
নবী ও আবু উমায়ের (রাঃ
হযরত আনাসের শিশু ছোট ভাইয়ের নাম ছিল আবু উমায়ের (রাঃ)। তিনি একটি পাখি পালতেন। আবু উমায়েরের পাখিটি ছিল লাল রঙের। তিনি প্রায়ই পাখিটি নিয়ে রাসুলুল্লাহর কাছে আসতেন। তাঁর সাথে দেখা হলেই রাসূল (সাঃ) এই পাখিটির খবর নিতেন। পাখিটির সম্পর্কে আলাপ আলোচনায় লিপ্ত হতেন। ঘটনাক্রমে একদিন পাখিটি মারা গেলো। আবু উমায়ের খুব শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাখীর কথা মনে হলেই ক্রন্দন করতেন।
একজন রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রপতি হলে যত আনন্দিত হন, শিশু একটি পাখি বা ছাগল পালন করতে এমন কি ঘুড়ি উড়াতে পারলে তার চেয়ে কম আনন্দিত হয়না। একজন শিল্পপতি তার বিরাট শিল্প সাম্রাজ্যে দেউলিয়া ঘোষিত হলে যত দুঃখ পায়, শিশুর হাতের বলটি গাড়ীর নীচে চাপা পড়লে তার দুঃখ কোন দিক দিয়ে কম নয়।
শিশুর কাছে তার হাতের বেলুন অতি দামী। কোটিপতির কাছে কোটি টাকার গুরুত্ব যতো, শিশুর হাতের বেলুন কম গুরুত্বপুর্ণ নয়। কোটি টাকা হারালে কোটিপতির চোখে পানি নাও আসতে পারে। কিন্তু শিশুর হাতের লাল বেলুনটি ফেটে গেলে তার নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবু উমায়েরের পাখি বিচ্ছেদ যাতনা ভুলে যাওয়ার জন্যে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করেন। তার মন অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন।
পাখি শব্দের আরবী ভাষার প্রতি শব্দ হলো নুগায়ের। উমায়ের এবং নুগায়ের শব্দের মাঝে ধ্বনি এবং উচ্চারণগত মিল আছে। শোকগ্রস্ত উমায়েরকে দেখে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেষ শব্দ উমায়ের এবং নুগায়ের দিয়ে কবিতার শ্লোক তৈরী করলেন যার অর্থ হয়- ওহে আবু উমায়ের! কোথায় গেল তোমার নুগায়ের।” ছন্দগত শ্লোকটি রাসূলের মিষ্ট কণ্ঠে শুনে উমায়ের পাখির দুঃখ ভুলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে হেসে উঠতো।
কালক্রমে আবু উমায়ের পাখিটির শোক ভুলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পাখিটির সম্পর্কে তার সঙ্গে কৌতুক করতেন। জিজ্ঞাসা করতেন হে আবু উমায়ের তোমার পাখিটি কোথায় ? আবু উমায়ের হাসতে হাসতে জবাব দিতেন, ‘মরে গেছে’।
শিশুর হাসি আনন্দের মাঝে বেহেস্তের কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়।
শিশু কিছু পেতে চায়। যত তুচ্ছই হোক না কেন। কিন্তু কিছুই সে গুদামজাত করবেনা। শিশু এক হাতে নিবে, আর এক হাতে বিলাবে। তার কোন ষ্টোর রুম বা গুদাম ঘর নেই। শিশু স্বার্থপর নয়।
পবিত্র জীবন যাপন করতে হলে শিশুদের শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করা ভালো। জান্নাতী শিশুদের সুহবত, সান্নিধ্যে এবং আচরণের পরিবেশ দোযখের কালিমায় হৃদয় কলঙ্কিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। শিশুদের বেহেস্তী গুণাবলীর কিছুটা প্রভাব অবশ্যই শিক্ষকের উপর পড়বে।
শিশু কালটাই হলো বেহেস্তী জীবন। এ কালে জীবনের দুঃখবোধ থাকে কম।
মাতৃকোল থেকে শিশুদের জন্য নিরাপদ ও মূল্যবান শান্তির জায়গা ও আনন্দিত আর কিছু নেই। সারাটা দুনিয়ার বদলেও সে মাতৃকোল ছাড়তে চাইবেনা অথচ যে অসহায় শিশু মায়ের বেহেস্তী শান্তির উৎস, সে শিশু শক্ত, সামর্থ এবং বয়োপ্রাপ্ত হয়ে অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয় মায়ের জন্য দোযখী যন্ত্রণার কারণ।
উচ্ছন্নে যাওয়া শিশু সাপের বিষ থেকেও মারাত্মক।
একটি শিশুর জন্যে তার ছোট দোলনাটাও একটি বিরাট জায়গা। তাকে এতো বড় জায়গায় না দিয়ে ছোট একটি কোল দিলেই সে অনেক বেশী খুশী ও আনন্দিত হয়।
এ শিশু যখন বড় হয়ে উঠে তার প্রয়োজনও বড় হয়। সারাটি দুনিয়া তাকে দিলেও তা পর্যাপ্ত হবেনা।
যার ছোট একটি শিশু থাকে, সে হতভাগ্য নয়। ক্ষুদ্র শিশুটিই তার সবচেয়ে আনন্দ, গৌরব ও সুখ-শান্তির কারণ হতে পারে।
মানুষ বস্তুপ্রিয়। সম্পদ প্রিয়। দিনরাত ভুতের মতো পরিশ্রম করে। দেশ-বিদেশের পুরানো জিনিষ দিয়ে ঘর সাজায়। পুতুল কিনে ঘর সাজায়। অথচ শিশুরাই হলো সবচেয়ে সুন্দর চলমান জীবন্ত পুতুল।
শিশু সাথে থাকলে মাতা-পিতার কষ্ট অনুভব হয়না। কিন্তু পিতা-মাতার দুর্ভাগ্যের কিছুটা শিশুর উপর পড়লে তাদের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়।
শিশুর আহার ও নিরাপত্তা প্রদানের সমস্যা হলে উদ্বেগ বাড়ে। কিন্তু শিশু সাথে থাকলে মনে মৃত্যু, পরকালের বিষয় কম আসে এবং দীর্ঘকাল জীবিত থাকার ইচ্ছে হয়।
শত দুঃখ বঞ্চনা থাকলেও যার সন্তান রয়েছে, সে বঞ্চিত নয়। সন্তানই হলো মানুষের বড় সম্পদ। সন্তান হতে মানুষের জন্যে মহান স্রষ্ঠার মহত্তম অবদান আর কি হতে পারে ?
সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম