কল্পনায় গল্পনায়

জুম্মা শেষ হয়েছে মাত্র।

মসজিদের জানালা দিয়ে উতসুক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে রুকাইয়া। তার মোন বেশ খুশি খুশি।

অন্য নারীরাও তার সাথে মসজিদের জানালায় ভির জমিয়েছে। মহিলা মহলে উৎসব উৎসব একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ঐ তো মসজিদের বাইরের মাঠেই হাত আর চোখ বেধে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে রঞ্জুকে। এই লোক রুকাইয়ার মোবাইলে আজে বাজে ম্যাসেজ পাঠাত এবং ফোন করে বাজে কথা বলত। অনেক সহ্য করেছে রুকাইয়া।

শেষ পর্যন্ত এই বদ লোকটার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে রুকাইয়া তার মা এর কাছে সব বলে দেয়। রুকাইয়ার মা জানায় তার বাবাকে । রুকাইয়ার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত থাকার উপদেশ দেন। এবং লোকটার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে চান। রুকাইয়ার চোখে পানি এসে যায়। বাবার কাছে এই সব কথা বলতে ইচ্ছে করে না।

লোকটির নাম রঞ্জু। রুকাইয়ার স্কুলের সামনেই রঞ্জুর ষ্টেশনারীর দোকান। এই দোকানে মুঠোফোন রিচার্জ এরও ব্যবস্থা আছে। আগে এই দোকান চালাতেন রঞ্জুর বাবা, জমির আলী। বয়োবৃদ্ধ এই ভদ্রলোক অমায়িক মানুষ। দ্বীনের ব্যপারেও বেশ সজাগ। কঠোর পরিশ্রম করেন। তবে বেশ কিছুদিন যাবত ঠিক মত কাজ করতে পারছিলেন না। শরীর ঠিক ভালো ঠেকছিলো না । একদিন ফজরের নামাযের পর দোকান খুলে বসেছেন। হঠাত লক্ষ করলেন খুক খুক কাশি হচ্ছে। সকাল সকাল এরকম মাঝে মাঝেই তার হয়। তখন পাশের দোকান থেকে আনিয়ে একটা আদা চা খান। তার সকালের চা তে আদার পরিমাণ থাকে মারাত্মক রকম বেশি।বেশি করে আদা দিয়ে চা খেলে বেশ আরাম হয়। কাশি কমে যায়। সেই দিনও আদা চা এনে খেলেন । ভাবলেন কাশি কমে যাবে। কিন্তু সময় যত গড়াল, খুক খুক কাশির মাত্রা বাড়তে থাকলো।

যোহরের দিকে এক রকম কাশতে কাশতে তার নিঃশ্বাস আটকে যাবার যোগার। শরীরে ঘাম দিলো। তিনি অজ্ঞান হলেন। আশে পাশের ঘুর ঘুর করা শারিয়া পুলিশরা পাঁজাকোলা করে তুলে তাকে বিশেষ এক হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতালে ডাক্তার সাহেব গম্ভীর মুখ করে বললেন মেজর হার্ট এট্যাক হয়েছে। লাংস এ পানি এসে গিয়েছিলো। এখন বেশ কিছুদিন অবজার্ভেশনে থাকতে হবে। জমির আলী সাহেব বিরস মুখ নিয়ে শুয়ে থাকেন। তার আর্থিক অবস্থা যেমন তাতে এমন বিলাস বহুশ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ তার নাই। তবে এখন খরচ নিয়ে তার চিন্তা করতে হচ্ছে না।

আশার কথা, খলিফা অল্প কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবার জন্যে একই চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। হোক সে ধনি বা নিতান্তই গরিব। আর এই লক্ষে যাদের যে রকম সামর্থ আছে তারা সেই টাকা খরচ করার পর বাকি যা লাগে সেটা দেশের বাইতুল মাল থেকে দেয়া হবে। এটা প্রত্যেক মুসলিম এবং যিযিয়া প্রদান কারি অমুসলিমদের জন্যেও প্রযোজ্য। সুতরাং তার চিন্তা খরচের নয় । তার চিন্তা অন্য জায়গায়।

জমির আলী অসুস্থ হবার পর থেকেই তার দোকান সামলাচ্ছে রঞ্জু। এই দোকান দিয়েই সব মেয়েরা তাদের মুঠোফোনে টাকা ভরে নিতো। রুকাইয়াও তাই করতো । প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মোবাইল রিচার্জ করে নিতো। রঞ্জুর বদ নজর তখনই রুকাইয়ার ওপর পরে। সে তার মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন করে বিরক্ত করা শুরু করে। স্কুল থেকে আসার পথে এই লোক দাঁড়িয়ে থাকে। রুকাইয়্যা নিকাব করে। শুধু রুকাইয়্যা না সব মেয়েরাই এখন নিকাব করে। এটা এখন বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে শারিইয়া পুলিশও ঘুর ঘুর করে । এতো কঠোর অবস্থার পরও এই লম্পট রুকাইয়্যাকে বিরক্ত করে।

রুকাইয়া তাই বাধ্য হয়েই এই লম্বটের কথা তার বাবার কাছে বলেছে। রুকাইয়ার মুখ থেকে পুরো ঘটনা সোনার পর তার বাবা, রুকাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেছে। সারাদিন পর মাগরিবের সালাত আদায় করে তিনি যখন বাসায় ফেরেন তখন তার মুখে তৃপ্তির হাসি। রুকাইয়া বুঝতে পারছে কি হয়েছে এবং কি হতে যাচ্ছে। তার মন হঠাত ভালো হয়ে যায় । সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ।

ইসলামি শারিয়া পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সমাজে এই ধরনের ছ্যাচরামির ঘটনা এখন বিরল।

তাই লম্পটটাকে ধরে যখন শরীয়া পুলিশ জামে মসজিদের সামনের মাঠে নিয়ে আসে , তখন সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে রঞ্জুকে দেখতে থাকে।

শরীয়া পুলিশদের একজনকে দেখা যাচ্ছে একটা বেত নিয়ে লোকটার চারিপাশে ঘুরছে । চোখ বাধা লোকটা বেতের আতংকে একটু পর পরই দুই পা নাচিয়ে লাফ দিচ্ছে (যদিও তাকে বেত্রাঘাত করা হচ্ছে না),তারপরও কোণ এক অজানা কারনে লম্পটটা কেউ কেউ টাইপ অদ্ভুত একটা শব্দ করছে।

দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ এই দৃশ্যে খুব মজা পাচ্ছে । তার চোখ চক চক করছে। সে মাটিতে একদলা থুথু ফেলে বলল,

দেশের শরীয়া পুলিশের হাতে পরলে সিংহও ইন্দুর হইতে বাধ্য আর এই ব্যাটা তো বান্দর,

লম্পোট লোকটাকে এখন সবার সামনে লাঞ্ছিত করা হবে। রুকাইয়ারর চোখ ভিজে যাচ্ছে। নাহ..লম্পট লোকটার জন্যে কোন সহানুভূতি নয়। বরং তার চোখ ভিজে যাচ্ছে অনন্দে। যে অপমান তাকে সহ্য করতে হয়েছিলো তার একটা সঠিক বিচার সে পাবে। ইসলাম তাকে তার ন্যায্য হক্ক বুঝিয়ে দেবে । রুকিয়া শুকরিয়া আদায় করে। মহান আল্লাহর শুকরিয়া ।

পুনশ্চঃ

এখনকার এই সমাজে যদি কোন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষরুপি কুকুর আমাদের কোন বোনকে দিনের পর দিন মোবাইলে বা অন্য ভাবে বাজে কথা বলে বা বিরক্ত করে তাহলে সেই কুকুরকে কিছু করা হয় না বরং বোনটাকে বলা হয় সহ্য করতে এবং মেনে নিতে, বলা হয় গুরুত্ব না দিতে। অথবা বলা হয় চুপ করে থাকতে। তাকে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়। অনেক সময় বোনদেরকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ করতে হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এমনকি এলাকাও ত্যাগ করতে হয় । আতংক ভরা জীবন নিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।

পক্ষান্তরে সেই মানুষ রূপি পশু গুলোর সাহস আরও বেড়ে যায়। সে তার হলুদ দাত বের করে পাশবিক হাসি হাসে আর অন্য বোনদেরকেও একই ভাবে তার পাশবিকতার পরিচয় দেয়।

অথচ আজকে যদি রুকাইয়ার মত মসজিদের ভেতরে দাঁড়িয়ে শরিয়া পুলিশের এই ততপরতা দেখার সূযোগ আমাদের বোনদেরও থাকত , তাহলে এই মানুষরুপি কুকুর গুলো তাদের বাকা লেজ দেখে ফেলার ভয়ে গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হত।

আর আমাদের বোনরাও বাজারের পন্য না হয়ে আত্মমর্যাদা সহকারে মাথা উচু করে বাচতে শিখত।

আমাদের জীবদ্দশায় হবে কিনা জানি না। তবে ইন শা আল্লাহ খুব শিঘ্রহী আমাদের মুসলিমবোনরা সত্যি সত্যিই মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে শরীয়া পুলিশের তৎপরতা দেখে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ পাবে ইন শা আল্লাহ ।

আর সেইদিন মুসলিম নারীরা অর্জন করবে সত্যিকার নারি স্বাধীনতা এবং পূর্ন আত্মমর্যাদা।

সকল মুসলিম ভাই এবং বোনদের জন্যে রইল সুভকামনা।

লিখেছিলাম অনেক আগে … এখন শুধু একটু পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করে দেয়া হলো।

Courtesy: Ali Abdullah

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88