পর্ণোগ্রাফী নিষিদ্ধ করুন!

Pornography অর্থ অশ্লীল বৃত্তি। এর উদ্দেশ্য নগ্ন ও অর্ধনগ্ন যৌন অঙ্গভঙ্গিপূর্ণ ছবি দেখিয়ে অন্যকে যৌনতায় প্রলুব্ধ করা। ১৮৯৫ সালে ইউরোপের জনৈক উইজেন পিরো এবং আলবার্ট কার্চনারের মাধ্যমে পর্ণো নির্ভর চলচ্চিত্রের উদ্ভব ঘটে। এতে তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়। অতঃপর এই নিকৃষ্ট ব্যবসা ফ্রান্স ও আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোবর্স পত্রিকা জানিয়েছে যে, পর্ণোগ্রাফী তৈরী করে প্রতি বছর অন্যূন ৫৬ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে এইসব নীল ছবির নির্মাতারা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পতিতাবৃত্তি। যার ফলে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের মা-বোনদের ইযযত বিক্রি করে বছরে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলারের নোংরা ব্যবসা করে। যা বিশ্বের ১৩৮টি দেশের বার্ষিক জিডিপির সমান।

আর এদেরই সৃষ্ট এনজিওরা এদেশের নারীদের শেখায়, ‘কিসের বর কিসের ঘর, দেহ আমার সিদ্ধান্ত আমার’। ফলে নেশাখোর, পতিতা ও সমকামীদের মাধ্যমে ঘটছে এইড্স ও নানা মরণব্যাধির প্রাদুর্ভাব। বাড়ছে নারী ও শিশু পাচার ও তাদের প্রতি সহিংসতা। যা বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ২০০৭-০৮ সালে খুনের ঘটনায় পৃথিবীতে শীর্ষে ছিল ভারত। অতঃপর দক্ষিণ আফ্রিকা। অতঃপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ধর্ষণের দিক দিয়ে প্রথম ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তৃতীয় স্থানে ভারত। অতঃপর ডাকাতির ঘটনায় শীর্ষে ছিল জাপান।

পর্ণোগ্রাফীর দর্শক সাধারণতঃ উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা। এমনকি বয়স্করাও এতে আসক্ত হচ্ছে। মোবাইল, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে পর্ণো এখন ঘরে ঘরে জাহান্নাম সৃষ্টি করছে। ফলে বল্গাহীনভাবে বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন, পরিবারে ভাঙ্গন, তুচ্ছ কারণে গুম-খুন-অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও অন্যান্য নৈতিক অবক্ষয় সমূহ। গবেষকদের মতে, পর্ণোর আসক্তি মাদকের আসক্তির চেয়েও ভয়ঙ্কর ও বিধ্বংসী।

সেই সাথে ভারতীয় হিন্দী সিরিয়াল এখন ঘরে ঘরে। যার দর্শক হ’লেন আমাদের গৃহিণীরা ও তাদের সন্তানেরা। গত দু’বছর পূর্বে ভারতীয় চ্যানেলে একটি ফাঁসির দৃশ্য দেখে মায়ের অজান্তে তার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানে ঝুলে ঢাকার এক দম্পতির একমাত্র সন্তানের করুণ মৃত্যুর খবর আমরা পত্রিকায় পাঠ করেছি। একশ্রেণীর মিডিয়া মানুষের শয়তানী কল্পনায় যতদূর যাওয়া সম্ভব, সব জায়গাতেই সুড়সুড়ি দিয়ে থাকে। পরকীয়া প্রেম, জমকালো শাড়ী-বাড়ী-গাড়ী, মারদাঙ্গা ছবি, দ্রুত কোটিপতি হওয়ার অনৈতিক পথ-পন্থা সমূহের নির্দেশনা, সর্বোপরি মানুষকে ষড় রিপুর তাড়নায় বুঁদ করে রাখা তাদের মূল লক্ষ্য। যাতে মানুষ কোন বিষয়ে গভীর চিন্তা করার এবং কোন কল্যাণকর কাজে মনোনিবেশ করার সুযোগ না পায়। এর ফলে জাতি অতি শীঘ্র একটি প্রতিবন্ধী জাতিতে পরিণত হবে। যারা দেখেও দেখবে না, শুনেও শুনবে না, উন্নত ও পবিত্র কোন চিন্তা করবে না। যারা হবে পশুর চাইতে নিকৃষ্ট।

হিন্দু ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ নেই। অথচ ভারতীয় চ্যানেলে দেখানো হয় হিন্দু নারীরা কিভাবে পোষাক বদলানোর ন্যায় স্বামী বদলিয়ে থাকে। থাকে পরিবারে ভাঙ্গনের নানা দৃশ্য। যা বাংলাদেশী দাম্পত্য সংস্কৃতির চরম বিরোধী। এদেশে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচাইতে পবিত্র ও সবচাইতে বিশ্বস্ত। অথচ এইসব নোংরা দৃশ্য তাদের অন্তরে কুচিন্তা এনে দেয়। এছাড়াও সেখানে থাকে যৌন উদ্দীপক পোষাক পরিহিতা মেয়েদের নানা অঙ্গভঙ্গি। যা দেখলে যেকোন পুরুষকে পরনারীর প্রতি প্রলুব্ধ করে। ফলে নারী এখন সস্তা ব্যবসা পণ্যে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে নারীর নানা অঙ্গভঙ্গির ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড, উত্তেজক নারী মূর্তি, যা দোকানে ও   রাস্তা-ঘাটে সর্বত্র দেখা যায়, তা সবই আমাদের সামাজিক পরিমন্ডলকে চরমভাবে কলুষিত করে তুলছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার নির্লজ্জতা হ’তে বিরত থাক’ (আন‘আম ৬/১৫১)

পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ৮/৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফী সরবরাহ করলে সে অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে। উক্ত অপরাধের জন্য তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে’। কিন্তু এ আইনের বিষয়ে যেমন ব্যাপক জনসচেতনতা নেই। তেমনি এর প্রয়োগও তেমন দেখা যায় না। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং-এর দোকানের নামে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেমোরি কার্ডে পর্ণোগ্রাফী লোড দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়া মোবাইল কোম্পানীগুলো গভীর রাতে ফ্রি প্যাকেজ দিচ্ছে। অথচ সময় মত তারা ঠিকই গলা কাটছে। যা আমাদের জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। ফলে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সৃজনশীল কাজের চাইতে ধ্বংসকর কাজে অধিক ব্যয়িত হচ্ছে। সমাজে ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে অনৈতিকতা, লজ্জাহীনতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা। বেড়ে চলেছে বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মেলা-মেশা, পরকীয়া প্রেম, যৌতুক দাবী, স্ত্রী নির্যাতন, দাম্পত্য জীবনে ভাঙ্গন, অবশেষে হত্যাকান্ডের মত মর্মান্তিক পরিণতি। স্রেফ যৌন লালসা চরিতার্থে ব্যর্থ হওয়ায় গত ১৬ই জানুয়ারী’১৬ রাতে নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচ খুনের ঘটনা কি এর জাজ্বল্যমান প্রমাণ নয়?

চীন সহ পৃথিবীর বহু দেশ পর্ণোগ্রাফী নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও বিশ্বের বহু দেশে পর্ণোগ্রাফী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং মোবাইল কোম্পানীগুলিকে কঠিনভাবে মনিটর করা হয়। কিন্তু নববই শতাংশ মুসলিমের দেশ হওয়া স্বত্বেও আমাদের দেশে এসবের কিছুই নেই। অতি সম্প্রতি পাকিস্তান ৪ লক্ষাধিক পর্ণো সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। তাহ’লে বাংলাদেশ কেন পারবে না?

আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি, পর্ণোগ্রাফী পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হৌক এবং বল্গাহীন অশ্লীলতার জোয়ার প্রতিরোধে শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার যুগে উঠতি যুবসমাজকে এর বিধ্বংসী কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করতে এছাড়া কোনই বিকল্প নেই। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের সাথে সাথে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে ধার্মিক বানানো। কেননা পরকালীন জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতি সৃষ্টি করা ব্যতীত সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং যৌন কলুষ থেকে ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব নয়। অতএব দেশে ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি করুন। ইসলামকে যথার্থভাবে মেনে চলুন। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সমবেতভাবে আল্লাহর দিকে ফিরে চল। তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’ (নূর ২৪/৩১)। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)

– Source: at-tahreek.com

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88