ে কিংবা ভীতি প্রদর্শনপূর্বক ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলছেন? এটা তো একদম বেআইনী। আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল এই যে, এই বেআইনী কাজ সম্ভবও নয়। ধর্ম পরিবর্তন করা অথবা কারোর মুসলমান হওয়া তার অন্তর-মনের বিশ্বাসের পরিবর্তনের ব্যাপার, যা লোভ-লালসা বা ভয়-ভীতির দ্বারা হতেই পারে না। আপনাকে খুশী করার জন্য কেউ বলতে পারে যে, আমি হিন্দু হচ্ছি অথবা মুসলমান হচ্ছি। কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নিজের জীবনে মানুষ ভেতরের অনুমোদন ছাড়া কখনো নিতে পারে না।

দ্বিতীয়ত: এর চাইতেও যা গুরুত্বপূর্ণ ও যরূরী তা হল, আমি একজন মুসলমান। আর মুসলমান তাকে বলা হয়, যে সকল সত্য কথাকে মানে। আমাদের মালিক এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) যাঁর সম্পর্কে এই ভুল ধারণা বিদ্যমান যে, তিনি কেবল মুসলমানদের রাসূল এবং তাদের (মুসলমানদের) জন্য মালিকের পক্ষ থেকে সংবাদবাহক ছিলেন। অথচ কুরআন ও হাদীছে রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কেবল একথাই পাওয়া যায় যে, তিনি বলেন, আমি সকলের মালিক প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত সমগ্র মানব জাতির প্রতি সর্বশেষ রাসূল। তিনি এত সত্যবাদী ছিলেন যে, তাঁর দ্বীনের ও জীবনের শ্রেষ্ঠ দুশমনও তাঁকে কখনো মিথ্যাবাদী বলতে পারেনি। বরং তাঁর শত্রুরাও তাঁকে আছ-ছা-দিকুল আমীন (বিশ্বস্ত আমানতদার) এবং সত্যবাদী ও ঈমানদার উপাধি দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এই যে, দিন হচ্ছে, আমাদের চোখ তা দেখছে। অথচ এই চোখ ধোঁকা দিতে পারে যে, দিন হচ্ছে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) আমাদের যে খবর দিয়েছেন, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল, ধোঁকা ও মিথ্যার লেশমাত্র নেই। আমাদের রাসূল (ছাঃ) জানিয়েছেন, ‘মানুষ পরস্পর রক্ত সম্পর্কীয় ভাই (আদম (আঃ)-এর দিক দিয়ে)। সম্ভবত আপনারাও তা বিশ্বাস করেন’। আমি বললাম যে, ‘আমাদের এখানেও তাই মনে করা হয়’।

মাওলানা বললেন, ‘একথা তো একদম সত্য যে, আমরা এবং আপনারা, আমি এবং আপনি রক্ত সম্পর্কীয় ভাই। এর চেয়ে বেশী এটাও হতে পারে যে, আপনি আমার চাচা অথবা আমি আপনার চাচা। আমার ও আপনার মধ্যে রক্তের সম্পর্ক আছে। এই রক্ত সম্পর্ক ছাড়াও আপনিও মানুষ আর আমিও মানুষ। আর মানুষ তো সে-ই, যার মধ্যে প্রেম-ভালবাসা বিদ্যমান। একে অন্যের প্রতি কল্যাণের প্রেরণা বিদ্যমান। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে আপনি যদি এটা মনে করেন যে, হিন্দু ধর্মই একমাত্র মুক্তির পথ ও মোক্ষ লাভের উপায়, তাহলে আপনাকে এই সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে ও এই সম্পর্কের খাতিরে আমাকে হিন্দু বানাবার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। আর আপনি যদি মানুষ হন, আপনার বুকের মধ্যে যদি পাথর না থেকে থাকে, মায়া-মমতাশূন্য না হন, তাহলে আপনার ভেতর ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তি আসা উচিত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি ভুল পথ ছেড়ে মুক্তির পথে এসে যাই’। অতঃপর মাওলানা ছাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কথা ঠিক কিনা? আমি বললাম, ‘বিলকুল ঠিক’।

মাওলানা ছাহেব বললেন, ‘আপনাকে সর্বপ্রথম এসেই আমাকে হিন্দু হবার জন্য বলা দরকার ছিল’।

দ্বিতীয় কথা হল, আমি মুসলমান। বহির্গত সূর্যের আলোকরশ্মির চেয়েও আমার এ কথার উপর বেশি বিশ্বাস যে, ইসলামই একমাত্র সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ ধর্ম এবং মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। আপনি যদি মুসলমান না হয়ে দুনিয়া থেকে চলে যান, তাহলে চিরস্থায়ীভাবে নরকে জ্বলতে হবে। জীবনের একটি নিঃশ্বাসেরও বিশ্বাস নেই। যেই শ্বাসটি ভেতরে চলে গেল এর কী নিশ্চয়তা আছে যে, তা বাইরে আসা পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন? আর এরই বা ভরসা কোথায় যে, যেই নিঃশ্বাসটি বাইরে বেরিয়ে গেল, তা ভেতরে নিয়ে আসা পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন? এমতাবস্থায় আমি যদি মানুষ হই আর আমি আপনাকে আমার রক্ত সম্পর্কীয় ভাই মনে করি, তবে যতক্ষণ আপনি কালেমা পড়ে মুসলমান না হবেন, ততক্ষণ আমার স্বস্তি আসবে না।

তিনি আরো বলেন, একথা আমি নাটক হিসাবে বলছি না। স্বল্পক্ষণের এই সাক্ষাতের পর রক্ত সম্পর্কের কারণে যদি রাত্রে শুতে শুতেও আপনার মৃত্যু ও নরকের আগুনের খেয়াল জাগে, তাহলে আমি অস্থির হয়ে কাঁদতে থাকব। এজন্য স্যার! আপনি পালখোহওয়ালদের চিন্তা বাদ দিন। যেই মালিক জন্ম দিয়েছেন, পয়দা করেছেন, জীবন দিয়েছেন তাঁর সামনে মুখ দেখাতে হবে। আমার ব্যাথার চিকিৎসা তো তখনই হবে, যখন আপনারা তিনজনই মুসলমান হয়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি আমার উপর দয়া করুন। আপনারা তিনজনই কালেমা পড়ুন।

আহমাদ ভাই! আমি তখন এক অপর বিস্ময়ের সাগরে নিমজ্জিত ছিলাম। মাওলানা ছাহেবের ভালবাসা তো নয়, তাব সবগুলো কথা ছিল যাদু! আমি এমন এক পরিবারের সদস্য যাদের ঘটিতে মুসলমান, মুসলিম রাজা-বাদশাহ ও ইসলামের প্রতি শত্রুতা পান করানো হয়েছিল। আমি এই খবর পড়ে সীমাতিরিক্ত উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ হই এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুলাত গিয়েছিলাম। কিন্তু মাওলানা ছাহেব আমাকে না ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়নের জন্য বলছেন, আর না ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্য বলছেন। ব্যস, সোজাসুজি মুসলমান হবার জন্য বলছেন। কিন্তু তখন আমার অন্তর ও বিবেক যেন মাওলানা ছাহেবের ভালবাসার নিগড়ে অসহায় রকম বন্দী। আমি বললাম, কথা তো আপনার একেবারে সাদামাটা ও সত্য এবং আমাদেরকে ভাবতেই হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এত জলদী করার নয় যে, এত তাড়াতাড়ি আমি তা নিতে পারি। মাওলানা ছাহেব বললেন, সত্য কথা হল আপনি এবং আমি সবাই মালিকের সামনে এক বড় দিনের হিসাবের জন্য একত্রিত হব। সে সময় এই সত্য আপনি অবশ্যই পাবেন যে, এই ফায়ছালা খুব তাড়াতাড়ি করার এবং এতে বিলম্ব করার আদৌ অবকাশ নেই। মানুষ এ ব্যাপারে যত দেরী করবে, ততই পস্তাবে।

জানি না, এরপর জীবন-যিন্দেগী ফায়ছালা করার অবকাশ দেয় কি-না। মৃত্যুর পর পুনরায় আফসোস ও পস্তানো ছাড়া মানুষের আর কিছুই করার থাকবে না। করতে পারবে না। এ কথা অনড় সত্য যে, ঈমান গ্রহণ করা এবং মুসলমান হওয়ার চেয়ে বেশী তাড়াহুড়া করার মত আর কোন ফায়ছালা হতেই পারে না। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি হিন্দু ধর্মকে মুক্তির পথ মনে করেন, তাহলে আমাকে হিন্দু বানাতে আপনাকে এতটাই জলদী করা দরকার, যেভাবে আমি মুসলমান হবার জন্য তাড়াতাড়ি করতে বলছি। আমার খেয়াল হল যে, যে বিশ্বাস, যে দৃঢ় আস্থা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে মাওলানা ছাহেব আমাকে মুসলমান হতে বলছেন, সে বিশ্বাস ও আস্থার সাথে আমি তাঁকে হিন্দু হতে বলতে পারছি না। বরং সত্য বলতে কি, আমরা আমাদের গোটা ধর্মকে কোথাও শ্রুত প্রথার উপর কাহিনী সমষ্টি ছাড়া কিছুই মনে করি না। হিন্দু ধর্মের উপর আমার বিশ্বাসের অবস্থা যখন এই, তখন কাউকে কোন্ ভরসায় ও কিসের উপর ভর করে হিন্দু হওয়ার জন্য দাবি জানাতে পারি?

আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বলছিল, রাজকুমার! ইসলামের মধ্যে অবশ্যই সত্য রয়েছে, মাওলানা ছাহেবের মধ্যে এই সত্যের বিশ্বাস রয়েছে। মাওলানা ছাহেব কখনো কখনো তোষামোদের সাথে আবার কখনো জোর দিয়ে বারবার আমাদেরকে কালেমা পড়ে মুসলমান হবার জন্য বলতে থাকেন। মাওলানা ছাহেব যখন তোষামোদ করতেন, তখন আমার মনে হত যেন কোন বিষপানে ইচ্ছুক ও আগ্রহী অথবা আগুনে লাফ দিয়ে পড়তে উদ্যত কাউকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কোন সংবেদনশীল, কোন মমতাময়ী মা তার সন্তানকে তোষামোদ করছেন।

মাওলানা ছাহেব আমাদেরকে বারবার কালেমা পাঠের উপর জোর দিতে থাকেন। আমি ওয়াদা করি, আমরা বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করব। আমাদের পড়ার জন্য কিছু বই দিন। আমরা গবেষণা করে দেখি। তখন তিনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে বলেন, হে্ মালিক! তুমি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তুমিতো সর্বাধিক দয়ালু! চোখ বন্ধ করে যখন সেই মালিককে স্মরণ করবেন, তখন আপনাদের জন্য আল্লাহ ইসলামের পথ অবশ্যই খুলে দেবেন। মূলতঃ মানুষের দিলকে ও হৃদয়-মনকে পাল্টে দেবার ফায়ছালা সেই একক সত্তার কাজ। আমি মাওলানা ছাহেবকে বলি, ঠিক আছে। পরিবেশ গরম হচ্ছে, উত্তপ্ত হচ্ছে। আপনি পত্রিকার এই খবর খন্ডন করে একটি বিবৃতি দিন। মাওলানা ছাহেব বললেন, আমি তাদেরকে ধর্মীয় ও আইনগত অধিকার ভেবে কালেমা পড়িয়েছি। মিথ্যা খন্ডন কিভাবে হতে পারে? আমার অভিমত হল, আপনারও কোন মিথ্যা কথা গোপন করবেন না। আমি বললাম, আচ্ছা আমরা নিজেরাই করে দেব। এরপর আমরা ফিরে যাই।

আহমাদ আওয়াহ : আপনি কালেমা পড়েননি?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : মাওলানা ছাহেব কর্তৃক প্রদত্ত বইসমূহ অধ্যয়ন করে আমার ভেতর মাওলানা ছাহেবের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ থেমে থেমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইসলাম সম্পর্কে পড়ার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পায়। আমি মুযাফফরনগরে একটি দোকান থেকে কুরআন মাজীদের একটি হিন্দী অনূদিত কপি নিয়ে আসি। আমি ফোনে মাওলানা ছাহেবের কাছে এটি পড়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করি। তিনি বলেন, দেখুন কুরআন মজীদ আপনি অবশ্যই পড়বেন। কিন্তু হ্যাঁ, কেবল একথা মনে করে যে, আমার মালিকের প্রেরিত বাণী, এটি মালিকের কালাম, মালিকের কথা মনে করে খুব ভালভাবে আপনি পড়ুন। পবিত্র কালাম পাক-সাফ হয়েই পড়া উচিত। অতঃপর আমি দু’সপ্তাহে গোটা কুরআন মাজীদ পড়ে ফেলি। এখন আমার মুসলমান হওয়ার জন্য ভেতরের দরজা খুলে গিয়েছে। আমি ফুলাত গিয়ে মাওলানা ছাহেবের সামনে কালেমা পড়ি। মাওলানা ছাহেব আমার নাম ‘রাজকুমার’ বদলে আমার ইচ্ছানুক্রমে ‘মুহাম্মাদ হুযায়ফা’ রাখেন এবং বলেন যে, আমাদের নবী করীম (ছাঃ) এই নামের এক ছাহাবীকে গোপনীয়তা রক্ষা ও গোয়েন্দাগিরীর জন্য পাঠাতেন। এদিক দিয়ে এ নাম আমার খুব ভাল লাগে।

আহমাদ আওয়াহ : ইসলাম গ্রহণের পর চাকুরীতে আপনার কোন সমস্যা হয়নি?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : এলাহাবাদে পোস্টিং থাকাকালে আমি আমার ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিই এবং আইনগত কার্যক্রম হাইকোর্টের একজন উকীলের মাধ্যমে গ্রহণ করি, যেজন্য আমাকে আমার বিভাগ থেকে অনুমতি গ্রহণ আবশ্যক ছিল। আমি এজন্য দরখাস্ত করি। একজন বেদজী ছিলেন আমার বস। তিনি কঠোরভাবে আমাকে এ থেকে বাধা দেন এবং আমি এ সিদ্ধান্ত নিলে তিনি আমাকে সাসপে- করবেন বলে হুমকিও দেন। আমি তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিই, এ সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়ে ফেলেছি। এখন আর সেখান থেকে ফেরার কোন প্রশ্নই আসে না। আপনি যা করতে পারেন করুন। তিনি আমাকে সাসপেন্ড করেন। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। এসময়ে ইসলাম সম্পর্কে আরো জানার সুযোগ পেলাম। পরবর্তীতে লাক্ষ্ণৌয়ের একজন মুসলমান অফিসারের সহযোগিতায় এবং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে চাকুরীতে পুনর্বহাল করা হয়।

আহমাদ আওয়াহ : আপনার সঙ্গী দুই ইন্সপেক্টরের কী হল, যারা আববুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : তাদের একজন ইসলাম কবুল করেছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক সমস্যা ও বিপদাপদ এসেছে। তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু তিনি দৃঢ় ও স্থির আছেন আপন বিশ্বাসে। আল্লাহ তা‘আলা তার অবস্থার সমাধান করেছেন। দ্বিতীয়জন ভেতরে ভেতরে তৈরি। কিন্তু সাথীর অসুবিধা হওয়ার কারণে একটু ভীত।

আহমাদ আওয়াহ :  পরিবারের লোকদের ওপর কাজ করেননি?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : আল-হামদুলিল্লাহ, কাজ চলছে। ব্যাপক ও বিস্তারিতভাবে চলছে। তবে এলাহাবাদে পোস্টিংকালে আমি আমার স্ত্রীকে অনেক কিছু বলে দিই। সে ছিল খুব অনুগত, সহজ-সরল মহিলা। সে আমার সিদ্ধান্তের এতটুকু বিরোধিতা করেনি, বরং সকল অবস্থায় আমার সাথে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। আমি তাকেও বই-পুস্তক পড়িয়েছি। আমাদের বিয়ে হয়েছে দশ বছর। কিন্তু কোন সন্তানাদি ছিল না। আমি তাকে লোভ দেখাই যে, ইসলাম কবুল করলে আমাদের মালিক আমাদের উপর খুশি হবেন এবং আমাদের সন্তানাদিও দেবেন। সন্তান না হবার কষ্টে সে খুবই বিষণ্ণ থাকত। এই কথায় সে খুব খুশি হয়। এক মাদরাসায় নিয়ে গিয়ে তাকে কালেমা পড়াই। আল্লাহর কাছে বহু দো‘আ করি, আমার রব! আপনার ভরসায় আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আপনি আমার ভরসার সম্মান রক্ষা করুন এবং একটা হলেও তাকে সন্তান দিন। আল্লাহর কি দয়া! এগার বছর পর আমাদেরকে তিনি ফুটফুটে পুত্রসন্তান দেন। এরপর তিন বছর যেতেই এক কন্যা সন্তান দান করেছেন। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

আহমাদ আওয়াহ : পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনি কোন পয়গাম বা নছীহত করবেন কি?

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : ইসলাম ধর্ম থেকে বড় কোন সত্য নেই। আর এ এমন এক সত্য যে, একে যিনি মেনে চলবেন, তাকে এর উপর আমল করতে কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই, কিংবা অন্যের কাছে পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করারও দরকার নেই। কম-বেশী বিরোধিতা আসবে। আমাদের মাওলানা ছাহেব বলেন, ‘ইসলাম এক আলো আর সমস্ত বাতিল ধর্ম অন্ধকার। অন্ধকার কখনো আলোর উপর জয়লাভ করতে পারে না। বরং আলোই জয়ী হয়। আলো যখন কখনো কখনো হরাস পায়, তখন মনে হয় অন্ধকার চতুর্দিকে ছেয়ে গেছে এবং সবকিছু ঢেকে ফেলেছে। কিন্তু আলো একটু উজ্জ্বল করে তুলে ধরুন, দেখবেন অন্ধকার দূরে পালিয়ে গেছে’। ব্যস, আমাকে এটা মানতে হবে। আর এটাই আমার পয়গাম বা নছীহত যে, বিজয় সবসময় আলোর মশালধারীদেরই হয়। এজন্য কোনরূপ ভয়-ভীতি ব্যতিরেকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া দরকার এবং কোন রকম লোভ-লালসা ছাড়াই সত্যিকারের পারস্পরিক ব্যথা-বেদনার হক আদায় করার নিয়তে দাওয়াত দিয়ে যাই। দেখবেন, আমার মত ইসলামের দুশমন ও মুসলমানদের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তি তদন্তের উদ্দেশ্য এসে যদি হেদায়াত পাই, তাহলে সহজ সরল মন-মস্তিষ্কের লোকগুলোর উপর এর প্রভাব পড়া তো আরও স্বাভাবিক।

আহমাদ আওয়াহ : শুকরিয়া, জাযাকাল্লাহ।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : আচ্ছা, এজাযত দিন। আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ।

আহমাদ আওয়াহ : ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ও রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। অনেক অনেক শুকরিয়া।

ডক্টর মুহাম্মাদ হুযায়ফা : শুকরিয়া জাযাকুমুল্লাহু খায়রান।

[সাক্ষাৎকার গ্রহণে : আহমাদ আওয়াহ নদভী; মুযাফফরনগর, ভারত থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘আরমুগান’-এর সৌজন্যে]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button