ইসলামেই পেয়েছি আমার প্রকৃত সত্ত্বা

২৯ বছর বয়স্ক সারা ট্রাস ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি ও তার বাবা ছিলেন খ্রিস্টান। আর মা ছিলেন ইহুদি। ট্রাস ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগের কথা তুলে ধরে বলেছেন: ‘আমি কৈশোরেই ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জানা সত্ত্বেও উৎসব অনুষ্ঠানগুলোতে শালীন পোশাক পরার চেষ্টা করতাম। কারণ, তাতে আমি প্রশান্তি পেতাম। সে সময় পর্যন্ত কখনও কোনো মুসলমানকে কাছ থেকে দেখিনি। আর ইসলাম সম্পর্কেও তেমন কিছুই জানতাম না। আশপাশের লোকদের কাছ থেকে কেবল এটা শুনেছিলাম যে ইসলাম নারীদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করে। মুসলমানদের কাছে নারী হল দাসী-বাঁদীর মত। কিন্তু ব্যাপক গবেষণার পর এখন এটা বুঝতে পেরেছি যে এ সম্পর্কে আমি যা শুনেছিলাম তা ছিল ভুল। আমি সৌভাগ্যবান যে সত্যকে জানতে পেরেছি।’
কৈশোরেই ধর্ম সম্পর্কে সারার আগ্রহ ছিল ক্রমবর্ধমান। ধর্ম সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ও অস্পষ্টতা তার জীবনের এক বড় উৎকণ্ঠা হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন:

‘আমার ও সব মানুষের প্রকৃতিই হল খোদায়ী। তাই সব মানুষের মধ্যেই রয়েছে ধর্মের প্রতি আকর্ষণ। আসলে ধর্ম ও আল্লাহতে বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের এমন এক চাহিদা যা মানুষকে দেয় নিরাপত্তা ও প্রশান্তি। তাই প্রকৃতিগত এই চাহিদা পূরণের জন্য চেষ্টা করতাম। আর এ জন্য নানা ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম। কিন্তু যতই জানার চেষ্টা করতাম ততই প্রশ্ন ও অস্পষ্টতা বাড়তেই থাকে।’
সারা ট্রাস তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রাথমিক আগ্রহের উন্মেষ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘আমার আশপাশে কোনো মুসলমান ছিল না। এমন কেউ ছিল না যিনি ইসলাম সম্পর্কে আমার মনে আগ্রহের আলো জ্বেলে দিতে পারেন ও ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতে পারেন। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম সেখানে নানা ধর্মের অনুসারীদের দেখতে পেতাম। বিষয়টা আমার কাছে ছিল বেশ আকর্ষণীয়। তাদের কারো কারো সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাদের আচার-আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি বা মন-মানসিকতায় আমি অভিভূত হই। বিশেষ করে, এক ব্যক্তির আচার-আচরণ ও মন-মানসিকতা আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের। তার ইবাদত-বন্দেগি, খোদাভীতি, সততা ও চারিত্রিক পবিত্রতা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে।’
মার্কিন নও-মুসলিম সারা ট্রাস এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন:
‘অবশ্য আমি ও অন্য কেউই জানতাম না যে তিনি ছিলেন মুসলমান। তার আচার-আচরণ আমার কাছে ছিল আদর্শ স্থানীয়। যখন বুঝলাম যে তিনি মুসলমান তখন অনেকেই তার কাছ থেকে আমাকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমি এর পেছনে কোনো যুক্তি দেখলাম না। কারণ, তিনি ছিলেন সেই সময় পর্যন্ত আমার দেখা লোকদের মধ্যে অন্য সবার চেয়ে পবিত্র ও সর্বোত্তম। আমি তাকে তার কোনো কোনো বিশেষ চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান যে ধর্মই এর কারণ। তার কথাবার্তা ও আচার-আচরণ ইসলাম সম্পর্কে আমার এতদিনের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেয়। আমি তার কাছে ইসলাম সম্পর্কে জানানোর অনুরোধ করি এবং এভাবেই ইসলামের সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হই।’
মার্কিন নও-মুসলিম সারা ট্রাস আরো বলেছেন: ‘ইসলাম এমন এক ধর্ম যা মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই। কেউ যদি প্রকৃত অর্থেই সত্যের সন্ধান করেন মহান আল্লাহ তাকে পথ দেখাবেন। ঠিক যেমনটি আমি মহান আল্লাহর দয়ায় ইসলামের মধ্যেই আমার প্রকৃত সত্ত্বাকে খুঁজে পেয়েছি, যা হারিয়ে গিয়েছিল।’
ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্তের কারণে কখনও অনুতপ্ত হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সারা ট্রাস দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, না তিনি কখনও তা অনুভব করেননি, বরং ইসলাম গ্রহণের পর নবজন্মের অনুভূতি ও প্রশান্তি লাভ করেছেন তিনি। এখন নতুন করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি জাগানোর ভয় ছাড়া কোনো ভয় তার মধ্যে নেই। সারা আরো জানান, পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াতও তাকে প্রশান্তি দেয়। কারণ, কুরআন তার প্রশ্নগুলোর জবাব দেয় এবং তাকে ইসলামের আরো কাছে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ইউরোপ-আমেরিকায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ইসলাম। বিশেষ করে সেখানকার নারী সমাজ ব্যাপক হারে আকৃষ্ট হচ্ছে এ ধর্মের দিকে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন পশ্চিমে আধ্যাত্মিক শূন্যতা, আত্মপরিচয়হীনতা ও নৈতিক অধঃপতনের প্রতি বিতৃষ্ণার কারণেই ইসলামের দিকে ঝুঁকছেন সেখানকার জনগণ। নারীরা যত্ন, সম্মান ও সুরক্ষার মত যা যা পছন্দ করেন ইসলামের মধ্যে তা পাচ্ছেন বলেও এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য যে ভিন্ন- ইসলামে এর স্বীকৃতি এবং এ ধর্মে পরিবার ও মায়ের প্রতি অফুরন্ত সম্মানও পশ্চিমা নারীদের মন জয় করছে।
পশ্চিমা নারীরা ক্রমেই এটাও বুঝতে পারছেন যে পাশ্চাত্য নারীকে একটি পণ্য হিসেবে দেখে থাকে। তাই মর্যাদাহীন এই জীবনের মোকাবেলায় ইসলামের হিজাব, শালীনতা ও আধ্যাত্মিকতা তাদেরকে দিচ্ছে সার্বিক নিরাপত্তার সুদৃঢ় আশ্রয়।
অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহহারির মতে ইসলাম নারী ও পুরুষের সৃষ্টিশীলতা বা প্রতিভা বিকাশের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতন। নারী ও পুরুষের সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পবিত্র ও যৌক্তিক সম্পর্ক সমাজকে সব ধরনের বিচ্যুতি আর প্রবৃত্তি-পূজা থেকে রক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে দেয় প্রকৃত সৌভাগ্য।
মার্কিন নও-মুসলিম সারা ট্রাস ঘরের বাইরে হিজাব পরে বের হন। তার মতে, ইসলাম তার সামাজিক তৎপরতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং তিনি এখনও তার পছন্দের কাজগুলো হিজাব পরে অব্যাহত রাখছেন। সারা মনে করেন হিজাব মানুষের আত্মিক পবিত্রতা ও সমাজকে অধঃপতন থেকে রক্ষার মাধ্যম। অথচ তার মতে এটা খুবই লজ্জাজনক যে পশ্চিমা সমাজপতিদের অনেকেই এমন একটি জরুরি বা অপরিহার্য বাস্তবতাকে অন্ধের মত চোখ বুজে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছেন। ট্রাস আরো বলেছেন:
‘কখনও এটা ভাবিনি যে একদিন মুসলমান হব। এখন এটা বুঝি যে মুসলমানদের সম্পর্কে আমার আগের ধারণা ছিল পুরোপুরি ভুল। পশ্চিমা গণমাধ্যমের কারণেই এ ধরনের ভুল ধারণা জন্মেছিল আমার মধ্যে। সে সময় পর্যন্ত পশ্চিমা গণমাধ্যম যা-ই বলতো আমি তাই বিশ্বাস করতাম। যে মুসলমানদের আমি পছন্দ করতাম না একদিন সেই মুসলিম সমাজেরই সদস্য হব তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু আজ মুসলমান হতে পারার জন্য আমি গর্বিত এবং এ জন্য আমি খুবই আনন্দিত।’
উৎসঃ ফেসবুক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88