দু:খিত হবেন না !
অনুবাদে: ইজমামুল হক
বর্তমান দিনগুলোতে আমাদের জীবনটা আপনার কাছে কঠিন মনে হতে পারে। এটা স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে যে, আমরা সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য বেপরোয়া প্রতিযোগীতায় আটকে গেছি। (যেন মনে হচ্ছে) কাজ বিরক্তিকর, পরিবার সঙ্কটপূর্ণ (অত্যন্ত জটিল), আপনি কোনো সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না এবং খুঁজে পাচ্ছেন না আপনার ভাতৃত্ব ও ভাগ্নত্বের তপ্ত সহানুভূতি এবং অবশ্যই আপনি এখনও নি:সঙ্গ। এবং উপরের সবগুলি ছাড়াও আপনার নাম ভাল নেই, বাবা মারা গেছেন (গত হয়েছে)। এগুলি বা এর কিছু অংশ আপনাকে অনুরণিত করতে পারে এবং এসবের ফলশ্রুতি হলো এই যে, আমাদের মধ্যে অনেকেই তার জীবনটা অবসাদের দফায় দফায় অতিবাহিত করে। আমরা এক বিষণ্নতা অনুভব করি যে, কিছু সময় আমরা পুরোপুরি ভাবে জানি না কিভাবে আমাদেরকে বিপদ অতিক্রম করতে হবে।
আমরা এক উদ্বেগ অনুভব করি যে, আমাদের কোনো ধারণা নেই এটা কী থেকে আবির্ভাব হয়। সবশেষে আমরা খুঁজে পাই যে, পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনও এক দু:খময়তার (বিমর্ষতার) সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছি, যুদ্ধ করে চলেছি উদ্বেগ এবং এক দু:খময় অনুভবের সাথে, যেটা স্পষ্টভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রকাশ পাই।
তাহলে এসব কেন? (Why is this?)
নিঃসন্দেহে (প্রশ্নাতীত ভাবেই) আমাদের চলার পথ এবং নবীর দেখানো পথের মধ্যে, এই পরিস্থিতির বাস্তুবতার এক গভীর ব্যবধান রয়েছে। যখন আমরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হই, তখন আমরা ওগুলিকে পৃথিবীর সব থেকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখি। আমাদের পুরো দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমরা আমাদের অঙ্গীকার ভুলে যাই এবং আমরা মৌলিকভাবে উপনীত হই যে আমাদের ঈমান দূর্বল হতে পারে। এবং এখানেই সেই প্রমাণ, আমরা আমাদের নবীর দেখানো পথ থেকে কতটাই বর্জিত যে, নিজের কাজগুলি বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের কেন্দ্র হয়ে যায় ।
‘আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সঃ) বলেন- হে লোক সকল, কোন মুমিনের উপর কোন বিপদ আসলে সে যেন অপরের উপর আপাতত বিপদের উপর ভ্রুক্ষেপ না করে। কেননা আমার পরে আমার উম্মতের উপর আমার বিপদের তুলনায় কঠিন বিপদ আপতিত হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৫৯৯)।
বরং আমার উপর আপতিত বিপদের কথা স্মরণ করে কিছুটা প্রশান্তি লাভ করো। এর মাঝে সবচেয়ে মজার জিনিস হল, যখন আপনি একটা মুহর্ত নেন, নবী (সঃ) এর মৃত্যু সমন্ধে বিবেচনা করার জন্য, তখন আপনার মনের মাঝে অদ্ভুত দুঃখ নেমে আসে। আপনার হৃদয় সিক্ত হয়, আপনার আত্মা শিহরিত হয়ে উঠে, এবং আপনার মনষ্পটে ভেসে উঠবে সেই বাস্তবতা। যার সঙ্গে আপনি এখন লড়াই করে চলেছেন। চলুন এখন সেই পথে যাই এবং নিজেকে প্রস্তুত করি যাতে আপনি নবীর কথাগুলি হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, যখন রাসূল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন, তখন আবু বকর (রাঃ) তাঁর আশেপাশে ছিলেন না, তখন উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন নি এবং আল্লাহ তাকে আবার ফিরে পাঠাবেন তাদের হাত পা কাটার জন্য যারা দাবি করছে যে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। যখন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন তখন নবী (সাঃ) শায়িত ছিলেন এবং তিনি তাঁর মুখের কাপড় সরালেন এবং তাকে চুমু খেলেন এবং বললেন আমার আব্বা-মা আপনার জন্য কোরবান হউক। আপনি মৃত্যুর পরেও সেই সুগন্ধির মতই আছেন, যেমন জীবিত অবস্থায় ছিলেন। সেই সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ আপনাকে মৃত্যু দ্বিতীয়বার মৃত্যু দিবেন না। তারপর তিনি লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ওহে তুমি, যে আল্লাহর নামে শপথ (মানে উমার), শান্ত হও। যখন উমার (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর কথা শুনলেন তখন তিনি শান্ত হয়ে বসলেন ,তখন আবু বকর (রাঃ) আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করে বললেন, যারা রাসূল (সাঃ) এর ইবাদতকারী ছিলে জেনে রাখ, রাসূল (সাঃ) সত্যই মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদতকারী, তারা নিশ্চিত জেনে রাখ আল্লাহ চিরঞ্জীব, অমর। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
“নিশ্চয়ই আপনি মরনশীল আর তারা সকলেই মরণশীল” (যুমার আয়াত নং-৩০)
আরো তিলাওয়াত করলেনঃ
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ
“মুহাম্মাদ (সাঃ) তো একজন রাসূল ব্যতিরেকে আর কিছুই নই। তার পূর্বেও অনেক রাসূল গত হয়েছেন, সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিবে? আর যদি তোমরা সেরূপ মুখ ফিরিয়ে নিবে? আর যদি তোমরা সেরূপ মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে কখনও আল্লাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবেনা।’’
(সূরা-আলে ইমরান-১৪৪) (বুখারীঃ ১২৪২, ৩৬১০, ৪৪৫৪, ৪৪৫৭, ৫৭১২, ইবনে মাজাহঃ-১৬২৭)
কি দুঃখজনক দৃশ্য। আপনাকে এটা কেমন অনুভব করালো? আপনার মনের মধ্যে যখন এই দৃশ্য ভেসে উঠবে তখন আপনার কেমন লাগবে? এটা কি আপনাকে নির্বাক করে দিবেনা?
ইবনে রজব (রহঃ) বলেন, যখন রাসূল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন, তখন মুসলিম উম্মাহ এক গভীর আঘাত ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল তাদের মধ্যে কেউ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল, কেউ কেউ এতটা আঘাত পেয়েছিল যে তারা সব এলোমেলো করে ফেলেছিল, কেউ কেউ হাটুর ভরে বসে পড়েছিল এবং দাড়াতে পারছিল না। কেউ কেউ মৃত্যুর ঘটনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করছিল ।
ভাই ও বোনেরা, রাসূল (সাঃ) এর এই উপদেশ বর্ণিত করার কারণ হল যাতে আমরা নিজেদেরকে অনুভব করাতে পারি সেই দুঃখ যা আমরা আমাদের জীবনে সম্মুখীন হতে পারি। প্রশ্নহীনভাবে আমরা মানুষজাতি নিজেদের পরিস্থিতিতে এগিয়ে চলেছি, যা আমাদের দুঃখ দুর্দশার কারণ হতে পারে। যাই হউক, আমরা এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারি এই ভাবে। আমরা যদি, আমাদের রাসূল (সাঃ) এর আদেশ উপদেশের হাদীস দ্বারা বিবেচনা করতে পারি এবং রাসূল (সাঃ) এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনা সম্বলিত হাদীস, তাহলে এটা সব ব্যাথাকেই সহজ করে দেবে সহ্য করার জন্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
আমি কাউকে তাঁর সামর্থ্যের চাইতে বেশী বোঝা দেই না—(সূরা আরাফ,আয়াত নং-৪২)