দশটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়

দশটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়

রচনায়: ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ

১. এমন ইলম বা জ্ঞান যা কর্মে সম্পাদন (আমল) করা হয়নি।
২. এমন কাজ যা না আন্তরিকতার সাথে করা হয়েছে আর না অন্যদের ভাল কাজের অনুসরণ করে করা হয়েছে।
৩. অর্থ সঞ্চয় করা হয়েছে কিন্তু যা থেকে মালিক বেঁচে থাকা অবস্থায় না উপভোগ করতে পারে আর না এই টাকা পরকালে তার জন্যে কোন পুরস্কার বয়ে আনে।
৪. এমন হৃদয় যেখানে আল্লাহর জন্য ভালভাসা ও আন্তরিকতা অনুপস্থিত এবং কিভাবে আরো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায় তার অনুসন্ধান করে না।
৫. এমন শরীর যা আল্লাহর আনুগত্য করে না এবং আল্লাহ যা করতে বলেছেন সে অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে না।
৬. আল্লাহকে ভালোবাসা এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য চেষ্টা সাধনা করা হয় কিন্তু আল্লাহ যেভাবে করতে আদেশ করেছেন সেইভাবে করা হয় না।
৭. এমন সময় ব্যয় করা হয়েছে যেখানে না পাপকর্মের জন্য তওবা করা হয়েছে আর না ভাল কাজের সুযোগ অনুসন্ধান করা হয়েছে।
৮. এমন মন যা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।
৯. এমন ব্যক্তিদের আনুগত্য করা যারা না তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয় আর না তার জীবনে কোন কল্যাণ বয়ে আনে।
১০. এমন কাউকে ভয় করা এবং তার নিকট কোন কিছু পাওয়ার আশা প্রকাশ করা যার মালিকানা ও কর্তৃত্ত্ব আল্লাহর হাতে আর সেই ব্যক্তি না কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, না নিজের কোন ক্ষতি করতে পারে, না মৃত্যু দিতে পারে, না জীবন দিতে পারে আর না পরকালে সে নিজেকে পুনরুত্থান করতে পারে।

এই বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে হৃদয়ের অপচয় এবং সময়ের অপচয়। হৃদয়ের অপচয় হয়ে থাকে পরকালের চেয়ে এই পার্থিব জীবনকে বেশী প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে এবং সময়ের অপচয় হয়ে থাকে অবিরাম ইচ্ছা পোষণ করার মাধ্যমে (অর্থাৎ একটি ইচ্ছা পূরণ হলে আবার আরেকটি আবার সেটি পূরণ হলে আবার অন্যটি আর এভাবে চলতেই থাকে)। নিজের প্রবৃত্তি ইচ্ছার অনুসরণ এবং অবিরাম ইচ্ছা পোষণ ধ্বংস বয়ে আনে আর সকল প্রকার কল্যাণ নিহিত রয়েছে সঠিক পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে এবং নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে(অর্থাৎ পরকালে আল্লাহর সামনে আল্লাহকে সন্তুষ্ট রেখে তার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ)।

বিষয়টি কতইনা অদ্ভুত যে, আল্লাহর একজন বান্দাহ তার পার্থিব কোন সমস্যার কারণে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করে অথচ অজ্ঞতা, উপেক্ষা, নিজের প্রবৃত্তির পূর্ণ অনুসরণ এবং বিদআতে লিপ্ত হয়ে তার অন্তর মরে যাওয়ার আগে হৃদয়ের আরোগ্যের জন্য আল্লাহর নিকট কখনই সাহায্য কামনা করে না। প্রকৃতপক্ষে, যখন কারো হৃদয় মরে যায় তখন সে আর কখনো তার পাপ কর্মের অনুভূতি বা প্রভাব অনুভব করে না(অর্থাৎ পাপকর্ম করলেও তার কাছে তা কিছুই মনে হয় না, কোন অনুশোচনাও জাগে না)।

বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা :

১. এমন ইলম বা জ্ঞান যা কর্মে সম্পাদন (আমল) করা হয়নি।
ইলম বলতে এখানে কুরআন এবং সহীহ হাদীস সম্পর্কিত জ্ঞান বুঝাচ্ছে। আমরা কুরআনের অনেক আয়াত পড়ি, সহীহ হাদীস পড়ি কিন্তু বাস্তব জীবনে তা আমলে তথা কর্মে পরিণত করি না। জানার পর রেখে দিই। কাজেই এই ইলম যে আমরা অর্জন করলাম তা আমাদের কি উপকার করবে যদি তা আমরা কর্মে পরিণত নাই করি?

২. এমন কাজ যা না আন্তরিকতার সাথে করা হয়েছে আর না অন্যদের ভাল কাজের অনুসরণ করে করা হয়েছে।
যখন একটি ভাল কাজ আমরা করতে যাই তখন কাজটি কি আন্তরিকতার সাথে ইখলাস সহকারে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যেই করা হচ্ছে নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য। আর ভাল কাজ করতে যেয়ে আমরা কি সাহাবীদের অনুকরণ করছি, নাকি নিজের উদ্ভাবিত বা কোন বিদআতকে ভাল কাজ তথা সওয়াবের আশায় সম্পাদন করছি। যদি কাজটি ইখলাসের সাথে না হয় এবং বিদআতী কাজ হয় তাহলে সেই তথাকথিত ভাল কাজ আমাদের কি উপকার করবে?

৩. অর্থ সঞ্চয় করা হয়েছে কিন্তু যা থেকে মালিক বেঁচে থাকা অবস্থায় না উপভোগ করতে পারে আর না এই টাকা পরকালে তার জন্যে কোন পুরস্কার বয়ে আনে।
অর্থাৎ টাকা উপার্জন করা হয়েছে কিন্তু যাকাত আদায় করা হয়নি, দান সাদকা করা হয়নি, ফি সাবিলিল্লাহ’র জন্য টাকা ব্যয় করা হয়নি শুধু জমানো হয়েছে। এই টাকা মারা যাওয়ার পর কি উপকারে আসবে? কারণ, আমরা যা উপার্জন করি তার মালিক তো আমরা নই বরং আমরা যা খরচ করি ঠিক ততটুকুরই মালিক আমরা।

৪. এমন হৃদয় যেখানে আল্লাহর জন্য ভালভাসা ও আন্তরিকতা অনুপস্থিত এবং কিভাবে আরো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায় তার অনুসন্ধান করে না।
অর্থাৎ কিভাবে আরো বেশী বেশী আল্লাহর আনুগত্য করা যায় সেই সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা অনুপস্থিত, শুধু অনুপস্থিতই নয় কিভাব আনুগত্য করা যায় সেই পন্থাও খোজ করে না।

৫. এমন শরীর যা আল্লাহর আনুগত্য করে না এবং আল্লাহ যা করতে বলেছেন সে অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে না।
অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম মেনে চলে না, আল্লাহ তাআলা যা করতে বলেছেন তা করে না, যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকে না।

৬. আল্লাহকে ভালোবাসা এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য চেষ্টা সাধনা করা হয় কিন্তু আল্লাহ যেভাবে করতে আদেশ করেছেন সেইভাবে করা হয় না।
অর্থাৎ আল্লাহকে ভালোবাসতে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হলে নিজের উদ্ভাবিত পন্থায় করা যাবে না, করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পন্থায়। কুরআনে অনেক আয়াতে এই ভাবে বলা হয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর’। অথচ আমরা বিদআতী পন্থাকে আল্লাহর আনুগত্য করার, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছি। যেমন: খুবই আন্তরিকতার সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা, এটাকে অধিক কল্যাণজনক বা সওয়াবের কাজ মনে করা অথচ এগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীগণ, তাবেঈন, তাবা তাবেঈনগণ দ্বারা প্রমাণিত নয়।

৭. এমন সময় ব্যয় করা হয়েছে যেখানে না পাপকর্মের জন্য তওবা করা হয়েছে আর না ভাল কাজের সুযোগ অনুসন্ধান করা হয়েছে।
আমরা কত অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করি উদাহরণ স্বরুপ: ঘন্টার পর ঘন্টা ‘আজকে কি খাইছুন’ টাইপের আড্ডা করে সময় অতিবাহিত করে দেই, ফালতু নাটক-সিনেমা দেখে সময় কাটাই অর্থাৎ মূল্যবান সময়টুকু ড্রেনের পানিতে, নর্দমায় ফেলে দিচ্ছি। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে সত্তর বারেরও অধিক সময় ইস্তেগফার পড়তেন। সাহাবীরা কি করে আরো বেশী আল্লাহ আনুগত্য করা যায় তার জন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহচার্যে থাকতেন। অনুসন্ধান করতেন।

৮. এমন মন যা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।
উদাহরণ স্বরুপ: এক যুবক প্রেমের কথা চিন্তা করে তার জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলছে অথচ এর কোন দরকারই ছিল না, সম্পূর্ণ অপ্রোয়জনীয় বিষয়।

৯. এমন ব্যক্তিদের আনুগত্য করা যারা না তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয় আর না তার জীবনে কোন কল্যাণ বয়ে আনে।
অর্থাৎ বিভিন্ন দলীয় নেতার অনুসরণ, তাদের কথায় উঠা-বসা করা তাদের মর্জিমত চলা। অথচ এভাবে চলতে আল্লাহ আদেশ করেন নি আর তাই তার এভাবে চলা বিফলে চলে গেল। কারণ, এই জাতীয় লোকেরা তাদের অনুসারীদের জান্নাতে যাওয়ার জন্যে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যে, আল্লাহর আনুগত্য করার জন্যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করার জন্যে প্ররোচিত করে না বরং নিজস্ব ফায়দা লুটার জন্যে ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণ স্বরুপ: কেউ একজন সুরনজিত সেনগুপ্তের কথায় উঠা বসা করে অথচ এই উঠাবসা তার জন্যে কি কল্যাণ বয়ে আনবে?

১০. এমন কাউকে ভয় করা এবং তার নিকট কোন কিছু পাওয়ার আশা প্রকাশ করা যার মালিকানা ও কর্তৃত্ত্ব আল্লাহর হাতে আর সেই ব্যক্তি না কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, না নিজের কোন ক্ষতি করতে পারে, না মৃত্যু দিতে পারে, না জীবন দিতে পারে আর না পরকালে সে নিজেকে পুনরুত্থান করতে পারে।
অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা, মাজারে মানত করা, পীর-ফকির তথা বিভিন্ন দরবারে যেমন: রাজারবাগী, দেওয়ানবাগী, মাইজভান্ডারী যেয়ে নজর-নিয়াজ দেওয়া। মৃত ব্যক্তির তথা কবররের নিকট যেয়ে প্রার্থনা করা, কবর থেকে বরকতের, রহমতের, কল্যাণের আশা করা। অথচ যাদের কাছে এগুলো চাওয়া হচ্ছে এদের নিজেদের রহমত, বরকত, কল্যাণের কোন মালিকানা নেই। না তারা কোন কিছু সৃষ্টি করেছে। না কারো জীবন দিতে পারে, না কারো ক্ষতি করতে পারে। এদের কাছে কোন কিছু চাওয়া অপ্রয়োজনীয় বিষয়, কোন উপকার হবে না বরং শির্কে লিপ্ত হওয়ার জন্যে জাহান্নামে চিরকাল থাকতে হবে।

– উমর ( সোনার বাংলা ব্লগে লিখতেন)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88