সত্যিকার ভালোবাসা-২
বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার নিদর্শন
শৈশব থেকে বান্দার যত্ন নেয়া, তার অন্তরে বিশ্বাসের বীজ বুনে দেয়া, তার মনকে আলোকিত করা, তাঁর পছন্দনীয় ব্যক্তিদের মধ্যে তাকে বেছে নেয়া, তাঁর স্মরণে তার জিহ্বা ও তাঁর আজ্ঞাপালনে তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে তাকে ইবাদাতে ব্যস্ত রাখা। এভাবেই আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিকে সেসব কাজেই নিয়োজিত রাখেন এবং যা কিছু অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে রাখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়াই আল্লাহ যে কোন উপায়ে তার কাজগুলো সহজ করে দেন। তখন আল্লাহর ভালোবাসা কীভাবে অর্জন করবে সেটাই তার একমাত্র উদ্বেগ হয়ে দাঁড়ায়।
সবচেয়ে চমৎকার উপায়ে সর্বোত্তম কাজগুলো করার সামর্থ্য দান বান্দার প্রতি আল্লাহর আরেকটি অনুগ্রহ।
মানুষের অন্তরে তাঁর জন্য গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা; ফলে মানুষ তাঁর দিকে ঝুঁকে যায় এবং তাঁর প্রশংসা করে, যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে…
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে, তিনি বলেন, রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তিনি জিব্রীল (আঃ) কে ডেকে বলেন, “আমি আমার অমুক অমুক বান্দাহকে ভালোবাসি, তাই তুমি তাকে ভালোবাসো।
সুতরাং জিব্রীল (আঃ) তাকে ভালোবাসেন এবং আসমানের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন, “আল্লাহ তাঁর অমুক অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, সুতরাং তোমরাও ভালোবাসো।”
তখন আসমানের অধিবাসীরাও (ফিরিশতারা) তাকে ভালোবাসেন এবং তারা পৃথিবীর মানুষের হৃদয়েও তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার অন্যতম একটি নিদর্শন হল, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে নানা ধরণের পরীক্ষার মধ্যে ফেলেন।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যাকে যত বেশি কষ্ট দেওয়া হয়, তাকে তত বেশি পুরস্কৃত করা হয় এবং যখন আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে কষ্ট দেন। সুতরাং যে সন্তুষ্ট থাকবে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং যে অসন্তুষ্ট হবে সে আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হবে।”
আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষায় নিমজ্জিত করেন যাতে তিনি তার পাপগুলোকে মুছে দিতে পারেন এবং তাদের অন্তরকে জীবনের আসক্তি থেকে মুক্ত করতে পারেন, কারণ আল্লাহ চান না তাঁর বান্দারা তাঁকে ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। তাই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষায় ফেলেন কেবল তাদের পক্ষ থেকে প্রকৃত ত্যাগ প্রত্যক্ষ করার জন্য।
যেমন- আল্লাহ বলেনঃ “এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেব, যতক্ষণ না আমরা জানতে পারি কে তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর পথে) সংগ্রাম করে ও ধৈর্যধারণ করে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থানসমূহ যাচাই করতে পারি।” [মুহাম্মাদঃ ৩১]
এই পরীক্ষা ও দুঃখ-কষ্টের পরিমাণ হবে বান্দার অন্তরের বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও বান্দার জন্য আল্লাহর কতখানি ভালোবাসা আছে, তার সমানুপাতিক।
সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্ক্বাস (রাঃ) একবার রসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘‘হে আল্লাহর রসূল! কোন মানুষগুলো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়?’’
তিনি (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ ‘‘যারা কঠিনতম পরীক্ষা ও দুর্ভোগের মুখোমুখি হয় তারা হচ্ছেন নবী-রসূলগণ ও যারা (বিশ্বাসের পাল্লায়) তাদের নিকটবর্তী। তদুপরি মানুষ তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার ভিত্তিতেই পরীক্ষিত হবে।” [আত- তিরমিযি]
বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, কোনো ভালো কাজ করা অবস্থায় আল্লাহ তাঁর বান্দার জান কবজ করিয়ে নেন।
রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, ‘আস-সালাহু’। সাহাবারা জানতে চাইলেন ‘আস-সালাহু’ বলতে কী বোঝায়? রসূল (সাঃ) উত্তরে বললেনঃ “তিনি তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তাকে দিয়ে কোনো ভালো কাজ করিয়ে নেন, যাতে তার চারপাশের লোকজন ও প্রতিবেশীরা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায়।” [আহমাদ ও আল-হাকীম]
(চলবে ইনশাআল্লাহ…)