ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন ইবনে মুহাম্মদ আল কাসিম কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা দোজাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহর। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর। সাহাবায়ে কেরাম ও নবী পরিবারের সব সদস্যের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সম্মানিত সংসদ সদস্যবৃন্দ, উপস্থিত ওলামা মাশায়েখ ও সুধীবৃন্দ, আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে সালাম- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।
আমি আরেকবার মহান আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি। যিনি আজকের এ বরকতময় দিনে আপনাদের সঙ্গে আমাদের একত্রিত করেছেন। আজকের এ দিনটিতে ইসলামের আলোকিত অবয়ব ফুটে উঠেছে। আজকের এ সম্মিলন ইসলামী সৌভ্রাতৃত্ব ও মুসলিমসুলভ সৌহার্দের পরিচয় বহন করে।
আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি হারামাইন শরিফাইনের মহামান্য খাদেম, সুলতান সালমান আবদুল আযীযকে; মহান আল্লাহ তাকে নিরাপদ রাখুন। তিনি মুসলিম উম্মাহর পরস্পরে সৌহার্দ ও সম্প্রীতি গড়ে তোলার শুভ উদ্যোগ হিসেবে আয়োজিত আজকের এ সুবিশাল সম্মেলনে আমাদের অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি আরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। যিনি আজকের এই আনন্দমুখর সমাবেশ আয়োজন করেছেন। আয়োজনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আন্তরিক আতিথেয়তার মাধ্যমে আমাদের মুগ্ধ করেছেন। এ সুশৃঙ্খল অভিনব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতার সুযোগ পেয়ে আমরা চমৎকৃত।
প্রিয় সুধী, ইসলাম বস্তুনিষ্ঠ সৌভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনোই দেশ, জাতীয়তা ও ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করার অনুমতি দেয় না। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, মহান আল্লাহ আমাদের এমন মহান ধর্মের অনুসারী করেছেন। এই ইসলামের মাঝে পৃথিবীর অন্যসব ধর্মের যাবতীয় সৌন্দর্য ও মাধুর্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। ইসলামের কল্যাণে আমরা সব ধর্মের পরিপূরক ও সম্পূরক সৌকর্য ধারণ করতে পেরেছি। আল্লাহ আমাদের ইসলামসম্মত পদ্ধতিতে ইবাদত করার নির্দেশ করেছেন। ইসলাম এমন এক ধর্ম, যার মাঝে মানবিকতার শতভাগ প্রকাশ ঘটেছে। মানবধর্ম ইসলামের মাঝেই সৃষ্টিরহস্যের চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর সবশ্রেণীর মানসিকতার সঙ্গে ইসলাম শতভাগ সংগতিপূর্ণ। কোরআন কারিমে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,
‘এটাই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃতি, যার ওপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা রুম : ৩০)।
ইসলামের মাঝে মানবজীবনের সব বিষয়ের পূর্ণ সংবিধান রয়েছে। ইসলাম সুষ্ঠু লেনদেনের কথা বলে। ইসলাম উন্নত চরিত্র ও সুউচ্চ নৈতিকতার কথা বলে। ইসলাম ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কার্যকর ধর্ম। ইসলাম আমাদের ইহকালীন জীবনে সৌভাগ্য ও পরকালীন জীবনে চিরস্থায়ী নেয়ামতের নির্দেশ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং যে ঈমানদার- পুরুষ হোক কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব, যা তারা করত। (সূরা নাহল : ৯৭)।
ইসলাম এমন এক ধর্ম যা সর্বযুগে সর্বস্থানে কার্যকর। যে কোনো পরিবেশে, যে কোনো সমাজে ইসলাম শতভাগ কার্যকর। পৃথিবী যতই অগ্রসর হোক, জাতিসত্তার যতই উন্মেষ ঘটুক, ইসলামের আবেদন কখনোই ক্ষুণ্ন হবে না। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে ইসলামের যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হয়ে চলেছে। আজকের মানবতা ইসলামের কাছে ঋণী।
ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যে তকমা ইসলামের ওপর আরোপ করার অপচেষ্টা চলছে, তার সঙ্গে ইসলামের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। ইসলামের শুভ্র বদনে কালিমা লেপনের মাধ্যমে তার মহান আহ্বান বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। অথচ এ ইসলাম পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার কথা বলে। ইসলাম মানবতার জয়গানের কথা বলে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সূরা ইসরা : ৭০)।
ইসলাম ভালোবাসা, সম্প্রীতি, সামাজিকতা ও দয়ার ধর্ম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পরে ভাই।’ ইসলাম আমাদের সবধরনের বৈষম্য ও বিবাদের ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানায়। ইসলাম অন্যকে মানসিক প্রশান্তি প্রদানের কথা বলে। ইসলাম আমাদের পরস্পরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব পোষণের কথা বলে। ইসলাম আমাদের উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল হওয়ার কথা বলে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘শক্তিশালী ও কর্মক্ষম মুমিন কল্যাণকর। দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সেই মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’
ইসলাম আমাদের সংকীর্ণতা ও বিবাদ-কলহ ত্যাগ করার কথা বলে। ইসলামী শরিয়তের মাঝে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় ইসলাম শেখার অধিকার রাখেন। ইসলাম অত্যন্ত সহজ ধর্ম। প্রত্যেকের জন্য ইসলাম অনুসরণ করা অত্যন্ত সহজ। ইসলাম সামাজিকতার ধর্ম। ইসলামের দুয়ার পৃথিবীর সব মানুষের জন্য সব সময় উন্মুক্ত। ইসলাম সবাইকে তার ছায়াতলে আপন করে নেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনগণ, তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো।’
ইসলাম আমাদের বিবেক-বুদ্ধি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নৈতিকতার সদ্ব্যবহারের কথা বলে। ইসলাম সবাইকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কথা বলে। আল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমা অবলম্বন করুন। সৎকাজের নির্দেশ করুন। আর অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ ইসলাম আমাদের সব সময় সুন্দর কথা বলার নির্দেশ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা মানুষকে সুন্দর কথা বলো।’ ইসলাম সবার মেধা-বুদ্ধি ও সম্পত্তির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বহন করে। ইসলাম অন্যের বিপদে, সংকটে, দুঃসময়ে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে।
আমাদের ধর্ম ইসলাম সৃষ্টির প্রতি দয়ার কথা বলে। অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসার কথা বলে। ইসলাম বলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বন্ধন গভীর করতে হবে। এ ইবাদত বান্দার জন্য রিজিকের দুয়ার খুলে দেবে। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে। ইসলাম তার অনুসারীদের পিতামাতার আনুগত্য করার নির্দেশ করে। ইসলাম প্রতিবেশীকে সম্মান করার কথা বলে। ইসলাম আমাদের লজ্জা, শালীনতা, প্রজ্ঞা, বদান্যতা, আত্মসম্মানবোধ, যৌক্তিক মৌনতা ও সুষ্ঠু কর্মকৌশল অনুসরণ করার নির্দেশ করে।
ইসলাম আমাদের বিশ্বস্ততা, অঙ্গীকার রক্ষা, লেনদেন সুচারুরূপে সম্পন্ন করা, অন্যের প্রতি সুধারণা রাখা, প্রতিটি কাজ ধীরে-সুস্থে সম্পন্ন করার নির্দেশ করে। ইসলাম আমাদের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কথা বলে। সমাজের অনাথ ও বিধবাদের পাশে দাঁড়াবার কথা বলে। ইসলাম প্রতিটি কাজ মহান আল্লাহর শুকরিয়া, শ্রদ্ধা, ভয় ও আশার সঙ্গে নিষ্পন্ন করার নির্দেশ করে।
এটাই একজন মুসলমানের ধর্ম। প্রতিটি ঈমানদার এ কথাগুলোই বিশ্বাস করে। কারণ, ইসলাম এমন এক ধর্ম, যা আমাদের যাবতীয় নৈতিকতা ও চরিত্রমাধুরীর অধিকারী হওয়ার নির্দেশ করে। অন্যের প্রতি দয়া করার কথা বলে। ইসলাম আমাদের একটি সম্মিলিত সমাজ নির্মাণের নির্দেশ করে। ইসলাম নেতৃবৃন্দকে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলে।
আজকের এই আনন্দমুখর মহান দিনটিতে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে আপনাদের সঙ্গে একত্র হতে পেরে আমি মহান আল্লাহর শোকর আদায় করছি। হারামাইন শরিফাইনের মহামান্য সেবক এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্রাতৃপ্রতিম দুইটি দেশের জনগণের মাঝে সৌহার্দ গড়ে তোলার যেই উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অভিবাদনযোগ্য। মহান আল্লাহ তাদের এর উত্তম বিনিময় দিন।
আমি সৌদি আরবের দূতাবাস ও সম্মানিত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল মুতইরী কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। মহান আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দিন। এদেশবাসীর হজ ও উমরাহ পালনের যাবতীয় কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তিনি নিঃস্বার্থ সেবা ও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
অনুবাদ : আবদুল্লাহ আল ফারুক