কোন একজন নবীকে গালি দেয়া কুফরী ও মুরতাদী

প্রশ্ন: কাফের গোষ্ঠী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিয়ে, দোষারোপ করে যেসব প্রচারণা চালায় সেগুলো পড়ে কোন মুসলিম যদি রেগে গিয়ে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ -খ্রিস্টানদেরকে রাগানোর জন্য- আমাদের নেতা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে অমার্জিত কিছু শব্দ উচ্চারণ করে এর হুকুম কি? সে ব্যক্তিকে কিভাবে তওবা করতে হবে? তাকে কি কোন কাফফারা দিতে হবে?

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিম আকিদা শুধু সকল নবীদের প্রতি ঈমান আনাকে ফরজ করে না; বরং তাদের সকলকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, তাঁদের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সম্মান দেয়াকে ফরজ করে। যেহেতু তাঁরা হচ্ছেন- শ্রেষ্ঠ মানব, আল্লাহর নির্বাচিত মাখলুক। তাঁরা হচ্ছেন- হেদায়েতের আলোকবর্তিকা; যা অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করেছে, হৃদয়গুলোর পাশবিকতা দূর করে কোমলতা এনেছে। তাঁদেরকে ছাড়া শান্তি ও সফলতার কোন পথ নেই।

তাইতো সকল আলেম ইজমা তথা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নবীদেরকে গালি দেয়া, হেয় প্রতিপন্ন করা হারাম। যে ব্যক্তি কর্তৃক এমন কিছু সংঘটিত হবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে; যেমনিভাবে কেউ আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিলে মুরতাদ হয়ে যায়। কোন মুসলিম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী-রাসূলদের মাঝে কোন পার্থক্য করে না; ঠিক আল্লাহ তাআলা যেভাবে উল্লেখ করেছেন: “বলুন, ‘আমরা আল্লাহ্‌তে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী (তথা মুসলিম)।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৪]

আল্লাহ তাআলা আমাদের নবীকে সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই বিধান অন্যান্য নবীগণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আমরা আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যাতে তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তাঁর শক্তি যোগাও ও তাঁকে সম্মান কর; আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পড়।”[সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৮-৯]

যে ব্যক্তি কোন নবীকে হেয় প্রতিপন্ন করবে তার কাফের হওয়া প্রসঙ্গে আমরা এখানে আলেমগণের কিছু উক্তি উল্লেখ করব:

ইবনে নুজাইম আল-হানাফি (রহঃ) বলেন:

“কেউ কোন নবীর উপর কোন দোষারোপ করলে সে কাফের হয়ে যাবে।”[আল-বাহরুর রায়েক (৫/১৩০) থেকে সমাপ্ত]

কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন:

“যে ব্যক্তি তাঁকে (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) অপমান করবে কিংবা অন্য কোন নবীকে অপমান করবে কিংবা মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে, কিংবা তাদেরকে কষ্ট দিবে কিংবা কোন নবীকে হত্যা করবে কিংবা কোন নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সে ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে কাফের।”[আশ-শিফা বি তারিফিল মুস্তফা (২/২৮৪) থেকে সমাপ্ত]

আল-দিরদির আল-মালেকী বলেন:

“যাঁর নবী হওয়া সর্বসম্মত এমন কাউকে যে ব্যক্তি গালি দিবে কিংবা কোন নবীকে গালি দেয়ার কারণ হবে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে”।[হাশিয়াতুদ দুসুকী আলাশ শারহিল কাবীর (৪/৩০৯)]

আল-শারবিনী (রহঃ) বলেন:

“যে ব্যক্তি কোন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে কিংবা গালি দিবে কিংবা অপমান করবে কিংবা নবীর নামকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে… সে কাফের হয়ে যাবে।”[মুগনিল মুহতাজ (৫/৪২৯) থেকে সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

“নবীদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- যে ব্যক্তি কোন একজন নবীকে গালি দিবে ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে। যেমনিভাবে কোন নবীকে অস্বীকার করলে ও তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেটাকে অস্বীকার করলে যে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়। কারণ কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থাবলীর প্রতি ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান না আনবে।[সাফাদিয়্যা (১/২৬২) থেকে সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি এমন মহা পাপে লিপ্ত হয়েছে তার কর্তব্য হচ্ছে- অনতিবিলম্বে সত্যিকার তওবা করা। দুই সাক্ষ্যবাণী উচ্চারণ করে ইসলামে ফিরে আসা এবং সকল নবীগণকে সম্মান করা।

অতঃপর পূর্ণ একীনের সাথে জেনে রাখুন, যত গোষ্ঠী নিজেদেরকে নবীদের সাথে সম্পৃক্ত করে আমরা তাদের চেয়ে নবীগণের বেশি কাছের মানুষ। তাই যদি কেউ কোন নবীকে গালি দেয় বা কষ্ট দেয় সেক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে- সকল নবীদের প্রতিরক্ষা করা। আমাদের নবীর প্রতিরক্ষা হবে অন্য নবীগণকে সম্মান করার মাধ্যমে, সাধারণ মানুষের উপর তাঁদের মর্যাদা তুলে ধরার মাধ্যমে এবং তাঁদের একজনের রিসালাতের সাথে অন্যজনের রিসালাতের সম্পৃক্ততা বর্ণনা করার মাধ্যমে। তাঁরা হচ্ছেন ঠিক যেমনটি আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার উদাহরণ ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের উদাহরণ হচ্ছে- ঐ ব্যক্তির মত যিনি একটি বাড়ি বানিয়েছেন এবং সে বাড়ীটি সৌন্দর্যমণ্ডিত ও সুশোভিত করেছেন। তবে এক কর্নারের একটি ইট ছাড়া। লোকেরা সে বাড়ীটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল, দেখে বিমোহিত হচ্ছিল এবং বলছিল, এই জায়গাতে যদি ইটটি রাখা হত। আমি হচ্ছি সেই ইট। আমি হচ্ছি- সর্বশেষ নবী।”[সহিহ বুখারী (৩৫৩৫) ও সহিহ মুসলিম (২২৮৭)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member