হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ কর (পঞ্চম পর্ব) 

হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ কর
(কবরের আযাব ও সাওয়াব সংক্রান্ত কতিপয় শিক্ষামূলক ঘটনা)

পঞ্চম পর্বঃ

কবরের সু-ঘ্রাণঃ  ডাঃ সাইয়্যেদ যাহেদ আলী বর্ণনা করেন যে, মাউনইউনিটের সময়কালে, রাতুরডের জেলার লারকানায় মেডিকেল অফিসার হিসেবে আমি কর্মরত ছিলাম, একদিন এক পুলিশ কর্মকর্তা কিছু কাগজ নিয়ে আসল, সোলসারজের জেলার সমস্ত মেডিকেলসমূহ আমার পরিচালনাধীন ছিল, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবর প্রশস্ত করার জন্য বোর্ড গঠন করেছেন, ডাঃ মুহাম্মদ শফী সাহেবের সাথে আমিও ছিলাম। কবরস্থানটি রাতোডয়ের থেকে দুই মাইল দূরে এক গ্রামে অবস্থিত ছিল, পুলিশের কাগজপত্রের মাধ্যমে জানা গেল যে এটা এক মহিলার কবর ছিল। যা প্রায় দুই মাস আগে দাফন করা হয়েছে। তাঁর স্বামী তাকে এ কারণে হত্যা করেছে যে, অন্য কোন পুরুষের সাথে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। নির্দিষ্ট দিনে আমি ঐ গ্রামের এক গৃহে এসে উপস্থিত হলাম। পুলিশ বাহিনীও চলে এসেছিল, গৃহকর্তার ঐকান্তিক দাবী ছিল যে চা পান করে বের হতে হবে। এদিকে পুলিশ কবরস্থানে পৌঁছে গেছে। যখন চা নিয়ে আসল তখন দেখা গেল যে, এ মহিলা আল্লাহভীরু ছিল, যার বয়স হয়েছিল প্রায় ২৭ বছর, নামায রোযার পাবন্দ ছিল। বিয়ের পাঁচ বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু কোন সন্তান হয় নি।

ইতিমধ্যে অন্য কোন মহিলার সাথে স্বামীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর সে চাচ্ছিল এ মহিলাকে রাস্তা থেকে সরাতে, তাই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিল যে, অমুকের সাথে তোমার অবৈধ সম্পর্ক আছে, তাকে প্রতিদিন মারধর করত, যে ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ দেয়া হয়েছে সে এ মহিলার বাপেরও বড় ছিল। একদিন সকালে এ মহিলাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। যত মুখ তত কথা, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছিল, কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যাচ্ছিল যে, মহিলা নির্দোষ ছিল। কবর খুঁড়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়, আমরা ডাঃ আমাদের কাছে এটা স্বাভাবিক বিষয়, কবরের ভিতরের অবস্থা, লাশের পরিণতি বড় বড় অন্তর দিয়ে দেখা যায় না। আমি (লেখক) প্রায় একশ কবর খুঁড়েছি কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কাছে আসতে পারে নাই। তারা ডিউটিতে ঠিকই থাকে, কিন্তু কিছু একটা করেই দূরে সরে পড়ে। ঐ দিন কবর খুঁড়ার দায়িত্বশীলরা তাদের অভ্যাস মোতাবেক কবর খুঁড়ছিল, মাটি সরাচ্ছিল। আমরা মাথার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আগত ঘটনাবলী আতরের ঘ্রাণ বের হত লাগল, যেন আমরা কোন চামেলী বাগানে অবস্থান করছিলাম। আমি কবরের দিকে ঝুঁকে দেখলাম যে, দাফন করার সময় কেউ কোন ফুল রেখে দিয়েছিল কিনা। মূলত এটা শুধু আমার মনের ধারণাই ছিল। যদিও ফুল রাখা হয়ে থাকে কিন্তু মৃতদেহ থেকে যে ঘ্রাণ আসছিল তা ফুলের চেয়েও অধিক সুগন্ধময় ছিল। পুলিশরা বলল যে এ চিন্তা আমরাও করছিলাম, কিন্তু যখন লাশ বের করা হল, তখন সুগন্ধিতে দেহ মন সুরবিথ হয়ে গেল, এমনকি দূর দূরান্ত পর্যন্ত সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল।

ম্যাজিস্ট্রেটও উঠে কাছে চলে আসল। ওখানে পুলিশ না থাকলে বিরাট মজমা জমে যেত। ডাঃ শফী বললঃ মৃতদেহের সুঘ্রাণ পেয়ে মনে হচ্ছে আমরা জান্নাতের বাগানে বসে আছি। সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, বলতে বলতে তাঁর যবান ক্লান্ত হয়ে আসছিল। লাশটি সম্পূর্ণ তরতাজা ছিল। চেহারা অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল। মনে হচ্ছিল যে, মৃতা আরামে ঘুমাচ্ছে, পুলিশরা বলতে লাগল আল্লাহর ইচ্ছা, একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, মৃতাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছিল। আমি একটু পিছনে সরাতেই পুলিশ কর্মকর্তাও পিছনে চলে আসল, তাকে পোস্ট মরটেম করতে আমাদের মন চাচ্ছিলনা। ইতোমধ্যে তাঁর স্বামী (হত্যাকারী)- যে স্ত্রীকে হত্যার পর পলাতক ছিল সে অজ্ঞাত স্থান থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে চলে আসল এবং পুলিশকে বলতে লাগল যে, আমাকে গ্রেফতার কর, আমার স্ত্রী নির্দোষ ছিল, তাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট সেখানেই ছিল, তাঁর জবানবন্দী নেয়া হল, যেখানে সে তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করল। তাই আর পোস্ট মরটেম করা হলনা।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member