শিরকের উত্পত্তি ও প্রকারভেদ

শিরকের উৎপত্তি 

আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যকার ব্যবধান প্রায় সহস্রাব্দ ছিল। এ সময় মানুষ তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। সে সময় কোন শিরক পৃথিবীতে ছিল না। দুনিয়াতে প্রথম শিরক সংঘটিত হয়েছিল নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযর্গ লোকদের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন,

وَقَالُوا لا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلا سُوَاعًا وَلا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا (٢٣)

অনুবাদ : ‘তারা বলল তোমরা তোমাদের উপাস্যদের ত্যাগ কর না, আর তোমরা ওয়াদ, ইয়াগূছ, ইয়াউক এবং নাসরকেও ত্যাগ কর না’ (নূহ ২৩)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, এ আয়াতে যে ক’টি নাম এসেছে এগুলো নূহ (আঃ) এর কওমের বুযর্গ লোকদের নাম। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের প্ররোচিত করল, তারা যেন ঐসব বুযর্গগণ যেসব আসরে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমা বানিয়ে রাখে এবং তাদে নামে এগুলোর নামকরণ করে। তারা তাই করল। তবে এগুলোর উপাসনা হত না। এসব লোক মৃত্যুবরণ করার পর ক্রমান্বয়ে তাওহীদের জ্ঞান বিস্মৃত হল, তখন এগুলোর উপাসনা ও পূজা হতে লাগল (বুখারী, হা/৪৯২০)।

শিরকের প্রকারভেদ :

শিরক তিন প্রকার। যথা
(১) আশ-শিরক ফির রুবূয়িইয়াহ : আর তা হচ্ছে আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা, অন্য কাউকে অংশীদার বানানো। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, গায়েব বা অদৃশ্যের খবর একমাত্র তিনিই রাখেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও গায়েবের খবর জানতেন না (আ‘রাফ ১৮৮)।
(২) আশ-শিরক ফিল উলূহিইয়াহ : ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করার নাম আশ-শিরক ফিল উলূহিয়াহ বা ইবাদতে শিরক। ইবাদত হতে হবে সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত।

আল্লাহ বলেন,

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالا فَخُورًا (٣٦)

 

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক কর না’ (নিসা ৩৬)।

ইবাদাতে শিরক দু’প্রকার

(১) বড় শিরক : আর তা হল ইবাদতের প্রকারগুলোর কোন একটি প্রকার আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা। যেমন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দো‘আ করা, সিজদা করা, মানত করা, মৃত ব্যক্তি, জিন কিংবা শয়তানের প্ররোচণাকে ভয় করা।

আর বড় শিরক কয়েক ভাগে সম্পাদিত হতে পারে।

(ক) দাওয়াত বা আহবানে শিরক। বিপদ-আপদে আল্লাহকে ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা এ ধরনের শিরক (আনকাবূত ৬৫)।

(খ) আনুগত্যে শিরক: আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কারো জন্য আনুগত্য প্রকাশ করা (তাওবা ৩১)। (৩) ভালবাসায় শিরক। মুমিনদের ভালবাসা হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসা শিরক। আর ভালবাসার নিদর্শন হল আদেশ-নিষেধকে বাস্তবায়ন করা (বাক্বারাহ ১৬৫)।
(২) ছোট শিরক : যেসব কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষ শিরকের দিকে ধাবিত হয় সেসব কথা ও কাজকে ছোট শিরক বলা হয়। যেমন সৃষ্টির ব্যাপারে এমনভাবে সীমালংঘন করা, যা ইবাদতের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ছোট শিরক মানুষকে মুসলিম মিল্লাহ থেকে বের করে না। কিন্তু তাওহীদের ঘাটতি করে। আর উহা বড় শিরকের একটি মাধ্যম।

ছোট শিরক আবার দু’প্রকার

(অ) প্রকাশ্য শিরক : উহা কথা ও কাজের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কথার শিরক হল আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা (তিরমিযী হা/১৫৩৫)। কাজের মাধ্যমে শিরক হল বিপদ দূর করার জন্য সুতা ও কড়া ব্যবহার করা, বদ নযর থেকে বাঁচার জন্য তাবীয-কবজ ঝুলানো।

(আ) গুপ্ত শিরক : গুপ্ত শিরকের উদাহরণ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এ উম্মতের শিরক রাতের আঁধারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়া পদাচারণার চেয়েও গুপ্ত বা সূক্ষ্ম’ (ছহীহুল জামে, হা/২৩৩)। আর এ ধরনের শিরক হল ইচ্ছা ও নিয়তের দ্বারা। যেমন লোকদেখানো ও সুখ্যাতি বা সুনামের জন্য কোন কাজ করা।

(৩) আশ-শিরক ফিল আসমা ওয়াছ-ছিফাত : এই শিরক হল আল্লাহর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের সাথে সৃষ্টির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা। যেমন এ ধরনের কথা বলা যে, আল্লাহ্র পা আমাদের পায়ের মত, আল্লাহর চেহারা অমুকের চেহারার মত ইত্যাদি। আমরা আল্লাহকে একমাত্র গাওছ বা ত্রাণকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করি। তাই আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে গাওছ বলা এ জাতীয় শিরক। এ সকল প্রকার শিরক থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।

উত্স

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button