“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং” পর্ব-১
জাকির নায়েকঃ
শ্রদ্ধেয় গুরুজনেরা এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে,আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।আল্লাহ তা’আলার শান্তি,দয়া আর রহমত বর্ষিত হোক আপনাদের সবার প্রতি।আজকের এই বক্তব্যের বিষয়-“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং”।বেশির ভাগ মানুষ সালাহ শব্দটার বাংলা অনুবাদ করে প্রার্থনা করা। এই প্রার্থনা শব্দটা দ্বারা আরবী সালাত শব্দেটি পুরোপুরি প্রকাশ করে না।প্রার্থনা করা মানে অনুরোধ করা।বিনীতভাবে কিছু চাওয়া।যেমন,আদালতে গেলে আপনি প্রার্থনা করেন।
প্রার্থনা করা মানে মিনতি করা।সাহায্যের আবেদন করা।দোয়া করা।সেটাই হল আবেদন বা প্রার্থনা।তবে নামাযের মানে শুধু প্রার্থনা নয়।প্রার্থনার চেয়ে বেশি কিছু।কারণ নামাযে আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি তাঁর গুণগান করি।আমরা তাঁর কাছ থেকে নির্দেশণা পাই।আর এসবের পাশাপাশি নামায হল এক ধরণের প্রোগ্রামিং।এটা একটা শর্তাধীন অবস্থা।অথবা একজন সাধারণ মানুষের ভাষায় এটা হল ব্রেইন ওয়াশিং।তবে কেউ যদি নামায পড়তে যায়,আর কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আর সে যদি বলে ব্রেইন ওয়াশিং এ যাচ্ছে অথবা প্রোগ্রামিং এ যাচ্ছে এটা শুনতেই অদ্ভুত লাগবে।সেজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু মনে করিনা যদি মানুষ আরবী সালাত শব্দটাকে বাংলায় প্রার্থনা বলে।কিন্তু তাদের এটা মনে রাখতে হবে যে,নামায আসলে প্রার্থনার চাইতে অনেক বেশি কিছু।যখনই আপনারা প্রোগ্রামিং কথাটা শোনেনে তখন আপনারা কম্পিউটারের কথা ভাবেন।যদি আপনি ধরে নেন যে, মানুষ একটা যন্ত্র তাহলে আমি বলব এ যন্ত্রটা হল পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল যন্ত্র।পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত কম্পিউটারের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি জটিল।আর আমরা মানুষ জাতি আশরাফুল মাখলুকাত।আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।আর পবিত্র কুর’আনে সূরা তীন এর ৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-
তর্জমাঃ “নিশ্চয়ই আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।”
মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের বলেন যে আমাদের মন পুরোপুরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।শরীর সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে।যদি আমরা হাত উঠাতে চাই,উঠাতে পারব।নামাতে চাই,নামাতেও পারব।যদি আমি এক পা সামনে আগাতে চাই,সেটাও পারব।আমাদের শরীর সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে।কিন্তু আমাদের মন সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়।সেজন্য আপনারা হয়ত দেখে থাকবেন আমরা যখন নামায পড়ি আমাদের মন তখন শুধু গুরে বেড়ায়।যেমন একজন ছাত্র যদি পরীক্ষা দেয়ার পর নামায পড়ে তবে সেই সময় তার পরীক্ষার খাতার কথাই চিন্তা করতে থাকে।সে তখন ভাবতে থাকে,আমি দুই নম্বর প্রশ্নের যে উত্তরটা লিখেছি সেইটা না লিখে আমার এইটা লিখা উচিত ছিল।যদি একজন ব্যবসায়ী নামায পড়ে সে চিন্তা করতে থাকে যে আজকে আমি কতখানি লাভ করলাম,কতগুলো জিনিস আজকে বিক্রি করলাম।যদি একজন গৃহিনী নামায পড়ে তখন হয়ত ভাবতে পারে যে, আমার স্বামীর জন্য কি রান্না করব,বিরিয়ানি নাকি পোলাও? এটা খুবই স্বাভাবিক যে নামাযের সময় আমাদের মন শুধু এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়।
আমাদের মন কেন ঘুরে বেড়ায়?…চলবে ইনশাআল্লাহ।