পবিত্র মক্কার কতিপয় বৈশিষ্ট্য

১. পবিত্র মক্কায় রয়েছে পৃথিবীতে স্থাপিত সর্ব প্রথম ঘর ও সর্ব প্রথম মসজিদ।
২. এটি আল্লাহ তায়ালার নিকট সব চেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠতম স্থান।
৩. হারাম সীমানার মধ্যে এক রাকাত সালাত মসজিদে নববী ছাড়া অন্যান্য সাধারণ মসজিদের তুলনায় এক লক্ষগুণ সওয়াব বেশী।
অনুরূপভাবে এখানে অন্যায় ও পাপাচারের ভয়াবহতাও অন্য স্থানের তুলনায় অনেক বেশী।


৪. কাবা গৃহ হল মুসলিমদের একমাত্র কেবলা যে দিকে মুখ করে সারা বিশ্বের মুসলিমগণ সালাত আদায় করে থাকেন।
৫. মসজিদুল হারাম হলো তিনটি স্থানের একটি যেখানে সওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ। অপর দুটি স্থান হল, মসজিদের নব্বী ও মসজিদুল আকসা।
এ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো স্থানের এ মর্যাদা নেই।
৬. অমুসলিমদের জন্য মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ।
৭. ফাঁকা স্থানে থেকে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে বা তাকে পেছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা হ…

কাবা ঘরে স্থাপিত হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) প্রসঙ্গে জরুরি কিছু জ্ঞাতব্য:
▬▬▬◢◢🕋◣◣▬▬▬
প্রশ্ন: ক. কাবা গৃহের হাজারে আসওয়াদ কি জান্নাতের পাথর? এটি কালো কেন?
খ. হাজারে আওয়াদে চুমু খেলে বা স্পর্শ করার ফযিলত কি?
গ. শুনেছি যে, “হাজারে আসওয়াদটি একটি ফেরেশতা ছিল। আল্লাহ তাকে পাথর বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।” এটি কি সত্য?
ঘ. এ পাথর সম্পর্কে বানোয়াট হাদিস।

উত্তর:

নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের উত্তর দেয়া হল:

♦ ক. কাবা গৃহের হাজারে আসওয়াদ কি জান্নাতের পাথর? এটি কালো কেন?

উত্তর: হ্যাঁ, কাবা ঘরের এক কর্নারে স্থাপিত হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি জান্নাতের পাথর। এ মর্মে হাদিস একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

▪ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
نزل الحجر الأسود من الجنة وهو أشد بياضا من اللبن فسودته خطايا بني آدم ”
“হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। তখন এটি ছিল দুধের চেয়েও সাদা। কিন্তু মানুষের গুনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে।” (তিরমিযী, হা/৮৭৭, মুসনাদ আহমদ, হা/২৭৯২, ইবনে খুযাইমা হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, ৪/২১৯)
আল্লামা মুবারক পুরী রহ. মিরকাত গ্রন্থে বলেন, “অর্থাৎ যে সকল মানুষ এই পাথরকে স্পর্শ করে তাদের পাপের কারণে এটি কালো হয়ে গেছে।”

▪ অন্য হাদিসে এসেছে:
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি:
إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللَّهُ نُورَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُورَهُمَا لأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ
“হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের দুটো ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ তা’আলা এই দুটির আলোক প্রভা নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির প্রভা যদি তিনি নিষ্প্রভ না করতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত।
(তিরমিযী, অধ্যায়: হজ্জ, অনুচ্ছেদ: হাজারে আসওয়াদ, রোকন ও মাকামে ইবরাহীমের ফযিলত। শাইখ আলবানী বলেন: সহিহ তিরমিযী হা/৮৭৮। এ ছাড়াও এটি সহিহ ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান ও হাকিমে বর্ণিত হয়েছে)

♦ খ. হাজারে আওয়াদে চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করার ফযিলত কি?

উত্তর:
হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করলে স্পর্শকারীর গুনাহ মোচন হবে এবং কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে:
▪যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مَسْحَ الْحَجَرِ الْأَسْوَدِ، وَالرُّكْنِ الْيَمَانِيِّ يَحُطَّانِ الْخَطَايَا حَطًّا
ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,:
“যে ব্যক্তি রোকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, এ দু’টি তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দিবে।”
[সহিহুল জামে-শাইখ আলবানী, হা/২১৯৪, সহিহুত তারগীব হা/১১৩৯]

▪ অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ
“আল্লাহর কসম, আল্লাহ কিয়ামতের দিন হাজারে আসওয়াদকে উঠাবেন এমন অবস্থায় যে, তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি জবান থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিবে, যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছ”। সহিহুল জামে হা/৫৩৪৬-ইবনে মাজাহ- ইবনে আব্বাস রা. থকে বর্ণিত-সহিহ)

♦ গ. প্রশ্ন: শুনেছি “হাজারে আসওয়াদটি একটি ফেরেশতা ছিল। আল্লাহ তাকে পাথর বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।” এ কথা কি সত্য?

উত্তর:

পূর্বোল্লিখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এটি জান্নাত থেকে আসা একটি পাথর।
সুতরাং “এটি আগে ফেরেশতা ছিল” এ কথা যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট এতে কোনো সন্দেহ নাই।

♦ ঘ. হাজারে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বানোয়াট হাদিস:

এ প্রসঙ্গে নিচে দুটি হাদিস পেশ করা হল:
➤ যেমন:
الحَجَرُ الأسودُ يمينُ اللهِ في الأرضِ؛ فمَن صافَحَه وقبَّلَه، فكأنَّما صافَحَ اللهَ وقبَّل يمينَه
“হাজারে আসওয়াদ ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর ডান হাত। সুতরাং যে তাতে হাত লাগাল এবং চুমু খেলো সে যেন আল্লাহর সাথে মুসাফাহা করলো এবং তার ডান হাতে চুমু খেলো।”

হাদিসটি বানোয়াট

– বিখ্যাত হাদিস বিশারদ শুআইব আরনাবুত বলেন, এ হাদিসের সনদে ইসহাক বিন বিশর আল কাহেলী নামক একজন বর্ণনাকারী আছে যাকে একাধিক মুহাদ্দিস মিথ্যুক বলে চিহ্নিত করেছেন।
– ইবনুল জাওযী বলেন, এ হাদিসটি সহিহ নয়।
– আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন, এ হাদিসটি বানোয়াট-বাতিল।

➤ অন্য বর্ণনায় এসেছে,
الحجَرُ الأسوَدُ يمينُ اللَّهِ في الأرضِ يصافحُ بِها عبادَهُ
“হাজারে আসওয়াদ ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর ডান হাত। তিনি তা দ্বারা বান্দাদের সাথে মুসাফাহা করেন।”

হাদিসটির মান: মুনকার/বাতিল।
– শাইখ আলবানী বলেন, এটি মুনকার বা মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। (সিলসিলা যঈফা হাদিস নং ২২৩)
– শুওয়াইব আরনুত বলেন: এটি বাতিল। (তাখরীজ সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৯/৫২৩)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
#abdullahilhadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88